রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৮

0
2494

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৮
.
”আমার রাগ কমাতে চাও তুমি তাই না ? দ্যান কিস মি ! ”
মাইশা গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে। রাগের বশে এই ছেলে পাগল হয়ে গেল নাকি ?
” হোয়াট ? কিস মি ! ”
একথা বলে আয়াত মাইশার দিকে এগোতে গেলেই মাইশা আয়াতের বুকে হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে দেয়।
,
কিছুক্ষণ আগে
.
আয়াতকে না বলে ভার্সিটি থেকে পৃথা , ইনায়া , আনান আর সামাদের সাথে ক্যাফেতে চলে যায় মাইশা। মাইশা ভেবেছিলো আয়াতের আসতে মনে হয় একটু দেরী হবে। তাই এই সময় সে ফ্রেণ্ডসদের সাথে আড্ডা দিতে পারবে। কিন্ত আয়াত সেখানেও হাজির হয়ে যায়। মাইশার তো এখন জান যায় যায় অবস্থা । আয়াতের ঠোঁটে এক চিলতে হাসিটাই প্রমাণ করে দিয়েছে ঠিক কতটা ভয়ঙ্করভাবে রেগে আছে সে। মাইশা বিনিময়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে….
.
”আয়াত ! তুমি এতো তাড়াতাড়ি এসে পড়লে ?”
.
” কি আর করবো বলো মাইশা ; খালুজান তো আমাকে বলেছে আমার সামনে যে duffer টা দাঁড়িয়ে আছে তার ২৪ ঘণ্টা খেয়াল রাখতে…..তাই তো এত তাড়াতাড়ি আসতে হলো ।”(দাঁতে দাঁত চেপে )
.
পৃথা তো এমনিতেই এই আয়াতের উপর লাট্টু আবার আয়াতের arrogant face দেখে খুশিতে গদগদ করে বলে উঠে….
”আরে ভাইয়া, আপনিও বসুন না । আমাদের সাথে আড্ডা দিন।”
.
”না babe , এখন আমার তোমার এই ডাফার friend কে বাসায় দিয়ে আসতে হবে…..পরে আড্ডা দিবো নে । ওকে?”(পৃথাকে চোখ মেরে)
.
পৃথার খুশি আর দেখে কে। সেও দাঁত কেলিয়ে বলে….
” ওকে ভাইয়া। আর এইযে মাইশু ? তোর হবু দুলাভাইয়ের সব কথা মানিস । ঠিকাছে ?(মাইশাকে কানে কানে)
.
মাইশা পৃথার হাবভাব দেখে মনে মনে ভাবছে….
” পৃথা….আম দেখার আগে আম খাওয়ার স্বপ্ন দেখিস না। এই ব্যাটায় এক নাম্বার ছেচঁড়া। আমেরিকায় থাকতো তো কি হইসে ; ফ্ল্যাটিং এর শিরায়-উপশিরায় চলে….”
আর ভাবার সময় পায়নি সে । আয়াত মাইশার হাত টেনে সেখান থেকে নিয়ে আসে।
গাড়ি একধ্যানে আয়াত চালিয়ে যাচ্ছে। মাইশা বারবার আড়চোখে আয়াতকে দেখছে। একটু সাহস নিয়ে সে বলে….
” আয়াত এত রাগ করার কি আছে ? আমি তো কয়েকমিনিটের জন্য friend দের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম । please রাগ করো না…!”
.
”আমার রাগ কমাতে চাও তুমি তাই না ? দ্যান কিস মি ! ”
.
বর্তমান
”আয়াত ? রাগের বশে পাগল হয়ে গেলা নাকি ?”
,
আয়াত মাইশার বাহু ঝাকিয়ে বলতে থাকে….
” তো বলো কি করবো আমি ? আমাকে টেনশন না দিলে তো তোমার ভালোলাগেনা তাইনা ? কাল যখন তুমি অজ্ঞান হয়ে ছিলে না জানো কি অবস্থা হয়েছিলো আমার? ভয় ঢুকে গিয়েছিলো তোমার জন্য ! আবার আজকে ; ভার্সিটি থেকে তুমি উধাও। কল দিলাম , রিসিভ করো না ; খালামণিকে কল দিলাম , তুমি বাসায় যাও নি । নিজের জন্য তো একফোটাও ভাবো না……এট লিস্ট আমার উপর তো দয়া করো?”
কথাগুলো বলার সময় নাক-মুখ লাল হয়ে গিয়েছিলো , চোখ দুটো ছলছল করছিলো। মাইশা বোকার মতো তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে।
.
এমনিতে আয়াত ওকে পছন্দ করে না….কিন্ত এখন তো তার চোখ দেখে এমন মনে হচ্ছে না। এগুলো কি শুধুই দায়িত্ববোধ থেকে ; নাকি অন্যকিছু?
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
এশার আযান দেওয়ার অনেকক্ষণ পরেই চুপি চুপি ছাদে যাই আমি । আদ্রাফকে একবারের জন্য দেখাটাই আমার আসল উদ্দেশ্য। আস্তে করে ছাদের দরজা খুলে পা বাড়াই ছাদের দিকে। দক্ষিণ পাশের ছাদে তাকিয়েই আমি অবাক । আদ্রাফ তাদের চিলেকোঠার ঘরে পড়ছে । সে যে চশমা পড়ে তা আমি জানতামই না যদি এখন তাকে না দেখতাম। আমি একটু সাহস আর একবুক আশা নিয়ে তাকে ডাকি….
”আদ্রাফ ভাই ? ”
আদ্রাফ জানালা দিয়ে ছাদের দিকে তাকায়। অন্ধকারে বোধহয় আমাকে দেখতে পারছে না….আমি আবারো তাকে ডাকি…..
.
” আদ্রাফ ভাই….আমি মাইশা ! ”
.
আদ্রাফ এবার চিলেকোঠার ঘর থেকে বেরিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে আর হুট করেই আমাদের ছাদে লাফ দিয়ে এসে পড়ে । সে যে এভাবে হুট করে এসে পড়বে তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। দু কদম পিছাতে গেলেই সে আমার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
অন্ধকারে আমি তাকে স্পষ্ট দেখতে পারছি না ; কিন্ত যতটুকুই দেখতে পারছি ততটুকুতেই বুঝতে পারছি সে আমার দিকে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে। হয়তো আমাকে এভাবে আসা করেনি সে।
.
” এত রাতে ছাদে কি করো তুমি ? পড়াশুনা নাই? ”(ভ্রু কুচকে)
.
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। আরে আদ্রাফ ভাই ! তোমার জন্যই ছাদে চুপিচুপি এসেছি।
.
” কি হলো বলো?”
.
” ইয়ে…… মানে….চন্দ্র বিলাস করতে এসেছি ! ”
.
”কিন্ত আজ তো অমাবস্যা !”(আদ্রাফ কপাল কুচকে বলে)
এবার কি বলবো বুঝতে পারছি না। হঠাৎ আদ্রাফ ফিক করে হেসে দেয়।
তারপর মিহি কণ্ঠে বলে ,
”অমাবস্যা রাতে ছাদে সুন্দরী বাচ্চাদের একা ঘুরাফেরা করতে হয় না……জ্বীন ধরে নিয়ে যায়…”
.
আমি ছোট ছোট চোখ করে তার দিকে তাকাই। উনি আমায় বাচ্চা বললেন?আমি মুখ ফুলিয়ে বলি,
” আদ্রাফ ভাই , আমি বাচ্চা না ! ক্লাস টেনে পড়ি আমি ।”
,
আমার কথা শুনে সে হাসিতে ফেটে পড়ে । যেন খুব মজার একটা কথা বলেছি আমি। হাসলে তাকে সত্যি মারাত্নক লাগে। আমার কানের কাছে এবার সে ফিসফিসিয়ে বলে…..
”১৮ বছরের আগে সবাই শিশু । আর তুমি তো আমার সুন্দরী শিশু ! ”
আদ্রাফের এ কথাটিতে অন্যরকম মাদকতা ছিল। আমি এবার উজ্জল দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকাই। তার দৃষ্টিভঙ্গি স্বাভাবিক। কিন্ত চোখ প্রকাশ করছে অসীম ভালোবাসা। আচ্ছা আমি যা উনার জন্য ফীল করি উনি কি আমার জন্য তা ফীল করেন না?
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
,
” মাইশা ?”
পেছনে ফিরে মাইশা। নুহাশ (মাইশার বড় ভাই) দাঁড়িয়ে আছে। এই নির্জন রাতে বারান্দায় সে আবারো অতীতের স্মৃতিতে হারিয়ে গিয়েছিলো সে। ভাইকে দেখে ডায়েরীটা বন্ধ করে দেয় মাইশা। নুহাশ তা দেখে হাসে।
.
” সবার কাছ থেকে লুকাতে পারলেও আমার কাছ থেকে এটা লুকাতে পারবা না।…………এখনো মনে পড়ে ওকে?”
চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে ওর। আবারো বাইরে তাকায় সে যাতে ভাইকে ওর চোখের জল না দেখাতে পারে।
নুহাশ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কিছু কিছু জিনিস আছে যা কখনোই মানুষ স্মৃতি থেকে সরাতে চায় না।
” অনেক মনে পড়ে ভাই ওকে ! কেন নিয়তিটা আমাদের সাথে এমন করলো ? আমার কিশোরী জীবনের একটা সুন্দর অধ্যায় ছিলো সেটা। কিন্ত তা এখন কেবল এক বদ্ধ স্মৃতি।”
.
” কোনটা বদ্ধ স্মৃতি?”
.
দুজনেই পেছনে তাকিয়ে দেখে আয়াত দাঁড়িয়ে আছে। মাইশা এবার বিরক্ত হয় ওকে দেখে…
” এভাবে ভাই-বোনের personal কথা কেন শুনছো তুমি ?”
.
”Excuse me ,,,,,personal কথা থাকলে দরজা লাগিয়ে কথা বলো। এভাবে দরজা খুলে কথা বললে সবাই তোমাদের কথা শুনবে। আমি নুহাশ ভাইয়ার কাছে আসছিলাম গাড়ির চাবি নিতে।”
.
”এখনই বাসায় চলে যাবে?”(নুহাশ)
.
”জ্বী ভাইয়া…..সকালে তো আবার আপনার বোনের বডিগার্ড এর duty করতে হবে,…..।”
.
মাইশার মন চাচ্ছে এবার আয়াতের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। আয়াত এবার মাইশার দিকে তাকিয়ে বলে..
” তো বলো কোনটা তোমার বদ্ধ স্মৃতি ?”(ভ্রু নাচিয়ে)
.
মাইশা এবার রেগমেগে বলতে থাকে ,
”আমার crush এর কথা বলছিলাম হয়েছে এবার?”
বলেই সে রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়।
,
আয়াত মলিন কণ্ঠে বিড়বিড়িয়ে বলে,
”সবার উপর ক্রাশ খেলা শুধু আমার মতো innocent handsome ছেলেকে দুদণ্ড পাত্তা দিলানা তুমি মাইশুপাখি ! ”
.
.
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে