সুপ্ত অনুভূতি পর্ব-১৫

0
2042

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#পর্ব_১৫
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম রিংকি এক হাত দিয়ে তার চোখ মুচছে আরেক হাত দিয়ে ব্যাগে কাপড় ঢুকাচ্ছে৷
রিংকির এই অবস্থা কেনো

আরুহিঃরিংকি কী হয়েছে তোর? তুই কাপড় কেনো ব্যাগে ঢুকাচ্ছিস? আজ চলে যাবি নাকি? কিন্তু তোর তো আরও চার পাঁচ দিন পারে যাওয়ার কথা৷
.
রিংকিঃছাড় রুহি আমি আর তোদের বাড়িতে থাকবোনা৷ আমি এক্ষুনি আমার নিজের বাড়ি চলে যাচ্ছি৷
.
আরুহিঃআহিল ভাইয়া জানে যে তুই চলে যাচ্ছিস৷
.
রিংকিঃসে জানলেই কী আর না জানলেই কী৷
.
আরুহিঃদেখ রিংকি আজ বিয়ে তাই এসব পাগলামু একদম করিস না৷ আর কী হয়েছে সেটাতো এটলিস্ট বলবি৷
.
রিংকিঃকী বলবো আমি৷ আমি যে কাল রাস্তায় পড়ে গিয়েছিলাম সেটা আদিব ভাইয়া ভিডিও করেছে সে নাকি দেওয়ালের ওপারে ছিলো৷ সেটা দেখে সবাই হাসছে আদনান ভাইয়া আমাকে যেখানে দেখছে সেখানেই বলছে ধপাস ধপাস৷ তাছাড়াও একজন আমাকে খুব কটু কথা শুনিয়েছে৷
.
আরুহিঃআমি দেখছি৷ কিন্তু কিছুতেই আজ বাড়িতে যাবিনা৷
.
ওকে এতো জোড় কেনো করছিস রুহি৷ ও যাবেনা শুধু এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য এসব করছে৷
.
আরুহিঃএসব তুমি কী বলছো রিমু আপু৷ ও কার এ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য এসব করবে৷

রুহিঃকার আবার আহিলের৷ আমি জানি সব কিছু৷ আর কী বলতো ও এতো বড় বাড়ি দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি তাইতো আহিলের গলায় ঝুলে পড়লো৷ আর আহিলেরও বা কী চয়েজ একেই চয়েজ করলো৷ ও কী আমার থেকে সুন্দরী নাকি৷
.
আরুহিঃহ্যাঁ সুন্দর তোমার চেয়ে শতগুণ সুন্দর নিজেকে আয়নায় দেখেছো কখনো পুরা বান্দরনির মতো লাগে তোমাকে৷
.
রিমুঃউফফ কাম অন রুহি তোর ঝগড়া করার স্বভাবটা একদমি গেলোনা৷ কোথায় এতদিন পর আসলাম একটু ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করবি তা না বান্ধবীর পক্ষ নিয়ে ঝগড়া করছিস বাই দ্যা ওয়ে আমি আদির কাছে যাচ্ছি দেখি আমার জান্টুসটা কী করছে৷
.
আদিল ভাইয়ার কথা শুনে ধক করে উঠলো আমার বুক৷ এই রিমু আপু যখন এসেছে তখন নিশ্চয় কোনো গন্ডগোল পাকাবে৷

রিংকিঃদেখলি রুহি তোর ফুফুর মেয়ে আমাকে লোভী মিন করলো৷ আমি থাকবোনা এখানে৷
.
আরুহিঃরিংকি রিমু আপু এমনই৷ তুই থাক আর ওকেও জ্বলতে দে৷
🍁🍁🍁🍁
দুপুর ১২টা বেজে ২০ মিনিট সবার সাজগোছ কমপ্লিট৷ আমরা লেহেঙ্গা পড়েছি আর ছেলেরা শার্ট কোট৷ সবাইকেই খুব সুন্দর লাগছে৷ রিমু আপু তার লেহেঙ্গা ধরে ধরে সিড়ি বেয়ে নিচে নামছে৷ যেনো বুঝা যাচ্ছে হাঁটু পানির মধ্যে হাঁটছে৷
এসেই তার ভাব মারা শুরু হয়ে গেলো৷

রিমুঃআদিল আমাকে কেমন লাগছে৷
.
আদিলঃএক্সকিউজ মি আমার কাজ আছে আমি ঔদিকে যাচ্ছি৷
..
রিমুঃএই আদিলটা সব সময় আমার সাথে এমন করে৷ আদনান আমাকে কেমন লাগছে৷
.
আদনানঃওয়াও ইউ আর সো,,,সামান্তার চোখ রাঙানো দেখে আদনান একটা মেকি হাসি দিয়ে বললো,,একচুয়েলি ইউ আর সো আগলি৷
.
রিমুঃওয়াট৷ আমি আর আগলি ওহ মাই গড৷ আর ইউ কিডিং উইথ মি আদনান৷
রিমু আহিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে রিংকির দিকে তাকিয়ে আছে৷ রিমু বিরক্তি নিয়ে রিংকির দিকে এগিয়ে গেলো৷

রিংকিঃএই মেয়ে তুমি এখনও যাওনি৷
.
রিংকিঃস্যরি এটা আপনার বাড়ি নয় যে আপনি বললেই আমি চলে যাবো৷
.
আরুহিঃও কেনো যাবে ও আমাদের গেস্ট সো রেসপেক্ট হিম৷
.
সামান্তাঃতোমার এতো সমস্যা কেনো হচ্ছে বলোতো আমায়৷ আসলে কী চাও তুমি এটলিস্ট বলতো৷ এই জন্য শুধু মাত্র এই জন্য আমরা কেউ তোমাকে পছন্দ করিনা৷ তুমি আসলেই আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে একটা সমস্যা সৃষ্টি করো৷ যেমন আছো ঠিক তেমন থাকবা৷
.
রিমুঃওহ্ কাম অন সামু এখন কী তোর কাছ থেকে আমায় এডভাইস নিতে হবে নাকি৷ তুই ও না৷ তোর এই সাধারন বান্ধবীর জন্য আমার সাথে তর্কে জড়াচ্ছিস৷
.
আহিলঃকাকে তুমি সাধারন বলছো রিমু আমার রিংকি কিন্তু সাধারণের মধ্যেই অসাধারন৷ নেক্সট টাইম যদি ওর সাথে এভাবে কথা বলতে দেখি তাহলে আমার চাইতে কেউ খারাপ হবেনা গট ইট৷
.
রিমুঃহলো তো তোদের এবার শান্তি৷আর ওদের চার ভাইয়ের জন্য মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি৷ আদিলও প্রেম করছে তাও তোর সাথে বিশ্বাস করতে পারছিনা৷ কী করে বিশ্বাস করবো বলতো ওই আদিল তো এক নাম্বারের লুজার একটা৷ছয় মাস আমার সাথে রিলেশনে ছিলো তারপর হঠাৎই একদিন আমায় ফোন করে বললো আমার সাথে নাকি সে কোনো সম্পর্ক রাখবেনা৷ তার নাকি আরেক মেয়েকে মনে ধরেছে৷ ভাবতে পারছিস রুহি৷ আর এটাও বলেছে আমার সাথে নাকি এতদিন টাইম পাস করেছে৷ দেখ ও তোর সাথেও টাইম পাস করছে কী না৷
.
“কে কার সাথে টাইম পাস করছে রিমু৷
.
আদিল ভাইয়ার কন্ঠ শুনে তার দিকে তাকালাম আমি৷ ভাইয়ার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে৷মুখে রাগ স্পষ্ট৷

আসলে আদিল,,,

আদিল রিমুর গালে চড় দিতে গিয়েও থেমে গেলো৷ দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করলো৷
“আহিল কী বলে গেছে শুনিসনি৷আমি তোর সাথে কখন রিলেশনে গিয়েছিলাম৷ আর কোন মেয়েকে মনে ধরেছে আমার৷ যদি কোন মেয়েকে আমার মনে ধরে থাকে তাহলে সেটা শুধুমাত্র আরুহি৷ আর আজ বিয়ে তাই সিন ক্রিয়েট করতে চাইছিনা৷ তা না হলে আজ আমি তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিতাম৷
আদিল হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো৷
.
রিমুঃকত সাহস ওর ও আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিবে আমি এর আগেই চলে যাবো৷ বিয়ে শেষ হলেই চলে যাবো৷ থাকবোনা আর এই জাহান্নামে৷
🍁🍁🍁🍁
বর যাত্রী চলে এসেছে৷ সবাই তাদের আপ্যায়ন করায় ব্যস্ত৷ রিমুর কাজ পড়েছে বরের ভাই আর তার বন্ধুদের শরবত দিয়ে আসা৷ ট্রে হাতে শরবত নিয়ে গেলো উপরে৷ সবাইকে শরবত দেওয়া শেষ হয়ে গেলে চলে আসতে নিবে ওমনি ওর ওরনায় টান পড়লো৷ রিমু পিছনে একবার তাকিয়ে আর কোন কিছু না ভেবে ঠাসসস করে চড় বসিয়ে দিলো বরের ভাই আকাশের গালে৷ সবাই ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে৷ একটায় মুখে সবেমাত্র শরবত দিয়েছিলো এমন ভাবে হা করে তাকিয়ে আছে তার মুখ দিয়ে যে গলগল করে রক্তের মতো শরবত পড়ে পাঞ্জাবী ভরে যাচ্ছে সেদিকে তার কোনো খেয়ালই নেই৷

রিমুঃমেয়ে দেখলেই লুচ্চামি করার শখ জাগে তাই না৷শুন তুই যদি মনে করিস আমি তোর মতোই লুচ্চি তাহলে ভুল ভাবছিস৷ আমি এসব অসভ্যতামী একদম পছন্দ করিনা৷ বরের ভাই আমাদের গেস্ট তাই আজকে ছেড়ে দিলাম তা নাহলে ঠাসস করে চড় মেরে তোর এক গাল আরেক গালে ঢুকিয়ে দিতাম হতচ্ছাড়া৷কোন সাহসে আমার ওরনা ধরে টান দিয়েছিস৷ ছাড় বলছি৷
.
আকাশঃআমি কোন দুঃখে আপনার ওরনায় ধরে টান দিতে যাবো৷আর চড় তো অলরেডি একটা দিয়েছেনই আবার বলছেন বরের ভাই গেস্ট তা নাহলে চড় বসিয়ে দিতেন৷ গেস্টদের সম্মানও করতে জানেন না দেখছি৷ কেউ গেস্টকে চড় দিয়ে আপ্যায়ন করায় সেটা প্রথম দেখলাম৷ ভালো করে তাকিয়ে দেখেন তো৷আপনার ওরানাটা আসলে কে ধরেছে৷

রিমু এবার ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তার ওরনা সেন্ট্রার টেবিলের কোনার সাথে আটকে আছে৷ রিমু ওরনাটা ছুটিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললো “স্যরি৷ বলে সে দ্রুত চলে গেলো৷

রাহুলঃআচ্ছা এই মেয়ে চড় দিলো একজনকে আর স্যরি বললো সবার দিকে তাকিয়ে যেন মনে হচ্ছে চড়টা একজনকে না আমাদের সবাইকে দিসে৷

চলবে♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে