শেষ বিকেলের রোদ পর্ব-০৫

0
911

শেষ বিকেলের রোদ-৫ম পর্ব
©শাহরিয়ার

আমি পুরোপুরি শিহরিত হয়ে দু’চোখ বন্ধ করে নিলাম। সোহান নিজের হাত ঠিক আমার কপাল বরাবর ধরে রেখেছে। অনেকটা সময়ে আর কোন স্পর্শ না পেয়ে আমি চোখ মেলে তাকালাম। শেষ বিকেলে অনেক রোদ উঠেছে সে রোদ সি এন জির গ্রীল বেদ করে ভিতরে এস আমার কপালে লাগছে সেখানেই হাত দিয়ে রেখেছে সোহান, এটা কি শুধুই রোদকে আটকানোর চেষ্টা নাকি তার ফাঁকে আমাকে একটু ছুঁয়ে দেবার প্রচেষ্টা? নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করলাম। চোখের উপর চোখ রেখে পারছি না বলতে ভালোবাসি পারছি না জানতে ও আমাকে ভালোবাসে কিনা। ভাবতে ভাবতে সি এন জি এসে থামলো ফারজুর বাড়ির সামনে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নেমে পরলাম সি এন জি থেকে।

— বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই তরী ছুটে আসলো, সোহানের দিকে তাকিয়ে ভাইয়া কেমন আছেন।

— সোহান হ্যাঁ ভালো আছি তুমি কেমন আছো?

— তরী জ্বি ভাইয়া আমিও ভালো আছি, অনেক দিন পর আপনাকে দেখলাম।

— সোহান হ্যাঁ অনেক দিন আমাদের বাড়িতে আসো না তাই দেখা হয় না। বলতে বলতে সোহান ভিতরের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।

— তরী তোকে কিন্তু আজ খুব সুন্দর লাগছে ইকরা। কিছু হইছে নাকি দু’জনের মাঝে?

— কি হবে দু’জনের মাঝে?

— তরী নেকামি করিস না, এতো হ্যান্ডসাম একজন মানুষ পাশে বসে ছিলো আর কিছুই হয়নি? আমি হলেতো..

— থাক আর আগে যেতে হবে না, তোর মনে যা হচ্ছে তার কোন কিছুই হয়নি।

— তরী তোকে দিয়ে কিছুই হবে না।

— হবার দরকার নেই চল ভিতরে চল, কথা বলতে বলতে তরী আর আমি ভিতরে ঢুকলাম। সোহান একটা চেয়ারে বসে আছে ওর পাশে যেয়ে বসে কি হলো এমন উদাসী হয়ে বসে আছো কেন?

— সোহান কি করবো বল, খুদা লেগে গেছে, বেশি হাঁটা চলা করলে তা বেড়ে যাবে তাই চুপচাপ বসে আছি।

— তুমি কি এখানে খাবার জন্য এসেছো?

— সোহান তা নয়তো আর কি করবো?

— কি করবে মানে ঘুরবে ফিরবে সবার সাথে পরিচিত হবে মজা করবে।

— সোহান হয়েছে থাক এতো মজার দরকার নেই আমার, তুই যা না সবার সাথে পরিচিত হয়ে মজা কর যা।

— তুমি আমার সাথে যাবে কিনা বলো?

— সোহান উহু যাবো না।

— আমি উঠে দাঁড়িয়ে সোহানের হাত ধরে টান দিতেই আমার শাড়ির আঁচল সোহানের মুখের উপড় পরলো। আমি দ্রুত শাড়ির আঁচল টেনে ঠিক করে নিলাম। ভীষণ লজ্জা লেগে গেলো আমার।

— সোহান এতো বড় একটা মেয়ে শাড়িটাও ঠিক রাখতে পারিস না।

— শাড়ি ঠিক রাখতে পারি না মানে কি নিচু হয়ে তোমার হাত ধরতে যেয়ে সরে গেছে এই যা।

— সোহান হয়েছে হয়েছে এখন চুপ করে এখানে বসে থাকতো।

— দু’জন কথা বলছি এমন সময় তরী আসলো, ইকরা ফারজু তোদের দু’জনকে ডেকেছে এখন ছবি তোলা হবে।

— সোহান তোমরা যাও আমি এখানে ঠিক আছি।

— তরী ও ভাইয়া কি বলেন আসেনতো আমার সাথে বলেই হাত ধরে টানতে টানতে স্টেজের দিকে হাঁটা শুরু করলো।

— রাগে জিদে কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়তে শুরু করলো। না পারছি কিছু বলতে না পারছি সইতে। বাধ্য হয়ে ওদের পিছু পিছু আসলাম। সোহানের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, ওকে মজা দেখাতেই হবে এতো সময় আমি ডাকলাম আসলো না, আর তরী যেয়ে ডেকে আনতেই চলে আসলো। আমি একদম সোহানের শরীর ঘেঁসে দাঁড়ালাম, সোহানের ঐ পাশেই তরী দাঁড়ানো তাই সে নড়তেও পারছে না। আমি আরও একটু চেঁপে দাঁড়ালাম। সোহান কেঁপে উঠে আমার দিকে তাকালো আমি দেখেও না দেখার বান করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। সোহান খুব বিপদে পরেছে বুঝতে পেরে আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে, সোহান মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে আছে। আমি একটা হাত সোহানের কাঁধের উপর রাখলাম। সোহান আমার দিকে ঘুরে তাকালো। আমি ঈশারায় প্রশ্ন করলাম কি?

— সোহান কিছু না।

— ছবি তোলা শেষ হতেই যেন কোন রকম জান ফিরে আসলো সোহানের ভিতর, বেচারা ঘেমে ভিজে একাকার।

— সোহান স্টেজ থেকে নামতে নামতে শুধু বললো তোকে আজ বুঝাচ্ছি।

— আমি চোখ বড় বড় করে কি বুঝাবে?

— সোহান অপেক্ষা কর বুঝবি।

— খাওয়া শেষ হতেই তরী ছুটে আসলো, হাতে মোবাইল নিয়ে, আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করলো ভাইয়া আমাদের ছবি তুলে দেন।

— সোহান হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই, ছবি তোলা শেষ হতেই তরী ফোনটা নিয়ে চলে গেলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে যখন বুঝা গেলো সবাই নিজেদের মত ব্যস্ত ঠিক তখনি পকেট থেকে ফোনটা বের করে এই ফুলটুসি তোর আর আমার ছবি তুলি আয়।

— আমিতো আনন্দে আত্মহারা হয়ে ছুটে গেলাম।
কাছে যেয়ে ক্যামেরার দিকে মুখ করতেই আমি অনুভব করলাম সোহানের হাত আমার কোমড়কে জড়িয়ে ধরেছে। আমার সমস্ত দেহ কেঁপে উঠলো যখন ওর হাত আমার পেটের উপর আসলো, ও হাসি মুখে ছবি তুলছে আর আমি মনে মনে কাঁদছি। হঠাৎ করেই কোমড় ছেড়ে দিয়ে হাত ধরে টান মেরে ওর বুকের সাথে চেঁপে ধরলো আমাকে। এক হাতে আমার পিঠ চেঁপে ধরেছে অন্য হাতে ছবি তুলছে। ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎ করেই ওর মুখটা আমার কপালের কাছে নিয়ে আসে, এরপর কি হবে এটা ভেবেই আমি দু’চোখ বন্ধ করে নেই।

— ঠাণ্ডা বাতাসের অনুভুতিতে চোখ মেলে তাকাই, সোহান আমার কপালে পরে থাকা চুল গুলো ফু দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছি। মনে মনে গাধা একটা। চোখে চোখ রেখে কিছু বলার মত সাহস পাচ্ছি না। আজ কি হয়েছে আমার বুঝতে পারছি না। হয়তো ওর প্রেমে পাগল হয়ে যাবো নয়তো মারা যাবো এমন অবস্থা আমার। আর ও আছে আমাকে রাগানোর নেশায়, ও আছে ছবি তোলার নেশায়। এগুলা ভাবতে ভাবতে অনুভব করলাম ও আমাকে সোজাসুজি ওর বুকের সাথে চেঁপে ধরে আমার কপালের সাথে ওর কপাল লাগিয়েছে। এমন অবস্থায় এই বুঝি আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখার মত আমার সাহস হচ্ছে না, হঠাৎ করেই জোড়ে গানের শব্দ কানে ভেসে আসতেই সোহান আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি চোখ মেলে তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে শুরু করলাম। ততক্ষণে তরী আরেক বার আমাদের কাছে চলে আসলো।

— তরী অনেক রাত হয়েছে আমি চলে যাচ্ছি তোর্ কখন যাবি?

— এইতো আমরাও চলে যাবো।

— তরী ভাইয়াকে নিয়ে একদিন আমাদের বাসায় আয়না বেড়িয়ে যাবি।

— হ্যাঁ যাবো, তরী আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। সোহানের ঠোটে খেলে যাচ্ছে দুষ্ট হাসি। আমি রাগে ঐখান থেকে হাঁটা শুরু করলাম। সোহান আমার পিছু পিছু হাঁটছে। আমি স্টেজে যেয়ে ফারজুর কাছ থেকে বিদায় নিলাম।

— সোহান আর আমি পাশাপাশি সি এন জিতে বসে, ঠিক মত ওর দিকে তাকাতে পারছি না আজ কেন জানি আমার ভীষণ রকম লজ্জা লাগছে।

— সোহান কি কেমন বুঝালাম?

— কি কেমন বুঝালে?

— সোহান একটু কাছে এগিয়ে বসে আবার বুঝাবো?

— খবরদার কাছে আসবেনা কিন্তু তাহলে চিৎকার করবো? আর আজ যা করছো তার মজা তুমি হারে হারে টের পাবে।

— সোহান আচ্ছা ঠিক আছে দেখা যাবে বলে আবার সরে বসলো। সারা রাস্তায় আর কোন কথা হলো না দু’জনের মাঝে। বাসায় এসে যে যার মত করে নিজেদের রুমে চলে আসলাম। শরীর খুব ক্লান্ত থাকায় বিছানায় শুয়ে অল্প সময়ের ভিতর ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম ভাঙতেই মনে পরতে শুরু করলো গত কালকের বিয়ে বাড়ির সব ঘটনা। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম সোহানকে এবার আমি মজা দেখাবো যেমন ভাবনা তেমন কাজ ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ এসে বড় চাচীর কাছে জানতে পারলাম সোহান নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে। বড় চাচী জিজ্ঞাসা করলো গতকাল কেমন মজা করলি।

— হুম খুব মজা করছি কিন্তু তোমার পোলাটা দিন দিন বদ হইতাছে।

— বড় চাচী বড় বড় চোখ করে কেন কি করলো বেকারটায়?

— আরে তেমন কিছু না, মানুষকি শুধু বিয়ে বাড়িতে খাবার জন্য যায় বলো, তোমার ছেলে যাওয়ার পর থেকেই শুধু খাই খাই শুরু করছিলো।

— কথা শুনে বড় চাচী হাসতে শুরু করলো, তুমি বসে বসে হাসো আমি যেয়ে উনাকে তুলে নিয়ে আসি। বলেই রওনা হলাম সোহানের রুমের দিক।
চুপিচুপি সোহানের ঘরের দরজা খুলে দেখি নিশ্চিন্তে সে ঘুমাচ্ছে। আমিও সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইলাম না। ওয়াশ রুমে যেয়ে মগে করে পানি নিয়ে এসে দিলাম মুখের উপড় ঢেলে ওমনি সোহান চিৎকার করে লাফিয়ে উঠলো। ওর অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে আমি খাটের শেষ কোণায় বসে পরলাম। সোহান অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে।

— ওমন করে কি দেখো?

— সোহান তুই এইটা কি করলি?

— কি করলাম? কখন থেকে ডাকছি তুমি উঠছো না দেখে পানি ছিঁটিয়ে দিলাম।

— সোহান এটাকে পানি ছিঁটানো বলে?

— হ্যাঁ নয়তো কি? মাত্র এক মগ পানি দিয়েছি, এক বালতিও দেইনি।

— সোহান তুই কিন্তু বেশী বেশী করছিস।

— কি বেশী বেশী করছি? বলেই সোহানের কাছাকাছি এগিয়ে গেলাম।

— সোহান কি বেশী বেশী করছিস তুই বুঝিস না?

— নাতো আমি কি বুঝবো গত রাতের কথা মনে নেই?

— সোহান গত রাতের কথা কি মনে থাকবে শুনি?

— ওমা! ভুলে গেলে তুমি? গতরাতে আমার সাথে কি কি করেছো?

— সোহান তুই কি এর বদলা নিতে চাচ্ছিস?

— যদি বলি হ্যাঁ।

— সোহান দেখ ভালো হবে না আমি মাকে ডাক দিবো।

— তুমি কি ডাক দিবে আমিই ডাক দিচ্ছি চা..

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে