শুধু তুই Part-04

0
2507

#শুধু তুই #
#Part_04
Writer_ Raidah Islam Nova

আজকেও ফারিশের সাথে মেহেদীর হাতাহাতি হয়েছে।গতকালের ঘটনা নিয়ে আজও মেহেদী সিনক্রেট করছে।১২/১৩ জন ছেলে নিয়ে মেহেদী ফারিশকে মেরেছে।ফারিশ ও কম যায় না শত হোক ইংরেজ বাচ্চাতো।সবার সাথে মারামারি করছে কিন্তু হাতে মুখে অনেকটা জায়গায় কেটে ছিলে গেছে।মেহেদীরও সেম অবস্থা।ওদের ঘটনা নিয়ে ভার্সিটিতে কিছুখন পরে বিচার বসবে।ভার্সিটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যানের ছেলে আসবে।তাকে খবর দেওয়া হয়েছে।

আমরা আসার কিছু সময় আগে এসব ঘটনা ঘটেছে। আমি ও এশা দুজনে আজ সুরমা কালার বোরকা ও লাল হিজাব বেধে এসেছি। আমি কিন্তু পর্দা করি না।শুধু মাত্র শালীনতা বজায় রাখার জন্য ও বাবার কথা রাখার জন্য বোরকা পরি।আজকাল সব মেয়েরা কম- বেশি বোরকা পরে।তাই বলে এ না সবাই পর্দা করে।আজকাল ফ্যাশনের জন্য ও অনেক মেয়ে বোরকা পরে।আমি যাওয়ার আসার সময় শুধু নেকাব বেধে আসি।আর ভর্সিটিতে সবসময় মুখ খোলা রাখি।আমি এসব নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।আমরা ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে জন আমাদের সামনে এলো।ওর হাতে ফার্স্ট এইড বাক্স।

জনঃ আইভি একটা কাজ করে দিবা।ধূর, আপনাকে তুমি করে বলে ফেললাম। কিছু মনে করবেন না।

আমিঃ না না কোনো সমস্যা নেই। আপনি আমাদের তুমি করেই বলবেন।কি কাজ করতে হবে বলুন?

জনঃ তুমি গিয়ে একটু ফারিশকে ব্যান্ডেজ করে দিবে।ও না অনেক রেগে আছে।আমার না খুব ভয় করে ও যখন রেগে থাকে।প্লিজ, তুমি গেলে কিছু বলবে না।
( অনুরোধের সুরে)

আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।সে কি পাগল হয়ে গেলো নাকি।আমি যাবো ফারিশের কাছে। যদি রেগে কানের নিচে একটা বসিয়ে দেয়।

আমিঃ আপনার মাথা ঠিক আছে।আমি কেন তার সামনে যাবো।

জনঃ প্লিজ না করো না।প্লিজ প্লিজ।
এশাঃ এতো করে যখন বলছে যা।
আমিঃ তোর মাথা খারাপ হয়েছে এশু।আমি চিনি না জানি না তার কাছে যাবো।

আমি কিছুতেই যেতে চাইছিলাম না।ওরা দুজন আমাকে জোর করেই ফারিশের কাছে পাঠালো।আমাকে পাঠিয়ে মনে হলো জন একটু বেশিই খুশি হয়েছে।তার কারণটা আমি বুঝলাম না।

আমি ক্যান্টিনের সামনে ফার্স্ট এইড বক্স হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেি।ভেতরে বেশি মানুষ নেই। একটু উঁকি দিতেই দেখতে পেলাম ফারিশ কোণার দিকের টেবিলে মাথা নিচু করে বসে আছে।আমি ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে গেলাম।এশা,জনের সাথেই আছে।আমি ফারিশের পাশের চেয়ার টান দিয়ে কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে পরলাম।ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এই বুঝি মাথা উঠিয়ে আমাকে দেখে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় মেরে দিবে।একে দিয়ে বিশ্বাস নেই। যেই রাগী ছেলে।ফারিশ মাথা না উঠিয়ে আমাকে জন ভেবে বললো।

ফারিশঃ জন,আমার মন মানসিকতা ভালো নেই। এখান থেকে ভাগ।নইলে তোকে দিয়ে কিন্তু আমার মনের ঝাল মিটাবো।

আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে আছি।কথা কি বলবো ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসছে।কথার উত্তর না পেয়ে মাথা উঠালো।আমাকে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকালো।

ফারিশঃ তুমি এখানে—-
আমিঃ না মানে আসলে না মানে হয়েছে কি?
(আমতা আমতা করে)
ফারিশঃ কি হয়েছে? ( ভ্রু নাচিয়ে)
আমিঃ আমাকে জন ভাইয়া পাঠিয়ে ছিলো।আপনার তো দেখছি অনেক খানি কেটে গেছে। ঠোঁট কেটে রক্ত পরছে।আচ্ছা আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।

যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করে উপরের কথাগুলো বললাম।তারপরও আমার হাত- পা কাঁপছে। মনে হচ্ছে বুকের ভেতর কেউ হাতুড়ি পেটা করছে।

ফারিশঃ তুমি এখান থেকে গেলে আমি খুশি হতাম।
আমিঃ যাক বাবা আমি আবার কি করলাম?
( একটু ভেবে) ওয়েট।আপনি আমাকে চেনেন?

ফারিশঃ তুমি কোন মন্ত্রী -মিনিস্টারের মেয়ে যে তোমাকে চিনতে হবে?
আমিঃ না আমি কথাটা সে ভাবে বলিনি।
( মন খারাপ করে)
ফারিশঃ তুমি কি এখান থেকে যাবে? আমার সাথে তোমায় কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।

ফারিশকে এতক্ষন ভয় করলেও এখন করছে না।সব কথার উত্তর শান্ত ভাবে দিচ্ছে।

আমিঃ আপনার সাথে বকবক করার টাইম আমার নেই। আমি যে কাজ করতে এসেছি তা করে চলে যাবো।

ফারিশঃ কি করতে এসেছো তুমি?( কপাল কুঁচকে)
আমিঃ নেগেটিভ মাইন্ডে নিয়েন না।আমি ব্যান্ডেজ করতে এসেছি। সেটা করেই বিদায় হবো।দেখি আমার দিকে ঘুরুন তো।( কিছুটা ভয় পেয়ে)

ফারিশঃ লাগবে না।যাও এখান থেকে।
আমিঃ বেশি কথা বলবেন না।

আমি একপ্রকার জোর করেই তাকে আমার দিকে ঘুরিয়ে এন্টিসেপটিক লাগিয়ে দিলাম।হাতের কাটা স্থানে ব্যান্ডেজ করে দিলাম।আমিতো পুরো অবাক।ফারিশ আমাকে কোনোরকম বাঁধা দিলো না।আমার দিকে কি রকম ভাবে অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিলো।সেই মূহুর্তে আমার মনেই হচ্ছিলো এই ছেলেটা জীবনে মারামারির ধারের কাছেও যায় নি।কি ভদ্র ছেলে।তখন রিটা এসে আমাদেরকে একসাথে দেখলো। রাগে সামনে থাকা চেয়ারটাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে চল গেল।কার থেকে যেনো খবর পেয়েছে আমরা একসাথে আছি। উল্টো দিকে ঘুরে থাকার কারণে আমি বা ফারিশ সেটা খেয়াল করি নি।

আমি চেয়ার থেকে উঠে আসার সময় পেছন থেকে ফারিশ ডাকলো।
ফারিশঃ আইভি শোনো—
আমিঃ আপনি আমার নাম কি করে জানলেন???( অবাক হয়ে)

ফারিশ আমার কথা শুনে ইতস্ততায় পরে গেলো।কিছু সময় ভেবে আমতা আমতা করে বললো।

ফারিশঃ না মানে জন বলেছিলো।
আমিঃ ও ও। তা কি জানি বললবেন?
ফারিশঃ না কিছু না।তুমি যাও।

আমিঃ কি মানুষ রে নিজেই বললো কি যেনো বলবে আবার বলে কিছু না।না বাবা এই মানুষকে বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। ( বির বির করে)

আমি বির বির করতে করতে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেলাম।আমি যাওয়ার পর ফারিশ মনে মনে হাসলো।

ফারিশঃ পাগলীটা।শুধু তোমার নাম না তোমার পরিবারের সবার নাম আমি জানি।তোমার সব খবর আমার কাছে থাকে।কোথাও যাও, কি করো,কার সাথে কথা বলো সব আমি জানি।কি করবো পৃথিবীতে প্রথম যে কাউকে ভালবাালাম।দুই মাস আগে যেদিন তুমি ভর্তির এপ্লাই করতে এসেছিলে সেদিনই তোমাকে আমার মন দিয়ে ফেলেছি।তোমায় প্রথম দেখেছিলাম সেদিন।তুমি এশার সাথে ফুচকা খাচ্ছিলে।তারপর থেকে তোমাকে পাগলের মতো প্রত্যেকদিন খুঁজেছি।তার পনের দিন পর এডমিশন পরীক্ষার দিন দেখে যে কি খুশি হয়েছিলাম তা তোমাকে বোঝাতে পারবো না।আর কাল যখন দেখলাম তখন না চাইতেই সবার প্রথমে নজরটা তোমার মধ্যে আটকে গেলো।বিকজ আই রিয়েলি লাভ ইউ।বাট আমার জানা নেই তোমাকে পাবো কি না।( বড় করে নিঃশ্বাস ছেরে)

অন্যদিকে……

আমার সামনে রিটা,পিংকি,লাবণ্য, পরশি চোখ মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। তখন যে রিটা আমাদেরকে একসাথে দেখেছে সেটাতো আমি জানি না।একা থাকায় কিছুটা ভয় করছে।কে জানে শাঁকচুন্নি গুলি আবার কি করে?

আমিঃ কি হয়েছে আপুরা,তোমরা আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেনো?( ভয়ে ভয়ে)

আমি ক্যান্টিন থেকে বের হতেই পিংকি আমার হাত ধরে টানতে টানতে ক্যাম্পাস থেকে কিছুটা দূরে নির্জন জায়গায় নিয়ে এসেছে।

আমিঃ কথা বলছেন না কেনো?

পরশিঃ তোর তো সাহস কম বড় না।তুই রিটার লাভ,জানেমন ফারিশের দিকে হাত বারিয়েছিস।

আমিঃ কি যা তা বলছেন? আমি কেনো ফারিশের দিকে হাত বারাবো।আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে?

রিটাঃকি ভুল হচ্ছে আমাদের? আমি নিজে তোদের একসাথে বসে থাকতে দেখেছি।

আমিঃ আপনারা আমার কথা তো শুনুন…..
রিটাঃ স্টপ দিজ।একদম ন্যাকামো করবি না।আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।

রিটা আমাকে থাপ্পড় দেয়ার জন্য হাত উপরে তুললো।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।ঠাস করে শব্দ হলো।আমি একহাত দিয়ে জোরে গাল ধরে রেখেছি।হঠাৎ আমার খেয়াল হলো আমার গালে কোনো ব্যাথা করছে না।আমি পিট পিট করে চোখ খুলে দেখলাম,রিটা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর ও যে হাতটা আমাকে মারার জন্য তুলেছিলো সেটা মোচর দিয়ে একটা ছেলে ধরে রেখেছে।ছেলেটার গায়ের রং শ্যাম বর্ণের।হাইট ৬ ফুট।চেহারাটা যথেষ্ট মায়াবী। চুলগুলো স্পার্ক করা।দাড়িতে স্টাইল করে কার্ট দেয়া।গায়ে কালো কালার প্যান্ট,সাদা শার্ট,শার্টের ওপর কালো কালার কোটি।হাতা দুটো ফোল্ড করা।বা- প- রে কি এটোটিউড।এক কথায় চকলেট বয়।সবার ক্রাস হবে হয়তো।

এশা ও জন অনেকক্ষন ধরে ভার্সিটির সামনের একটা ফুড পার্কে বসে আছে।কেউ কোনো কথা বলছে না।নীরবতা ভেংগে জন কথা বললো।

জনঃ কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন?
এশাঃ আমাদের এখন যাওয়া উচিত।অনেক সময় হলো আমরা এখানে এসেছি।ঐ দিকে আই ও ফারিশ ভাইয়া কি করছে কে জানে?চলুন সেখানে যাই।
জনঃ হুম।তুমি যাও আমি কফির বিল দিয়ে এসছি।

জন কফির বিল দিয়ে বাইরে এলো।দুজন ভার্সিটির দিকে হাটঁতে লাগলো।

আমি অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।আর বাকি সবাই ভয়ে চুপসে আছে। রিটা ভয়ে ভয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো।

রিটাঃ ভাইয়া তুই এখানে?
ছেলেটিঃএখানে কি করছিলি মেয়েটার সাথে?
রিটাঃ কিছু না।

ছেলেটিঃ মিথ্যা কথা বলিস না।আমি দেখেছি তুই মেয়েটাকে থাপ্পড় মারতে যাচ্ছিলি।এরপর থেকে কারো সাথে এরকম খারাপ ব্যবহার করার আগে আমার থাপ্পড়ের কথা মাথায় রাখবি।নয়তো পরের বার একটা দাঁত ও থাকবে না।ভাগ এখান থেকে।(রেগে)

রিটাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।( মাথা নিচু করে)
ছেলেটিঃ যেতে বলেছি এখান থেকে।আরেকবার বলতে না হয়।(জোরে চিৎকার করে)

রিটা ও তার বান্ধবীরা ভয়ে প্রায় দৌড়ে সেখান থেকে পালালো।আমি কিছুই বুঝলাম না।সব কিছু আমার মাথার ওপর দিয়ে গেল । আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।ছেলেটা আমার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে চলে গেল।আমি হা করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।কে এই ছেলেটা?যাকে দেখে এই শাকচুন্নির দল ভয় পেয়ে পালালো।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে