লবঙ্গ লতিকা পর্ব -১২

0
697

#লবঙ্গ লতিকা
#নুজহাত আদিবা
পর্ব ১২

তমা ঘুম থেকে ওঠা মাত্রই অনিতা তমাকে বই আনতে পাঠিয়েছেন। তমা যেতে চায়নি। অনিতা বহুকষ্টে তমাকে ঠেলেঠুলে বই আনতে পাঠিয়েছেন।

তমা বই নিয়ে ফিরে আসতেই সব বই আঙুর বালার ঘরে রেখে দিতে বললো অনিতা। তমা বইগুলো নিয়ে আঙুর বালার ঘরের এক পাশে রেখে দিলো। সাদ হঠাৎ নিজের ফোন নিয়ে দৌড়ে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে অনিতাকে বললো,” আম্মু! কিছুদিন পর থেকে না কি আমাদের টেস্ট পরীক্ষা শুরু। এখন কী হবে? আমাকে আমার ক্লাসমেট ফোন করো জানালো।”

অনিতা আতংকে আঁতকে উঠলেন। সাথে সাথে নিজের স্বামী মহসীন খানকে ঘর থেকে ডেকে আনলেন। মহসীন সবটা শুনে সিদ্ধান্ত নিলেন কালই নিজ গৃহে ফিরে যাবেন। ছেলের পড়াশোনা নিয়ে তিনি বেশ সিরিয়াস। পড়াশোনার প্রতি তিল পরিমাণ অবহেলাও তিনি সহ্য করতে পারেন না।

আঙুর বালা সবটা শুনে রাগে ফেটে চৌচির! মহসীন খানের সঙ্গে বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছে আঙুর বালার। তমাকে কত শখ করে সাদের বউ করে এনেছেন আঙুর বালা। তমাকে না কি এখানেই রেখে যাবে মহসীন। তমাকে শহরে নিয়ে গেলে মা কি সাদ সংসারের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়ে ফেলবে। পড়াশোনার আরো ক্ষতি হবে এতে। আঙুর বালা এসব শুনে নিজ ছেলের ওপর বেশ ক্ষিপ্ত।

সাদের চলে যাওয়ার কথা শুনে সবার মন খারাপ হলেও তমা বেশ খুশি। তাঁর শত্রুপক্ষ কাল বাড়ি থেকে বিদায় হবে। আহা কী শান্তি! কেউ আর তমার পিছু লাগতে আসবে না।

তমা খুশিতে সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে গুন গুন করে গান গাইতে শুরু করলো। কিন্তু এই খুশির স্থায়ীত্ব ছিল খুব স্বল্প। সন্ধ্যা হতেই অনিতা তমাকে পড়তে বসিয়ে দিলেন। তমা মুখ ভার করে পড়ার টেবিলে বসলো।

মহসীন রাতে একটা নতুন মোবাইল ফোন নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। টাচস্ক্রীনের মোবাইল ফোন। ফোনটা তিনি তমার জন্য এনেছেন। ওনারা যেহেতু থাকবেন না। তাই তমার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফোনটা কিনে নিয়ে এসেছেন।

তমার হাতে মহসিন খান ফোনটা দিতেই। তমা নেড়েচেড়ে দেখতে শুরু করলো। উল্টে পাল্টে ফোনটা কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করেই রেখে দিলো তমা। শফিক ভাইয়ের হাতেও এরকম ফোন ছিল। মাঝেমধ্যে ওটা দিয়ে তমা শফিককে গান শুনতে দেখতো। কানের মধ্যে একটা মেশিন লাগিয়ে ফোনের সাথে জয়েন্ট করেই গান শুনতে হয়।

সকাল হতেই সাদ,অনিতা এবং মহসীন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল। আঙুর বালার বেশ মন খারাপ। ছেলে,নাতী, বউমা সব আজ চলে গেল। বাড়িটা আবার ফাঁকা হয়ে যাবে। মহসীন খান বলেছেন সাদের পরীক্ষা শেষ হলেই আবার এসে ঘুরে যাবেন। তমা তো আজ বেশ খুশি। শান্তি মতো থাকা যাবে একটু।

তমা যতটা শান্তির কথা ভেবেছিল। বাস্তবে তাঁর বিপরীত ঘটলো। মানুষ থাকা সত্ত্বেও পুরো বাড়িটা কেন যেন খুব ফাঁকা ফাঁকা। তমা আলতো পায়ে সাদের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। নাহ! সাদ নেই!

শুন্য ঘর দেখে তমার বুকটা কেন যেন খালি খালি লাগলো। সব আছে তবে কিছুই নেই! তমা ক্রন্দনরত দৃষ্টিতে সাদের ঘরের এদিক ওদিক চোখ ফিরিয়ে দেখলো। ঘরে সবই বিদ্যমান। তবে, সেই নিদিষ্ট মানুষটা ব্যাতীত।
তমা দৌড়ে এক ছুটে আঙুর বালার খাটে গিয়ে আছরে পরলো। শব্দ করে কাঁদতে শুরু করলো। আঙুর বালা কিছু বুঝতে না পেরে তমাকে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলেন তমার কী হয়েছে? কিন্তু, তমা নিরুত্তর।

বিছানার এক প্রান্তে শুয়ে নিরবে চোখের জল ফেলতে ব্যস্ত তমা। আঙুর বালার তখন সবে মাত্র চোখটা লেগে এসেছে। কারো ফুঁপানোর আওয়াজ শুনে চমকে উঠলেন আঙুর বালা। পাশ ফিরে তাকালেন। পাশে তমা বালিশে মুখ গুঁজে রয়েছে। আঙুর বালা তমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। অচিরেই তমাকে বুকে টেনে নিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করলেন। আদুরে ভঙ্গিতে বললেন,”এমনে তো আমার নাতী থাকলে কাইজ্জা(ঝগড়া) করস। এহন তো নাই তুই কান্দোস ক্যা আবার?”

তমা প্রতুত্তরে কিছু বললো না। তমার কান্নার আওয়াজ আরো প্রগাঢ় হয়ে উঠলো মুহুর্তেই। আঙুর বালা তমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,”কান্দিস না আর তুই। কালকে আমার ফোনডা দিয়া ওর লগে কথা কইস। আমি কাউরে কিছু কমু না।”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে