লাভ টর্চার❤ Part-3 | A Sweet love story

0
4656

#লাভ_টর্চার❤
#Part-3
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
আমি ঘুম থেকে উঠলে মোটেও পাখির কিচির মিচির শব্দ শোনা যায় না। কেননা, আমি নবাব সিরাজউদ্দোলার বংশধর আই মিন বেলা করে উঠতে পছন্দ করি। কলেজ কোচিং না থাকলে তো কথাই নাই! আজও তার ব্যতিক্রম হলো না! আমি উঠতে উঠতে সূর্যিমামা মাথার উপরে উঠে গেছে। ঘুমাতে ঘুমাতে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছি তাই কিছুক্ষণ পড়ে পড়ে রেস্ট নিলাম। রেস্ট নিতে নিতেই আম্মুর ডাক পড়লো। কি আর করা! উঠে চলে গেলাম ওয়াসরুম। ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে ডুকতেই ভ্রু কুচকে বললাম,
– আপনি এখানে কি করছেন!
.
.
মানুষটা আর কেউ না, শুভ্র ভাইয়া! আমার কথা শুনে আম্মু রেগে বলল,
– ওর সাথে তোর এতো সমস্যা কেন বলতো! তোকে তো কিছু করে না।
.
.
করে না বলে বলে যে মাথায় উঠাচ্ছে তা বেশ ভালোই টের পাচ্ছি। কিন্তু এখন কিছু বলে লাভ নেই। তাই শুভ্র ভাইয়াকে বাদ দিয়ে সামনে তাকালাম। মামিমণি আর ফুপ্পিকে গিয়ে সালাম করতেই দুজন জরিয়ে ধরলো। দুই জনেই বেশ আদরের আমি। শুধু তাদের ছেলেগুলোই দুনিয়া ছাড়া। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে শান্ত ভাইয়ার পাশে গিয়ে আরামসে বললাম। মুখে দীর্ঘ হাসি টেনে বললাম,
– হোয়াটস আপ, ভাইয়া?
.
.
শান্ত ভাইয়া বসা অবস্থায়ই চেহারা কিছুটা দূরে সরিয়ে আমাকে বেশ ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করলো। তারপর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
– তুই যাই-ই বলিস না কেন, বর্তমান জিএফের নিম আমি বলছি না! প্রতিবার কিভাবে জানি ব্রেকআপ করিয়ে দিস!
.
.
আমি রেগে শান্ত ভাইয়ার কানের কাছে গিয়ে বললাম,
– কি করব বলো! তোমার চেহারা দেখলেই আমার ব্রেকআপ করাতে ইচ্ছে করে!
.
.
শান্ত ভাইয়া আবার আমার কানের কাছে এসে বললো,
– আমার চেহারা বুঝি অনেক সুন্দর, তাই অন্য কাউকে সহ্য হয় না!
.
.
ভ্রু নাচিয়ে কথাগুলো বলল শান্ত ভাইয়া। এ মানুষটার সাথে ভাব কিভাবে সম্ভব তাই বুঝি না। রেগে ফিসফিস করে বললাম,
– হ্যাঁ, অনেক সুন্দর! একদম বাটখারার মতো!
.
.
আমাদের ফুসফুসানি শুনে ফুপ্পি বলল,
– এসেই শুরু হয়ে গেছে। এদের কথার জ্বালায় আমরাই কোন কথা বলতে পারি না।
.
.
মামিমণি সঙ্গ দিয়ে বলল,
– এদের একজন আরেকজনকে পেলে আর কাউকে লাগে না! কবে যে শুভ্র আর আরোহীর এমন সম্পর্ক হবে!
.
.
কথাটা বলেই আফসুস করলো মামিমণি। আমরা কি কথা বলছি তা শুনলে নিশ্চয়ই দুজন হার্টফেল করতো! কথাটা ভাবতে ভাবতে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম তিনি রাগে বোম্বাই মরিচ হয়ে আছে। তাকে দেখে মনে গান বাজছে, সোয়ান মেহ লাগ গায়ি আগ থুক্কু শুভ্র কি দিল মেহ লাগ গায়ি আগ!! গানটায় ডান্স দিতে পারলে বেশ ভালো হতো! মনের ইচ্ছা অপূর্ণ রাখতে হয় না, তাই রুমের দিকে পা বাড়ালাম। রুমে গিয়ে গান ছেড়ে উরাধুরা ডান্স করছি! হঠাৎ করে কেউ গান অফ করে দিলে রাগী চোখে তাকাতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া দাঁড়িয়ে! নিজে তো জ্বলবেই, মানুষকেও জ্বালাবে! রাগীভাব বজায় রেখে শুভ্র ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললাম,
– গান অফ করলেন কেন!
.
.
শুভ্র ভাইয়া আমার সে কথার পাত্তা না দিয়ে বলল,
– তোর এতো খুশি আসে কোথা থেকে!
.
.
আহা! কষ্ট কষ্ট ফিল পাচ্ছি! মুখে হাসি টেনে বললাম,
– মন থেকে, ভাইয়া!
.
.
শুভ্র ভাইয়া রেগে অগ্নিশিখা হয়ে বলল,
– একজন রেগে আছে আর তুই খুশিতে ডান্স করছিস!
.
.
আব আয়া লাইন পে! বোকাসোকা ভাব নিয়ে বললাম,
– কে রেগে আছে, ভাইয়া!
.
.
শুভ্র ভাইয়া অন্যদিকে মুখ করে বলল,
– কে রাগবে! কেউ না!
.
.
ভাঙবে কিন্তু মুচরাবে না! কি আর করার! যত পর্যন্ত শিকার না করবে তত পর্যন্ত #লাভ_টর্চার চলতেই থাকবে! মনে মনে ভাবছি এমন সময় শান্ত ভাইয়া এসে হাজির! শুভ্র ভাইয়াকে পাত্তা না দিয়েই বলল,
– রুহী, ছাদে চল তো! তোর সাথে দরকারী কথা আছে!
.
.
শান্ত ভাইয়ার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে! মনে মনে নিশ্চয়ই শান্ত ভাইয়ার গোষ্ঠী উদ্ধার করছে! করুক, তাতে আমার কি! আমি শান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– চলো তাহলে!
.
.
শুভ্র ভাইয়া হয়তো সাথে যেতে চাইছেন! কিন্তু তিনি কিছু বলার আগেই ছাদের জন্য পা বাড়ালাম। ছাদের রিলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি! শান্ত ভাইয়া কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গলা পরিষ্কার করে বললাম,
– আচ্ছা, মেয়েরা কি পছন্দ করে বলতো!
.
.
উনি কি আমার থেকে টিপস চাচ্ছে! অবাক হওয়ার ভান করে বললাম,
– তুমি আমার থেকে টিপস চাচ্ছো! যে ঘন্টায় ঘন্টায় মেয়ে পটাতে পারে সে আমার কাছ থেকে টিপস চাচ্ছে! যার মাসে মাসে নতুন নতুন গার্লেফ্রেন্ড ধরে সে আমার থেকে টিপস চাচ্ছে!
.
.
আমার কথা শুনে শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললো,
– তুই কি আমার তারিফ করছিস নাকি ইজ্জত দিচ্ছিস!
.
.
আমি ভাব দেখিয়ে বললাম,
– এটাকে ম্যাক্স প্রো তারিফ বলে!!
.
.
শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলল,
– তুই ভালো করেই জানিস আমার ব্রেকআপের কারণ একমাত্র তুই! তোর জন্যই আমার কোন রিলেশন টিকে না, বলতে গেলে টিকতে দিস না! আচ্ছা, আমার প্রেম টেমে পড়লি নাকি বলতো!
– কি মনে হয়!!
.
.
ভ্রু নাচিয়ে কথাটা বলে উল্টো পথে হাঁটা ধরলাম। একটু সামনে এগুতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া রক্ত লাল চোখে তাকিয়ে আছে। হাতের মুঠো দুটো শক্ত! শান্ত ভাইয়ার কথা সিরিয়াসলি নিলো নাকি! নিলে নিক! এখন তো #লাভ_টর্চার কেবল শুরু!
.
.
সন্ধ্যা হতেই নিধিপি এসে হাজির! আমার একমাত্র খালার একমাত্র মেয়ে হলো নিধিপি! বয়সে শুভ্র আর শান্ত ভাইয়ার সমবয়সী! নিধিপির আম্মুকে আমি বড়আম্মু বলে ডাকি! বড়আম্মু যদিও আসে নি, তবে নিধিপি লাফিয়ে লাফিয়ে চলে এসেছে। আসলে আমাদের গেট টুগেদার করতে কোন কারণ বা সময় লাগে না। একজন আসলে তার সাথে সাথে পিপড়ার মতো সবাই হাজির হয়ে যায়! তবে এর জন্য ফেরোমন না, মনের টান লাগে!
.
.
নিধিপি আসতেই সবাই বসে পড়লাম লুডুর কোর্ট নিয়ে! চারজন একসাথে থাকলে লুডুর মতো মজার খেলা আর নেই! একে একে সবাই চালা শুরু করলাম। তবে শান্ত ভাইয়ার গুটি শুধু খাওয়াই যাচ্ছে! এটা নিয়ে তিনি বেশ বিরক্ত! এদিকে আমি একটুর জন্য জিতবো জিতবো বলে! হঠাৎ শান্ত ভাইয়া লুডুর কোর্ট উল্টিয়ে বলল,
– আর খেলবো না!
.
.
তার কাজ দেখে মন চাচ্ছে মঙ্গল গ্রহ থেকে ইট এনে তার মাথায় মারি! কিন্তু আমার যে ভাব জমাতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে ভাব কিভাবে জমায় তা আমার জানা নেই! তাই সেখান থেকে উঠলে উঠতে বললাম,
– হ্যাঁ, শান্ত ভাইয়া যা বলেছে তাই! আর খেলা হবে না!
.
.
আমার কথায় শান্ত ভাইয়া শকড! তিনি নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন যে এতক্ষণে তার মাথা থেকে চুলের খানদান সাফা হয়ে যাবে। কি ভেবে জানি বলল,
– না, না, খেলবো! রুহী, সবাইকে গুটি দে!
.
.
কথাটা বলে আমাকে তার পাশে বসালো! কানে ফুসফুস করে বলল,
– বইন, প্লিজ আমার গার্লেফ্রেন্ড আর ভাগাইস না! এভাবে যেতে থাকলে পরে চিরকুমার হয়ে মরতে হবে!
.
.
আল্লাহ! আমি ভাবলাম কি আর হলো কি! যাই হোচ, সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য বললাম,
– আমার শান্ত ভাইয়া কতো ভালো! চো চুইট!
.
.
আমার কথায় শান্ত ভাইয়ার কিছু না গেলেও শুভ্র ভাইয়ার বহুত কিছু গিয়েছে! এই মুহুর্তে তিনি রাগি চোখে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। শুভ্র ভাইয়ার দহন মুভিতে আমার জ্বলার কোন শখ নেই। তাই বললাম,
– তোমরা গুটি ঠিক করো, আমি খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ে আসছি!
.
.
কথাটা বলেই দে দৌড়! সোজা চলে এলাম কিচেনে! কিন্তু সেখানে এসেও খুব একটা লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। কেননা, আমার সাথে সাথে শুভ্র ভাইয়াও এসেছে। তাকে পাত্তা না দিয়েই আমি কিচেনের জিনিসপত্র উল্টাতে শুরু করলাম। কি বানাবো তাই ভাবছি। আমাকে জিনিসপত্র উল্টাতে দেখে শুভ্র ভাইয়া বলল,
– তোর মতো অকর্মাকে দেখে মনে হয় না কিছু বানাতে পারিস!
.
.
কি! আমি অকর্মা! একটু রাঁধতে পারি না বলে এই কথা বললো! ভাব নিয়ে বললাম,
– আমি নুডুলস বানাতে পারি, ওকে? অমলেটও করতে পারি, যদিও মাঝে মাঝে সেটা টুইন টাওয়ারের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, তা কোন ব্যাপার না, এটাও একটা প্রতিভা! এছাড়া, কফিও বানাতে পারি! হুহ!
.
.
আমার কথা শুনে শুভ্র ভাইয়া হাসতে হাসতে বেহুশ প্রায়। মনে হচ্ছে কেউ লাফিং গ্যাস সামনে ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণ হাসার পর বললো,
– এসব বাচ্চারাও পারে! এখন সর এখান থেকে, আমি কিছু বানিয়ে দিচ্ছি। পরে রাঁধতে গিয়ে হাত পা পুড়লে কেঁদে মরবি! তার চেয়ে ভালো আমিই কিছু করে দিই!
.
.
– কি চলছে এখানে!
.
.
শান্ত ভাইয়ার কন্ঠ শুনে টুপ করে মাথায় আইডিয়া হাজির! মুখে দীর্ঘ হাসে টেনে বললাম,
– আপনার এতো কষ্ট করতে হবে না। শান্ত ভাইয়া বেশ ভালো রাঁধতে জানে। তিনি থাকতে আমার কষ্ট করার কি প্রয়োজন!
.
.
আমার কথা শুনে শান্ত ভাইয়া ভ্রু কুচকে বলল,
– আমি ভালো রাঁধতে জানি?
.
.
আমি আবেগাপ্লুত কন্ঠে বললাম,
– এখন তারিফ করছি তাও নিতে চাইছেন না! দেখছেন, এতো মহৎ তিনি!
.
.
শান্ত ভাইয়া বিড়বিড় করে বলল,
– এটা শুধুমাত্র তারিফ না, এটা ম্যাক্স প্রো তারিফ!
.
.
এদিকে শুভ্র ভাইয়ার চেহেরা দেখার মতো! রাঁধতে গিয়ে নিজেই তেলে বেগুনে জ্বলছে। শেষে সহ্য করতে না পেরে কিচেন থেকে বের হয়ে গেল। শুভ্র ভাইয়া যেতেই শান্ত ভাইয়া বলে উঠলো,
– তুই জেনেশুনে আমার অপমান করছিলি, তাই না? তুই ভালো করেই জানিস যে, আমি রাঁধতে পারি না। এমনকি চুলাও জ্বালাতে পারি না।
.
.
এই পোলা সবসময় উল্টোই বুঝে! রাগি ভাব নিয়ে বললাম,
– এভাবে বলছো যেনো কি মহৎ কাজ করে ফেলেছো! এমন হলে কপালে বউ জুটবে বলে মনে হয় না!
.
.
শান্ত ভাইয়া জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
– বউ জুটবে না কেনো! আর আমারই বা রাঁধতে হবে কেনো!জানিস না, সংসার সুখে হয় রমণীর গুনে!
.
.
তার কথা শেষ হতেই বললাম,
– যদি থাকে গুনবান পতি তার সনে! আর একটা কথা! অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী! সুতরাং, পুরোটা জেনেই কিছু বলতে এসো, কেমন?
.
.
Continue………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে