শুধু তুই Part-05

0
2422

#শুধু তুই #
#Part_05
Writer_ Raidah Islam Nova

বর্তমানে ফারিশ,মেহেদী ও তার দল,প্রিন্সিপাল,
রিটা, পিংকি,লাবণ্য, পরশি, জন প্রিন্সপালের রোমে দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশ ও জন স্বাভাবিক ভংগিতে দাড়িয়ে আছে। বাকি সবাই কিছুটা ভয়ে মাথা নিচু করে আছে।প্রিন্সিপালের চেয়ারে বসে আছে তখনকার সেই ছেলেটা।এক হাত দিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে টেবিলে থাকা একটা পেপার ওয়াট কে ঘুরাচ্ছে।আর চেয়ারটাকে কিছুটা ডানে কিছুটা বামে দোলাচ্ছে।

ছেলেটার নাম নাহান চৌধুরী। রিটার বড় ভাই। রিটার বাবা আশফাক চৌধুরী ও মেহেদীর বাবা রওনাক আহমেদ দুই বন্ধু ও বিজনেস পার্টনার।তাদের খুব ভালো সম্পর্ক।রিটার বাবা ভার্সিটি পরচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান। নাহান ভার্সিটির ভেজালে খুব একটা আসে না।নাহান ও রিটার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।নাহান ভদ্র ছেলে।নাহান নিজের বোনের এসব কাজের জন্য খুব বিরক্ত।সে এসব মোটেও পছন্দ করে না। আর রিটার বিবরণ তো আগেই দিয়েছি।ওর বাবা বিজনেসের কারণে কানাডা গিয়েছে। তাই না চাইতেও আজ নাহানকে আসতে হয়েছে।

সবাই চুপ করে আছে।থমথমে পরিবেশ। হঠাৎ নাহান হাতে থাকা পেপার ওয়াট টাকে রেখে সবার দিকে তাকালো।
নাহানঃ বলুন প্রিন্সিপাল স্যার সমস্যা কি?
( শান্ত ভাবে)
মেহেদীঃ তেমন কিছু না ভাই।আসলে…
নাহানঃ আমি তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করি নি।
( চোখ পাকিয়ে)
রিটাঃ ভাইয়া আমাদের কোনো দোষ নেই।
( মাথা নিচু করে)
নাহানঃ তোদের সাহস কি করে হয় আমার মুখে মুখে কথা বলার। আমি কি তোদের কিছু জিজ্ঞেস করেছি?
(রেগে+ চিৎকার করে)
রিটাঃ না ভাইয়া।( ভয় পেয়ে)

নাহান সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।কেউ ভুল করলে তাকে অবশ্যই শাস্তি দিবে। সে নিজের বোন হোক কিংবা অন্য কেউ। ওর কাছে অন্যায়ের কোনো মাফ নেই। সে কখনও কোনো পক্ষ নিয়ে কথা বলে না।যেটা
ওর সঠিক মনে হবে সেটাই করবে। মেহেদী ও রিটা, নাহানকে অনেক ভয় পায়।ওদের মতো বেয়াদবদের নাহানের এক থাপ্পড়রই যথেষ্ট।

প্রায় আধা ঘণ্টা পর রুমে তর্ক-বির্তকের পর মেহেদী ও ফারিশকে মিলিয়ে দেওয়া হলো।নাহান ও প্রিন্সিপাল দুজনে মিলে রিটা ও মেহদীকে এক দফা বকা দিলো।ফারিশ, জনকে কিছুই বললো না।কারণ দোষটা ওরা করে নি।আমি ও এশা জনালা দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে উঁকি মেরে সব কিছু দেখছিলাম।আমার যে কি খুশি লাগছে রিটাকে বকতে দেখে। ইচ্ছে করছে লুংগি ডান্স দিতে।হঠাৎ করে আমি ফিক করে হেসে উঠলাম। সবাই জানলার দিকে তাকালো।আমাদের দেখার আগে দুজন উঠে পরে দৌড় লাগালাম। আমাদের আর পায় কে।

এশাঃ তোর জন্য, আরেকটু হলে দেখে ফেলতো।যদি দেখতো না তাহলে খবর হয়ে যেতো।( হাঁপিয়ে)

আমি এখনো হেসেই যাচ্ছি।আমার কি যে ভালো লাগছে। একদম ঠিক হয়েছে।

এশাঃ তুই কি পাগল – টাগল হলি নাকি আই।
( ভ্রু কুঁচকে)
আমিঃ দূর ছেমরি কি যা তা বলিস?
এশাঃ পাগলের মতো হাসছিস কেনো?
আমিঃ রিটা ও মেহেদীকে বকতে দেখে আমার যে কত আনন্দ হচ্ছে।
এশাঃ আমাদের যদি দেখতো তাহলে ঐ শাঁকচুন্নি গুলি কি করতো তোর জানা আছে?
আমিঃ আমার কি দোষ? ?আমি অনেক চেষ্ট করছিলাম আটকে রাখতে ।তারপরও হাসি চলে এলো।
এশাঃ জলদি এখান থেকে ভাগ।নয়লে আবার কোন ঝামেলায় পরে যাই।

আমরা দুজন কোনোরকম তাড়াহুড়ো করে বাড়িতে চলে এলাম।আমাদের দেখে চাচি অবাক হয়ে গেলেন।

চাচিঃ কি রে তোরা এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি।তোদের আসতে নাকি আজ দেরী হবে।
এশাঃ কে বললো?
চাচিঃ তোরাই তো যাওয়ার আগে বলে গেলি।
আমিঃ চাচি অনেক ক্ষুধা লাগছে।প্লিজ তারাতাড়ি খেতে দেও।পেটে ইদুঁর ড্রাম পেটাচ্ছে।
চাচিঃ তোরা ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।

চাচি রান্নাঘরে চলে গেলো।আমি ও এশা হাইফাইভ করলাম।
আমিঃ যাক বাবা,চাচির কাছে থেকে কথা ঘুরাতে পেরেছি।
এশাঃ মা যদি জানতে পারে আমরা ক্লাস না করে বাড়ি এসেছি,তাহলে বাবাকে বলে দিবে।আর বাবা ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিবে।
আমিঃ দুর,আমরা না বললেই তো হয়।

পেছন থেকে কে যেনো আমাদের কান ধরে টান মারলো।তাকিয়ে দেখি আপুনি।

আমিঃ আপুনি ছারো লাগছে তো।
এশাঃ আ আ আ আপুনি ব্যাথা পাচ্ছি।
ইশাঃ ক্লাস না করে বাড়ি তে এসে আবার দুষ্টামি হচ্ছে।
এশাঃ অনেক কাহিনী হয়েছে আজ।
ইশাঃ কি কাহিনী?
আমিঃ কানতো ছারো আপুনি।তারপর বলছি।

আপুনি আমাদের কান ছেড়ে দিলো।আমরা আজকের ও গতকালের সব ঘটনা আপুনিকে বললাম।

ইশাঃতোরা এসব ভেজাল করেছিস?( অবাক হয়ে)
আমিঃ আমরা কি ইচ্ছে করে করেছি নাকি?
এশাঃ ঐ শাঁকচুন্নিটাই তো আমাদের সাথে লাগতে এসেছে।

ইশাঃ ওসব বড়লোকের মেয়েদের দিয়ে বিশ্বাস নেই। কখন কোন ঝাল তোদের দিয়ে উঠাবে তার ঠিক নেই। যত পারিস ওদের থেকে দূরে থাকিস। চিন্তা কর আই যদি তখন ঐ ছেলেটা না আসতো তহলে তোর গাল এখন থাকতো লাল।

আমিঃ হুম?।
এশাঃ আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।সরো তো সামনে থেকে আপুনি।আমরা ফ্রেশ হয়ে খাবার খাবো।
আমিঃ তোরাব কোথায় আপুনি?
ইশাঃ কার্টুন দেখছে।
এশাঃ মেহরাব ভাইয়া কি চলে গেছে?
ইশাঃ হুম।যা ফ্রেশ হয়ে আয়।

আমরা দুজন রোমে চলে এলাম।এশা খুব খুশি হয়েছে মেহরাব ভাইয়া চলে যাওয়ায়।খাবার খেয়ে লম্বা করে ঘুম দিলাম।

???

ফারিশ পার্কের একটা বেঞ্চে একা বসে আছে।আজ মন খারাপ। হঠাৎ করে বাবা – মায়ের কথা মনে পরছে।পাশে এসে জন বসলো।

জনঃ মন খারাপ।
ফারিশঃ ( নিশ্চুপ)
জনঃ বাবা- মায়ের কথা মনে পরছে??
ফারিশঃ না।
জনঃ কাল ফাদারের সাথে কিছুদিনের জন্য একটা কাজে যেতে হবে।
ফারিশঃ কোথায়?
জনঃআমি জানি না।কালকে ফাদার বলে দেবে।
ফারিশঃ তোর কি দেশের জন্য মন খারাপ করে না।বাবা- মায়ের কবর দেখতে ইচ্ছে করে না।
জনঃ হুম করে।
ফারিশঃ তাহলে যাস না কেনো?
জনঃ তোর জন্য। তোকে ছারা কোথায় যাবো না।
ফারিশঃ আমিতো এ দেশ ছেরে কোথাও যাবো না।এখন যেহেতু এদেশের নাগরিক।অনেক ভালো আছি এখানে।যারা আমার খবর নেয় না তাহলে তাদের খবর ও আমি নিবো না।

জন ও ফারিশ দুজনেই চুপ করে গেলো।জনের চোখ দিয়ে অনরবত পানি পরছে।ওর বাবা – মা দুজন গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে। একটা পার্টিতে এটেন্ড করতে গিয়েছিল, ফিরে আসার সময় এক্সিডেন্টে প্রাণ হারায়। জনের বয়স তখন ৭/৮ বছর। ওকে বাসায় রেখে গিয়েছিলো।যার কারণে ও এখনো বেঁচে আছে। ওর বাবা- মায়ের রক্তাক্ত লাশ দেখে ছোট্ট জন অনেক কান্না করেছিলো।

বাবা মায়ের একমাত্র আদরের ছেলেকে কেউ সেদিন রাখতে চায় নি।এমন কি ওর আত্মীয়স্বজন ও না।সেদিনের পর থেকে ওর জায়গা হলো “সেন্ট যোসেফ” নামক এতিমখানায়।জনের দূর সম্পর্কের চাচা ওকে এখানে রেখে যায়।জন সবসময় একা একা থাকতো,কথাও কম বলতো।শান্ত শিষ্ট, নম্র, ভদ্র জন ছিলো সবার প্রিয় পাত্র।ওকে সকলে খুব পছন্দ করতো।ওর বয়স যখন ১২ বছর তখন ফারিশ ও এই এতিম খানায় আসে।খুব তাড়াতাড়ি ওদের দুজনের ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়।যা এখনো অটুট আছে।

পরের দিন…..

দুইটা ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমি ওয়াশ রুমে গিয়েছিলাম।এশা আমার সাথে নেই। ওর নাকি ভালো লাগছে না তাই আসবে না।আমাকে একা একাই আসতে হয়েছে। আমাদের এখনো তেমন করে কোনো বন্ধু- বান্ধবী হয় নি।একা একা আসতে খুব ভয় করছে।কে জানি কখন আবার শাঁকচুন্নির দল চলে আসে।ওয়াশ রুম থেকে ফিরে আসার সময় হঠাৎ করে দেয়ালের অন্যপাশ থেকে একটা হাত এসে আমাকে টান দিয়ে দেয়ালের আড়ালে নিয়ে গেলো।আমি চিৎকার করতে নিলে সামনে থাকা ব্যাক্তিটা আমার মুখ চেপে ধরলো।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে