শেষ বিকলেরর রোদ পর্ব-১২+১৩

0
934

শেষ বিকলেরর রোদ-১২তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— নিঃশ্বাস জেনো বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। সোহানের ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁট ছাড়িয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে শুরু করলাম। সোহান তখনো সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা হাত চেঁপে ধরে রেখেছে। আর মিটমিট করে হাসছে। সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতেই সোহান এক সাইডে পরে গেলো। অমনি উঠে যেয়ে সোহানের বুকের উপর বসলাম।

সোহান:- এই কি করছিস? ব্যথা পাবোতো।

— একটা হাত সোহানের গালের উপর রেখে ও তাই আর এতো সময় আমি ব্যথা পাইনি?

সোহান:- আমি তোকে কোন রকম ব্যথা দেইনি।

— ঠোটটা সোহানের মুখের খুব কাছাকাছি নিয়ে এসে আমিও তোমাকে কোন ব্যথা দিচ্ছি না। সোহানের মুখে কোন কথা নেই, ওর হার্টবিট খুব দ্রুত উঠা নামা করছে আমি স্পষ্ট সে শব্দ শুনতে পাচ্ছি। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে সোহানের কপালে। আমি ঠোট দু’টো ওর মুখের খুব কাছে নিতেই ও চোখ বন্ধ করে নিলো। আমি ওর কানের কাছে মুখটা নিয়ে দিলাম একটা কামড় ওমনি সোহান আহ করে চিৎকার করে উঠলো। আমি হাসতে হাসতে ওর বুক থেকে নামতে যাবো অমনি দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো।

— ছেড়ে দাও না হলে চিৎকার করবো।

সোহান:- তোর সে সাহস আছে?

— কিছু বলতে পারলাম না, নিরবে ওর বুকের মাঝে শুয়ে রইলাম। ঠিক কতটা সময় শুয়ে আছি বলতে পারবো না। বাহিরে কারো হাঁটার শব্দে দ্রুত উঠে বসলাম। সোহানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও চোখ বন্ধ করে আছে। আমি বললাম ছাড়ো আমাকে রুমে যাবো।

সোহান:- ছেড়ে দিয়ে উঠে বেড় হয়ে দেখ যেয়ে সকলে এতো সময়ে উঠে গেছে।

— নিচে নেমে মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করতে করতে উঠুক তুমিও উঠো হাঁটতে যাবো দু’জন মিলে।

সোহান:- তুই যা আমি পরে আসবো।

— কাছে থাকতে চাইয়া থাকতে পারি না, দূরে যেতে চেয়েও যেতে পারি না। ভালোবাসি বলতে চেয়েও পারিনা বলতে ভালোবাসি। চোখের সামনে নদী অথচ আমি তৃষ্ণার্থ পথিক। মনে মনে বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা রুমে চলে আসলাম। রুমে ঢুকতেই আফরিন আপু তাকিয়ে হাসতে শুরু করলো।

— এমন করে হাসতেছো কেন কি হইছে?

আফরিন:- ভাগিস কারো সামনে পরিসনি তা না হলে বুঝতি কি হয়েছে।

— মানে কি?

আফরিন:- সোজা ওয়াশ রুমে ঢুকে আয়না দেখি ঠোঁটের লিপস্টিক ঠিক করে নে তাড়াতাড়ি।

— আপুর কথা শুনে লজ্জায় মাথা কাটা পরার অবস্থা তার মানে আপু বুঝে ফেলেছে এতো সময় কি হয়েছ, আপুর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম আপু মিটমিট করে হাসছে। আমি দৌঁড়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলাম। আয়নায় তাকিয়ে দেখে ভীষণ রকম লজ্জা লাগছিল, দ্রুত মুখ ধুয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলাম।

আফরিন:- এ জন্যই বলি আমার বোন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কোথায় হারিয়ে গেলো।

— আপু কি যে বলো না তুমি, আমিতো উনারে ঘুম থেকে উঠাতে গিয়েছিলাম।

আফরিন:- তো আমি কখন বললাম তুই কিস করতে কিংবা গোসল করতে গিয়েছিলি?

— তোমার মুখে কিছুই আটকায় না দেখতাছি।

আফরিন:- হাসতে হাসতে সত্যি বললেও দেখি দোষ। আচ্ছা এটা বল বলতে পেরেছিস?

— উহু পারিনি,

আফরিন:- মানে কি? এতো সময় এক সাথে এতো কিছু হচ্ছে আর তুই ভালোবাসি বলতে পারিস না।

— আমি কেন জানি ওর কাছে গেলে সব ভুলে যাই।

আফরিন:- ভুলে যাসনা তুই একজন নারী, অপরাধী বলিস আর কলংকিনী বলিস না কেন। যে যা বলবে তোকে বলবে। আর ছেলে মানুষ হলো ভ্রমর ফুলে মধু থাকা পর্যন্ত উড়ে আসবে, বনবন করবে মধু খাওয়া শেষে আবার উড়ে অন্য ফুলে চলে যাবে। তাই সাবধানে থাকবি আর নিজেকে সেফ রাখবি।

— হুম বুঝলাম বলেই আফরিনকে জড়িয়ে ধরে, কিন্তু সবাইতো আর এক রকম না বুঝলে। আমি জানি ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু বলার সাহস পায়না।

আফরিন:- সেজন্যইতো বললাম তুই বল ওকে তোর মনের কথা।

— হুম আপু বলবো, এখন তুমি থাকো আমি ওকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি বাহির থেকে।

আফরিন:- তাড়িতাড়ি আসিস, নাস্তা রেডি করবে কিন্তু মা।

— আচ্ছা চিন্তা করো না বলতে বলতে রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম। সোহানের রুমের দিকে যাচ্ছি এমন সময় ফুপুর সাথে দেখা।

ফুপু:- কোথায় যাচ্ছিস?

— ভাইয়াকে ডেকে তুলতে, হাঁটতে বের হবো দু’জন।

ফুপু:- আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস।

— আচ্ছা ফুপু বলে আবার হাঁটা শুরু করলাম, সোহানের দরজার সামনে যেয়ে ডাক দিতেই সোহান দরজা খুলে দিলো। কফি কালারের একটা বডি ফিটিংস টিশার্ট পরে বের হয়েছে। সুন্দর মানুষ দারুণ মানিয়েছে শরীরেরর সাথে টিশার্ট। টুকটাক কথা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির ভিতর থেকে বের হলাম। কোথায় যাবো ঠিক জানা নেই, গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। গ্রামের মানুষজন এখনো ঠিক মত ঘুম থেকে উঠেনি।

সোহান:- কোথায় যাবি?

— যেদিকে তোমার দু’চোখ যায় নিয়ে চলো আমাকে।

সোহান:- মানে কি?

— সব কিছুর কি মানে হয়?

সোহান:- তোর কথার কোন মানে খুঁজে পাইনা।

— আচ্ছা তাই না?

সোহান:- হ্যাঁ তাইতো, বললি হাঁটতে বের হবি, নিয়ে বের হলাম, এখন কোথায় যাবি সেটাই জানিস না।

— তাহলে কি বলবো? আমি কি গ্রামে এসে পরে থাকি নাকি যে এই জায়গা ঐজায়গা আমার চেনা আছে। হাঁটতে যেহেতু বের হইছি যতদূর হাঁটা যায় হাঁটবো।

সোহান:- বেশী দূর হাঁটা যাবে না।

— কেন?

সোহান:- ফুপু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলছে।

— বেশী দূর আর হাঁটতেও হবে না তোমাকে ঐযে নদী দেখা যাচ্ছে ঐখানে যেয়েই বসবো। হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাশে ঘাসের উপর বসলাম দু’জন। আমি অপলক সোহানের দিকে তাকিয়ে আছি।

সোহান:- কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

— তো কি করবো ইচ্ছেতো করছে তোমার চুল গুলো ছিড়ে ফেলতে।

সোহান:- কেন আমি আবার কি করলাম?

— কি করোনি তুমি? সকাল বেলা যা করলে তার পরেও বলবে কিছু করোনি? তারপরে আমার মুখের যে অবস্থা ছিলো মানুষতো বলে যে একটু ঠিকঠাক হয়ে রুম থেকে বের হতে। ভাগিস কেও দেখেনি, ঠোঁটের যা অবস্থা হয়েছিলো দেখলে আর রক্ষা ছিলো না।

সোহান:- আমি কি করে বলবো? আমিতো অন্ধকারে কিছু দেখি নাই। দেখলেতো বলতাম।

— তা দেখবে কেন? কত সুন্দরি সুন্দরি গার্লফ্রেন্ড আছে তোমার তুমিতো তাদেরকে দেখো।

সোহান:- হাসতে হাসতে তোর মাথাটা গেছে।

— সোহানের কাঁধে মাথা রাখতে রাখতে কোথায় গেলো খুঁজে এনে দাওতো।

সোহান:- তোমাকে আমার প্রয়োজন খুব করে প্রয়োজন, বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন, ভালো থাকার জন্য প্রয়োজন, ভালোবাসার জন্য প্রয়োজন। তোমাকে আমার প্রয়োজন সারা রাত জেগে গল্প করার জন্য প্রয়োজন, তোমাকে আমার প্রয়োজন নির্জন রাস্তায় এক সাথে পথ চলার জন্য প্রয়োজন।

— বাহ বাহ কাকে এতো করে প্রয়োজন?

সোহান:- হা হা হা কবিতা বললাম কবিতা। চল বাড়ি ফিরি সূর্যের তাপ বেড়ে যাচ্ছে।

— হুম চলো। কথা বলতে বলতে দু’জন বাড়ির দিকে এগিয়ে চললাম। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে বসতেই সোহানের ফোন বেজে উঠলো। আকাশ ফোন করেছে, দু’জনের কথোপকথনে যা বুঝলাম তা হলো আজ দুপুরে আমাদের কোথাও লাঞ্চের জন্য যেতে বলেছে।

সোহান:- ফোন কেটে দিয়ে আকাশ লাঞ্চের দাওয়াত দিলো। অমুক জায়গায় যেতে বললো।

আফরিন:- বাহ ভালোইতো হয়েছে। তাহলে তোমরা আজ বাহিরে লাঞ্চ করতে যাবে।

সোহান:- তোমরা মানে কি তুইও আমাদের সাথে যাচ্ছিস।

আফরিন:- আমাকে যেতে হবে কেন? তোমরা দু’জন গেলেই পারো।

সোহান:- পাগলের সুখ মনে মনে ঢং না করে নাস্তা করে ফ্রেশ হয়ে দু’বোন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

— টুকটাক কথা বলতে বলতে নাস্তার পর্ব শেষ করে আমি আর আপু রুমে চলে আসলাম। দু’জনে কিছু সময় রেস্ট নিয়ে শাওয়ার দিলাম। বারান্দায় রোদে বসে চুল শুকাচ্ছি এমন সময় সোহান ফুপুকে বলতে শুরু করলো।

সোহান:- ফুপু দেখছো ফুলটুসি বড় না হলেও ওর চুল গুলো কিন্তু বেশ লম্বা হয়েছে।

ফুপু:- কেন ও বড় হয়নি?

সোহান:- কি জানি আমার কাছেতো সেই পিচ্ছিই মনে হচ্ছে।

ফুপু:- কি যে বলিস না, মেয়ে মানুষ দেখতে দেখতে বড় হয়ে যায়। আর বড় হবার পর আরেক জ্বালা বিয়ে দিয়ে পরের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হয়।

সোহান:- এটা অবশ্যই তুমি ঠিক বলছো ফুপু, আর কয়দিন পর ফুলটুসিকেও বিয়ে দিয়ে পরের বাড়ি পাঠিয়ে দিবো।

— কথাটা শুনে রাগে মনে চাচ্ছিলো সোহানের মাথার সব চুল টেনে ছিড়ে ফেলি। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম তোমার বিয়ের সখ তুমি করো গিয়ে।

সোহান:- তোকে আগে বিদায় করে নেই।

— হয়েছে থাক, আর আগে যেতে হবে না আপনাকে। আমার চুলেরর পেছনে এমনিতেই অনেক ছেলে ঘুরে, তখন বাড়ি পর্যন্ত ছুটে আসবে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

সোহান:- ভালোতো এক সাথে তোদের দু’জনকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করে দিবো।

— মেজাজ গরম কইরো না। বলে সেখান থেকে উঠে রুমের ভিতর চলে আসলাম। বারোটার দিকে সোহান এসে বলে গেলো তাড়াতাড়ি রেডি হবার জন্য। আমি আর আপু দু’জনে রেডি হয়ে নিলাম। চুল হালকা ভেজা থাকার কারণে আর বাধলাম না। চোখে বেশ গাঢ় করে কাজল টেনে নিলাম। যদিও এতোটা গাঢ় করে আমি কাজল টানি না আজ কেন জানি ইচ্ছে হলো তাই এভাবে গাঢ় করে কাজল দিলাম। ঘর থেকে বের হতেই দেখলাম সাদা রঙের একটা শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে সোহান। দু’জন যেয়ে সামনে দাঁড়াতেই আপাতমস্তক দেখা শুরু করলো সোহান।

— এভাবে কি দেখো গিলে খাবে নাকি?

সোহান:- কিছু না চল।

— তিনজন হাঁটা শুরু করলাম। অনেকখানি হাঁটার পর একটা অটো রিক্সা পেলাম তিনজন তাতে উঠলাম সোহান উপরে আর আমরা দু’জন নিচে বসলাম। বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো উড়তে শুরু করলো। মাঝে মাঝেই চুল গুলো সোহানের মুখ স্পর্শ করছে তা আমি খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।

চলবে..

শেষ বিকেলের রোদ -১৩ তম পর্ব
©শাহরিয়ার

— সোহান মাঝে মাঝেই হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিচ্ছে। বেশ উপভোগ করছি আমি ব্যাপারটা সোহানকে তা বুঝতে দিচ্ছি না। আমি আমার মত বসে আছি। হয়তো সোহানেরও ভালোই লাগছে না হলে এতো সময়ে গম্ভীর গলায় বলে উঠতো এই ফুলটুসি ঠিক মত চুল গুলোও বেধে রাখতে পারিস না। অথবা ফুলটুসি তোর চুল গুলো কেটে দেয়া দরকার। আমি আড় চোখে তাকিয়ে দেখলাম সোহান গালে হাত দিয়ে চুল গুলো আরও একবার সরিয়ে দিচ্ছে, তা তা খুব আস্তে আস্তে যেন আমি না বুঝতে পারি। আচ্ছা আমি বুঝলে কি এমন হতো? ভাবতে ভাবতে এক সময় রিক্সা শহরের ভিতরে প্রবেশ করলো।

সোহান:- আফরিন অমুক রেস্টুরেন্টটা কোথায়রে?

আফরিন:- এইতো ভাইয়া আর তিন চার মিনিট লাগবে।

সোহান:- আচ্ছা আসলে রিক্সা থামাতে বলিস।

আফরিন:- ঠিক আছে ভাইয়া।

— কয়েক মিনিটের ভিতর সেই রেস্টুরেন্টের সামনে চলে আসলাম যেখানে আগে থেকেই আকাশ ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলো। আমাদের দেখেই এগিয়ে আসলো।

আকাশ:- সালাম দিয়ে কেমন আছেন ভাইয়া, আর তোমরাও সকলে কেমন আছো?

সোহান:- এইতো ভালো তুমি কেমন আছো?

আকাশ:- জ্বি ভাইয়া ভালো, চলুন ভিতরে যেয়ে কথা বলি।

সোহান:- হ্যাঁ চলো, সবাই মিলে ভিতরে যেয়ে বসলাম।

আকাশ:- কে কি খাবেন বলেন?

— সকলে মিলে খাবারের অর্ডার করলাম, আকাশ ভাইয়া বার বার বাহিরের দিকে তাকাচ্ছে।

আফরিন:- বার বার বাহিরে তাকিয়ে কি দেখেন?

আকাশ:- আমার একটা ফ্রেন্ড আসার কথা, এখনো আসছে না তাই দেখছি তাকিয়ে।

— কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই আকাশী রঙের শার্ট পরা সুদর্শন ছেলে এগিয়ে আসতে আসতে বললো সরি সরি সবাইকে অপেক্ষা করালাম।

সোহান:- না না কোন সমস্যা নেই,

আকাশ:- ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দেই, ও হচ্ছে আরমান আমার বন্ধু, জার্মানিতে থাকে ওখানেই ওর নিজের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে, আমার বিয়ে উপলক্ষে বাংলাদেশে আসা হয়েছে। আর আরমান উনি সোহান ভাইয়া, ও আফরিন তোর হবু ভাবি, আর ও হচ্ছে ইকরা তোর ভাবির ছোট বোন। এখন বল কি খাবি?

আরমান:- তোরা যা অর্ডার করেছিস তাই অর্ডার করলে হবে বলেই ইকরার দিকে তাকালো।

— খাবার রেখে বার বার চোখ এদিকেই চলে আসছে আরমানের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে একবার নিজেই নিজের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম শরীরের জামা ঠিক আছে কিনা। না সব কিছু ঠিকই আছে, তাহলে উনি কি আমাকে দেখছে? ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর লাগলেও মুখে হাসি ফুটিয়েই তার দিকে তাকাচ্ছি। এটা একটা সুযোগ সোহানকে রাগানোর জন্য। খাবার খেতে খেতেই আরমানকে বললাম আকাশী রঙের জামায় আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে।

আরমান:- ওহ আপনার পছন্দের রঙ মনে হচ্ছে, ধন্যবাদ।

— হ্যাঁ আমার অনেক পছন্দের রঙ এটা বলেই সোহানের দিকে তাকালাম। সোহান খাবার প্লেটে হাত নাড়াচাড়া করছে কিছু খাচ্ছে না।

আরমান:- আমার ও খুব পছন্দ আকাশী রঙ।

— আচ্ছা জার্মানির কোথায় থাকেন?

আরমান:- জার্মানির রাজধানী বার্লিন এ থাকি আমি, খুব সুন্দর সিটি।

— ওহ আচ্ছা ভাইয়া বিয়ে করেননি? ভাবিকে সঙ্গে নিয়ে আসলেন না কেন?

আরমান:- হাসতে হাসতে এখনো তেমন কাউকে পাইনি যাকে সাথে নিয়ে সারা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায়।

— দোয়া করি খুব দ্রুত কাউকে পেয়ে যান, যাকে নিয়ে সারা জীবন একই ছাদের নিচে কাটিয়ে দিতে পারেন। বলেই সোহানের দিকে তাকালাম সোহানের চেহারা রাগে লাল হয়ে গিয়েছে। জ্বলুক ওর জ্বলা দরকার। যে নিজের ভালোবাসার কথা বলতে পারে না, তার শাস্তি পাওয়াই দরকার।

আরমান:- অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

— না না ঠিক আছে ধন্যবাদ লাগবে না শুধু বিয়ের দাওয়াত দিলেই হবে।

আরমান:- হ্যাঁ কেন নয়, আপনার মত স্মার্ট সুন্দরি একটা মেয়ে খুঁজে দিন, সাথে সাথেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিবো, রাজি হলেই পেয়ে যাবেন বিয়ের দাওয়াত।

— একটু ঢং এর সুরে আমার মত কি করে পাবো আমিতো এতজনই, চিন্তা করবেন না আমার চেয়েও আরও স্মার্ট সুন্দরি পেয়ে যাবেন। তাছাড়া আপনি কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম, যে মেয়েকে প্রোপোজ করবেন সেই রাজি হয়ে যাবে। আচ্ছা প্রেমটেম করেন না?

সোহান:- এই তোর কি দরকার উনি প্রেম করে নাকি না করে তা দিয়ে?

— বারে আমার আবার কি দরকার থাকবে? দুলা ভাইয়ের বন্ধু মানে আমার বেয়াই আমিতো একটু দুষ্টমি করতেই পারি। জানতে চাইতেই পারি তার সম্পর্কে তাই নয় কি?

আরমান:- না না সমস্যা নেই ভাইয়া, আর ইকরা আমার কোন মেয়ে বন্ধুই নেই, আরতো গার্লফ্রেন্ড দূরের কথা।

— ওহ রিয়েলি, তাহলে আজ থেকে আমরা কি ভালো বন্ধ হতে পারি? বলেই হাতে থাকা চামচটা প্লেটের উপর রেখে হাত বাড়িয়ে দিলাম আরমানের দিকে।

আরমান:- সাথে সাথে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হ্যাঁ অবশ্যই কেন নয়।

— থ্যাংকিউ থ্যাংকিউ,

আরমান:- বন্ধুত্বে নো সরি নো থ্যাংক্স ওকে।

— হ্যাঁ ঠিক আছে, সোহানের খাওয়া শেষ হয়ে গেলে কোন কথা না বলে উঠে বেসিং এর দিকে হাঁটা শুরু করলো, এদিকে আফরিন বার বার আমাকে চিমটি কেটে যাচ্ছে এমনটা না করার জন্য। আরমান এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমিও রোমান্টিক লুক নিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। সকলে খাওয়া শেষ করে কিছুটা সময় টেবিলে বসে গল্প করলাম। হঠাৎ আরমান বলে উঠলো চলুন না সকলে মিলে ঘুরে আসি কোথাও থেকে।

সোহান:- না ভাই আজ না, আজ প্রচণ্ড গরম পরেছে অন্য আরেকদিন ঘুরবো।

আরমান:- ভাইয়া বেশী দূর যাবো না, আর আমরা যেখানে যাবো সেখানে তেমন গরম ও লাগবে না বরং ভালো লাগবে। সামনেই একটা বিশাল উদ্যান আছে, চারিদিকে বড় বড় সবুজ গাছে ভরা। ওখানে গেলে ঠাণ্ডায় এমনিতেই মন শীতল হয়ে যাবে।

আকাশ:- হ্যাঁ ভাইয়া জায়টা অনেক সুন্দর চলুন না ঘুরে দেখে আসবেন।

সোহান:- কিন্তু এ গরমে।

— কিছু হবে আর উনারা যেহেতু বলছে অল্প সময় লাগবে আর জায়গাটাও খুব সুন্দর তাহলে যেয়ে একবার দেখলেতো আর ক্ষতি নেই।

আরমান:- হ্যাঁ ভাইয়া যদি আপনার ভালো না লাগে তাহলে চলে আসবেন কোন সমস্যা নেই।

সোহান:- বেশ তাহলে চলো।

— সবাই এক সাথে রওনা হলাম, তবে আলাদা আলাদা রিক্সায়, আমি আর আপু এক রিক্সায়, আকাশ ভাই আর আরমান এক রিক্সায় আর সোহান একা এক রিক্সায়। রিক্সা চলতে শুরু করতেই ফোনে একটা মেসেজ আসলো সোহানের ফোন থেকে খুব ঘুরার সখ না? আমি বুঝতে পারলাম সোহানের হৃদয়ে লাগছে, আমি ওকে আরও রাগানোর জন্য মেসেজ পাঠালাম কি যেন পুড়া পুড়া গন্ধ পাচ্ছি। মেসেজ পাঠিয়ে মনে মনে হাসছি, সোহান এখন নিশ্চই আরও রেগে গিয়েছে। ভাবতে ভাবতে রিক্সা এগিয়ে চলছে নিজের গন্তব্যের দিকে। সোহান মেসেজের কোন রিপ্লাই দিচ্ছে না। এদিকে সামনের রিক্সা থেকে বার বার পেছনে ফিরে তাকাচ্ছে আরমান। আমি আমার খোলা চুল গুলো মাঝে মাঝেই হাত দিয়ে নেড়ে উড়িয়ে দেখাচ্ছি আরমানকে। প্রায় আধঘন্টা রিক্সা এভাবে চলার পর আমরা বিশাল এক উদ্যানের সামনে চলে আসলাম। সবাই যার যার মত রিক্সা থেকে নেমে পরলাম। তারপর উদ্যানের ভিতরে ঢুকতে শুরু করলাম। সত্যিই মুগ্ধ হবার মতই জায়গা।

আরমান:- দেখলেনতো কত সুন্দর জায়গা।

— হুম খুব সুন্দর জায়গা, মুগ্ধ হবার মতই, ছবিতে যেমনটা থাকে ঠিক তেমনি।

আরমান:- হ্যাঁ আমার অনেক পছন্দের জায়গা এটা, বাংলাদেশে থাকতে আমরা সব বন্ধুরা এখানেই ঘুরে বেশীর ভাগ সময় কাটিয়েছি।

— এদিক সেদিক ঘুরে ঘুরে দেখছি সত্যিই যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। বিশাল বড় বড় সবুজ গাছ তার নিচ দিয়ে ছোট ছোট রাস্তা, অনেকটা দূরে একটা বিশাল বড় মাঠ অনেক ছোট ছোট ছেলেরা সেখানে খেলে চলেছে। সবচেয়ে বেশী মজা লাগছে পায়ের নিচের শুক্ন পাতার ঝুন ঝুন শব্দ। আর সেই সাথে ঠাণ্ডা হিম শীতল বাতাস। অল্প সময়ে সুখের এক রাজ্যে হারিয়ে যাবার মত অবস্থা হবে যে কারো। হঠাৎ থমকা হাওয়ায় চুল গুলো এলোমেলো হয়ে এলো। হাত দিয়ে চুল গুলো সরাতে সরাতে আড় চোখে সোহানের দিকে তাকালাম। সোহান মাথা নিচু করে হেঁটে চলছে। আমার কেন জানি ভীষণ রকম হাসি পাচ্ছে সোহানের এমন মন খারাপ দেখে। প্রায় ঘন্টা খানিক সেখানে থেকে আমরা বিদায় নিয়ে রওনা হলাম বাড়ির উদ্যেশে। সোহানের দিকে তাকিয়ে বললাম কি হলো তোমার কি মন খারাপ?

সোহান:- না,

— তাহলে কি হয়েছে?

সোহান:- মাথাটা কেমন জানি ব্যাথা করছে।

— ওহ আচ্ছা সহ্য করে থাকো বাসায় যেয়ে ঔষধ খেয়ে নিও।

সোহান:- হুম।

— প্রায় ঘন্টা খানিক রিক্সায় থাকার পর অবশেষে বাসায় এসে পৌছালাম।

সোহান:- আফরিনের দিকে তাকিয়ে তোর রুমে মাথা ব্যথার ঔষধ থাকলে দিয়ে যাসতো।

আফরিন:- আচ্ছা ভাইয়া পাঠিয়ে দিচ্ছি।

— রুমে আসতেই ড্রয়ার খুলে কিছু ঔষধ বের করে দিয়ে আপু বললো আগে এগুলো ভাইয়াকে দিয়ে আয় তারপর ফ্রেশ হবি। আমি ঔষধ গুলো নিয়ে সোহানের রুমে যেয়ে টোকা দিতেই সোহান দরজা খুলে দিলো। ভিতরে ঢুকতেই ধাক্কা মেরে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে এলো। কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করলাম কি করছো তুমি?

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে