শেষটা সুন্দর পর্ব-১৫+১৬

0
659

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৫।

মেহুল’ই হয়তো প্রথম মেয়ে যার কিনা তার শ্বশুর বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় খারাপ লাগছে। তারা যাওয়ার পর সেখানে আরো আত্মীয়স্বজন আসেন। আর সবাই তাকে বেশ আদর করে। এই পরিবারের সবাই বেশ মিশুক। মেহুলকে কত সহজেই আপন করে নিয়েছে। এখন সবাই গেইটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, তাদেরকে বিদায় জানানোর জন্য। অদ্ভুত ভাবে মেহুলের যেন সবাইকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু, এখানে থেকে যাওয়ার আপাতত কোনো উপায় নেই। তাই তাকে যেতে হবে। সবাইকে বিদায় জানিয়ে সে গাড়িতে উঠে বসে। তারপর গাড়ি চলতে আরম্ভ করে। গাড়ি চালাচ্ছে রাবীর। মেহুল তার পাশেই বসেছে। আর পেছনে বসেছে তার মা বাবা।

_______

রাবীরকে বিদায় দিয়ে রামিনা বেগম স্বামীকে নিয়ে ভেতরে গেলেন। মেহুল চুপচাপ বসে আছে। রাবীর তার দিকে চেয়ে বলল,

‘কী হলো, বাসায় যাবেন না?’

মেহুল মিইয়ে যাওয়া সুরে বলল,

‘আপনার পরিবারের সবাই খুব ভালো। আমার সবাইকে খুব পছন্দ হয়েছে। খালি আমার শাশুড়ি মা আমার গান গাওয়াটাকে সাপোর্ট করলেই সব একদম ঠিকঠাক হতো।’

‘মা’কে সময় দিন, মেহুল। হয়তো একদিন মাও ঠিক আপনার কথা বুঝবেন।’

‘তার আগে, পরীক্ষার পর যে প্রোগ্রাম আছে সেখানে গান গাওয়ার অনুমতি কিন্তু আপনি দিয়ে দিয়েছেন।’

‘হ্যাঁ, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।’

‘মা’র সাথে তাহলে কথা বলবেন, প্লিজ।’

‘ঠিক আছে।’

মেহুল এবার হেসে গাড়ি থেকে নামতে নিলেই রাবীর তার হাত ধরে। মেহুল তার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘কী হলো?’

‘আমার মতো এমন প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ মারা গেলে দেশের কিন্তু বেশ ক্ষতি হবে। তাই এভাবে শাড়ি গায়ে হুটহাট চলে আসবেন না। হৃদপিন্ডকে সামলাতে বড্ড কষ্ট হয়। পরের বার শাড়ি পরার আগে আমাকে জানাবেন, আমি তাহলে আগে থেকেই হৃদপিন্ডকে সামলে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখব।’

মেহুল বোকা বোকা চোখে চেয়ে থাকে। কী জবাব দিবে সে? লোকটার এসব কথায় মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে পড়ছে তার। উপযুক্ত উত্তর মেলাতে পারছে না। রাবীর তার হাত ছেড়ে দেয়। মেহুল গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। দুকদম এগিয়ে আরেকবার পেছনে আসে। রাবীর তখনও তার দিকে চেয়ে আছে। মেহুল মৃদু হেসে বলে,

‘যদি শাড়ি পরে কাউকে নিহত করা যায়, তাহলে আমি আরো একশোবার শাড়ি পরব। বুঝেছেন, নেতা সাহেব?’

রাবীর উত্তর দেয় না। মেহুল চলে যাওয়ার পর সে আলতো হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

________

‘তোমার লজ্জা করে না, সাদরাজ আহমেদ; এত সম্পত্তির মালিক হয়েও সামান্য ছয় শতক জমিও তুমি ছাড়ছো না?’

সাদরাজ বরাবরের মতোই তার কুৎসিত হাসিটা হেসে বলে,

‘হোক ছয় শতক, সাদরাজের নজর একবার যেখানে পড়ে সেখানে থেকে সেই নজর আর কেউ সরাতে পারে না।’

রাবীর তার দিকে এগিয়ে আসে। দু হাত পেছনের দিকে নিয়ে একহাত দিয়ে অন্যহাতে আটকে ধরে। চোয়াল শক্ত করে বলে,

‘অন্যের জিনিসের উপর নজর দেওয়ার স্বভাব তোমার কবে যাবে? এই স্বভাবের জন্যই আজ তুমি এতকিছু হারিয়েছো। ভালোই ভালোই এই জমির উপর থেকে তোমার সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলো। নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।’

সাদরাজের কপালের রগ ফুলছে। রাগ যেন চোখে মুখে উপচে পড়ছে তার।

‘আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলার সাহস দেখাবে না, রাবীর। আর বাকি রইল এই জমির কথা? এই জমির উপর থেকে আমার সাইনবোর্ড কখনোই উঠবে না।’

‘আমি কিন্তু আইনী পদক্ষেপ নিব, সাদরাজ।’

‘সাদরাজ কাউকে ভয় পায় না, সেটা তোমার থেকে ভালো হয়তো আর কেউ জানে না।’

রাবীরের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সে রাগের চোটে জমির উপর লাগিয়ে রাখা সাদরাজের সাইনবোর্ডটাতে গিয়ে জোরে লাথি মারে। সাইনবোর্ডটা ডানদিকে হেলে পড়ে। আরো দুইটা লাথি মারতেই সেটা পুরোপুরি বাঁকা হয়ে পড়ে যায়। তা দেখে রাগে টগবগ করছে সাদরাজ। রাবীরকে এই মুহুর্তে এই জমিতেই জ্যান্ত পুঁতে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু, আপাতত সেই ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখেছে সে। সামনে তার আরো বড়ো সুযোগ আসবে। এইসব কিছুর বদলা সে হাড়ে হাড়ে নিবে।

রাবীর দাঁত খিঁচে বলে,

‘আজ থেকে এই জমি জনগণের। আর এই জমিতে আমি প্রাইমারী স্কুল বানাব। এই জমিতে ভবিষ্যতেও যদি আর কারোর কুদৃষ্টি পড়েছে তবে তার দৃষ্টি আমি উপড়ে ফেলব। কথাটা যেন মাথায় থাকে।’

রাবীর তার কথা শেষ করে গাড়িতে উঠে যায়। সাদরাজের গায়ের রক্ত গরম হয়ে উঠেছে। সে নিজের রাগকে কন্ট্রোলে নিতে পারছে না। সবকিছু তছনছ করে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার।

_______

পরীক্ষা শেষ আজকে বেশ কিছুদিন হয়ে গিয়েছে। এখন মূলত সামনের প্রোগ্রামে গান গাওয়ার প্রস্তুতি’ই নিচ্ছে মেহুল। সকালে ভার্সিটি গেলে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয় তার। তারপর খেয়ে দেয়ে এক ঘুম দেয় উঠে রাত নয়টাই। তারপর আবার মা বাবার সাথে কথা বলে, এক মগ কফি খেয়ে সময় কাটে তার। আর রাতে খাওয়ার পর রাবীরের সাথে কথা বলাটা তো আজকাল তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। একদিনও যদি রাবীর ব্যস্ততার কারণে তাকে কল না দেয় বেচারির আর সেই রাতে ঘুম হয় না। রাবীরের কথা ভাবতে ভাবতেই রাত পার হয় তার। মানে কী ভয়ংকর ব্যাপার, ভাবা যায়? সে তো রাবীরের প্রেমে রীতিমত হাবুডুবু খাচ্ছে। অবশ্য কেবল হাবুডুবু না একেবারে ডুবে মরার উপক্রম। আর তার উপর ঐ লোকটার হুটহাট করে বলা বেশরম কথাগুলো শুনলে তো তার আরো আগেই ম’রে যেতে ইচ্ছে করে।

________

অডিটরিয়ামে বসে অন্য সবার মতোই গানের প্র্যাকটিস করছিল মেহুল। সেসময় সেখানে একজন ছেলে আসে। জিজ্ঞেস করে,

‘এখানে মেহুল কে?’

মেহুল তার দিকে তাকায়। বলে,

‘এই যে আমি।’

ছেলেটা তার দিকে এগিয়ে যায়। তারপর তার হাতে রাখা বেলি ফুলের গাজরাটা মেহুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

‘এটা আপনার জন্য।’

মেহুল ভ্রু কুঁচকে তিক্ত সুরে বলে,

‘আপনি আমাকে গাজরা কেন দিচ্ছেন? কে আপনি?’

‘না, আমি আপনাকে গাজরা দিচ্ছি না। কেউ একজন ভার্সিটির গেইটের সামনে এসে এটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের থারটিন ব্যাচের মেহুলকে দেওয়ার জন্য। আর এখানে এত স্টুডেন্ট দেখে মনে হলো সেই মেয়ে এখানে থাকতে পারে। তাই এখানেই এটা নিয়ে এলাম। নিন ধরুন।’

মেহুল গাজরাটা হাতে নিয়ে অবাক হয়ে চেয়ে রইল। কে এই গাজরা দিয়েছে? সে ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করল,

‘আচ্ছা, আপনি ঐ লোকটার নাম জানেন?’

‘দুঃখিত আপু, আমি উনার ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমাকে গাজরা দিতে বলেছেন আর আমি সেটা দিয়ে দিয়েছি, এইটুকুই।’

‘আচ্ছা, ঠিক আছে।’

মেহুল বেশ চিন্তায় পড়ে। পাশ থেকে তার বন্ধুরা মজা করে বলে,

‘এটা নিশ্চয়ই তোর নেতা সাহেবের কাজ।’

মেহুল ভেবে বলে,

‘উনার এত সময় আছে নাকি আমার জন্য গাজরা কিনে পাঠাবে? আর যদি এতোই দেওয়ার ইচ্ছে হতো তাহলে তো নিজেই এসে দিয়ে যেতে পারতেন, এত কাহিনী করার কী দরকার ছিল।’

রিতা তখন বলল,

‘আরে বোকা, ভাইয়া তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছেন। তুই তো দেখি কিছুই বুঝিস না।’

ব্যাপারটা এমন হতেই পারে। তবে মেহুলের মনের দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না। তাই সে রাবীরকে কল দিয়ে বসে। আর রাবীরের কল ব্যস্ত দেখায়। রাবীর এই সময় ব্যস্ত থাকে সেটা মেহুল খুব ভালো করেই জানে। কিন্তু, এত ব্যস্ততার মাঝেও রাবীর কখন এসব করল সেটাই সে বুঝতে পারছে না।

চলবে…

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৬।

ভার্সিটির বাইরে রাবীরের গাড়ি দেখে আরেকদফা অবাক হয় মেহুল। লোকটা আর একদিনে তাকে কত সারপ্রাইজ দিবে কে জানে। রিতা তখন মজা করে বলে,

‘একটু আগে ফুল আর এখন স্বয়ং নেতা সাহেব’ই চলে এসেছেন। যান নেত্রী সাহেবা। আমি তাহলে আসছি।’

‘এই তুইও চল। তোকে নামিয়ে দিতে বলব।’

‘কাবাব মে হাড্ডি হওয়ার কোনো শখ আমার নেই, বুঝতে পেরেছেন বান্ধবী? চললাম।’

রিতা তার পথে হাঁটা ধরল। মেহুল ধীর পায়ে রাবীরের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সে গাড়ির কাছে যেতেই রাবীর গাড়ির দরজাটা খুলে দেয়। সে ভেতরে প্রবেশ করে। রাবীর গাড়ি স্টার্ট দেয়। মেহুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

‘আজ এত সারপ্রাইজ দেওয়ার ইচ্ছে হলো যে?’

রাবীর এক পলক তার দিকে চেয়ে বলল,

‘কেন, আপনি খুশি হোন নি?’

মেহুল ভাব নিয়ে বলল,

‘না, তা না। আসলে আপনি তো আবার খুব ব্যস্ত মানুষ। আমার জন্য আবার আপনার কাজের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?’

‘নিজের ওয়াইফকে খুশি করার জন্য এমন একটু আধটু কাজের ক্ষতি করা’ই যায়।’

‘আচ্ছা, তাই!’

রাবীর তখন হঠাৎ তার হাতের দিকে খেয়াল করে। জিজ্ঞেস করে,

‘বেলি ফুল কে দিল?’

মেহুল ভ্রু কুঁচকে রাবীরের দিকে তাকায়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘বেলি ফুল কে দিয়েছে আপনি জানেন না?’

রাবীর বলে,

‘না, আমি কী করে জানব?’

মেহুল এবার নড়ে চড়ে বসে। চিন্তিত সুরে বলে,

‘এই ফুল আপনি দেননি?’

রাবীর তার দিকে চেয়ে বলে,

‘না।’

‘ওমা, তাহলে কে দিল?’

‘আশ্চর্য, আপনি ফুল হাতে পরে বসে আছেন অথচ আপনি জানেনই না এটা কে দিয়েছে? তাহলে কোথায় পেয়েছেন এটা?’

‘আরে একটা ছেলে আমাকে এটা দিয়ে বলেছে কেউ একজন নাকি উনাকে ফুলটা ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের মেহুলকে দেওয়ার জন্য। উনিও তাই করেছেন। কিন্তু, ঐ লোকটাকে উনি চিনেন না। আর আমি তো উল্টো ভেবেছি এটা আপনি। হয়তো আমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছেন।’

রাবীর অবিলম্বেই একটানে গাজরাটা মেহুলের হাত থেকে খুলে ফেলল। সেটা বাইরে ছুঁড়ে মেরে বলল,

‘কেউ কিছু দিলেই নিতে হয় না। আর কখনো এমন কিছু করবেন না।’

মেহুল মুখ কালো করে বলল,

‘আমি জানতাম নাকি, এটা আপনি না অন্যকেউ।’

‘এখন তো জেনেছেন। আর কোনোকিছু ভাবার আগে আমার সাথে একবার কথা বলে সিউর হয়ে নিবেন। তাহলেই আর এত সমস্যায় পড়তে হবে না।’

মেহুল চুপ করে বসে থাকে। মনটাই খারাপ হয়ে যায় তার। কোথায় ভেবেছিল, রাবীর তাকে ভালোবেসে গাজরা কিনে দিয়েছে। কত খুশিই না হয়েছিল। ধুর, এখন উল্টো তার আরো টেনশন বেড়েছে। ঐ অচেনা ব্যক্তিটা আবার কে?

.

হঠাৎ গাড়ি থামতেই মেহুল এদিক ওদিক তাকায়। তারা তো এখনো পৌঁছায়নি। তাহলে গাড়ি থামল কেন। রাবীর গাড়ি থেকে নামল। মেহুল তার দিকে ফিরতেই দেখল, সে একটা ফুলের দোকানে ঢুকছে। মেহুল অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। লোকটা আসলে কী করতে চাইছে। একটু পর রাবীর অনেকগুলো ফুল সমেত বেশ কিছু গাজরা নিয়ে গাড়িতে ঢুকে। মেহুল তা দেখে হতভম্ব হয়ে চেয়ে থাকে। রাবীর একটা গাজরা নিয়ে খুব যত্ন করে মেহুলের হাতে পরিয়ে দেয়। বাকি ফুলগুলো মেহুলের কোলের উপর রেখে মৃদু হেসে বলে,

‘আমি ব্যতিত অন্য কারোর দেওয়া ফুল ছোঁয়ার অধিকারও আপনার নেই।’

তারপর সে আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়। মেহুল বিস্ময় নিয়ে তার হাতের গাজরাটাকে দেখছে। লোকটা অদ্ভুত সব কাজ করে। বারবার তাকে চমকে দেয়। এত মায়া এই মানুষটার মাঝে! এত নিবিড় ভাবে আদৌ কেউ কাউকে আগলে রাখতে পারে?

________

রাবীর আর মেহুল একসঙ্গেই ডাইনিং এ খেয়ে রুমে যায়। রাবীর বিছানায় বসে। মেহুল ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রাবীর বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে কী যেন ভাবছে। মেহুল আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শরীরের লোশন মাখতে মাখতে বলে,

‘আপনি কি ঐ গাজরাটা নিয়ে চিন্তিত?’

রাবীর তার দিকে চেয়ে বলে,

‘চিন্তা না করে কি কোনো উপায় আছে? কে দিয়েছে এটা আপনাকে সেটাও জানেন না। আচ্ছা, যে ছেলেটা এটা এনে দিয়েছে তাকে একবার আমার সামনে আনতে পারবেন?’

মেহুল রাবীরের সামনে গিয়ে বসে। বলে,

‘আপনি অযথাই এত চিন্তা করছেন। এটা নিশ্চয়ই আমার কোনো ফ্রেন্ডের কাজ। আমার সাথে মজা করার জন্য হয়তো এসব করেছে।’

রাবীরের তাও চিন্তা কমে না। সেসময় মেহুলের চট করে আবার সেই চিরকুটের কথা মনে পড়ে যায়। মনে তখনই প্রশ্ন জাগে, “আচ্ছা, এই চিরকুটটা রাবীর দিয়েছে তো, নাকি এটাও আবার অন্য কারোর দেওয়া?”

সে সিউর হওয়ার জন্য রাবীরকে জিজ্ঞেস করে,

‘আচ্ছা, আপনি কোনোদিন আমাকে কোনো চিরকুট দিয়েছেন?’

‘চিরকুট? কীসের চিরকুট?’

রাবীর ভ্রু কুঁচকে উল্টো তাকে প্রশ্ন করে। মেহুল বলে,

‘দাঁড়ান, দেখাচ্ছি।’

সে গিয়ে তার ড্রয়ার ঘেটে সেই হলুদ রঙের চিরকুটটা বের করে আনে। সেটা নিয়ে রাবীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,

‘এটা আপনি দিয়েছেন না?’

রাবীর চিরকুটটা হাতে নেয়। চিরকুটের লেখাটা পড়ে। মেহুলের দিকে চেয়ে বলে,

‘এটা কে দিয়েছে?’

মেহুল এবারও অবাক হয়ে বলে,

‘এটাও আপনি দেননি?’

‘না, এসব জিনিসে আমি অভ্যস্ত না। এটা কে দিয়েছে আপনাকে?’

মেহুল রাবীরের পাশে বসে। বোকা বোকা স্বরে বলে,

‘আমি জানি না, একদিন রিতা আর আমি পার্কে গিয়েছিলাম। সেদিনই একটা লোক এসে এটা দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, কেউ একজন নাকি এটা আমাকে দিতে বলেছে। লোকটাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উনি সেখান থেকে চলে যান। আমি তখনও ভেবেছিলাম এটা বোধ হয় আপনি।’

রাবীর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। সে কী বলবে বুঝতে পারছে না। বিরক্ত হয়ে বলে,

‘আর এসব আপনি আজ আমাকে বলছেন? এতদিন কেন বলেননি? একবার চিরকুট, তো একবার গাজরা, কে এসব দিচ্ছে সেই ব্যাপারে আপনি কিচ্ছুই জানেন না; ব্যাপারটা কী মানানসই? অথচ এসব ব্যাপারে আমাকেও আপনি কিছু বলেননি।’

‘আমি এত কিছু ভাবেনি তো। আমি বরং খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, সবকিছু আপনিই করছেন।’

রাবীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মাথার মধ্যে আরো এক দুশ্চিন্তার বীজ বোপন হলো। এমনিতেও শান্তি নেই, এখন আবার নতুন এক অশান্তি এসে জুটেছে। মেহুলের বিষন্ন মুখ দেখে রাবীর বলল,

‘হয়েছে আর মন খারাপ করতে হবে না। আমি ঐ লোকটাকে খুঁজে বের করব। আর ভবিষ্যতে এমন কিছু হলে আগ বাড়িয়ে আগেই সবকিছু ভেবে ফেলবেন না। আগে আমার সাথে কথা বলে সিউর হয়ে নিবেন, বুঝতে পেরেছেন?’

‘জি।’

রাবীর কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেহুলকে খেয়াল করে বলে,

‘গাল ফুলানো কমাবেন, নাকি অন্য ব্যবস্থা করতে হবে?’

মেহুলের ভোলাভালা রূপ নিমিষেই উগ্র হয়ে উঠল। সে চেতে গিয়ে বলল,

‘এই যে মি. আমাকে একদম হুমকি দেবেন না। আমি আপনাকে মোটেও ভয় পাই না, বুঝেছেন?’

‘আচ্ছা, তাই?’

রাবীর তার দিকে কিছুটা ঝুঁকতেই মেহুল পিছিয়ে যায়। কপালে ভাঁজ ফেলে জিজ্ঞেস করে,

‘সমস্যা কী?’

রাবীর তপ্ত সুরে বলে,

‘অনেক সমস্যা। সুন্দরী বউ থাকলে স্বামীদের আর সমস্যার শেষ থাকে না। সেই কষ্ট আর আপনি কী বুঝবেন।’

মেহুল ঠোঁট চেপে হাসে। মনে তার খুশিতে লাফায়। তবে মুখে সেটা প্রকাশ করে না। ভাব নিয়ে বলে,

‘আজকাল সুন্দরী হয়েও জ্বালা দেখছি। মানুষের নজরের জ্বালায় বাঁচা যায় না।’

‘অন্যসব সুন্দরীর কথা বলতে পারছি না। তবে, আমার সুন্দরীর উপর অন্য কারোর নজর আমি মোটেও বরদাস্ত করব না। প্রয়োজন পড়লে সেই নজরের দৃষ্টিক্ষমতা কেড়ে নিব, যেন দ্বিতীয়বার আর আমার সুন্দরীর দিকে আর চোখ তুলে তাকাতে না পারে।’

রাবীরের চোখ মুখ দেখে মেহুল শুকনো মুখে বলে,

‘আপনি এভাবে কথা বললে আমার ভয় করে।’

রাবীর তখন বাঁকা হেসে বলে,

‘মাঝে মাঝে একটু ভয় পাওয়াও ভালো।’

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে