সম্পর্ক পর্ব-০৩

0
653

#সম্পর্ক
#Tasfiya Nur
#পর্বঃ৩

আসসালামু আলাইকুম আন্টি,কেমন আছেন?
ওয়ালাইকুম আসসালাম মা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমি,তুমি কেমন আছো?
আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আন্টি,তো কি মনে করে হুট করে এই মেয়ের কথা মনে পরলো শুনি।
রাহাত কি তোমার বাসায় গেছে মহুয়া আসলে আজ ওর বোন রিতুশাকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ অথচ ওর ই খোজ নেই ওকে জানালে তো বলতো আগে স্টাডি শেষ হোক রিতুশার এটা বলতো কিন্তু কি করবো বলো ছেলের বয়স বাড়ছে আর ওর জিদ বোনকে বিয়ে দিয়ে বিয়ে করবে তাই ওকে না জানিয়েই ব্যবস্থা করে ফেলছে ওর বাবা।তা মা তুমি একটু রাহাতকে বুঝিয়ে বাসায় পাঠাবে।
ওহহ ঠিক আছে আন্টি আমি রাহাতকে বলছি।
তুমিও সাথে এসো মা আমি অপেক্ষায় থাকবো অনুরোধ রইলো এটা সাথে পুচকিকে সাথে এনো।
আন্টি আপনি গুরুজন আদেশ করবেন অনুরোধ নয় আমি আসবো।
কল কেটে রাহাতের দিকে তাকায় মহুয়া কলটা রাহাদের মা মিসেস রেহানার ছিলো সবাইকে আড়াল করে রুমের সাথে এটাচড বারান্দায় গিয়ে কথা বলা শেষ করে রাহাতের দিকে এগিয়ে আসে সে তিথিয়া রাহাত আর মিসেস শিরিন গল্পে মজে আছে তাদের মাঝে খিলখিলিয়ে হাসছে তিথিয়া।মেয়ের হাসিমাখা মুখ মনের ভিতর এক প্রশান্তি বয়ে দেয় মহুয়ার।
রাহাত তোমার মা বাসায় যেতে বললো তোমাকে সাথে আমাকে আর তিথিয়াকে দাওয়াত দিলেন।
মৃদুস্বরে কথাটা বললো মহুয়া।
মহুয়ার কথায় আড্ডার মাঝে অবাক হয়ে দাড়ায় সে। তারপর হাসি হাসি মুখে উত্তর দেয়,
ঠিক আছে চলো যাওয়া যাক।
তার আগে সকালে খাবার শেষ করা যাক সবাই তো শুধু হালকা নাস্তা করলে সকালে।
মিসেস শিরিন বলেন কথাটা।
ইয়াহু কতদিন পর ছোটো নানাভাইয়ের বাসায় যাবো। তিথিয়ার খুশিতে সবাই হেসে দেয় তারপর ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে পরে মিসেস শিরিন আর মহুয়া টেবিল সাজিয়ে নেয় টুকটাক গল্পের সাথে খাওয়া দাওয়া করছে।

চৌধুরী ভিলার ভিতরে খাবার টেবিলে বিরাজ করছে একটা থমথমে পরিবেশ, সাগরের মা আর বড় ভাইয়ের ওয়াইফ মিসেস তানিয়া খাবার সার্ভ করছে সাগরের বাবা খাবার টেবিলে সারভেন্টদের খাবার সার্ভ করা পছন্দ করেন না যার দরুণ তারাই করছে টেবিলে বসে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে সাগর তার বাবা আর ছোটো ভাই সাদিফ আর বড় ভাইয়ের ছেলে সিফাত সাগরের বড় ভাই দেশের বাইরের ব্যবসার শাখা দেখে।তিনভাই আর বাবার প্রচেষ্টায় তাদের ব্যবসা কোম্পানি আজ অনেক উচু জায়গায় দাড় করাতে পেরেছে,তবে সাগরের ছোটো ভাই কিছুমাস আগে স্টাডি শেষ করে জয়েন হয়েছে।
খেতে খেতে সাগরের বাবা গলা খাকাড়ি দিয়ে কতা বলা শুরু করেন,
আজ মিটিংটা সেরে উত্তরার একটা ঠিকানা মেসেজ করে দিবো চলে যেয়ো সেখানে। খাবার টেবিলে বসে সাগরকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেন সাগরের বাবা।
কিন্তু কেন বাবা? খাবার খেতে খেতেই প্রশ্ন করে সাগর।
তুমি তো বিয়ে করবেনা শপথ করেছো কিন্তু তোমার ছোটো ভাই তার তো বিয়ের বয়স হয়েছে তাই বিয়ে করাতে হবে মেয়ে দেখতে যাবো তোমার ভাবী আমি আর সাদিফ এজন্য বড় ভাই হিসেবে কর্তব্য তোমার মেয়ে পছন্দ হলে আজকেই রিং বদল করে আসবো।
কিন্তু বাবা আমার ভালো লাগছেনা যাবোনা আমি তোমরা যাও।
বাবার কথার অমান্য করেনা সাগর কিন্তু তার এসব ভালো লাগেনা তাই সে মানা করে যাবেনা বলে।প্রতিত্তোরে সাগরের বাবা বলেন
আর কতটা কষ্ট আমাদের দিয়ে তোমার শান্তি হবে বলোতো ভালো সন্তান হতে পারোনি স্বামী হতে পারোনি এট লিস্ট ভালো ভাই হও তুমি জানোয় তোমার ভাই তোমায় সবথেকে বেশি ভালোবাসে এই পরিবারের মাঝে।
ঠিক আছে বাবা ঠিকানা টেক্সট করে দিও। মৃদুস্বরে কথাটা বললো সাগর।
আর শুনো কাল একটা কনসার্ট আছে বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে যে কলেজে প্রতিবছর ডোনেশন দেওয়া হয় সেখানে চিফ গেস্ট হিসেবে আমাকে ইনভাইট করেছে কিন্তু তুমি জানো আমার শরীর আজকাল ওতটা ভালো নেই তাই সম্ভব না তুমি যেয়ো আমার বদলে।তোমার জন্য নিজের শহর ছেড়েছি সব এখানে শিফট করেছি অন্তত কথা মান রাখো।
ঠিক আছে বাবা।খাবার শেষ করে উঠে যায় সাগর।সবাই কেমন অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে সবার একই ভাবনা তাদের ছেলে কবে আগের মতো হয়ে যাবে, বাবা আর ছেলের কথার মাঝে কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছিলো না তাই নিরব হয়ে শুনা ছাড়া উপায় ছিলোনা। তবে সাদিফের খুব আনন্দ হচ্ছে এটা ভেবে তার ভালোবাসা এতদিনে পূর্ণতা পাবে সে অন্তত নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসার উপর বিশ্বাস হীনতায় ভুগবে না।চোখের সামনে সব দেখে শিক্ষা হয়ে গেছে তার।
আসলে একটা সম্পর্কে বিশ্বাস জিনিসটা বড্ড বেশি প্রয়োজন যা আজকালকার সম্পর্কে একবিন্দু থাকেনা শুধু একেঅপরকে ছাড়ার অযুহাত খুজে বেড়ায়।
সবাই খাবার শেষ করে যে যার মতো কাজে যায় সিফাত স্কুলে চলে যায়। মিসেস মিলি আর তানিয়া খেতে বসে সবার চলে যাওয়ার পর দুই শ্বাশুড়ি বউ কথায় মেতে উঠে নতুন সদস্যের আগমনের জন্য কি কি করবে তাই আলোচনা করছে তারা।

জানো মহুয়া আমাদের কনসার্ট টা আমরা যে কলেজ থেকে স্টাডি শেষ করেছি সেই কলেজে।
গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে কথা বললো রাহাত, তারা খাবার শেষ করে বেড়িয়ে পরে রাহাতদের বাড়ির উদ্দেশ্যে, গাড়ির পিছন সীটে ফোনে গেমস খেলতে ব্যস্ত তিথিয়া সামনে ড্রাইভিং সীটের পাশের সীটে মহুয়া বসে গাড়ির জানালা দিয়ে যখন ব্যস্ত ঢাকা শহরের ব্যস্ততা দেখতে তখন রাহাতের কথাটা তার কানে আসে অবাক হয়ে তাকায় সে রাহাতের দিকে।
সত্যিই বলছো রাহাত উফ কতদিন পর কলেজে পা দিবো বিদায় অনুষ্ঠানের পর তো আর যাইনি সার্টিফিকেট তোলার সময় ছাড়া মিস করি খুব আগের দিন গুলো।
খুশি হয়ে কথা গুলো বলে মহুয়া তারপর আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।রাহাত মহুয়ার খুশিমাখা মুখপানে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে দিনদিন যেন মহুয়াকে সৌন্দর্যে ঘিরে ধরেছে উজ্জ্বল হলুদ ফর্সার মেয়েটার মুখ যেন মায়ায় ঘেরা একবার এই নারীর ভালোবাসা পেলে জীবনটা বৃথা যেত না তার। আনমনে কথাগুলো ভাবতে থাকে রাহাত মহুয়াকে দেখতে দেখতে।
রাহাতের সাড়াশব্দ পেয়ে বাইরের দিক থেকে রাহাতের দিকে তাকায় মহুয়া ভাবনায় ডুবে থাকা রাহাতকে দেখে একটু অবাক হয় মহুয়া সাথে লজ্জাও পায় কেমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারদিকে সব ভাবনা বাদ দিয়ে আবার জিগাসা করে রাহাতকে,
কি ভাবছো রাহাত?মহুয়ার প্রশ্নে থতমত খেয়ে জবাব দেয় রাহাত,
হ্যা সেটাই ঐ কলেজের বদৌলতেই তো তোমার দেখা পেয়েছিলাম ভাগ্যিস এডমিশন নিয়েছিলে।
হুম সেটাই তো ফুফু চেয়েছিলো নিজে সাবলম্বী হই এজন্য তিথিয়ার জন্মের পর ফুফার হেল্প এ এডমিট হই অনার্সে একবছর গ্যাপ গিয়েছিলো তিথিয়া পেটে থাকায়।স্বপ্ন ছিলো ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার সফলও করেছি তোমার সাহায্যে গানের জগতে পা দিয়েছি আমার কঠিন সময়গুলোতে পাশে ছিলে ভাগ্যিস নয়তো কি হতো কে জানে।আর ঐ বাদর শাকচোর কচু গাছের লতি হারামি মাহিম কলেজের ভিপি তোমার ক্লাসমেইট ছিলো প্লাস ক্লাসশত্রু বিভীষণ তোমার এত ফ্যান ফলোয়ার তার যেন সহ্য হতোনা র্যাগ দিয়েছিলো বলেই তো তোমার সাথে দেখা তোমায় প্রোপজ করার আদেশ দেয় তখন কত বোকা ছিলাম দেখো ভয়ের চোটে দেখো সেটাই করেছিলাম তারপর ফ্রেন্ডশিপ আর আজও সেটা টিকে আছে তুমি তো তখন তোমার গান ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে লক্ষ লক্ষ ভিউ তোমার গানে তোমরা ৫জন ফ্রেন্ড মিলে গ্যাং ও ছিলে একটা ভাগ্যিস মাহিম ভাই ওমন করেছিলো নয়তো তোমায় চিনতাম না আল্লাহ রহম করুক এমনই যেন থাকে।তিন বছরের সিনিয়র ছিলে কলেজের নবীনবরণ অনুষ্টানে আমার একমাত্র বান্ধবীর জন্য গানের খাতায় নাম দিই সেইদিনই গান শুনে তোমার দলে নিয়ে নাও আমায়।মনে আছে এগুলো রাহাত?
একধারে কথা গুলো বলে থামে মহুয়া, খেয়াল করে দেখে তিথিয়া গেমস রেখে তার কথা মনেযোগ দিয়ে শুনছে আর রাহাতও মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখছে, মহুয়া ওদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ায় চোখের সামনে।তারপর নিভু নিভু চোখে প্রশ্ন করে কি হলো তোমাদের এভাবে তাকিয়ে কেন আছো মনে হচ্ছে ভিনগ্রহের প্রাণী দেখছো।
হ্যা মাম্মাম তাই দেখছি তোমাকে এত কথা বলতে প্রথম দেখলাম।
আমিও তিথিয়ার সাথে একমত।
হয়ছে তোমাদের এখন তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করো গাড়ি তো না যেন ঠ্যালাগাড়ি।
মহুয়ার কথায় হেসে দেয় তিথিয়া আর রাহাত, জোড়ে ড্রাইভ করে রাহাত বাসায় আসে তারা।বাসায় এত আয়োজন দেখে বারবার তার মাকে প্রশ্ন করে আজ কিছু স্পেশাল নাকি।মহুয়ার সাথে তার মায়ের কথা হওয়ার পর কি কথা হয়েছে বাসায় কেন যেতে বলে জানতে চাইলে মহুয়া বলেনি শুধু বলেছে আন্টির বারণ পরে জানতে পারে তার বোনকে দেখতে আসছে পছন্দ হলে রিং বদল হয়ে যাবে তাই এত আয়োজন রাহাত এসব জেনে একটু রাগারাগি করে পরে মহুয়ার কথায় চুপ হয়ে যায়।মহুয়াও রাহাতের মায়ের সাথে হাত লাগায় কাজে, মহুয়াকে পেয়ে খিব খুশি রাহাতের মা। তিথিয়া রিতুশার রুমে তার সাথে গল্প করতে বিজি।রাহাত নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে মায়ের উপর রাগ তার রিতুশার বিয়ে হলে তিনি রাহাতের পিছনে লাগবেন বলে এত রাগ কিন্তু মহুয়া তাকেই তো রাজী করাতে পারলো না এতদিনে মনের কথা সরাসরিও বলা হয়নি মহুয়া সব বুঝেও চুপ থাকে।এক ধান্ধায় এসব ভেবে যাচ্ছে রাহাত।রাহাতের বাবা ছেলেপক্ষ আসলে অফিস থেকে আসবে মূলত তার বিজনেস পাটনারের ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ের কথা চলছে দুই পরিবারের খুব মিল যাওয়া আসা অহরহ হয়।
বিকেল প্রায় হয় হয় মিসেস রেহানা মহুয়াকে বলেন রিতুশাকে শাড়ি পড়িয়ে রেডি করিয়ে দিতে আর সাথে নিজেকেও রেডি হতে বলেন উনি।মহুয়া মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।
বিকেলের দিকে মিটিং সেরে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে সাগর সেই সময় মেসেজ আসে ফোনে বাবার মেসেজ ঠিকানাটা চিনে সে কিন্তু মেয়ের বাসায় না যেতে বলে এখানে কেন কথাটা ভাবতেই ভাবতেই গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে পরে সাগর।
সন্ধ্যায় রাহাত রুম থেকে বের হয় তার বাবার ডাকে রিতুশার রুমে তিথিয়া মহুয়া বসে আছে ছেলেপক্ষের সামনে বসে সবার সাথে কথাবার্তা চলছে রাহাত আর তার বাবা মায়ের। ছেলের মায়ের সাথে রাহাতের মায়ের বন্ডিং অনেক ভালো তারা একসাথে নাস্তা সাজিয়ে এনে সবার সামনে দেয় রিতুশাকে তাদের আগে থেকেই দেখা শুধু ছেলে মেয়ে একে অপরকে দেখে হ্যা বললেই হলো।কথার এক পর্যায়ে মেয়েকে আনতে বলেন ছেলের বাবা। তার কথা অনুযায়ী রাহাতের মাকে ইশারা করে যেন মেয়েকে আনেন তিনি।মিসেস রেহানা যান মেয়ের রুমে তারপর মহুয়াকে বলে সাথে করে নিয়ে যেতে।মিসেস রেহানার কথা মান রেখে অনিচ্ছা সত্বেও রিতুশাকে নিয়ে পা বাড়ায় সে ড্রয়িংরুমের দিকে।কে জানতো এতগুলো বছর পর সে পরিচিত মুখগুলো এভাবে দেখতে পাবে।দরজার কাছে এসে থমকে দাড়ায় সে কারোরই খেয়াল নেই সেদিকে সবাই কথা বলতে বিজি।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে