সুচরিতা পর্ব-২২+২৩

0
499

#ধারাবাহিক গল্প
#সুচরিতা
পর্ব-বাইশ
মাহবুবা বিথী

এক সপ্তাহপর সুচরিতার অনার্সের রেজাল্ট দিলো। ও ফাস্টক্লাস পেয়েছে। এতো ভালো রেজাল্ট শাশুড়ী মা খুব খুশী হতে পারলেন না। আবার মন খারাপও করতে পারছেন না। কারণ উনিই উদ্যেগ নিয়ে সুচরিতাকে কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। উনার হয়ত অনেক মানসিক সমস্যা আছে কিন্তু লেখাপড়াকে উনি খুব ভালোবাসেন। সেই কারনে তিন মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মেয়েরাও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। কিন্তু সুচরিতা তো ঘরের বউ। সে ক্ষেত্রে রেজাল্ট এতো ভালো হওয়ার দরকার ছিলো না। এই মেয়েকে তো উনি খুব ভালোভাবেই চিনেছেন। এতো ভালো রেজাল্ট যখন করেছে এতো মাস্টার্সে ভর্তি হতে চাইবে। ওদিকে উনার নিজের পেটের ছেলে সোহেল মাত্র বি,কম পাশ। যদিও উনি সোহেলের উপর মনে মনে বিরক্ত। পেটের ছেলে হলে কি হবে ছোটো বেলা থেকে উনাকে জ্বালিয়ে হাড় মাংস এক করে দিয়েছে। কোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে করবে না। দায়িত্ব জ্ঞানও নাই। আর কিছু খারাপ দোষ আয়ত্ব করেছে। তারপরও নিজের ছেলে বলে কথা। অতটা উদার তিনি এখনও হতে পারেননি। তাই নিজের ছেলে যখন ডিগ্রী পাশ সেক্ষেত্রে পরের বাড়ির মেয়েকে উনি কিছুতেই এম,এ পাশ করাবেন না। এই সিদ্ধান্ত উনি মনে মনে নিয়ে ফেলেছেন। তবে হিমেলের সামনে বাহ্যিকভাবে এক ফেক হাসির প্রলেপ নিজের অবয়বে ছড়িয়ে রেখেছেন।
আজ হিমেলও খুব খুশী। একটু আগেই ও অফিস থেকে বের হয়েছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বিকেল পাঁচটা বাজে। বাড়ি ফিরতে সন্ধা ছ,টা বেজে যায়। ডোরবেল বাজাতে ওর মা এসে দরজা খুলে দেয়। ড্রাইভার আর হিমেলের হাতে এতো মিষ্টি দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
—–মিষ্টির বহর দেখে মনে হচ্ছে, পুরো বাজার ধরে মিষ্টি কিনে এনেছিস?এদিকে তোর ব্যবসার অবস্থা ভালো না। বুঝে শুনে খরচ করা উচিত।
—–মা ব্যবসা আজ খারাপ কাল ভালো হয়ে যাবে।কিন্তু এই সময়গুলো তো জীবনে বার বার আসবে না। আর খুব বেশি না। মাত্র বিশ কেজি মিষ্টি কিনেছি। একটু বেশী করে মিষ্টি কিনে এনেছি। কারণ তৈয়বার জন্মের পর কোথাও মিষ্টি পাঠানো হয়নি। সুচরিতা খুব দারুন একটা রেজাল্ট করলো। দুটি সুখবরের মিষ্টি একসাথে বিলিয়ে দেই।
——(মনে মনে বললেন আদিখ্যাতা দেখে আর বাঁচি না)তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। ড্রাইভারকে দিয়ে সাবেরা, তাহেরা আর জোহরার বাসায় মিষ্টি পাঠিয়ে দে। তোর শ্বশুরবাড়িতে মিষ্টি পাঠিয়েছিস?
——এরপর আবার যেদিন ও বাড়িতে যাবো তখন মিষ্টি কিনে নিবো।
আর একটু আদিখ্যাতা দেখিয়ে বললেন
——সুচরিতাকে একটু ডেকে দে? ওকে নিজের হাতে আজ মিষ্টিমুখ করাবো।( মনে মনে ভাবলেন এতে যদি মাথা থেকে মাস্টার্সের ভর্তির ভুতটা নেমে যায়)
যাক হিমেল মনে মনে খুব খুশী হলো। ও ভাবলো ওর মা মনে হয় সুচরিতাকে ভালোবাসতে পেরেছে। হিমেলের ডাকে সুচরিতা ওর শাশুড়ী মায়ের ঘরে এসে বললো,
——মা,আমায় ডেকেছেন?
——-হুম, আসো তোমাকে আজ নিজের হাতে মিষ্টি খাওয়াবো। তুৃমি আমার সম্মান রেখেছো। পড়ালেখা তো অনেক হলো এখন মনোযোগ দিয়ে সংসার করো।
শাশুড়ীমায়ের মুখের কথাটা শোনামাত্র ওর অ্যান্টিনা সজাগ হয়ে উঠলো। তারপরও বুকে সাহস রেখে ও বললো,
——-মা, আমি মাসটার্সে ভর্তি হবো।
——–সেটা পরে দেখা যাবে। এখন এদিকে আসো তোমাকে মিষ্টিমুখ করাই।
শাশুড়ী মা নিজের হাতে সুচরিতাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে বললেন,
—–কারিমাকে এই মিষ্টিটা দিয়ে এসো।
সুচরিতার পায়ের শব্দ রুমের কাছাকাছি আসতেই দড়াম করে কারিমা দরজাটা লাগিয়ে দিলো। সুচরিতা একটু অবাক হলো। তারপরও ভদ্রতা রেখে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বললো,
—–ভাবি, মা আপনার জন্য মিষ্টি পাঠিয়েছে।
—–তুমি টেবিলে মিষ্টিটা ঢেকে রেখো। আমি জেবাকে ঘুম পাড়িয়ে এসে খাবো।
——-জেবা ঘুমায়নি?
——-ঘুমিয়েছে কিন্তু ঘুমটা এখনও গাঢ় হয়নি।
সুচরিতা বুঝতে পারছে ওর এতো ভালো রেজাল্ট হবে হয়তো ওর শাশুড়ী মা এবং কারিমা কেউই আশা করেননি। কিন্তু শাশুড়ী মা খুব গভীর জলের মাছ। এবং কারিমার মতো এতোটা নীচু মনের মানুষ উনি নন। কিন্তু কারিমা আসলেই খুব সংকীর্ণ মনের মানুষ। তাই ওর হিংসাটা ও ঢেকে রাখতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে সেটা জিঘাংসায় রুপ নেয়। তবে আজ সুচরিতা নিজেকে কুল রাখার চেষ্টা করবে। ওর এতো ভালো সংবাদে ঘরের পরিবেশ এই মুহুর্তে ও খারাপ করতে চায় না।
তৈয়বার কাঁদার শব্দ শুনে সুচরিতা রুমের ভিতর চলে আসলো। অবশ্য হিমেল বিছানায় শুয়ে
বাচ্চাকে সামলানোর চেষ্টা করছে। সুচরিতা এসে তৈয়বাকে কোলে তুলে নিলো। ওর কান্নাও থেমে গেল। হিমেল শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
——আমাকে একটু মিষ্টি খাইয়ে দিলে না।
—–মিষ্টি তো তুমি আমাকে খাওয়াবে। আল্লাহপাকের রহমতে তোমার সন্তানের মা হলাম, এতো ভালো রেজাল্ট করলাম অথচ তুমি তো আমাকে কিছু গিফট করলে না। আসলে তুমি আমাকে কখনও ভালোবাসতে পারোনি।
হিমেল রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,
——আমাকে তোমার তাই মনে হয়?
——তা নয়ত কি?
হিমেল বালিশের নীচ থেকে একটা একভরি ওজনের সোনার চেইন বের করে সুচরিতার গলায় পরিয়ে দিলো। সুচরিতার মুখটা খুশীতে ঝলমল করে উঠলো। খানিকপরে মুখটা মলিন করে বললো,
—–করোনার পর তোমার ব্যবসা তেমন ভালো যাচ্ছে না। কেন এতো খরচ করলে বলোতো?
—–শোনো, জীবনে উত্থান পতন মান অভিমান অভাব অনটন থাকবে সেই কারনে এই আনন্দগুলোকে জীবন থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। মানুষের দীর্ঘজীবন বেঁচে থাকতে হলে এই সুখের মুহুর্তগুলো স্মৃতির সোনালী ফ্রেমে বন্দী করে নিতে হয়। যখন জীবনে দুঃখ এসে গ্রাস করে তখন এই সুখের স্মৃতির মুহুর্তগুলোকে অনুভব করে বেঁচে থাকতে হয়। আর ভেবে নিতে হয় নিশ্চয় সামনে সুদিন অপেক্ষা করছে। এতো সুন্দর সুন্দর কথা বললাম আমাকে একটু মিষ্টিমুখ করাও, গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।
সুচরিতা মিষ্টি আনতে কিচেনে গিয়ে দেখে কারিমা জেবার জন্য বিকালের নাস্তা রেডী করছে। ও কারিমাকে দেখে বললো,
—–ভাবি তোমার মিষ্টিটা টেবিলে ঢাকা আছে। জেবাকে একটু মিষ্টি খাইয়ে দিতে পারো।
—–আমার এখন এতো রস নাই।
একথা বলে কারিমা সুচরিতার দিকে তাকিয়ে ওর গলায় সোনার চেইনটার দিকে জ্বালাময়ী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
—–ছোটো ভাই তোমার জন্য আজ এই চেইনটা কিনে এনেছে?
সুচরিতাও চার বছরে এই সংসারে থেকে কিছুটা বুদ্ধি খরচ করতে শিখেছে। তাই বুদ্ধি করে কারিমাকে একটু খোঁচা দিয়ে বললো,
——আমার কি সে কপাল আছে ভাবি? মেয়ে হয়েছে বলে এনেছে। তা,না হলে কি আর আনতো?
একথা বলে সুচরিতা মিষ্টি নিয়ে কিচেন থেকে বের হয়ে গেল। কারিমা জেবাকে বিকালের নাস্তা খাইয়ে মনে মনে ভাবলো, শাশুড়ী মাকে এই চেইনের কথাটা বলতে হবে। আর সোহেলকে ও ছাড়বে না। ওর মেয়ে সন্তান হয়েছে বলে এ সংসারে ওকে কম কথা শুনতে হয়নি। মায়ের তালে পড়ে সোহেলও অনেক কথা শুনিয়েছে। সেবার ঈদের সময় ছোটো এক জোড়া ঝুমকা জেবার নাম করে কিনতে চেয়েছিলো। সোহেল বলে কিনা ” পয়দা তো করেছো মেয়ে। ওকে যা দিবে সব নিয়ে তো পরের বাড়ি যাবে। আর এদিকে আমি ফতুর হয়ে যাই, তাই না “?
সুতরাং সুচরিতাকে এ বাড়িতে থেকে এতো সুখ ভোগ করতে দিবে না।
আরোও কিছু কথা আছে যেটা এই মুহুর্তেই শাশুড়ী মাকে বলা উচিত।
মাগরিবের আযান শোনা যায়। সুচরিতা আর হিমেল ওজু করো ওদের রুমে নামাজে বসে যায়। কারিমাও নামাজ পড়ে জেবাকে টিভি ছেড়ে দিয়ে খুব বিষন্ন মুখে শাশুড়ী মায়ের রুমে নারিকেল তেলের শিশিটা নিয়ে গেল। তারপর ওর শাশুড়ীকে বললো,
——মা, মাথায় তেল দিয়ে দিবো?
—–দাও, তুমি ছাড়া তো আর কারো আমার মাথায় তেল দেওয়ার কথা মনে পরে না। মুখটা মলিন কেন?মনে হয় তোমার শরীর খারাপ।
——-মা, আমার মনটা ভালো নেই। আপনার ছেলের নাকি ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে?
——আমাকে আগে বলোনি কেন?
—–আমি তো কালকে জানলাম। এখন আমার কি হবে মা?
——এতো অস্থির হওয়ার কিছু নাই। ও ফোন দিলে আমাকে দিও। ওর সাথে কথা বলবো।
—–আপনি ছাড়া এ বাড়িতে সোহেলের কথা আর কেউ চিন্তা করে না। এদিকে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আবার কেউ সোনার চেইন কিনে মেয়েকে উপহার দেয়। আর মেয়ের ছুঁতোয় সেই চেইন মা পড়ে বেড়ায়।
—–হিমেলটার বুদ্ধি শুদ্ধি কোনোদিন হবে না। বলদের মতো আচরণ করে। ছেলে হলে না হয় বুঝতাম আয় করে বরকত বাড়িয়ে দিবে। হয়েছে তো মেয়ে। যাবে তো সব পরের বাড়ি নিয়ে। লোকসানের বোঝাটা আর বাড়িয়ে লাভ কি?
—–আমার তো নরমালে বেবি হয়েছে। সুচরিতার হয়েছে আবার সিজার করে। এখানেও এক গাদা পয়সার অপচয়। তারউপর শুনতে পারছি ও নাকি মাস্টার্সে ভর্তি হবে?
——আমারে পাগলা কুত্তা কামড়িয়েছে তাই না? ওকে আমি মাস্টার্সে ভর্তি করাবো? আমার পেটের ছেলে যেখানে এম,এ পাশ করতে পারলো না সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসে একজনকে বিদ্যাধারী বানাবো তাই না? দেখো কি করে এম,এ পড়ার স্বাধ মিটিয়ে দেই।
বেশ কিছুদিন সময় পার হয়ে গেল।এদিকে সুচরিতার মাস্টার্সে ভর্তির ফরম ছাড়া হয়েছে। ও হিমেলকে ফরম আনতে বললো। হিমেল সেদিন অফিস থেকে এসে মাগরিবের নামাজ পড়ে ওর মায়ের কাছে সুচরিতার মাস্টার্সে ভর্তির কথা বলতে গেলে ওর মা বলে,
——কি করে পারলি এ কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে। ওদিকে বিদেশ বিঁভূয়ে তোর ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। একবার খোঁজ নিয়েছিলি ভাইটা কেমন আছে? স্বার্থপরের মতো নিজের বউ বাচ্চা নিয়ে মেতে আছিস। জয়েন্ট পরিবারে সবার দুঃখ কষ্ট সবাইকে ভাগ করে নিতে হয়। আমাকে কবে একটা গয়না গড়ে দিয়েছিস?
—— ভাইয়া তো প্রতিদিন ভাবির সাথে কথা বলে। আমি ভাবলাম ভালোই আছে। খারাপ কিছু হলে তো বলতো। তাছাড়া অফিস নিয়ে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকি তাই ফোন দেওয়া হয় না। ঠিক আছে এখন থেকে ফোন দিয়ে খোঁজ নিবো। আর তোমাকে বহুবার গয়না গড়িয়ে দিতে চেয়েছি তুমি রাজি হওনি। সব সময় বলেছো গয়নার যাকাত তুমি টানতে পারবে না। তাই কেনা হয়নি। ঠিক আছে তোমাকে একজোড়া বালা গড়ে দিবো। মা,সুচরিতার আগামীকাল ভর্তির লাস্ট ডেট। কাল ওকে নিয়ে আমি ভার্সিটিতে যাবো।
—–ও মনে মনে তুই এই ফন্দি এঁটেছিস। আমাকে গয়না গড়িয়ে দিয়ে বউয়ের উচ্চাশা পূরণ করবি। সে আমি হতে দিবো না। আমি যখন একবার না বলেছি সেটা আর হা হবে না।
সুচরিতা নিজের রুমে বসে সবটাই শুনলো। কিন্তু ও মনে মনে ভাবলো ইনশাআল্লাহ কাল ও অবশ্যই ভর্তি হতে যাবে। কোনো বাঁধাই সে শুনবে না। কারণ এটা ওর অস্তিত্বের প্রশ্ন।
হিমেল বিরস বদনে ঘরে এসে শুয়ে পড়লো। সুচরিতাও রাগ করে ওর পাশে শুয়ে পড়লো। মনে মনে সকাল হওয়ার অপেক্ষা করলো। রাত দশটার দিকে কারিমা খুব আহ্লাদ করে সুচরিতার রুমের দরজায় নক করে বললো,
——ছোটো ভাই ডিনার করবেন না?
——-না, আমার ক্ষিদে নেই। তোমরা খেয়ে নাও।
সুচরিতাও রাতে ডিনার না করে ঘুমিয়ে পড়লো। পরদিন খুব ভোরে সুচরিতা ঘুম থেকে উঠলো। সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে টেবিলে ঢেকে রাখলো। কাজের খালা এসে সব কাজ গুছিয়ে চলে গেল। সুচরিতা জেবাকে খাইয়ে দিলো। তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করে রেডী হয়ে হিমেলকে বললো,
——আমি কলেজে যাচ্ছি। তুমি তৈয়বাকে দেখে রেখো।
—–সুচরিতা মাথা গরম করো না। রাতে কিছু খাও নাই। নাস্তা করে নাও। আমিও যাবো তোমার সাথে।
এ কথা বলে হিমেল ওর মায়ের রুমে গিয়ে বললো,
—–মা, আমি সুচরিতার সাথে কলেজে যাচ্ছি।
ওর মা রেগে গিয়ে বললো,
—–তুই যদি আজ ওকে ভর্তি করতে যাস তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি।
হিমেল কিছু বলার আগেই সুচরিতা শাশুড়ীর রুমের দরজায় এসে বললো,
——আজ যদি আমি ভর্তি হতে না পারি তাহলে তুমিও আমার মরা মুখ দেখবে।
এ কথা বলে সুচরিতা ঝড়ের গতিতে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।

চলবে

#ধারাবাহিক গল্প
#সুচরিতা
পর্ব-তেইশ
মাহবুবা বিথী

সুচরিতার এভাবে ঝড়ের গতিতে চলে যেতে দেখে হিমেল ও নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। ড্রাইভার মতিকে গাড়ি বের করতে বলে তৈয়বাকে রেডী করে নিয়ে সুচরিতার কলেজের দিকে রওয়ানা দিলো। ওর খুব টেনশন হচ্ছে। অজানা আশঙ্কায় বুকটা বারবার কেঁপে উঠছে। এদিকে সুচরিতা ফোন বাসায় ফেলে রেখে যাওয়াতে হিমেলের আরো অস্থির লাগছিলো। কল্যানপুর থেকে বাংলাকলেজ খুব একটা দূরে নয়। কিন্তু আজ যেন হিমেলের মনে হতে লাগলো এ পথ যেন শেষ হবার নয়। কলেজের গেটের একপাশে গাড়িতে বসে গেটের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা একটা বাজে। এদিকে তৈয়বাও কাঁদতে লাগলো। যদিও হিমেল সাথে করে ফিডার নিয়ে এসেছে তারপরও তৈয়বা মুখে দিতে চাইছে না। তৈয়বার চার পেরিয়ে পাঁচমাস বয়সে পড়েছে। ওর এই বয়সে এতো দীর্ঘসময় মাকে ছেড়ে থাকেনি। বেলা দুটোর দিকে সুচরিতাকে কলেজের গেটের কাছে আসতে দেখে হিমেলের ধরে যেন প্রাণ ফিরে এলো। সুচরিতাকে দেখে হিমেল গাড়ি থেকে নেমে বললো,
—–ফোনটা সাথে করে আনবে না?টেনশন হয়তো।
আর মেয়েটাও কখন থেকে কান্নাকাটি করছে।
সুচরিতা হিমেলকে দেখে অবাক হলো। ওর মায়ের কসম ফেলে মেয়েকে নিয়ে কলেজে ছুটে এসেছে। তাহলে কি এখন থেকে ওর বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে নাকি পেন্ডুলামের মতো কখনও এদিক কখনও ওদিক দুলবে। সুচরিতা তৈয়বাকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে বসে ফিডার মুখে তুলে দিলো। মায়ের শরীরের ঘ্রান পেয়ে তৈয়বার কান্না থেমে গেল। সুচরিতার হিমেলকে দেখে নির্ভার লাগলেও পুরোপুরি ওর উপর ভরসা করতে পারলো না। কারণ ও জানে যেই ওর শাশুড়ী কাছে টেনে বাবা,বাছা বলে ব্রেনটা ওয়াশ করবে অমনি হিমেল মোমের মতো গলে যেতে থাকবে। তখন ওর শাশুড়ী মা যা বলবে হিমেল তাই করবে। আর ওর শাশুড়ী মাকে নাচাবে কারিমা আর সোহেল। সুচরিতার মুখ দিয়ে বিরাট দীর্ঘশ্বাস বের হলো। আজ বাসায় গিয়ে কি পরিস্থতি মোাকাবেলা করতে হবে কে জানে?
সুচরিতার নিরবতা দেখে হিমেল বললো,
—–কি এতো ভাবছো বলতো?
——ভাবনার কি শেষ আছে?
হিমেল জানে,সুচরিতা রাতে ডিনার করেনি। সকালে সবার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডী করেছে কিন্তু নিজে খাওয়ারও সুযোগ পায়নি। ওর মলিন বিবর্ণ মুখটার দিকে তাকিয়ে হিমেলের খুব কষ্ট অনুভব হলো। সুচরিতার নিরবতায় হিমেলের নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো। তাই পরিবেশটাকে সহজ করার জন্য বললো,
——আমার খুব খিদে পেয়েছে। চল কোথাও একটু বসে কিছু খেয়ে নেই। তুমিও তো কাল রাত থেকে কিছু খাওনি।
সুচরিতা একটা মলিন হাসি দিয়ে বললো,
—–তুমিও আমার কথা ভাবো?
——এটা তুমি কি বললে?
——ঠিক আছে চলো।
এতোক্ষণ ওর কোনো ক্ষুধা অনুভব হয়নি। তৈয়বাও ঘুমিয়ে পড়েছে। হিমেলের কথা শুনে পেটের ভিতরটা মোঁচড়াতে লাগলো। আসলে নিজেকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ? বরং লড়াই করতে গেলে সুস্থ থাকতে হবে। আর সুস্থ থাকার জন্য খেতেও হবে। পঁচিশ বছরের জীবনের এই সময়টাতে এসে সুচরিতার মনে হতে লাগলো এই লড়াইটা ওর একার। ওর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার দায় ওকেই পালন করতে হবে। আল্লাহপাক ছাড়া এই পৃথিবীতে ও কারো উপর ভরসা করতে চায় না।
হিমেল আর সুচরিতা বাইরে লাঞ্চ করে বিকাল পাঁচটায় কল্যানপুরে চলে আসলো। গেট দিয়ে ঢোকার সময় দারোয়ান শুক্কুর মিয়া হিমেলকে সালাম দিয়ে বললো,
—–ছোটো সাহেব, বড় সাহেব আসছে। আপনার কথা জিগাইছিলো।
——আচ্ছা ঠিক আছে।
গাড়ি থেকে হিমেল আর সুচরিতা নেমে ঘরের দরজার কাছে এসে দেখে দরজাটা ভেজানো আছে। ঘরে ঢুকতেই রোমেল হিমেলকে ডেকে বললো,
——আয় এদিকে বোস তোর সাথে কথা আছে।
ড্রইংরুমে জোহরা আর রোমেল বসে আছে। সুচরিতা বুঝে গেছে কাহিনী কি হয়েছে? দেখা যাক কপালে কি লেখা রয়েছে। ও জোহরা আর রোমেলকে সালাম দিয়ে তৈয়বাকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
——কোনো খোঁজ খবর না দিয়ে এভাবে চলে আসলে? সব কিছু ঠিক আছে তো।
এমন সময় রাজন দৌড়ে এসে হিমেলকে বললো,
—–চাচ্চু কেমন আছো? আমি তোমার সাথে পিজ্জা খেতে বাইরে যাবো। যশোরের মানুষ ভালো পিজ্জা বানাতে পারে না।
——রাজন তুমি এখন ভিতরে যাও। চাচ্চুর সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আছে।
বাবার মুখে একথা শুনে রাজন মুখ ভার করে চলে গেল।
——তোর বাচ্চাটাকে দেখতে আসলাম। জন্মের পর পর আসার ইচ্ছা ছিলো। রাজনের পরীক্ষা ছিলো তাই আসা হয়ে উঠেনি। এখন পদ্মা ব্রীজ হয়ে যাওয়াতে খুব তাড়াতাড়ি আসা যায়। চার ঘন্টা সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানো যায়।
——তা ঠিক। তবে জিনিসপত্রের দাম প্রতিনিয়ত যেভাবে বেড়েই চলেছে এতে টিকে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ছোঁয়া ভালো লাগে কিন্তু যখন কর আর ভ্যাট দিতে দিতে পকেট খালি হয়ে যায় তখন মনে হয় খেয়ে পড়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ডলারের সংকট হওয়াতে এলছি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। এতে ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
হিমেল জোহরার দিকে তাকিয়ে বললো,
—–তুই হঠাৎ আসলি।
——কেন আমার কি এ বাড়িতে আসা নিষেধ?
——না নিষেধ হবে কেন?
——মাকে কেমন সুখে রেখেছো সেটা দেখতে এসেছি। আজকে এসে যা দেখলাম বলার ভাষা হারিয়ে ফেললাম।
—–কেন তুই এসে কি দেখলি?
——তুমি আবার জানতে চাইছো কি দেখেছি?
——মায়ের চোখে পানি দেখেছি। তোমার বউ কি লেখাপড়া শিখে জজ ব্যারিস্টার হয়ে দেশোদ্ধার করবে যে তাকে সংসার ফেলে এখন ছুটতে হবে। তবে ওর বাপ মা ওরে বিয়ে দিলো কেন? লেখাপড়া শেখাতো। আমরা তো জোর করে ওকে এ বাড়ির বউ বানাইনি। ওর বাপ মা দিয়েছে বলে আমরা ওকে এ বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছি। এখন শুধু শুধু লেখাপড়ার বাহানা তুলে সংসারে অশান্তি করা। তোমার বউকে এসব বন্ধ করতে বলো। ( সুচরিতার উপর অনেকদিন ধরে পুষে রাখা রাগ ঝাড়তে পেরে আজ জোহরার নিজেকে খুব হালকা লাগছে। ও মনে মনে বলছে ঘুঘু দেখেছো তুমি তবে ঘুঘুর ফাঁদ তো দেখোনি। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাবে বাছাধন আমাকে কথা শোনানোর ঝাল কিভাবে তুলে নেই। খেলা তো কেবল শুরু করেছি)
——এটা এখন সম্ভব নয়। আজ ও ভর্তি হয়ে গেছে। আর এতোটা টাকা খরচ করে যখন ভর্তি করেছি তখন পড়াশোনাটা শেষ করুক। মোটে তো আর এক বছর।
——আমি বলি কি, মা যখন এই মুহুর্তে চাইছে না তখন সুচরিতার এখন মাস্টার্সের ক্লাস করার দরকার নাই। মায়ের রাগটা পরে গেলে সুচরিতা তখন আবার ভর্তি হয়ে মাস্টার্সের পড়াশোনা করুক। আসলে সোহেলের টেনশনে মায়ের মেজাজ মর্জি ভালো থাকে না। আর একটা বিষয় একবউ সংসারে খাটবে আর এক বউ পড়াশোনা করবে এটা দেখতে তেমন ভালো দেখায় না।
——কিন্ত ভাইয়া সুচরিতা তো কারো ঘাড়ে কাজ চাপিয়ে দিয়ে পড়াশোনা করে না। সংসারের সব দায়িত্ব পালন করে তারপর বাকিটা সময় লেখাপড়ায় ব্যয় করে। এতে আমি তো কোনো সমস্যা দেখছি না।
এ কথা বলে হিমেল নিজের রুমে চলে আসলো। রোমেলের মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। হিমেলকে দেখে সখিনা বললো,
——ছোটো ভাই, তোমার মেয়ে অনেক ভাগ্যবতী। দেখতে পুরোটা তোমার মতো হয়েছে।
——তাই ভাবি। তবে বড় হওয়ার সময় চেহারা অনেকবার পরিবর্তন হয়।
এ কথা বলে হিমেল ওয়াশরুমে চলে গেল। সখিনা সুচরিতাকে বললো,
——ছোটোভাই বাহির থেকে কেবল ফিরলো। একটু বিশ্রাম নিক। আমি আছি কয়েকদিন। পরে গল্প করা যাবে। তোমাকে একটা কথা বলি স্রোতের বিপরীতে চলতে গেলে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়। দেখো তুমি কতটা শক্তি ধারণ করতে পারো।
এ কথা বলে সখিনা শাশুড়ী মায়ের রুমে চলে গেল। সুচরিতা ফ্রেস হয়ে এসে তৈয়বাকে বেস্ট ফিডিং করিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।

এদিকে জোহরা মায়ের রুমে গিয়ে কারিমা আর সখিনার সাথে গল্প করতে বসলো। কারিমা আদিখ্যাতা করে জোহরাকে বললো,
——আপু মা আজকে দুপুরে কিছুই খেতে পারেনি।
——কি রান্না করেছিলে?
—–পেঁপে ভর্তা, ইলিশ মাছ দিয়ে বেগুন আর করোল্লার চচ্চড়ি।
মায়ের দিকে তাকিয়ে জোহরা বললো,
—–এভাবে শুয়ে আছো কেন?আমাদের কিছু খেতে দাও।
সুচরিতার শাশুড়ী শোয়া থেকে উঠে কারিমাকে বললো,
——মহারানীকে বলো একটু তেলের পিঠা বানিয়ে দিতে। আমার দাদুভাই তেলের পিঠা পছন্দ করে।
এ কথা শুনে কারিমার শরীরটা জ্বলে উঠলো। রাজনকে দেখলে শাশুড়ী মায়ের আদিখ্যাতা বেড়ে যায়। কিন্তু মুখে একটা ফেক হাসির প্রলেপ মেখে
কারিমা সুচরিতাকে ফরমায়েস দিয়ে আবার শাশুড়ী মায়ের রুমে চলে গেল। জোহরাও আহ্লাদ করে মাকে বললো,
—–মা আজকে একটু বাটা ঝাল দিয়ে মুরগীর মাংস রান্না করবে? আমার খুব খেতে ইচ্ছে করছে। আর তুমিও তো পছন্দ করো বাটা ঝালের তরকারি। দুপুরে যখন ঠিক মতো খেতে পারোনি রাতে তো খেতে হবে। তা,না হলে শরীর কিভাবে ঠিক থাকবে?
——এখন আবার ঝাল বাটবে কে?
শাশুড়ী কিছু বলার আগেই কারিমা বললো,
——মা দুপুরে তরকারী কুটতে গিয়ে আমার হাত কেটেছে। আমি তো ঝাল বাটতে পারবো না।
জোহরা কারিমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো,
——তুমি বাটবে কেন? ছোটো ভাবিকে বাটতে বলো। একটু ধনিয়াও বাটতে বলো। মাংসটা বড়ভাবি রান্না করবে।
সুচরিতার ঝাল বাটার কথা শুনে শাশুড়ী মাও খুশী হলেন। সুচরিতার উপর থেকে রাগটা একটু কমে আসলো। কারিমাও মনে মনে খুশী হলো। ওর এই মুহুর্তে কোনো কাজকর্ম নেই। শাশুড়ী মায়ের ঘরে বসে সবার মুন্ডু চটকানো যাবে। আর সুচরিতা ঝাল বাটতে গিয়ে নাকের জল আর চোখের জল এক করুক। সখিনা কিচেনে গিয়ে তেলের পিঠে গুলো নিয়ে এসে সবাই খেতে দিলো। আর শুকনো মরিচ আর ধনে বাটতে দিয়ে আসলো। ঝাল আর মরিচের দিকে তাকিয়ে সুচরিতার চোখের জল বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো বের হয়ে আসতে চাইলো। কিন্তু এক ফোঁটা জল ও বের হতে দিলো না। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো ঝড় বয়ে যাক মাস্টার্সে ভর্তি যখন ও হয়েছে তখন পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। কোনো স্টাডি গ্যাপ ও দিবে না। এটাই ওর প্রতিবাদ।
ওর শাশুড়ী মায়ের রুমে সবাই বসে পিঠে খেতে লাগলো। রোমেল হিমেলকে ডেকে নিয়ে মায়ের রুমে পিঠে খেয়ে পরিবেশটাকে স্বাভাবিক করতে বললো,
——সুচরিতার রান্নার হাত বেশ ভালো। পিঠেগুলো নরম তুলতুলে। মুখে দিতেই যেন গলে যাচ্ছে।
ভাসুরের মুখে প্রশংসা শুনে কারিমার শরীর যেন জ্বলতে লাগলো। তাই ও প্রসঙ্গ ঘুরাতে বললো,
——মায়ের ট্রেনিং এ আমরা রান্না শিখেছি। রান্না তো ভালো হবেই ভাইয়া।
—–কথাটা ঠিক বললে না। তোমরা তিনজনই মায়ের কাছে রান্না শিখেছো। কিন্তু তিনজনের হাতের রান্না তিনরকম। তবে সুচরিতার রান্না তোমাদের সবার থেকে আলাদা।
জোহরা মনে মনে ওর ভাইয়ের উপর বিরক্ত হলো। কোথায় এই সুযোগে ছোটো ভাই আর ওর নটাঙ্গিনী বউটারে বাঁশের উপর রাখবে তা না করে প্রশংসা গাইছে। সুচরিতার শাশুড়ী মা ও মনে মনে বিরক্ত হচ্ছেন। তাই উনি প্রসঙ্গ ঘুরাতে বললেন,
—–আমার জোহরার হাতের রান্নার অনেক স্বাদ। একদিকে চাকরি করে সংসারে আয় করছে তেমনি অন্যদিকে রান্নার লোক ছাড়াই ঠিকে লোক দিয়ে সংসারের সব কাজ একাই সামলে নিচ্ছে। এর সাথে আবার মেয়েটাকেও লেখাপড়া নিজেই দেখে। এখন পর্যন্ত টিচার দেয়নি।
——ও নিজেই তো শিক্ষক। আর ওর মেয়ে তো ওর স্কুলেই পড়ে(হিমেল বললো)
——তারপরও লাগে।
সুচরিতা এদিকে ভাত, বাটা ঝাল দিয়ে মুরগীর ঝাল মাংস বেগুন ভাজি আর সালাদ করে টেবিলে বেড়ে দিয়ে শাশুড়ীর মায়ের ঘরে গিয়ে বললো,
——মা টেবিলে ভাত বেড়ে দিয়েছি।
জোহরা এ কথা শুনে বললো,
—–মাংসটা তো ভাবির রান্না করার কথা ছিলো।
—–ভাবি আজকে জার্ণি করে আসলো তাই আমিই রান্না করলাম।
রোমেল একটু বিরক্ত হয়ে বললো,
—–একজন রান্না করলেই তো হলো। এটা নিয়ে এতো পেঁচানোর কি আছে?
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ন,টা বাজে।
——জোহরা তোর তো বাড়ি যেতে হবে। চল খেয়ে নেই।
সবাই একসাথে বসে রাতের ডিনার করে নিলো। কারিমা আর সখিনা ওদের বাচ্চাদের খাইয়ে দিলো। মুরগীর মাংসটা হেব্বি হয়েছে। শাশুড়ী মা থাকতে না পেরে বললেন,
—–অনেকদিন পর বাটা ঝালের তরকারী খাচ্ছি। বেশ স্বাদ লাগছে।
সবাই খুব তৃপ্তি সহকারে ডিনার করলো। হিমেল জোহরাকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসলো।

পরদিন খুব সকালে সুচরিতা ঘুম থেকে উঠলো। রুটি আর সবজি বানিয়ে টেবিলে দিলো। চা বানিয়ে ফ্লাক্সে ঢেলে রাখলো। বাচ্চাদের জন্য নুডুলস বানালো। তৈয়বার খাবার রেডী করে রেখে হিমেলকে বললো,
—–তৈয়বা ঘুম থেকে উঠলে খাইয়ে দিও।
——তুমি কোথায় যাচ্ছো?
——আমার সকালে দুটো ক্লাস আছে। বারোটার মধ্যে চলে আসবো।
—-আজ না গেলে হতো না? ভাইয়া ভাবি চলে যাবার পর তুমি না হয় নিয়মিত ক্লাস করো।
—–প্রথম ক্লাস বাদ দিতে চাইছি না।
সুচরিতার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে হিমেল আর কিছু বললো না।
তারপর রেডী হয়ে শাশুড়ী মাকে বলে ন,টার মধ্যে সুচরিতা বাসা থেকে বের হয়ে গেল। শাশুড়ী মা ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,
–এ অন্য জিনিস। দুনিয়া লয় হয়ে যাক। কিন্তু নিজে একবার মুখ দিয়ে যেটা বার করবে সেটা উনিই করেই ছাড়বেন।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে