শেষটা সুন্দর পর্ব-১৭+১৮

0
629

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৭।

মেহুলের ভার্সিটিতে আজ বিশাল প্রোগ্রাম। সকাল থেকেই তাই প্রস্তুতি চলছে। মেহুল আর রিতা বেশ তাড়াতাড়িই আজ ভার্সিটিতে চলে এসেছে। মেহুল অডিটরিয়ারে তার গানের অনুশীলন করছে। রিতা আজ একটা নৃত্য পরিবেশনা করবে তাই সেও তার অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে।
দশটায় অনুষ্ঠান শুরু। ভার্সিটির প্রাঙ্গন ছাত্রছাত্রীদের হৈ চৈ এ মুখোর হয়ে উঠেছে। এখন গ্রীষ্মের শেষের সময়। তবে গরম এখনো কমেনি। তবে অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু তাপপ্রবাহ কম।

ভার্সিটির মাঠের এক কোণেই বিশাল এক কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। সেই গাছের বেশ কিছু ফুল মাটিতে পড়ে আছে। মেহুল সেখান থেকে একটা ফুল তুলে কানে গুঁজে। সাদা শুভ্রতায় ঘেরা আদলে তার এই এক টুকরো লাল ফুল যেন চকচক করে জ্বলছে। সাদা রঙটা মেহুলের খুব একটা পছন্দ না। তবে রাবীরের নিশ্চয়ই এই রং টা পছন্দ। তাই তো লোকটার সব পাঞ্জাবী সাদা রঙের। তাই আজ রাবীরের পছন্দের সুবাদেই সে এই সাদা রঙের কামিজটা গায়ে দিয়েছে। কপালের ছোট্ট কালো টিপে আরো বেশি চমৎকার লাগছে তাকে।

_______

অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুভেচ্ছা বার্তার মধ্য দিয়ে প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিকতা পরিপূর্ণ হয়। একে একে সবাই যার যার মতো পারফরমেন্স দিয়ে যায়। এক সময় মেহুলের পালা আসে। গান নিয়ে সে খুব কনফিডেন্ট থাকলেও একটু একটু ভয়ও লাগছে। তার নাম ডাকা হলে সে সাহস নিয়ে স্টেজে যায়। মাইকটা হাতে নিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেলে। নিজেকে ধাতস্ত করে। গাইতে হবে। মন প্রাণ দিয়ে গাইতে হবে। সে সুর তুলে,

“ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে

ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম

তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক
খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ

পুষে রাখে যেমন ঝিনুক
খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে

ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ
ভালো আছি, ভালো থেকো
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ

দিও তোমার মালা খানি
বাউল এর এই মন টা রে……

…..”

মেহুলের গান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত শ্রোতারা সব হৈ হুল্লোড় শুরু করেন। চারদিকে প্রশংসা কানে বাজে। মেহুল খুশি হয়। প্রচন্ড খুশিতে হাত কাঁপছে তার। সবাই তাকে অনুরোধ করে আরেকটা গান করার জন্য।

উপস্থাপিকা বলেন,

‘হ্যাঁ, মেহুল। আরেকটা হয়ে যাক।’

মেহুল মুচকি হেসে মাথা নাড়ে। সে আবার গান ধরে,

“যাও পাখি বলো হাওয়া ছলো ছলো
আবছায়া জানলার কাঁচ
আমি কি আমাকে হারিয়েছি বাঁকে
রূপকথা আনাচ-কানাচ….
….. …..”

আবারও সবাই উৎসাহে মেতে উঠে। সবার এত উচ্ছ্বাস মেহুল আশা করেনি। সে স্টেজ থেকে নামতেই তার বন্ধুরা ছুটে আসে। তাকে সাধুবাদ জানায়। পরের পারফরমেন্সটা রিতার। তাই মেহুল তাকে অল দ্যা বেস্ট বলে এক কোণে দাঁড়িয়ে যায় তার নাচ দেখার জন্য। রিতার নাচ শেষ হতেই মেহুল একটু ওয়াশরুমের দিকে যায়। তবে তার যাওয়ার মাঝেই কেউ তাকে ডেকে উঠে। মেহুল পঁছন ফিরে চেয়ে দেখে সাদরাজ। মেহুল প্রসন্ন হাসে। জিজ্ঞেস করে,

‘আপনি মাত্র এসেছেন? আমার পারফরমেন্স তো শেষ।’

‘সৌভাগ্যবশত আমি আপনার পারফরমেন্স দেখতে পেরেছি। And it was just mind-blowing. আপনি এত ভালো গান করেন! তা আপনি কোনো গানের রিয়েলিটি শো তে অংশগ্রহণ করছেন না কেন?’

মেহুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসে। বলে,

‘এখানে গান গাওয়ার অনুমতি পেয়েছি যে এটাই বেশি, আবার রিয়েলিটি শো।’

সাদরাজ প্রশ্ন করে,

‘কেন, আপনার ফ্যামিলি কি আপনাকে সাপোর্ট করে না?’

‘করে, তবে খুব একটা না।’

‘আপনার হাজবেন্ড নিশ্চয়ই আপনাকে সাপোর্ট করেন?’

‘জি।’

‘তাহলে আর সমস্যা কোথায়? একবার চেষ্টা করে দেখুন, আপনি খুব ভালো জায়গায় যেতে পারবেন।’

মেহুল মৃদু হেসে বলল,

‘ধন্যবাদ, আপনাকে। আর আপনি এখানে এসেছেন দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি।’

‘আপনি যেখানে আসতে বলেছেন সেখানে না এসে পারি। যাকগে, এসেছি যখন আপনার ভার্সিটিটা তো একটু ঘুরে দেখাতেই পারেন।’

‘জি, অবশ্যই। চলুন।’

মেহুল আর সাদরাজ পাশাপাশি হাঁটছে। মেহুল ভার্সিটির এটা ওটা দেখিয়ে তাকে পরিচিত করাচ্ছে। তবে সাদরাজের মনে এই মুহুর্তে কী চলছে সেটা কেবল সে’ই জানে। মেহুল সাদরাজকে নিয়ে তার ডিপার্টমেন্টের ভেতরে যায়। তখন তাদের পাশ কাটিয়ে দুজন লোক যায়। একজন লোক তখন পাশের জনকে বলে উঠে,

‘আরে এটা সাদরাজ আহমেদ না? সাবেক সংসদ নেতা?’

পাশের লোকটা বলে,

‘হ্যাঁ, আমারও তো তাই মনে হয়। কিন্তু, উনি এখানে কী করছেন?’

‘কী জানি? আর পাশের মেয়েটা কে? উনার বউ নাকি?’

‘হতেও পারে।’

________

‘এই যে দেখুন, এই সবগুলো গাছ আমি লাগিয়েছি। সুন্দর না?’

‘হ্যাঁ।’

‘আচ্ছা, আপনি কোনো সাবজেক্টে পড়েছেন?’

‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান।’

‘আচ্ছা। আর আপনি এখন এমনিতে কিসে জব করছেন?’

‘ঐ ছোট্ট একটা কম্পানিতে জব করি।’

‘ওহহ।’

‘আচ্ছা, চলুন ঐদিকটাই একটু বসি।’

‘ঠিক আছে, চলুন।’

মেহুল বেশ দূরন্ত রেখে সাদরাজের পাশে বসল। তবে সাদরাজ কথা বলার আগেই মেহুলের ফোন বেজে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে রাবীরের নামটা দেখে মেহুল খুশি হয়। সাদরাজের দিকে চেয়ে বলে,

‘এক্সকিউজ মি।’

সাদরাজ জোরপূর্বক হেসে বলে,

‘কথা বলুন। সমস্যা নেই।’

মেহুল একটু দূরে গিয়ে কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে রাবীর বলে,

‘কোথায় আপনি? আমি আপনার ভার্সিটির গেইটের সামনে।’

‘আপনি এসেছেন? তখন তাহলে না করেছিলেন কেন?’

‘সময় পেয়েছি তাই চলে এসেছি। এখন আপনি বলুন, আপনি কোথায় আছেন?’

‘আমি তো আমার ডিপার্টমেন্টে আছি। আচ্ছা আপনি দাঁড়ান, আমি আসছি।’

মেহুল কল কেটে সাদরাজের কাছে যায়। হেসে বলে,

‘আমার হাজবেন্ড এসেছেন। চলুন, আজকে আপনাকে উনার সাথে পরিচয় করে দিব।’

সাদরাজ হাসতে পারে না। তাও ঠোঁটের কোণে হাসির ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল,

‘জি, অবশ্যই।’

মেহুল আগে আগে হাঁটছে। আর সাদরাজ পেছন পেছন। মেহুল দ্রুত ভার্সিটির গেইটের সামনে যায়। দেখে সত্যি সত্যিই রাবীর দাঁড়িয়ে আছে। সে হেসে রাবীরের কাছে গিয়ে বলে,

‘সেই তো আসলেন। আরেকটু আগে আসলে কী হতো, আমার পারফরমেন্সটা দেখতে পারতেন।’

রাবীর ফোনের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মেহুলের দিকে চায়। শুভ্রতায় ছেঁয়ে যাওয়া এক মেঘবালিকা যেন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কানে গুঁজে রাখা রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলটা এত সৌভাগ্য নিয়ে কী করে জন্মাল? সে কত নিঁখুত ভাবে তার কুন্তলে জায়গা করে নিয়েছে। যেন আজ তার সুখের দিন। অথচ তার এই সুখ দেখে যে অন্যকারোর প্রচন্ড হিংসে হচ্ছে, সেটা সে বুঝতেই পারছে না। কত নিষ্ঠুর এই ফুল!

রাবীর বলল,

‘সাদা রঙে তো আপনাকে বেশ মানায়।’

‘ঐ যে আপনার বউ না। না মানিয়ে উপায় আছে।’

রাবীর মৃদু হেসে বলে,

‘হ্যাঁ, তাও ঠিক।’

মেহুল তখন বলল,

‘ওহহ, আপনার সাথে আজকে একজনের পরিচয় করিয়ে দিব।’

এই বলে সে পেছন ফিরে চেয়ে দেখল, সাদরাজ নেই। মেহুল এদিক ওদিক ভালোভাবে খুঁজল। কিন্তু সাদরাজের আর দেখা পেল না। আশ্চর্য, লোকটা তো তার পেছন পেছনই আসছিলেন। হঠাৎ কোথায় উধাও হয়ে গেলেন?
রাবীর জিজ্ঞেস করল,

‘কাকে খুঁজছেন?’

মেহুল তার দিকে চেয়ে বলল,

‘ঐ যে একটা লোকের কথা বলেছিলাম না, বাবাকে রক্ত দিয়েছিলেন। উনি আজ আমার ভার্সিটিতে এসেছিলেন। বলেছিলাম আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিব, আমার পেছনেই তো আসছিলেন। হঠাৎ কোথায় চলে গেলেন?’

‘হয়তো কোনো কাজ পড়ে গিয়েছে তাই চলে গিয়েছেন। থাক, অন্য কোনোদিন নাহয় আবার পরিচিত হওয়া যাবে। এখন আপনি আমার সাথে চলুন, আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই।’

‘কোথায়?’

‘চলুন, গেলেই দেখতে পারবেন।’

চলবে…

#শেষটা_সুন্দর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
১৮।

‘আচ্ছা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?’

‘গেলেই তো দেখতে পারবেন।’

‘আজকে কি আপনার আর কোনো কাজ নেই?’

‘খুব জরুরি কিছু নেই।’

মেইন রোডে না রাবীরের গাড়ি আজ ভেতরের রোড দিয়ে যাচ্ছে। আর তাই এই দিকে বড়ো কোনো গাড়ি নেই। যা আছে সব রিক্সা আর অটোরিক্সা। এই রাস্তাটা মেহুলের অপরিচিত। তাই একটু বেশিই উৎসুক নয়নে সে এদিক ওদিক দেখছে। রাবীর যে তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটাও সে জানে না। তবে যেখানেই যাক, এই সময়টা তার সুন্দর যাচ্ছে। গাড়ির জানলা দিয়ে সা সা করে বাতাস তার চোখে মুখে আঁছড়ে পড়ছে। তার খোলা চুলগুলোও তাই বড্ড বিরক্ত করছে তাকে। মেহুল দুহাত দিয়ে সামনের চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দেয়। তবে এতে লাভ হয় না কিছুই। সেগুলো বাতাসের তালে আবার বেরিয়ে আসে। চোখে মুখে এভাবে এসে চুল পড়ে থাকলে কার ভালো লাগে। সে এর কারণে ভালো মতো তাকাতেও পারছে না। বিরক্ত হয়ে ব্যাগ হাতিয়ে একটা বেন্ড বের করে। বড়ো চুলগুলো পেছন দিকে নিয়ে বাঁধলেও সামনের ছোট চুলগুলো তো আর যায় না। সেগুলো আগের মতোই তাকে বিরক্ত করে চলছে। সে তাই এবার হাল ছেড়ে দেয়। যা, উড়ুক তারা, যত খুশি উড়ুক। সেও আর বাঁধা দিবে না।

গাড়িটা একটা দোকানের সামনে থামে। রাবীর বেরিয়ে একটা পানির বোতল আর দু’টো আইসক্রিম নিয়ে আসে। আইসক্রিম দেখে মেহুলের মনে প্রশান্তি আসে। মন তো তার এটাই চাইছিল। মেহুল আইসক্রিম খাওয়ার সময় একটু আইসক্রিম গড়িয়ে তার জামাতে পড়ে যায়। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই সে চেঁচিয়ে উঠে,

‘আআআআ, আমার সাদা জামা।’

মেহুলের এত জোরে চিৎকার শুনে রাবীর ভাবে কী না কী হয়ে গিয়েছে। সে অস্থির হয়ে বলতে থাকে,

‘কী হয়েছে, মেহুল? কোথাও ব্যথা পেয়েছেন নাকি? আপনার জামায় কী হয়েছে?’

মেহুল অসহায় সুরে বলে,

‘আইসক্রিম পড়ে গিয়েছে।’

রাবীর এটা শুনে দম ফেলে। বলে,

‘আপনি এর জন্য এত জোরে চিৎকার দিয়েছেন? আমি তো ভেবেছি, কী না কী হয়ে গিয়েছে।’

‘এটা কি কোনো সামান্য ব্যাপার? আমার একটা মাত্র সাদা জামা। সেটাও আজ শেষ। মা আমাকে খুব বকবে।’

রাবীর মৃদু হেসে বলে,

‘আচ্ছা আমি আপনাকে সাদা জামার একটা দোকান কিনে দিব।’

‘লাগবে না, এমনিতেও আমার সাদা পছন্দ না। শুধুমাত্র আপনার কথা ভেবে পড়েছিলাম। আর তাই এমন হয়েছে।’

রাবীর আলতো হেসে একটা টিস্যু নিয়ে তার জামাটা ভালোভাবে পরিষ্কার করে দয়। যদিও খুব একটা দাগ পড়েনি, তাও মেহুলের মন খারাপ। একটু পর টিস্যু বাইরে ফেলে রাবীর সোজা হতেই দেখল তার আইসক্রিম গলে গিয়ে তার পাঞ্জাবীতে পড়েছে। সে মেহুলের দিকে চেয়ে বলে,

‘আপনার অভিশাপ যে সাথে সাথেই লেগে যায় সেটা তো বলেননি।’

মেহুল না বুঝে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রাবীর তাকে ইশারা দিয়ে তার পাঞ্জাবীর অবস্থা দেখায়। মেহুল তা দেখে শব্দ করে হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে বলে,

‘থাক, কষ্ট পেয়েন না। আমি আপনাকে একটা সাদা পাঞ্জাবীর দোকান কিনে দেব।’

এই বলে সে আবার হাসে। আর রাবীরও তখন মৃদু হেসে তার পাঞ্জাবী পরিষ্কার করে। তারপর আবার গাড়ি স্টার্ট দেয়।

গাড়িটা থেমে যেতেই মেহুলের ঘুম ভাঙে। চেয়ে দেখে একটা গেইটের বাইরে তাদের গাড়ি থেমেছে। এই জায়গাটা সে চিনে না। ড্রাইভিং সিটে রাবীরকে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায় সে। দ্রুত গাড়ি থেকে নামে। বের হতেই রাবীরকে দেখে গেইটের দারোয়ানের সাথে কথা বলছে। তা দেখে শান্তি পায় সে। তারপর আস্তে আস্তে সেও রাবীরের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। রাবীর দারোয়ানের সাথে কথা শেষ করে মেহুলের দিকে চেয়ে বলে,

‘চলুন তাহলে ভেতরে যাওয়া যাক।’

মেহুলকে নিয়ে রাবীর ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরের পরিবেশ দেখে মেহুল ভীষণ অভিভূত হয়। কী সুন্দর জায়গাটা। একটা দু’তালা ডুপ্লেক্স বাড়ি। বাড়ির সামনেই বিশাল একটা সুইমিং পুল। আর তার সামনেই কিছুটা জায়গা জুড়ে বসার কিছু ছোট ছোট স্থান তৈরি করে রাখা। একপাশে অনেক রকমের গাছ লাগানো। অন্যদিকটাই ছোট্ট বাগান করা। গেইটের সাথে লাগানোই একটা বিশাল গেইট গাছ আছে। আর তার পাশে নিচে ছোট ছোট টবে বেশ কিছু ফুলের গাছ। মেহুল তো আশেপাশে তাকিয়ে তার বিস্ময়’ই কাটাতে পারছে না। এটা নিশ্চয়ই কোনো রিসোর্ট।

রাবীর বলল,

‘চলুন, ভেতরে যাই।’

ডুপ্লেক্স বিল্ডিংটার সিঁড়ি বাইরের দিকে। পুরো বাড়ি সাদা রঙের। দুতালার পশ্চিম দিকে মুখ করা একটা বড়ো বারান্দা আছে। তার উপর থেকে পুরো রিসোর্টটা বেশ সুন্দর দেখা যায়। মেহুল নিচতালার ভেতরে যেতেই দেখে একটা বড়ো হল রুমের স্পেস। সাথে লাগানো একটা লম্বা বারান্দা। আর একটা ছোট্ট বসার রুম। তাছাড়া আর কোনো রুম নেই সেখানে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দেখে সেখানে দুইটা বড়ো বেড রুম। একটা ডাইনিং রুম যদিও এটাকে রুম বলা যায় না, অনেকটা বেলকনি টাইপ। আর বেশ ছিমছাম একটা রান্নাঘর। আর দুইটা ওয়াশরুমও আছে। তবে দুতালার সিঁড়ির পাশের জায়গাটা বেশ সুন্দর।
মেহুলের তো এইসব কিছু বেশ পছন্দ হয়।

রাবীর তাকে জিজ্ঞেস করে,

‘পছন্দ হয়েছে।’

‘এত সুন্দর একটা জায়গা, পছন্দ না হয়ে আর কোনো উপায় আছে।’

‘তাহলে কথা ফাইনাল করব?’

মেহুল জিজ্ঞেস করে,

‘কী কথা?’

‘এই পুরো বাড়ি সহ জায়গাটা আমি একজনের কাছ থেকে কিনতে চাচ্ছি। যদি আপনার পছন্দ হয় তবেই কথা আগাবে। এখন বলুন, পছন্দ হয়েছে তো?’

মেহুল অবাক হয়ে বলল,

‘এই পুরো জায়গাটা আপনি কিনে নিবেন? কত টাকা লাগবে?’

‘সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না, আপনি শুধু বলুন পছন্দ হয়েছে কিনা? কারণ, এই বাড়ি আমি আপনার নামে কিনছি।’

মেহুলের এবার চোখ বেরিয়ে আসবে যেন। সে হতভম্ব হয়ে বলে,

‘কী! এত বড়ো বাড়ি আমার? কেন? আমার তো কোনো বাড়ির দরকার নেই। আপনি কিনলে আপনার নামেই কিনুন, আমার লাগবে না।’

রাবীর গভীর নিঃশ্বাস ফেলে। মেহুলের দুই বাহুতে হাত রেখে কিছুটা কাছে যায়। নরম সুরে বলে,

‘আমি আগেও বলেছি মেহুল, আমার অনেক শত্রু। আমার জীবনের কোনো ভরসা নেই। আমি চাই, আমার অনুপস্থিতিতেও যেন আপনি সাবলম্বী হয়ে বাঁচতে পারেন। কখনো যেন কারোর কাছে আশ্রয় চেতে না হয়। আর তার জন্য যা যা করা দরকার আমি সব করে যাব। আমি চাই আপনি ভালো থাকুন, জীবনের সবটুকু সুখ পান। সেটা আমার উপস্থিতেই হোক বা অনুপস্থিতিতে, আপনাকে সুখী দেখতে পারলেই আমার শান্তি।’

মেহুল অবাক হয়ে চেয়ে থাকে লোকটার দিকে। এত মুগ্ধতা কেন উনার মাঝে? এত কেন ভাবেন উনি? এত কেন ভালোবাসেন? মেহুলের তো এখন ভয় হচ্ছে, উনার এই অতিরিক্ত ভালোবাসা যদি কোনোদিন উনার জীবনে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়ায়, তখন?

মেহুলকে নিরব দেখে রাবীর প্রশ্ন করে,

‘কী হলো, মেহুল? আপনার বাড়িটা পছন্দ হয়নি?’

‘হ্যাঁ, খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু, এটার অনেক টাকা আমি জানি। এখন এত টাকা খরচ করার কোনো দরকার আছে?’

রাবীর হেসে বলে,

‘আমার টাকা আপনি আর মা ছাড়া আর কার পেছনেই বা খরচ করব, বলুন। আপনারা ছাড়া আমার আর আছেই বা কে। আচ্ছা, আপনি গিয়ে বসুন। আমি জমির মালিককে কল দিয়ে আসতে বলছি। আজই সব ফাইনাল হোক।’

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে