লুকানো অনুভূতি পর্ব-০৮

0
567

#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ৮
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর

রুমে এসে সামনে তাকাতে দেখি রিহু ঘুমিয়ে পড়েছে।

আমার চোখ গেলো শপিং ব্যাগ এর দিকে। রোয়েন ভাইয়ে দেওয়া শপিংটা কাঁপা কাঁপা হাতে ধরলাম। শপিং ব্যাগ খুলে আমার মুখ হা হয়ে গেলো।

কালো উপরে সাদা স্টোনের কাজ করা এতো সুন্দর একটা লেহেঙ্গা যে ভাষায় প্রকাশ করতে পরবো না। রোয়েন ভাইয়ের পছন্দ এতো সুন্দর আগে জানা ছিলো না।

লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচিং করে কালো চুরি ও জুয়েলারিও আছে। সব কিছু আমার এতো পছন্দ হয়েছে যে বলার বাহিরে।

সবকিছু আবার গুছিয়ে ব্যাগে ভরে আলমারিতে তুলে রাখলাম সব কিছু। তারপর আমিও গিয়ে সুয়ে পড়লাম রিহুর পাশে।

সকালে ঘুম ভাঙলো রিহুর ডাকে।

ওই হুর ঘুম থেকে ওঠ তারাতারি, কলেজে যাবি না।

হুর ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো। আজকে না কলেজে যেতে ইচ্ছে করছে না। চল আজকে যাওয়া লাগবে না।

হুপ কি বলিস, আপুর বিয়ের জন্য কতো দিন কলেজ বন্ধ যাবে তোর খবর আছে। সামনে পরিক্ষা এখন এতো বন্ধ দিলে হবে। যা ফ্রেশ হয়ে আয়, মামি খেতে ডাকছে।

ফ্রেশ হয়ে নিচে যেয়ে দেখলাম সবাই খাচ্ছে আর বিয়ের বিষয়ে আলোচনা করছে।

চোখ গেলো রোয়েন ভাইয়ার দিকে, আজকে বেশ খুশি খুশি লাগছে তাকে। অবাক হলাম বেশ কারণ তাকে বেশিরভাগ সময় গম্ভীর থাকতে দেখা যায়। আজকে এতো খুশির কারণ বুঝলাম না।

চুপচাপ খেয়ে আমরা কলেজে চলে গেলাম।

দেখতে দেখতে চলে গেলো আরো কিছু দিন। কালকে আপুর মেহেন্দির অনুষ্ঠান। আজকে ফুপিরা চলে আসলো। কলকে বাকি সব আত্মীয় স্বজনরা আসা শুরু করবে।

ফুপিকে পেয়ে গল্প জুরে দিলাম আমি। এইদিকে সবাই কাজ করতে করতে নাজেহাল অবস্থা। পুরুষ মানুষরা এদিক ওদিক ছোটা ছুটি করছে। ডেকরেটর দের দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে কোন যায়গায় কিভাবে সাজাবে। আজকে রাতের ভিতোর যেনো সব কম্পিলিট হয়ে যায়।

আজকে সারা রাত সবার কাজ করে আর গল্প গুজব করে পার করলো।

পরের দিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে চারপাশটা দেখে অবাক হয়ে গেলাম, অনেক সুন্দর করে সব সাজানো হলো।

আত্মীয় স্বজনরা সবাই এসে পড়া শুরু করে দিলো।

খালাতো ভাই বোনরা সবাই এসেছে। সবাই মিলে আড্ডায় মেতে উঠলাম আমরা।

এভাবেই সন্ধ্যা হয়ে গেলো। পার্লার থেকে লোক আসলো আপুকে সাজানো জন্য। আমার অতো ভারি সাজ পছন্দ না তাই রুমে বসেই আমি আর রিহু রেডি হচ্ছি। শাড়ি পড়ে আমরা দুজন হালকা করে সাজতে লাগলাম।

তখন রুমে আসলো আম্মু। মা শা আল্লাহ আমার দুই মেয়েকেই পরির মতো লাগছে। কারো নজর যেনো না লাগে।

আম্মুর কথা শুনে মুচকি হাসলাম। একটু পরে আম্মু চলে গেলো। রিহু আর আমি রেডি হয়ে ইমা আপুর রুমে চলে গেলাম।

যেয়ে দেখলাম ইমা অপুর সাজ প্রায় শেষের দিকে। আপুকে অনেক সুন্দর লাগছে। আপুকে সাজানো হয়ে গেলে আমরা সব বোনরা মিলে নিচে স্টেজে নিয়ে গেলাম আপুকে। পার্লার থেকে আসা মেয়েরা আপুকে মেহেন্দি দিতে লাগলো। আমরা সবাই পাশে বসে গল্পে মেতে উঠলাম। সাথে ছবি তোলাতো আছেই। ফটোগ্রাফার ছবি তুলছে আর আমরা এক এক রকমের পোজ দিচ্ছি।

আপুর পরে আমি হাতে মেহেন্দি দিতে বসলাম।

কাজের ফাকে রোয়েনের চোখ আটকে গেলো স্টেজে বসে থেকে হাতে মেহেন্দি পড়তে থাকা হুরের দিকে। মেরুন কালার শাড়িটা ওর ফরসা শরীরে একদম ফুটে উঠলো। মনে হলো শারিটা ওর জন্য বানানো হয়েছে। মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগলো তার হুর পরিকে।

হটাৎ একটা জিনিস দেখতেই রোয়েনের মাথায় আগুন ধরে গেলো। হাতে মেহেন্দি লাগানোর জন্য শাড়ির আঁচল উপরে উঠিয়ে রেখেছে তাতে অনেকটা পেট দেখা যাচ্ছে। মাথা গরম হয়ে গেলো, হাতের কাছে পাই একবার দেখাবো মজা।

এইদিকে হুর সবার সাথে হাসা হাসি করতে আর মেহেন্দি পড়তে এতোই ব্যস্ত যে তার পেট বের হয়ে গেছে সেই দিকে খেয়াল এই নেই।

হুরের দুই হাত ভরে মেহেন্দি দেওয়া হলে ও উঠে দাড়ালো। পা অনেক ব্যথা করছে এতো সময় বসে থাকার জন্য। এখন একটু হাটা প্রয়োজন তাই নেমে হাটতে লাগলো। রুমে ফোনটা রেখে আসছিলো তাই রুমের দিকে গেলো। দরজার কাছে আসতেই কেউ একজন টান দিয়ে রুমে ডুকিয়ে দরজা আটকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

ভয়ে চিৎকার দিতে যাবো তার আগেই মুখ চেপে ধরলো। সামনে তাকাতেই দেখি রোয়েন ভাই আগুন চোখে তাকিয়ে আছে। বুঝলাম না এতো রেগে আছে কেনো।

তখন তিনি রেগে গিয়ে বললো শাড়ি পরে কোমর বের করে ঘুরছিস কোন সাহসে?

তার কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো, বলে কি এই লোক, আমি কখন কোমর বের করে ঘুরলাম। উমম উমম করে ইশারায় তাকে মুখ থেকে হাত সরাতে বললাম।

তিনি হাত ছেরে দিতেই বললাম আমি কখন কোমর বের করে ঘুরে বেড়ালাম কি সব বলছেন এগুলো।

আমি কি সব বলছি তাইনা, দারা এই বলে আমাকে আয়নার সামনে দার করালো। আয়নার দিকে তাকাতে আমার চোখ কপালে। একি আমার কোমর বের হলো কিভাবে? এতোখন সবার সামনে এভাবে ছিলাম আমি, লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে গেলো।

ছোট করে বললাম আমি খেয়াল করি নি।

চোখ কোথায় থাকে যে খেয়াল করিস নি। ধমকে বললো তিনি।

কেঁপে উঠলাম তার ধমকে। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

দাড়িয়ে আছিস কেনো? পিন মেরে তারপর নিচে যাবি এখন আর নাহলে শাড়ি পরা ছুটিয়ে দিবো তোকে।

আমি ঠোঁট উলটে আমার দু হাতের দিকে তাকালাম, দুই হাতে মেহেদি দেওয়া, আমি কিভাবে এখন পিন মারবো।

আমার রিয়াকশন দেখে উনি হয়তো আমার সমস্যাটা বুঝলেন। কোনো কথা না বলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে পিন নিয়ে কোমরে লাগাতে লাগলো।

তার আচমকা কাজে থতমত খেয়ে গেলাম। কোমরে তার হাতের স্পর্শ লাগতেই কেঁপে উঠলাম। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলাম এক ধেনে সে পিন মেরে যাচ্ছেন।

মারা হয়ে হেলে সোজা হয়ে দারালেন। ঠিক আছে এবার। যেটা সামলাতে পারিস না সেটা পরিস কেনো।

আমি কি বলবো খুঁজে পেলাম না, লজ্জায় গাল লাল হয়ে গিয়েছে। মাথা নিচু করে দারিয়ে রইলাম।

যা এবার।

তার বলার সাথে সাথে ছুটে পালালাম আমি। কি ঘটে গেলো এতোখন, ভাবতেই কান গরম হয়ে যাচ্ছে লজ্জায়।

নিচে যেয়ে দেখি রিহু হাতে মেহেন্দি পরছে।

কিরে এতো সময় কোথায় ছিলি?

ওই রুমে গিয়েছিলাম একটু। পা ব্যথা করছিলো তাই হাটা হাটি করছিলাম।

ওহ বোস তাহলে এখন। এই বলে আবার সবাই আড্ডায় মেতে উঠলাম।

বক্সে গান চলছে, অনেকে নাচা নাচি করছে। আমরা বসে বসে সব উপভোগ করলাম।

সবার হাতে মেহেন্দি দিতে দিতে অনেক রাত হয়ে গেলো।

মেহেন্দি শুকানোর পরে ধুয়ে সবাই এক সাথে খেতে বসলাম।

অনেক রাত হয়ে গেলে তাই সবাই ঘু্মিয়ে পড়লাম।

সকালে রিহু ঘুম থেকে উঠে ছাদে গেলো। গিয়ে চোখ বুঁজে সকালের আবহাওয়া টা উপভোগ করতে লাগলো। হটাৎ পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরলো। চকমে পিছে তাকানোর আগেই ইয়াদ বললো আমি।

রিহু কিছুখন চুপ থেকে হাত সরিয়ে দিতে লাগলো।

রাগ করেছো?

না।

রাগ করোনা বোনের বিয়ে বলে কথা, সব দায়িত্ব আমার উপরে পরেছে তাই তোমাকে সময় দিতে পারি নি।

রিহু চুপ করে রইলো। ও রাগ করে নাই, একটু মজা নিচ্ছে আর কি।

ইয়াদ রিহুকে ছেড়ে দিয়ে ওর সামনে যেয়ে কান ধরে বললো সরি।

ইয়াদের কাজ দেখে হেসে ফেললো রিহু।

আমি মজা করেছিলাম দেখলাম তুমি কি করো।

তোমার মজা করা ছুটাচ্ছি আমি, এই বলে কান ছেড়ে আবার জরিয়ে ধরলো।

আরে করছো কি কেউ দেখে ফেলবে।

দেখুক।

পাগল হয়ে গেলে নাকি এই বলে জোর করে ছাড়িয়ে নিলো রিহু।

তারপর দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গল্প করতে লাগলো।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে