লুকানো অনুভূতি পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0
705

#লুকানো_অনুভূতি
#শেষ_পর্ব
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর

আজকে আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু। ১০ টা বাজে পরিক্ষা আর এখন বাজছে ৮ টা। ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষার প্রিপারেশন খুব ভালোই নিয়েছি কিন্তু তবুও খুব ভয় লাগছে মনে হচ্ছে যা পরেছি সব ভুলে গেছি। আমার এই একটাই সমস্যা প্রিপারেশন যতোই ভালো নেই না কেনো পরীক্ষার দিন অনেক নার্ভাস হয়ে যাই।

আম্মু ফোন করেছে, আমি এতোই নার্ভাস ছিলাম যে ফোনের রিংটোন আমার কানে পৌঁছালো না।

একটু পরে রোয়েন রুমে প্রবেশ করলো কানে তার ফোন। আমার কাছে এসে ফোনটা দিলো আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আম্মু ফোন করেছে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠ বললাম আসসালামু আলাইকুম আম্মু।

ওয়ালাইকুমস সালাম। তোর ফোন কোথায়? কখন থেকে ফোন করছি।

পাশেই ছিলো শুনতে পাই নি সাউন্ড।

বুঝেছি, নার্ভাস লাগছে খুব? আমি জানি তো তোর পরীক্ষা আসলে নার্ভাসের জন্য অন্য কিছু খেয়াল থাকে না। তোকে ফোনে না পেয়েই রোয়েনের কাছে দিলাম ফোন। শোন একদম ভয় পাবি না, মাথা ঠান্ডা রাখবি। ভয় পেলে সব ভুলে যাবি তাই একটু শান্ত হয়ে থাকবি।

আম্মু আমাকে অনেক বুঝিয়ে তারপর ফোন কাটলো। আমি কাঁপা কাঁপ হাতে রোয়েনের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিলাম।

রোয়েন ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে হুরের দিকে।

কি হলো এতো ভয় পাচ্ছ কেনো?

আমি মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম কিছুনা।

রোয়েন হুরের কাছে যেয়ে হুরের দু গালে হাত রেখে বললো রিলাক্স হুর পরী এতো ভয় পেও না। তুমি প্রিপারেশন অনেক ভালো নিয়েছো আমি দেখেছি। এভাবে নার্ভাস হয়ে গেলে সব এলোমেলো করে ফেলবে তো হুর পরী। ভালো করে তাহলে পরীক্ষা দিতে পারবে না এতে তোমার রেজাল্ট খারাপ হবে। তোমাকে পড়ালেখা করে অনেক বড় হতে হবে। নিজের স্বপ্ন পুরোন করতে হবে। মনে সাহস রাখো দেখবে তাহলে কোনো ভয় কাজ করবে না। তুমিতো জানো তেমার প্রস্তুতি কেমন তাহলে এতো ভয় পেলে হবে হুর পরী?

তার কথা শুনে একটু ভরসা খুজে পেলাম, নিজেকে সাভাবিক করার চেষ্টা করতে লাগলাম।

রোয়েন হুরকে বুকে আগলে নিয়ে মাথায় হত বোলাতে বোলাতে বললো ভয় পেও না আমি আছি তো। মাথা থেকে নার্ভাস দূর করে ফলো।

আমি তার বুকের সাথে লেপ্টে রইলাম। আস্তে আস্তে আমার ভয় কাটতে লাগলো।

চলো ব্রেকফাস্ট করবে। এখন আর পড়া লাগবে না, যা পরেছো তাই এনাফ। এই বলে হুরকে নিয়ে নিচে নেমে গেলো।

যেয়ে বসলাম খেতে। রুহুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম রিহু খেয়েই যাচ্ছে, ওর ভিতর কোনো নার্ভাসনেস আমি দেখছি না। এই দিকে আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না। রিহুকে আস্তে করে বললাম তোর ভয় করছে না?

ভয় করবে কেনো?

ওর কথা শুনে আমার মুখ হা হয়ে গেলো। বললাম আজকে পরীক্ষা তোর একটুও ভয় করছে না?

আজব ভয় করবে কেনো? যা হওয়ার তাতো হবেই।

ওর কথা শুনে আমার মাথা ঘুড়তে লাগলো, বলে কি এই মেয়ে?

তখন ফুপি বলে উঠলো কি হলো হুর খাচ্ছিস না কেনো?

খাচ্ছি তো আম্মু।

কোথায় খাচ্ছিস তাতো দেখতেই পারছি। দে এদিকে দে আমি খাইয়ে দেই। এ বলে ফুপি খাইয়ে দিতে লাগলো।

এতো নার্ভাস হলে হবে? মনে সাহস রাখতে হবে তো খাইয়ে দিতে দিতে বললো ফুপি।

ফুপা বলে উঠলো সাবধানে পরীক্ষা দিও ভয় পেও না, রোয়েন তোমাদের পৌঁছে দিবে সাবধানে যেও। আমি অফিসে যাচ্ছি।

দেখতে দেখতে পরীক্ষার হলের কাছে চলে আসলাম। রিহু নেমে গেলো গাড়ি থেকে। আমার ভয় বাড়তে লাগলো। আস্তে ধীরে নামতে নিলে রোয়েন হাত ধরে কাছে নিলো।

একদম ভয় পাবে না। ঠান্ডা মাথায় সব কিছুর এন্সার দিবে। সাবধানে যাও, ভালো করে পরীক্ষা দিও। আমি এখানেই থাকবো ভয় পেও না।

গাড়ি থেকে নেমে রিহুকে আর হুরকে গেটের কাছে দিয়ে আসলো রোয়েন।
———–
পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এলো রিহু আর হুর। দু’জনের পরীক্ষা এই খুব ভালো হয়েছে। গেটের সামনে আসতেই রোয়েনকে পেয়ে গেলো।

গাড়িতে যেয়ে বসলো ওরা, রোয়েন ওদের মুখ দেখেই বুঝলো পরীক্ষা ভালো দিয়েছে। তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

দেখতে দেখতে আমাদের সব পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো। এতো দিনের পড়ালেখার জার্নি অবশেষে শেষ হলো। সামনের সপ্তাহে ইয়াদ ভাইয়া আর রিহুর বিয়ে ঠিক করা হলো। বিয়ের আমেজে মেতে উঠলো সবার মন।

বিয়ের কেনা কাটা শুরু হয়ে গেলো। এবার সব ড্রেস রোয়েনের সাথে ম্যাচিং করে কিনলাম।

রিহুর বিয়েতে সবাই অনেক এনজয় করতে লাগলাম। আজকে রিহুর হলুদের অনুষ্ঠান। রিহুকে পার্লারের লোকেরা সাজাচ্ছে। সাজানো হলে ওকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দিলাম। সবাই হলুদ ছোঁয়ালাম ওকে এভাবেই হাসি আনন্দের মাঝে ওদের বিয়েটা হয়ে গেলো।
——
রিহু চলে গেছে বাসাটা একদম ফাকা ফাকা লাগছে। রোয়েন চুপচাপ শুয়ে আছে, মন খারাপ হয়তো আদরের বোনকে অন্যের হাতে তুলে দিলো।

তার কাছে যেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম মন খারাপ?

তিনি কনো কথা বললো না চুপচাপ জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো। বুঝলাম মন খারাপ তাই আর কথা বাড়ালাম না। ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

এইদিকে ইয়াদ রুমের সামনে বসে ভাই বোনদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা ওকে রুমে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না, টাকা দাবি করছে। ইয়াদ বলছে আমার রুম, আমার বউ আমি কেনো টাকা দিয়ে রুমো ঢুকবো বউয়ের কাছে যেতে?

কে শুনে কার কথা, অবশেষে সবার চাওয়া পুরোন করেই ইয়াদকে রুমে যাওয়া লাগলো। রুমে এসেই দরজা লাগিয়ে দিলো। কেঁপে উঠলো রিহু ইয়াদের অস্তিত্ব টের পেয়ে।

ইয়াদ আস্তে আস্তে রিহুর পাশে যেয়ে বসলো। রিহু লজ্জায় মাথা নিচু করে ফললো। পেরিয়ে গেলো ওদের একটি ভালোবাসাময় রাত। অনেক কষ্টের পরে প্রিয় মানুষ টাকে আপন করে সারা জীবনের জন্য পেয়ে গেলো। এর চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে?

আজকে ইয়াদ রিহুকে নিয়ে রোয়েনদের বাসায় গেলো। সকাল থেকে কাজে নেমে পড়লো হুর। হিরা বেগমকে কাজে সাহায্য করতে লাগলো। রিহুরা আসতেই গল্প জুড়ে দিলো হুর আর রিহু।
——–
কেটে গেলো ৫ টি বছর। আজকে হিমির বার্থডে। হিমি হলো হুর আর রোয়েনের একমাত্র মেয়ে। আজকে ওর ৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। ওর জন্মদিন উপলক্ষে আজকে সবাই আসবে আমাদের বাসায়। হিমি তো সেই খুশি, আজকে ওর ইকরা আপু আর রিনাফ ভাই আসবে। ইকরা হলো ইমা আপু আর ফাহিম ভাইয়ার মেয়ে। আর রিনাফ হলো ইয়াদ ভাইয়া আর রিহুর ছেলে বয়স তিন বছর। হিমি খুশিতে সারা বাড়ি ছোটাছুটি করছে।

রোয়েন তখন বলে উঠলো আম্মু এতো ছোটাছুটি করে না পড়ে যাবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা হিমি ছুটে চলে গেলো দাদা দাদুর কাছে।

রোয়েন বললো মেয়েটা একদম তোমার মতো হয়েছে। সারাদিন ছোটাছুটি করা ছাড়া কিছু বুঝে না।

আমি কপাট রাগ দেখিয়ে বললাম কি বললে তুমি? আমি সারাদিন ছোটাছুটি করি?

রোয়েন এসে পিছ থেকে হুরকে জড়িয়ে ধরে বললো ভুল কিছু বলেছি নাকি?

ছাড়ুন ধরবেন না আমাকে, আমি নাকি সারাদিন ছোটাছুটি করি।

মহারানী রাগ করেছে নাকি? আমি তো জাস্ট তোমাকে ক্ষেপানোর জন্য মজা করলাম।

হয়েছে ছাড়ো এবার সবাই চলে আসবে এখনি।

রোয়েন হুরকে সামনে ঘুড়িয়ে কপালে গভীর ভাবে চুমু খেলো। ভালোবাসি তোমাকে অনেক হুরপরী নিজের থেকেও বেশি।

আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি এ বলে রোয়েনকে জড়িয়ে ধরলো।

হিমি তখন পিছ থেকে বলে উঠলো আমাকে কেউ ভালোবাসে না।

হেসে ফেললো রোয়েন আর হুর। তারপর এগিয়ে গিয়ে হিমিকে কোলে তুলে নিলো রোয়েন। বললো আমার মাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।

হিমি রোয়েনকে চুমু দিয়ে বললো আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি পাপা।

হুর বলে উঠলো মাম্মাকে কেউ ভালোবাসে না।

হিমি রোয়েনের কোল থেকে হুরের কোলে যেয়ে হুরকে চুমু দিয়ে বললো তোমাকেও খুব ভালোবাসি মাম্মা।

রোয়েন আর হুর এক সাথে হিমিকে জড়িয়ে ধরে বললো আমরাও তোমাকে অকেন ভালোবাসি হিমি পরী।
———-
এরি ভিতরে সবাই এসে পরলো। সবার সাথে সবার কুশল বিনিময় হলো তারপর হিমিকে নিয়ে সবাই কেক কাটলো। খুশিতে ভরে গেলো সবার মন।

হিমি, ইকরা আর রিনাফ এক সাথে খেলছে আর ছোটাছুটি করছে। খুশিতে সবার চোখ চিকচিক করে উঠলো। আজ সবার সংসার পরিপূর্ণ, কোনো কিছুর কমতি নেই কারো।

সবাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো আল্লাহ তাদের এতো সুন্দর একটা পরিপূর্ণ সংসার দেওয়ার জন্য।

এভাবেই সুখে থাকুক প্রতিটা সংসার।

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে