শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-১৪+১৫

0
953

শেষ বিকেলের রোদ-১৪তম পর্ব
©শাহরিয়ার

সোহান:- বিছানার দিকে এগিয়ে এসে শক্ত করেহাত চেঁপে ধরে, এখনো কিছু করিনি তবে..

— ভয়ার্ত গলায় তবে কি?

সোহান:- একটা হাত ছেড়ে দিয়ে চুলের মুঠি ধরে, এগুলো কেটে ছোট ছোট করে দিবো।

— মানে কি কেন করবা এমনটা?

সোহান:- বাতাসে খুব বেশী উড়ে তাই কেটে দিবো।

— প্লীজ এমনটা করো না, আমি চিৎকার করবো।

সোহান:- মুখ চেঁপে ধরে চিৎকার করবি? চিৎকার কর দেখি তোর মুখে কতটা জোড় আছে।

— ছাড়ো আমাকে বলছি।

সোহান:- এই ঠোঁট নেড়ে নেড় কথা বলিস তাই না, আজ থেকে তোর ঠোঁট আর কাউকে দেখাতে পারবি না।

— প্লীজ ছাড়ো।

সোহান:- একদম চুপ, হাত মেলানোর অনেক সখ না আজ হাতই ভেঙে দিবো।

— তুমি কে হ্যাঁ? তুমি আমার কি হও? যে আমার সাথে এমন করছো?

সোহান:- কথাটা শোনার সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে ওহ তাইতো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমি কেউ না। এখুনি বের হয়ে যা ঘর থেকে।

— আমি তোমাকে এভাবে বলতে চাইনি।

সোহান:- বের হয়ে যা আমি কোন কথা শুনতে চাচ্ছি না।

— আর কোন কথা হলো না, চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে এক দৌঁড়ে আপুর রুমে চলে আসলাম। কান্না যেন কোন ভাবেই থামাতে পারছিলাম না।

আফরিন:- ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে এই কি হলো তোর কান্না করছিস কেন?

— কিছুনা এমনি বলেই চোখের পানি মুছার চেষ্টা করলাম।

আফরিন:- আরে কান্না করছিস কেন? কি হয়েছে বলবিতো। ছোট মানুষের মত কেঁদে চললে কি বুঝবো?

— আমাকে বকা দিছে আরও অনেক কথা বলছে।

আফরিন:- কে ভাইয়া?

— হুম

আফরিন:- কেন?

— আরমানের সাথে কথা বলার জন্য, হাত মিলিয়েছি তাই।

আফরিন:- ও আচ্ছা তাই নাকি তাহলেতো বেশ জ্বলছে ভাইয়া।

— তাকে জ্বালাতে গেলে যে আমি জ্বলে যাই আপু। আর সব চেয়ে বড় কথা আমি উল্টা পাল্টা কথা বলে ফেলছি রাগের মাথায়।

আফরিন:- আরে ব্যাপার না, তবে কি জানিস এই কয়েকদিনে এটা বুঝতে পেরেছি ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে।

— ভালোবাসে না ছাঁই যদি ভালোবাসতো তাহলে সব সময় আমার সাথে এমন করতে পারতো। আর আস্ত একটা আনরোমান্টিক ছেলে সে। সব চেয়ে বড় কথা এতো দিনেও ভালোবাসি বলতে পারেনি।

আফরিন:- তাতে কি সব ভালোবাসা কি মুখে বলতে হয়? কিছু কিছু ভালোবাসা অনুভবে বুঝে নিতে হয়।

— সোহান নিজের রুমে বসে সাদা কাগজে লেখতেছে, তোমাকে অনেকে অনেক ভাবে ভালোবাসতে পারে, তবে আমার মত করে কেউ তোমাকে ভালোবাসতে পারবে না। ভালোবাসার অধিকার সবার আছে নিজের মত করে আমিও তোমায় ভালোবাসি আমার মত করে। হয়তো বলতে পারি না, নয়তো তুমি কখনো বুঝতে পারো না আমার ভালোবাসা। দিনের পর দিন যাবে বসন্তের পর বসন্ত পার হবে, আমার ভালোবাসা ঠিক একই রকম থেকে যাবে যেমনটা ছিলো গত বসন্তে তেমনি রবে এই বসন্তে, ঠিক তেমনি আগামি বসন্তেও থাকবে একই রকম। ভালোবাসি আমি বড্ড ভালোবাসি তোমাকে।

— বাসায় ফেরার পর থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পরতে শুরু হয়েছিলো। সময়ের সাথে সাথে তা বেড়েই চলেছে বিকেল শেষে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। অথচ এক বারের জন্যও আর দেখা হয়নি, কি করছে কিছু খেয়েছে কিনা কোন কিছুই জানা হয়নি। ওর সাথে কাছে যেতেও পারবো না। কি যে করি কিছুই বুঝতে পারছি না। কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই আফরিন আপুর ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো আকাশ ভাইয়া ফোন দিয়েছে। আপু ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে গেলো। আমি আগের মতই বসে থেকে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনে চলছি।

আফরিন:- রুমে ঢুকতে ঢুকতে এই ইকরা তোর সাথে কথা বলবে।

— ফোনটা হাতে নিয়ে হ্যালো ভাইয়া বলেন কেমন আছেন?

আরমান:- জ্বি আমি ভালো আছি আপনি ভালো আছেন?

— ওহ সরি সরি আমি ভেবে ছিলাম আকাশ ভাইয়া কিছু মনে করবেন না। কথাটা বলেই আপুর দিকে তাকালাম। আপু ইশারায় বুঝালো সে কিছু জানে না।

আরমান:- না না কি মনে করবো, আর ফোন আকাশের কাছেই ছিলো আমি কেড়ে নিয়েছি। আসলে আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো। তারপর কি করছেন?

— তেমন কিছু না বৃষ্টি হচ্ছে রুমে বসে বসে বোরিং সময় পার করছিলাম এইতো। আপনারা দু’জন কি করছেন?

আরমান:- আমরাও বসে আছি, তবে বাসায় নয় বাসার সামনের টং এর দোকানে।

— ঐখানে কেন?

আরমান:- কারণ হচ্ছে এই বৃষ্টির দিনে টং এর দোকানে বসে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে লাল চা খেতে বেশ লাগে। এক অসাধারণ অনুভুতি হয় কেন আপনিতো ঢাকায় থাকেন কখনো খাননি টং এর দোকানে বসে চা?

— জ্বি না, আসলে কখনো এভাবে খাওয়া হয়নি।

আরমান:- ওহ আচ্ছা, কখনো সময় হলে বলবেন এক সাথে বসে চা খাওয়া যাবে।

— আচ্ছা ঠিক আছে যদি কখনো সুযোগ হয় অবশ্যই খাবো।

আরমান:- যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো?

— হ্যাঁ নিশ্চই বলেন।

আরমান:- না মানে আকাশ ওর ফোন চাচ্ছে আপনার বোনের সাথে কথা বলবে। যদি আপনার ফোন নাম্বারটা দিতেন তাহলে মাঝে মাঝে কথা বলা যেতো।

— হ্যাঁ নিশ্চই নোট করে নিন ০১৭.. এটা আমার নাম্বার বলতে বলতেই আননোন নাম্বার থেকে কলো আসলো।

আরমান:- ফোনটা রিসিভ করেন ঐটা আমার নাম্বার। এই ফোন আকাশকে দিয়ে দিচ্ছি।

— আফরিন আপুকে তার ফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে নিজেরটা রিসিভ করলাম। আর ও কিছু সময় আরমানের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। কেন জানি মনটা আগের চেয়ে অনেকটা ভালো হয়ে গেলো। এদিকে বৃষ্টির গতি বেড়েই চলেছে থামার কোন নাম গন্ধও নেই। ফুপু চায়ের মগ হাতে নিয়ে রুমে ঢুকে বললো আজ মনে হয় সারা রাতই বৃষ্টি হবে।

— চায়ের মগ হাতে নিয়ে মনে হয়, এখানেই চা নিয়ে আসলে যে?

ফুপু:- কি করবো আমি আর তোর ফুপা অনেক সময় আগেই চা খেয়েছি, এদিকে সেই কখন সন্ধ্যা হয়েছে, আর সোহান নিজের রুমে বসেই চা নাস্তা খাচ্ছে তাই ভাবলাম তোদের জন্যও চা নাস্তা রুমেই নিয়ে আসি।

আফরিন:- খুব ভালো করছো আম্মু, যেতে ইচ্ছে করছিলো না।

ফুপু:- তুই কিন্তু দিন অলস হয়ে যাচ্ছিস আফরিন, দু’দিন পর বিয়ে শ্বশুড় বাড়িতে যেতে হবে নিজের সংসার হবে কত কাজ থাকবে তখন একবারও কি তা ভেবে দেখিস?

আফরিন:- জড়িয়ে ধরে ও আম্মু সারা জীবনইতো কাজ করে কাটাতে হবে। বাবার বাড়ি মানেইতো স্বাধীনতা শ্বশুড় বাড়িতে গেলেতো আর এই স্বাধীনতা পাবো না।

ফুপু:- পাগলী মেয়ে আমার। বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

— মা মেয়ের ভালোবাসা সত্যিই দেখার মত, সত্যিইতো ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি মা সারা দিনই কোন না কোন নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। সব সময় আমরা কি খাবো আমরা কি পরবো, কখন ঘুমালাম কখন ঘুম থেকে ডেকে তুলতে হবে। স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা। সব সময় এসব নিয়েই ভেবেছে কখনো নিজের জন্য তাকে ভাবতে দেখিনি। মেয়েদের জীবনটাই হয়তো এমন। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চায়ের মগটা হাতে নিয়ে বারান্দায় যেয়ে দাঁড়ালাম। রিনঝিন শব্দে বৃষ্টি হচ্ছে সাথে এক মগ চা বাহ ব্যাপারটা বেশ দারুণ। মনে মনে কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করলাম

” ঝুম বৃষ্টি তুমি আমি এর এক পেয়ালা চা।
পাশাপাশি একই ছাদের নিচে বসে আছি।
দূর থেকে বহুদূর পর্যন্ত যতটুকু চোখ যাবে
শুধু বৃষ্টি আর বৃষ্টি দেখা যাবে।
হঠাৎ দমকা হাওয়ায় এলোমেলে করে দিবে আমার খোলা চুল গুলো।
তুমি কি তখন স্পর্শ করবে আমাকে?
তুমি কি তখন আমার হাতে হাত রাখবে?
কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলবে
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি তোমাকে?”

আফরিন:- কি ভাবতেছিস একা একা দাঁড়িয়ে? সোহান ভাইয়ার কথা নাকি?

— উফ আপু সব সময় শুধু একই বিষয় নিয়ে কেন থাকো তুমি? নতুন কিছু ভাবো না কেন?

আফরিন:- হয়েছে আর নতুন কিছু ভাবতে হবে না। জানিতো তোর মনের মাঝে কি চলে।

— আকাশ ভাইয়া কি বললো?

আফরিন:- কি আর বলবে কেমন লাগলে ঘুরতে, সবাই কি করছি এই সব আর কি।

— ভালোতো বিয়ের আগেই তোমাদের প্রেম দেখি জমে উঠেছে।

আফরিন:- ফাজলামো করা হচ্ছে আমার সাথে? আচ্ছা আরমান ভাইয়া কি বললো তোকে?

— কি আর বলবে কি করছি, কেমন আছি, বললো কোন এক বৃষ্টির দিনে দু’জন বসে এক সাথে চা খাবো। এইসব আর কি।

আফরিন:- বাহ বাহ তোর প্রেমে পরে গেলো নাকি? তাহলেতো ভালো করে খোঁজ নিয়ে জানতে হয়।

— আপু তুমিও না কি সব বলতে শুরু করলা? আমার কি আর কোন কাজ নেই যে শুধু প্রেম করে বেড়াবো?

আফরিন:- বিয়ে বাড়িতে এসেছিস মুহুর্ত গুলো উপভোগ কর। বলাতো যায় কাল যদি তোর বিয়ে হয়ে যায়, তখন আফসোস করবি হাতে যথেষ্ট্য সময় ছিলো মজা মাস্তি করার জন্য কিন্তু নিজের ব্যার্থতার জন্য তুই তা করতে পারিস নাই।

— ভাবনার জগৎ এ পরে গেলাম আপু কি বলতে চাচ্ছে, কি বুঝাতে চাচ্ছে আমাকে। সব কিছু কেমন জানি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিলো, সোহান একা রুমে কি করছে একটা বারের জন্যও আর আমার সাথে দেখা করলো না। এতো রাগ আর জিদ ওর, ইচ্ছে করছে এখুনি ওর রুমে যেয়ে প্রশ্ন করি যদি আমাকে ভালো না বাসো তবে কেন এতো জ্বলছে তোমার?

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ-১৫তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— ভাবনায় ছেদ পরলো ফুপুর ডাকে।

ফুপু:- কিরে তোরা কি রাতের খাবার খাবি না?

আফরিন:- হ্যাঁ মা খাবো, তুমি যাও আমরা ফ্রেস হয়ে আসছি।

ফুপু:- চায়ের মগ গুলো গুছিয়ে নিতে নিতে তাড়াতাড়ি আয়, বলে রুম থেকে বেরিয়ে পরলো।

— আপু ওয়াশ রুমে ঢুকে পরলো ফ্রেস হবার জন্য। আমি মনে মনে একটু খুশি হলাম দীর্ঘ সময় পর সোহানকে দেখতে পাবো। আপু বের হতেই ওয়াশ রুমে ঢুকে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে আসলাম।
দু’জন মিলে ডাইনিং এর দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
ডাইনিং এ এসে দেখি শুধু ফুপু আর ফুপা বসে আছে। মন খারাপ করেই ডাইনিং এ ঢুকে টেবিলে বসলাম।

আফরিন:- মা ভাইয়া কই খাবে না?

ফুপু:- পরে খাবে নাকি, ওর খাবার ঘরে দিয়ে আসতে বলছে, ওর শরীরটা নাকি ভালো লাগছে না।

— মনে মনে ভাবছি ভালোই ঢং করতে শিখেছে। কেন কি হলো আবার উনার?

ফুপু:- বলতে পারছি না তুই খেয়ে ওর খাবারটা ঘরে দিয়ে আয়।

— আমি কেন দিয়া আসবো? আস্তো একটা অলস ঢাকায় থাকলেও ডেকে ডেকে খাবার খাওয়াতে হয়।

ফুপু:- ছেলেরা এমনি হয়। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে যখন ঘরে বউ আসবে।

— বউ পাবে কোথায়? কে বিয়ে করবে ওকে।

ফুপু:- কি যে বলিস না, শিক্ষিত ছেলে দেখতে সুন্দর মেয়ের অভাব হবে নাকি?

— হবে হবে যখন মেয়ের পরিবার জানবে আস্ত একটা অকর্মা ছেলে, ঠিক মত যে নিজের যত্ন নিতে পারে না, সে বিয়ে করবে কি করে।

ফুপু:- সে তখন দেখা যাবে যখন বিয়ে হবে।

— আগেতো বিয়ে হয়ে নিক তারপর দেখবোনি।

ফুপা:- ভাবতাছি এবার তোর বাবা মা আর সোহানের বাবা মা আসলে বলবো তোদের দু’জনের জন্যও পাত্র-পাত্রী দেখবো।

— না না ফুপা প্লীজ এই কাজটা কইরেন না। তাহলে জীবন শেষ এমনিতেই ভালো আছি।

ফুপা:- আজ হোক কাল হোক তোদের সবারই বিয়ে হবে। আর মেয়েরা কখন যে বড় হয়ে যায় দেখতে দেখতে বুঝাই যায় না।

— টুকটাক কথা হচ্ছে আর ডিনার করছি কিন্তু কেমন জানি সব পানসে লাগছে সোহান নেই হয়তো সে জন্যই। অনেক কষ্ট করে প্লেটের খাবার গুলো শেষ করলাম। ফুপু প্লেটে খাবার বেড়ে দিয়ে বললো সোহানের জন্য নিয়ে যেতে। খাবার নিয়ে যাবো কি যাবো না ভাবতে ভাবতে প্লেট হাতে তুলে নিলাম। এক’পা দু’পা করে এগিয়ে চললাম সোহানের ঘরের দিকে। দরজার সামনে এসে কয়েকবার নক করলাম ভিতর থেকে কোন সারা শব্দ আসছে না। বুঝতে পেরেছি খুব রেগে আছে এখনো সোহান। বুঝে উঠতে পারছিলাম না খাবার নিয়ে চলে যাবো কিনা। আপুকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো। কিন্তু খাবার নিয়ে গেলেও ফুপু খারাপ ভাবে নিতে পারে ভাববে দু’জন ঝগড়া করেছি। ভাবতে ভাবতে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। টেবিলে খাবার গুলো রাখতে রাখতে আমি তোমার রুমে আসতে চাইনি কিন্তু ফুপু খাবার দিয়ে যেতে বললো তাই এসেছি। সোহান কোন কথা বললো না, তাই আবার বললাম তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? সোহান কোন রকম নড়া চড়া করছে না দেখে সোহানের পিঠে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে যেয়ে বড় ধরণের একটা ধাক্কা খেলাম সোহানের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। আরও কয়েকবার ডাক দিলাম সোহান চোখ মেলে তাকালেও কোন কথা না বলে আবারও চোখ বন্ধ করে নিলো। কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ফুপুকে জানাবো কিনা ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। রুমে এসে দেখলাম আফরিন আপু আকাশ ভাইয়ার সাথে কথা বলছে। সেখানে যেয়ে আপুকে বললাম তোমার রুমে কি জ্বরের কোন ঔষধ আছে?

আফরিন:- হ্যাঁ আছেতো কেন তোর কি জ্বর আসছে নাকি?

— আমার জ্বর আসেনি সোহান ভাইয়ার জ্বর আসছে।

আফরিন:- বলিস কি বেশী জ্বর আসছে নাকি ভাইয়ার?

— হ্যাঁ ভালোই শরীর গরম দেখলাম।

আফরিন:- ফোনের লাইন কেটে দিয়ে বলিস কি, তুই দাঁড়া আমি ঔষধ বের করে নিয়ে আসি বলেই বারান্দা থেকে রুমের ভিতর ঢুকে ঔষধ বের করে নিয়ে এসে দিতে দিতে চল আমিও তোর সাথে যাচ্ছি।

— দু’জন মিলে আবারও সোহানের রুমে আসলাম।

আফরিন:- ভাইয়া এই ভাইয়া শুনছো?

— সোহান এক বার চোখ মেলে তাকালেও কোন কথা বললো না।

আফরিন:- তুই এক কাজ কর বালতি ভরে পানি নিয়ে আয়। আর একটা তোয়ালে নিয়ে আয়।

— দ্রুত ওয়াশ রুম থেকে বালতিতে করে পানি আর তোয়ালে নিয়ে আসলাম। সেগুলো রেখে দু’জন মিলে সোহানের মাথাটা ঘুরালাম।

আফরিন:- একটা পলিথিন দে মাথার নিচে তারপর পানি দে।

— ঘরের ভিতর কোথাও পলিথিন পেলাম না।

আফরিন:- তাহলে আস্তে আস্তে পানি দে যাতে বিছানা না ভিজে। নয়তো আবার সারা রাত ভেজাতেই ঘুমাতে হবে।

— আস্তে আস্তে পানি দিতে শুরু করলাম। আপুকে বললাম তুমি চলে যাও রুমে জ্বর কমলে আমি রুমে চলে আসবো।

আফরিন:- আমি কি মা বাবাকে জানাবো?

— না না তাহলে তারা চিন্তা করবে আর এমন আছে ঢাকাতেও ফোন দিতে পারে। তখন সকলেই চিন্তা করবে আবার তার চেয়ে বরং আজ রাতটা দেখি, যদি না কমে তখন কাল সকালে ফুপাকে বলবো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে।

আফরিন:- ঠিক আছে আমি বলছি না, তবে যদি ভাইয়ার একটু ভালো লাগে তুই খাবার খাওয়াবি আর সাথে ঔষধটাও খাওয়াবি।

— তুমি চিন্তা করো না, আমি সব কিছু ঠিক মতই করবো।

আফরিন:- আচ্ছা তাহলে আমি যাচ্ছি।

— আপু চলে গেলো, আমি মাথায় পানি দিয়েই চলছি কিন্তু জ্বর কমছে না, তোয়ালে ভিজিয়ে মাথায় জলপট্টি দিতে শুরু করলাম। রাত গভীর থেকে গভীর হতে চলেছে অথচ সোহানের জ্বর কমার কোন নাম নেই। এদিকে দু’চোখের পাতা এক হয়ে আসছে বার বার। নিজের উপর নিজের খুব রাগ লাগছে, অযথাই ওকে রাগাতে যেয়ে এই বিপদ ডেকে এনেছি, ইচ্ছে করছে মারতে মারতে জিজ্ঞাসা করি একটু কষ্ট সহ্য করতে পারো না, তবে এতো কষ্ট কেন আমাকে দাও। শেষ রাতের দিকে সোহানের জ্বর অনেকটা কমে আসলো। সোহানের মাথাটা তোয়ালে দিয়ে মুছে দিয়ে গায়ে উপর ভালো করে চাদর জড়িয়ে দিলাম। এদিকে আমার দু’চো প্রায় বন্ধ হয় হয় অবস্থা, মনে হচ্ছিল আর এক মুহুর্তও চোখ খুলে রাখতে পারবো না। সোহানের মাথার সাথে নিজের মাথাটা লাগিয়ে দু’চোখ বন্ধ করে নিলাম। এক সময় পুরোপুরি ঘুমিয়ে গেলাম।

— সোহান দীর্ঘ সময় ধরে খুব আস্তে আস্তে ডেকে চলছে, শরীর এতোটাই দূর্বল যে জোড়ে ডাক ও দিতে পারছে না। ইকরা গভীর ঘুমে মগ্ন, সোহানের ডাক কোন ভাবেই পৌছাচ্ছে না ওর কানে। সোহান চোখ বন্ধ অবস্থাতেই একটু কাত হয়ে ইকরার মুখোমুখি হতেই, গরম নিঃশ্বাস লাগতে শুরু করলো ইকরার মুখে। অনেক কষ্টে সোহান একটা হাত ইকরার কাঁধ পর্যন্ত নিয়ে সোহান ধাক্কা দিতেই লাফিয়ে উঠে কি হলো কি হলো তোমার?

সোহান:- খুব আস্তে আস্তে পানি খাবো।

— টেবিলের উপর থাকা পানি গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে বললাম কিছু খাবে?

সোহান:- গ্লাসের পানি শেষ করে, মাথা ঝাঁকিয়ে না, তুই তোর রুমে যেয়ে শুয়ে পর, সকাল হয়ে গেছে আমার শরীর এখন ভালো আছে। দরকার হলে আমি ডাক দিবো।

— জানালা খুলে দিতেই শোঁ শোঁ শব্দ করে ঘরের ভিতর বাতাস প্রবেশ করতে শুরু করলো, সারা রাতের বৃষ্টির শেষে ভোরের আলো ফুটে উঠেছে, দাঁরুণ লাগছে বাহিরের পরিবেশটা, বাতাসে খোলা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে মুখের চারিদিক ছড়িয়ে পরলো। আমি সোহানের পাশে যেয়ে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললাম চা খাবে আমি বানিয়ে নিয়ে আসবো? আর একটু ঔষধ ও তো খাওয়া লাগবে না হলে শরীর আরো খারাপ হতে পারে।

সোহান:- ঠিক আছে বানিয়ে নিয়ে আয়।

— গত রাতের খাবারের প্লেট গুলো হাতে করে নিয়ে সোহানের রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে রওনা হলাম। প্লেট গুলো রেখে চুলায় পানি বসিয়ে দিলাম। পানি ভালো ভাবে গরম হতেই দুই কাপ চা বানিয়ে সাথে কয়েকটা বিস্কুট বাটিতে সাজিয়ে নিয়ে চলে আসলাম সোহানের রুমে। সোহান চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে দেখে বিছানার উপর ট্রে রেখে টেবিলটা টেনে আনতে যেয়ে টেবিলের উপর ছোট একটা সাদা কাগজ পেলাম। যেখানে বার বার করে লেখা খুব ভালোবাসি তোমাক। আমি কাগজটা সরিয়ে রেখে টেবিলটা টেনে খাটের কাছে নিয়ে চায়ের ট্রে তার উপর রেখে সোহানকে ডেকে তুললাম। সোহানের দিকে একটা চায়ের মগ এগিয়ে দিলাম আর একটা মগ আমি নিয়ে আবার সেই জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। সারা রাত ঘুম হয়নি শরীর প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগছে, চায়ের মগে চুমুক দিচ্ছে আর ভাবছি এই লেখা গুলো কাকে লেখছে ও? আমাকে নাকি অন্য কাউকে? ভাবনাটা বেশী দূর এগিয়ে নিতে পারলাম না। দরজার সামনে থেকে ফুপুর ডাক শুনে ঘুরে তাকাতেই দেখতে পেলাম ফুপু দরজা ঠেঁলে ঘরের ভিতর প্রবেশ করছে।

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে