লুকানো অনুভূতি পর্ব-১২+১৩

0
564

#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১২
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর

ঘুম ভাঙলো ৯ টার দিকে। ঘুম ভাঙতে খেয়াল হলো এখনো রোয়েনের বুকের সাথে লেপ্টে আছি। একটু নড়াচড়া করে উঠলাম এতে ওনার ঘুম হালকা হলো। আস্তে করে তাকালেন তিনি। ঘুম পুরোপুরি ভাঙতেই উনি আমার কাপলে গলায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর কুমেছে কিনা। আগের থেকে একটু কুমেছে।

কেমন লাগছে এখন? রাতে অনেক জ্বর এসেছিলো।

ভালো, মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছে।

ব্রেকফাস্ট করে ঔষধ খেলে কুমে যাবে।

আমাদের বাড়ি যাবো কখন?

বিকালে যাবো, তোমার শরীর এখনো পুরোপুরি ঠিক হয় নি।

আচ্ছা।

উঠো এবার ফ্রেশ হবে। এ বলে ধরে উঠে বসালো।

আস্তে ধীরে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলাম।

নিচে যেতে পারবে? নাকি খাবার উপড়ে আনবো?

না যেতে পারবো চলেন। এই বলে তার সাথে নিচে নেমে আসলাম।

নিচে নামতে দেখলাম সবাই খেতে বসেছে। আমাদের দেখে ফুপি বলে উঠলো কিরে শরীর কেমন লাগছে।

এইতো ফুপি একটু ভালো লাগছে।

এখনো ফুপি কিসের হুম আম্মু ডাকবি বুঝেছিস।

মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম যে বুঝেছি।

তারপরে সবাই এক সাথে খেয়ে উঠলাম। রোয়েন এসে জ্বরের মেডিসিন দিয়ে গেলো। খেয়ে রিহুর রুমে চলে গেলাম গল্প করতে।

রিহু হেসে বললো অবশেষে আমার ভাবি হয়ে গেলি।

তুই ওতো আমার ভাবি হবি এক সময়।

সেটা নাহয় হলাম। জানিস তুই যখন তোদের বাসায় বসে জ্ঞান হারালি তখন ভাইয়া কি করেছিলো?

জ্ঞান হারানোর পরে তো আর কিছুই মনে নেই আমার তাহলে জানবো কিভাবে?

তাও কথা, তুই জানিস জ্ঞান হারানোর পরে তোর জ্ঞান কিছুতেই ফিরছিলো না। রোয়েন ভাই তো পাগল প্রায় হয়ে গেছিলো। নিযে যেয়ে ডাক্টর নিয়ে এসেছে। ভাইয়ার বিহেভিয়ার দেখে সবাই অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। ভাইয়ার কোনো দিকে খেয়াল ছিলো না শুধু তোর দিকে খেয়াল ছিলো।

ভাইয়ার আচরণ দেখে সবাই বুঝে গেলো ভাইয়া তোকে ভালোবাসে। তাই মামা ভরসা পেলো তোকে ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিতে। পরে সবাই ঠিক করলো তোদের বিয়ে দিবে। আর নাহলে এ সমাজ তোকে বাঁচতে দিতো না। তোদের বিয়ের কথা শুনে তো আমি সেই খুশি হয়েছি। আমরা এক সাথে থাকতে পারবো কতো ভালো যে লাগছে রে আমার হুর তোকে বলে বুঝতে পারবো না।

রিহুর কথা শুনে অনেক অবাক হলাম। আমার জন্য এতো কিছু করেছে তিনি। এতো ভালোবাসে সে আমাকে।

দুদিন পারে তো তুই নিজেও শশুর বাড়ি চলে যাবি। এক সাথে থাকা হবে কই।

ইসস আসছে এতো তারাতাড়ি বিয়ে করবে কে। আরো ৫ বছর পরে বিয়ে করবো।

৫ বছরে আমার ভাই তোকে ছাড়া পাগল হয়ে যাবে। কয়দিন পর দেখবি তোরে উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে।

ইসস আসছে আমাকে উঠিয়ে নিতে।

এভাবে গল্প গুজব করতে করতে দুপুর হয়ে গেলো, রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি রোয়েন ল্যাপটপে কাজ করছে।

আমি জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের যেতে নিলে তিনি বলে উঠলো বেশি পানি দিয়ে সাওয়ার নিও না তাহলে জ্বর বাড়বে।

ঠিক আছে এই বলে ওয়াশরুমের ঢুকে গেলাম। তাঁর আমার দিকে এতো খেয়াল এতো কেয়ার দেখে অনেক ভালো লাগছে। নিজেকে এখন ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে এমন একটা হাসবেন্ড পেয়ে।

ফ্রেশ হয়ে খেয়ে একটু রেস্ট করলাম তারপর রেডি হচ্ছি আমাদের বাসায় যাওয়ার জন্য। রিহুকেও নিয়ে নিলাম আমাদের সাথে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি তে যেয়ে বসলাম। রোয়েন গাড়ি চালাচ্ছে, ওর পাশে আমি বসা। রিহু পিছে বসে ফোন টিপছে। কিছু সময় পরে গাড়ি এসে থামলো বাসার সামনে। গাড়ি থেকে নেমে আমরা এক সাথে বাসার সামনে দাঁড়ালাম। কলিংবেল চাপতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো। আম্মু কে পেয়ে ঝাপটে ধরে কান্না করে দিলাম আমি।

আম্মু মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো বোকা মেয়ে কান্না করে না। কেমন আছিস?

ভালো আম্মু, তুমি কেমন আছো?

আছি মা আলহামদুলিল্লাহ।

রোয়েন বাবা বাহিরে কেনো দাড়িয়ে? ভিতরে আসো।কেমন আছ বাবা?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো মামনি। তুমি কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ বাবা। ভিতরে আসো, রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। এই হুর যা ওকে রুমে নিয়ে যা।

বাসার ভিতরে এসে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলাম কিছুখন। আব্বু মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

আম্মু ইায়াদ ভাইয়া কোথায়? ভাইয়াকে দেখছি না যে।

ও একটু জরুরী কাজে অফিসে গিয়েছে। এসে পরবে একটু পরে।

ইয়াদ ভাইয়া নেই শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

সবার সাথে টুকিটাকি কথা বলে তাকে নিয়ে রুমে চলে আসলাম।

উনি এসেই শুয়ে পড়লো।

একি শুয়ে পড়লেন যে? ফ্রেশ হবেন না?

তুমি হয়ে আসো আগে। মাথা ধরেছে আমার।

আমি ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম উনি কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে।

শুনছেন?

হুম।

মাথা কি বেশি ধরেছে? কফি নিয়ে আসবো?

না লাগবে না, একটু ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে। এই বলে ওয়াশরুমের ঢুকে গেলো।

আমি যেয়ে কফি করে নিয়ে আসি। খেলে ভালো লাগবে।

কিচেনে যেয়ে দেখি বড় আম্মু আর আম্মু রান্না করছে।

বড় আম্মু বললো কিরে হুর তুই এখানে? কিছু কি লাগবে?

আসলে আম্মু রোয়েন ভাইর মাথা ব্যথা করছে তাই কফি বানাতে আসলাম।

শুনো মেয়ের কান্ড, জামাইকে কেউ ভাই বলে? মানুষ শুনলে কি বলবে?

সব সময় তো ভাইয়া এই ডেকেছি তাই মুখে ভাইয়া চলে আসে।

অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।

একটু সময় লাগবে আমার সব মানিয়ে নিতে।

হুম তাতো একটু লাগবেই।

আম্মু বললো তুই বোস আমি বানিয়ে দিচ্ছি। তোর ওতো শরীর ভালো না। কফি নিয়ে যেয়ে রেস্ট কর একটু।

কথা বলতে বলতে কফি হয়ে গেছে। আমি কফি নিয়ে রুমে চলে গেলাম।

যেয়ে দেখি উনি বসে আছে।

শুনুন কফিটা খেয়ে নিন ভালো লাগবে।

উনি কথা না বাড়িয়ে কফি টা নিলো। কফি খাওয়া হলে আমি ফিরে আসতে নিয়েছিলাম তখন আমাকে টান দিয়ে নিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

কোথায় যাচ্ছ তোমার শরীর ভালো না এখন ঘুমাবে।

কি বলছেন এখন ঘুমালে সবাই কি ভাব্বে। ছাড়ুন আমাকে রাতে রেস্ট করবো তহলে ঠিক হয়ে যাবে।

আর কোনো কথা না এখন একটু ঘুমাবে চুপ।

আমিও কথা বাড়ালাম না এখন কথা বলেও লাভ নাই উনি ছাড়বেন ও না। আসলেই এখন একটু ঘুম প্রয়োজন ছিলো তাই ভদ্র মেয়ে মতো তার বুকে ঘুমিয়ে পড়লাম।

রিহু আর ইয়াদ ছাদে দোলনায় বসে আছে। ইয়াদ একদম চুপচাপ। একটু আগেই ইয়াদ বাসায় এসেছে। অফিসে একটু কাজ ছিলো তাই সকাল সকাল অফিসে চলে গেছিলো। একটু আগে ফিরলো।

কি হয়েছে মন খারাপ?

ইয়াদ কোনো কথা বললো না।

কি হয়েছে বলো আমাকে।

আসলে ভালো লাগছে না আমার কিছু। ইমা আর হুর দুজনে চলে গেছে। বাড়িটা অনেক ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এখন আর ওদের জ্বালাতে পারি না। ওরাও আমার জ্বালানিতে ক্ষেপে আমার পিছু ছুটা ছুটি করে না।

মন খারাপ করছো কেনো হুর তো আজকে এসেছে, ইমা আপু ওতো কালকে আসবে।

আসবে কিন্তু অতিথি হয়ে। এক বারে কেউই থেকে যেতে পারবে না। ইয়াদের চোখে পানি চিকচিক করে উঠলো। বোনদের কতোটা ভালোবাসে তা তার এই চোখের পানি এই বলে দিচ্ছে।

রিহুর অনেক কষ্ট হলো ইয়াদের এই অবস্থা দেখে। ইয়াদের জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো রিহু। মন খারাপ করো না। মেয়ে মানুষ মানেই বড় হলে পরের ঘরে চলে যাওয়া। ওদের এক সময় না এক সময় তো পরের ঘরে পাঠানো লাগতোই। এটাই যে প্রকৃতির নিয়ম।

এই পাগল মেয়ে কন্না করছো কেনো? আমি একদম ঠিক আছি। তাকাও আমার দিকে, দেখো আমি একদম ঠিক আছি। ওরা চলে গেছে তুমি আছো তো। ওদের শূন্যতা তুমি কাটিয়ে দিবা এই বলে রিহু মাথা বুক থেকে তুলে চোখের পানি মুছে দিলো।

তোমার কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছে না। আমাকে তারাতাড়ি তোমার কাছে নিয়ে আসো না। সব শূন্যতা আমি দূর করে দিবো প্রমিজ।

আনবো খুব তারাতাড়ি নিয়ে আসবো কান্না করে না এই বলে কপালে চুমু খেয়ে আবার জড়িয়ে ধরলো।
————
ঘুম ভাঙলো সন্ধার পরে। পাশে তাকাতে দেখি উনি নেই। কি খারাপ লোক আমাকে একটা ডাক দিলো না।

উনাকে বকাঝকা করতে করতে নিচে নামলাম। নিচে যেয়ে দেখি সবাই আড্ডা দিচ্ছে। আমি যেয়ে ইয়াদ ভাইয়ার পাশে বসে পরলাম।

কেমন আছো ভাইয়া?

এইতো বনু ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।

ভালো। তোমার সাথে আমি রাগ করেছি গাল ফুলিয়ে বললাম।

এবাবা কেনো আমি কি করেছি?

বাসায় এসে তোমাকে কেনো পেলাম না। আমি আজকে আসবো তারপর ও তুমি কাজে কেনো গেলে?

ওহ এই বেপার। রাগ করে না আকজে অফিসে ইমার্জেন্সি কাজ পরে গেছিলো তাই যাওয়া লাগছে আর নাহলে যেতাম না।

তবুও গাল ফুলিয়ে রইলাম।

ইয়াদ পকেট থেকে চকলেট বের করে দিলো তাতে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু ইয়াদ ভাইয়া বললো কেউ একজন তো আমার উপরে রাগ করে আছে সেতো চকলেট খাবে না। দেখি অন্য কাউকে দেওয়া যায় কিনা।

আমি ছু মেরে চকলেট নিয়ে গেলাম। এহ আসছে আমার চকলেট অন্য কে দিতে।

সবাই হেসে দিলো আমাদের কাজ দেখে।

চলবে?

#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১৩
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর

পরের দিন সকাল বেলা ইমা আপু আসলো। খুশিতে ভরে গেলো আজকে আমাদের বাড়িটা।

আপু আমি আর রিহু রুমে বসে গল্প করছি তখন আপু বললো হুর বিয়ের পরের জীবন কেমন লাগছে?

আমার বিয়ে হয়েছে তাতো আমার মনেই হয় না। মনে হয় আমি ফুপি বাসায় ঘুরতে গেছি। তোমার কেমন লাগছে?

আমার তো বিয়ের আগের বেশি ভালো লেগেছে। এখন যে খারাপ লাগছে তা কিন্তু না কিন্তু বিয়ের আগে বাবা মার সাথে থাকতে পারতাম। যখন যা মন চায় তা করতে পারতাম কিন্তু এখন বিয়ের পরে কত দায়িত্ব।

তা ঠিক বলেছ। বিয়ের পরে তো একটু আধটু দায়িত্ব নিতে হয় এই।

রিহু তখন পাশ থেকে বলে উঠলো আজ সিঙ্গেল বলে শশুর বাড়ির গল্প করতে পারি না আমি। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখবো?

ইমা আপু ওকে মজা করে থাপ্পর দিয়ে বলে তুই সিঙ্গেল? তুইতো আমাদের সবার আগে ডাবল হয়েছিস।

আপু আমাদের ইয়াদ ভাইয়াকে কথাটা জানানো উচিত যে রিহু নাকি সিঙ্গেল।

জানা যেয়ে, তোর ভাইকে আমি ভয় পাই নাকি।

হুর, রিহু যেহেতু সিঙ্গেল তাহলে চল ইয়াদের জন্য একটা মেয়ে খুঁজি। সবাই বিয়ে করে ফেলেছে আমার ভাইটা একা সিঙ্গেল থাকবে এটা কি হয় বল।

ঠিক বলেছো আপু ভাইয়ার জন্য একটা মেয়ে খুঁজা দরকার।

রিহু তো ক্ষেপে গেছে। আমাদের দুজনকে বালিশ দিয়ে মারা শুরু করলো।

ইয়াদ ভাইয়া কে বিয়ে দিবো তাতে তুই ক্ষেপে গেলি কেন তুইতো সিঙ্গেল।

হুরের বাচ্চা তুই চুপ করবি নাহলে খবর আছে তোর।

ইমা আপু বললো হুর তো ঠিকি বলেছে তুই ক্ষেপছিস কেনো?

আপু তুমিও, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা তোমাদের এই বলে তিনজনে বালিশ নিয়ে একজনের গায় আরেকজনে ছুরা শুরু করলো।

রিহু ছিলো দরজার পাশে ওর দিকে বালিশ ছুরে মারলাম ঠিক সেই সময় রোয়েন ঢুকলো রুমে। রিহু সরে গেলো আর বালিশ টা যেয়ে পড়লো রোয়েন মুখে। আমি তারাতাড়ি যেয়ে ইমা আপুর পিছে লুকিয়ে পড়লাম ভয়ে।

রোয়েন ধমক দিয়ে উঠলো তোরা কি এখনো ছোট আছিস যে এভাবে মারা/মারি করছিস। ইমা তুইও? এই দুইটার মাথায় তো কোনো বুদ্ধি নেই তাই বলে এদের সাথে থেকে তুই ও বাচ্চামো করছিস।

আমি ফিসফিস করে ইমা আপুর কানে বললাম আসছে খাটাস একটা। সারা দিন ধমক দেওয়া ছাড়া কিছু বুঝে না।

কি ফিসফিস করছো, দেখে নিবো পরে তোমাকে আমি। এই বলে খাটের পাশ থেকে তার ফোন নিয়ে চলে গেলো।

ইমা আপু পাশ থেকে বলে উঠলো ওহ হোওওও এক দিনেই তুই থেকে তুমিতে চলে গেছে কি ভালোবাসা।

আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম আসছে ভালোবাসা, সারা দিন ধমক দিয়ে পায় দিশে আবার বাসবে ভালো হুহ।

আমার কথা শুনে ইমা আপু আর রিহু হেঁসে উঠলো জোরে।

আপু চলো ছাঁদে যেয়ে গল্প করি রুমে এখন ভালো লাগছে না।

ঠিক বলেছিস চল যাই এই বলে আমরা তিনজন ছাঁদে চলে গেলাম।

ছাঁদে যেয়ে তিনজন বসে বসে গল্প করছিলাম তখন ছাঁদে আসলো রোয়েন, ফাহিম ও ইয়াদ। তারাও এসে আমাদের সাথে বসলো।

ইয়াদ ভাইয়া এসেই বলে কিরে ফকিন্নির দল কি করিস তিন পেত্নী একসাথে বসে।

আমরা সবাই ক্ষেপে গেলাম, ইমা আপু বললো ইয়াদের বাচ্চা তুই ফকিন্নি তোর বউ ফকিন্নি। যা এখান থেকে, আসছে আমাদের জ্বলাতে।

তোদের মতো পত্নীর সাথে আড্ডা দিতে আমার বয়েই গেছে। আসছিলাম একটা সুখবর দিতে।

আমি বললাম ভাইয়া বিয়ে টিয়ে করে ফলেছো নাকি আমাদের না জানিয়ে? তার খবর দিতে আসলা নাকি বলে মুখ টিপে হেসে বললাম রিহুর দিকে তাকিয়ে। রিহু আমার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।

হুর তুই কিন্তু মাইর খাবি আমার মতো পিওর সিঙ্গেল একজন মানুষের নামে এগুলো কি অপবাদ দিচ্ছিস।

রিহু চোখ পাকিয়ে তাকালো ইয়াদের দিকে। ইয়াদ ভয়ে মনে মনে ভাবলো কি বলতে কি বলেছি। মহারানী আমাকে একা পেলে আস্ত রাখবে না।

ইমা আপু বললো তুই সিঙ্গেল? হুর দেখছিস আজকে মজার মজার জোক্স শুনিতেছি আমরা।

সবাই হেসে উঠলাম আপুর কথা শুনে।

তখন ফাহিম ভাইয়া বলে উঠলো তোমরা ঝগড়া থামাও মেইন কথা শুনো আগে।

আমরা সবাই হাসি থামালাম সিরিয়াস হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।

আজকে বিকেলে সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়ার প্লান করেছি তোমরা যাবে নাকি।

রিহু লাফ দিয়ে উঠে বললো অবশ্যই যাবো এবং আপনার পকেট ও আজকে খালি করবো দুলাভাই আমাদের ট্রিট পাওয়া একদম বাকি।

রিহুর সাথে আমিও তাল মেলালাম ঠিক বলেছিস রিহু একদম।

ট্রিট শুধু আমার থেকে পাবে না শালিকারা, রোয়েন ও কিন্তু আছে সেটা মনে রেখো।

ইমা আপু বললো ভালো কথা মনে করিয়েছ, রোয়েন ভাই আজকে কিন্তু কোনো সুযোগ ছাড়ছি না আমরা।

রোয়েন ভাই হাসলো। দেখা যাবে আজকে কতো দূর খেতে পারিস। যা চাবি তাই দিবো।

ইয়াদ বলে উঠলো এ কথা বলিও না বন্ধু এরা এক একটা রাক্ষসী পরে দেখা যাবে তোকে পথের ভিখারি বানিয়ে দিছে।

আবারো আমাদের ক্ষেপিয়ে দিলো ইয়াদ ভাইয়া।

ইমা আপু রেগে বললো এবার কিন্তু তোর খবর আছে। তুই সবসময় আমাদের পিছে লেগে থাকিস কেনো? তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি আমরা?

ইসস সত্যি কথা বললেই খালি দোষ।

ভাইয়া তুমি চুপ করবে এবার কিন্তু তোমার খবর আছে।

থাক বাবা চুপ করে যাই আর নাহলে দেখা যাবে তিন পেত্নীর হাতে ইয়াদ নামের একটা ভদ্র ছেলে আহত হয়েছে।

রোয়েন ইয়াদের পিঠে চাপড় মেরে বললো শালা পরিস ও কম না বচ্চা মানুষদের ক্ষেপাচ্ছিস।

তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম তার কথায়। আমরা মোটেও বাচ্চা না।

ওহ রিয়েলি? বাচ্চা না হলে ওর কথায় ক্ষেপছো কেনো? আবার রুমের ভিতরে বসে তিনটায় মারামারি করো এগুলো কি বড়রা করে?

ফাহিম বললো থাক এসব কথা রাখো এখন। তোমরা যাবে তাহলে যেয়ে রেডি হও তোমাদের রেডি হতে তো আবার কত সময় লাগে।

ইয়াদ পাশ থেকে খোঁচা মেরে বললো আটা ময়দার বস্তুা নিয়ে বসলে সময় লাগবে নাতো কি লাগবে।

ভাইয়া এবার তোমার খবর আছে এই বলে আমরা তিনজন উঠে ভাইয়ার পিছে ছুট লাগালাম।

জীবন বাচাতে হলে পালাই এ বলে ইয়াদ দৌড় লাগালো।

এদের কান্ড দেখে রোয়েন ফাহিমকে বলে উঠলো পরেও কম না এরা। এতো এনার্জি যে কোথায় পায় এরা।

ঠিক, কারো থেকে কেউ কম না। ইয়াদ পারেও বটে সব সময় এদের পিছে লেগে থাকে।

ইয়াদ দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে গেলো। দৌড়ে এসে রোয়েনের পিছে লুকালো। তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু দেখছিস তিন ডাইনি আমার পিছে পড়েছে আর তুই দাঁড়িয়ে আছিস।

ঠিক আছে একদম ক্ষেপানোর সময় এই কথা খেয়াল ছিলো না?

কানে ধরছি ভাই আর ক্ষেপাবো না। এবারের মত বাচা।

হুর ইয়াদকে ধরতে আসলে রোয়েন হুরের হাত ধরে ফেললো। হয়েছে অনেক ছুটাছুটি করেছ এবার চুপ করো।

হুর থেমে গেলো সাথে রিহু আর ইমাও।

ফাহিম বললো যাও রেডি হও তোমরা।

তিনজন নিচে গেলো, ঠিক করলো শাড়ি পরবে তিনজন।

পরে তিনজন মিলে ইমা আপুর রুমে চলে গেলাম।

আমি কালো শাড়ি পরলাম। রিহু পেঁয়াজ কালার আর ইমা আপু আকাশি কালার শাড়ি পরলো।

পরে তিনজন শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সাজলাম। আমি আমার রুমে চলে গেলাম ফোন আর ব্যাগ আনতে। রুমে যেয়ে দেখি উনি বসে আছে।

আমি আসতে এক ধেনে তাকিয়ে রইল। একটু একটু করে আমার সামনে এগিয়ে আসলো। গালে আলতো করে হাত রেখে বললো সুন্দর লাগছে তোমাকে অনেক।

লজ্জায় মাথা নুইয়ে নিলাম। এই প্রথম তিনি আমার প্রশংসা করলো।

আমার জামা কাপড় দেও রেডি হতে হবে তো।

আমি লাগেজ খুলে তার জন্য আমার শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে কালো শার্ট প্যান্ট বের করে তার কাছে নিয়ে দিলাম। মুচকি হেসে তিনি নিলো। আমিও হালকা হাসলাম।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে