রূপের তরী পর্ব-১২ (শেষ পর্ব)

0
2112

#পর্ব_১২(শেষ)
গল্পঃ #রূপের_তরী??
writer: #Ashura_Akter_Anu
……
ড্রয়িংরুমের সোফায় হাতে হাত জড়িয়ে পাশাপাশি বসে আছে রূপ ও তরী। ওদের সামনেই বসে আছে আদ্রিয়ান ও আরিশা। আরিশার চোখে একটু একটু জল। তরী ও রূপের বলা কথাগুলো শুনে গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছে ওর।এতটা ভালো কেউ কাউকে বাসতে পারে?

আরিশার চোখের কোনে জমা বিন্দু পরিমান জলটুকু আদ্রিয়ান হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে মুছে দিল।
তরী সোফা থেকে উঠে গিয়ে শেল্ফে রাখা একটা অ্যালবাম আনলো। সেখানে রূপ ও তরীর আগের কতশত স্মৃতি রয়েছে। শুধু তাই নয়, রূপ তার রুমের দেয়ালে বড় করে তরীর ও নিজের একটা ছবি বড় করে গ্লাস দিয়ে বাধিয়ে রেখেছে।

আরিশা রূপকে নরম গলায় জিজ্ঞেস করল,

–আংকেল! এতটা ভালোবাসা যায় কাউকে?

–কাউকে কতটা ভালোবাসা যায় সেটা আমার জানা নেই তবে,তরীর প্রতি ভালোবাসাটা না কমে শুধু বাড়ছেই।৷ তরীর জন্য আমার ভালোবাসাটা অন্য সবার কাছে অসীম পরিমানে হলেও আমার কাছে সবসময়ই বিন্দু পরিমানই মনে হবে।আমি প্রতিদিন নতুন করে ওকে ভালোবাসি। নতুন করে আমার ওর সংসারটা গোছাই। নতুন করে ওর সাথে নিজেকে অনুভুতিতে ভেজাই।

দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে ছিল। রূপের কথাগুলো শুনে ওর চোখে জল চলে এলো। বাড়িতে প্রথম হবু বউ এসেছে আর এমন সময় এতটা ইমোশনাল সবাই। এটা কি মানায়? তাই সবাইকে উদ্দেশ্য করে তরী বলে ওঠে,

–এই যে, এই প্রথম আরিশা আমাদের বাড়িতে এসেছে আর এমন সময় সবাই এত কান্না কা্না ভাব নিয়ে বসে আছো কেন?চলো চলো,সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো।

তরীর কথা শুনে রূপ উঠে তরীর সাথে ডাইনিং রুমে চলে গেল। ড্রয়িংরুমে বসে আছে আদ্রিয়ান ও আরিশা। আরিশার হাতের ওপর হাত রেখে আদ্রিয়ান বলল,

–সরি,আমি তোমায় সবসময় বকাঝকা করি তাইনা?বাট আই প্রমিস, আজ থেকে তোমায় আর কোন অভিযোগ করার সুযোগ দেবনা। আমার মাকে যেমন করে বাবা ভালোবাসে হয়ত তেমন করে তোমায় ভালোবাসতে পারবোনা, কিন্তু তোমায় সবসময় চেষ্টা করবো খুশি রাখার। তোমার সব ইচ্ছে পুরন করবো।

–তুমি সবসময় যা বলো তা আমার ভালোর জন্যেই তো বলো তাই না? তাহলে এখন সরি কেন বলছো?তবে হ্যা আমার কিছু আব্দার তোমায় রাখতে হবে।

–আবার কি আবদার শুনি?

–এই ধরো, প্রতিদিন বিকেলে আমার জন্যে বেলি ফুলের মালা আনতে হবে। এবং সেটা তুমি নিহের হাতে আমার খোপায় গুজে দেবে।

–হুম,তারপর?

–বৃষ্টি ভেজানো সন্ধ্যায় ঠান্ডা লাগলেও আমার সাথে ছাদে দাড়িয়ে বৃষ্টিবিলাস করতে হবে।

–ওহহহ,তারপর?

–শীতের রাতে আমায় বুকে জড়িয়ে ঘুমোতে হবে।

–ওহহ এই ব্যাপার, তাহলে এসো এখনি ধরি(দুষ্টু হেসে)

–এই না। হয়েছে আর কিছু লাগবেনা। আমার এমন ছোট ছোট আবদার পুরন করলেই হবে।

–এগুলো ছোট ছোট আবদার?আমি হসপিটাল ছে..(আদ্রিয়ানের এ কথায় আরিশা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়,একটু ভয় পেয়ে আদ্রিয়ান বলে)না না, ঠিক আছে ঠিক আছে।
…….
রাত বারোটা বাজতে চলল,রূপ সে কখন বেড়িয়েছে। কোথায় যেন যাবে বলেছে।
আদ্রিয়ান ও তরী ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করছে রূপের জন্য। কিন্তু রূপের আসার নামগন্ধ নেই। আদ্রিয়ান তরীকে ঘুম ঘুম চোখে বলে,

–মা, আমি না হয় ঘুমিয়ে পড়ি। তুমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। অনেক রাত হয়েছে। বাবা আসলে আমি দেখবো। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।

আদ্রিয়ান চলে গেলেও তরী সেখানেই বসে থাকে। একটুপর নিজের ফোন খুজতে থাকে তরী। ফোনটা কাছে না থাকায় রুমে চলে যায় সে। রুমে যাওয়ার পর টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে যেই না রুম ছেড়ে চলে আসবে ঠিক তখনই সে খেয়াল করে বিছানার ওপর প্রতিবারের মতোই আজও গোলাপের একটা বুকে রাখা। তার পাশেই একটা শাড়ী ও একডজন ম্যাচিং চুড়ি। পাশেই একটা কাগজ।
তরী আনমনেই হেসে দেয়। আজ ওদের ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি।

এবং এই দিনটিতে প্রতিবারই রূপ তরীর জন্য সারপ্রাইজ প্লান করে। এবং প্রত্যেকবার সারপ্রাইজটা সেইম হয়।

এবার আর ভুল না করে শাড়িটি পড়েই ব্যালকনিতে যায় সে। সেখানে প্রতিবারের মতই অনেক রকমের ফুল। এবং তার মাঝে আরেকটি কাগজ। যেখানে লেখা,

“আজ তোমায় শাড়ী পড়তে বলবোনা, কারন আমি জানি তুমি শাড়িটি পড়েই এই কাগজটি পড়ছ”তাই দেরী না করে ছাদে চলে এসো”

তরী আবারও হেসে দেয়।

সোজা চলে যায় ছাদে। একই সাজ, একই লাইটিং সবকিছু একইরকম আছে। কিন্তু ভালোবাসাটা একরকম নেই ওদের মাঝে। সেটা যে শতগুন পরিমানে বেড়ে গেছে।

আজ আবারও তরীর পেছনে থেকে হাটু গেড়ে বসে আছে রূপ। আজ আবারও বলতে চায় নিজের মনের কথা। কিন্তু প্রতিবারের মত আজ আর তরী রূপকে বলতে দিলনা। তার আগেই রূপকে জড়িয়ে ধরে বলে ফেলল,

–বলতে হবেনা, আমি তো আপনারই তরী। আমি তো #রূপের_তরী??।যা আগেও ছিলাম, এখন আছি এবং সারাজীবন থাকবো।

রূপ নিজের ভালোবাসার আবেশে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তরীকে।❤
.
.
~~~~সমাপ্ত~~~~
.

.
★এভাবেই অটুট থাকুক রূপ ও তরীর মত মানুষগুলোর ভালোবাসা। ★

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে