রূপের তরী পর্ব-১১

0
1627

#পর্ব_১১
গল্পঃ #রূপের_তরী??
writer: #Ashura_Akter_Akter
…….
(প্রথমেই কিছু কথা বলে নেই,যদিও এখানে আদ্রিয়ান ও আরশের ক্যারেক্টারটা ম্যাটার করেনা।কারন গল্পটা তো রূপ ও তরীকে নিয়ে। তারপর কাল আপনাদের অনেকেরই কমেন্ট দেখলাম,অনেকের কমেন্ট পড়ে আমি এত হেসেছি যে বলে বোঝাতে পারবোনা?।কেউ কেউ নাকি আদ্রিয়ান ও আরশকে গে ভেবেছে। যাই হোক আপনাদের জন্য নামটা চেইন্জ করে দিলাম,যদিও আরশ নামটি মেয়েদের ক্ষেত্রেও রাখা হয় ,তবুও আরশ নামটি পরিবর্তন করে আরিশা রাখা হলো। এবার নিশ্চয়ই আপনাদের নামটি পছন্দ হয়েছে?)

আরিশা চোখ মেলে তরীর দিকে চেয়ে আছে। আরিশার চোখ যেন তরীর মুখটা থেকে সরছেই না। তরী আরিশার হাত ধরে মুখে হাসি নিয়ে,

–কিছু হয়েছে আরিশা?এমনভাবে চেয়ে আছো যে?

–নিশ্চুপ

–আরিশা!

তরী আরিশাকে হালকা ধাক্কা দিলে সে চমকে ওঠে। তারপর তরীকে জিজ্ঞেস করে,

–আন্টি,তাহলে আপনিই সেই #রূপের_তরী?
তরী মুচকি হেসে দিয়ে বলে,

–হ্যাঁ।আদ্রিয়ান তোমায় বলেছে?

–জ্বি আন্টি। কিন্তু

–কিন্তু কি?(ভ্রু কুচকে)

–আপনাদের অ্যাক্সিডেন্টের পর কি ঘটেছিল?

–আচ্ছা সব কিছু কি এয়ারপোর্টে দাড়িয়েই শুনবে?চল বাড়িতে পৌঁছে গল্প করি(মুচকি হেসে)

গাড়ি করে ওরা চৌধুরী ম্যানশনের দিকে রওনা দেয়। রূপ ও তরী আসলে লন্ডনে ছুটি কাটাতে গিয়েছিল। দুজনেরই প্রচুর ব্যাস্ততার মাঝে থাকতে হয়। তাই এবার ছুটিতে আদ্রিয়ান ওদের একমাসের ছুটিতে বাইরে পাঠিয়েছিল।

—————–চলুন আরেকবার অতীতে ফিরে যাই—-

চার মাস পর আজ তরী চোখ খুললো।অ্যাক্সিডেন্টের পর রূপ ও তরী দুজনেই প্রচুর পরিমানে জখম হয়েছিল।অবশ্য রূপের চেয়ে তরীর অবস্থাই বেশি ক্রিটিক্যাল হয়েছিল। কারন রূপ সিটবেল্ট পরলেও তরী পড়েছিল না। এতে করে ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগার পর পরই ওর মাথাটা গাড়ির জানালার পাশে বারি খায়।
দীর্ঘ চার মাস কোমায় থাকার পর আজ একটু হলেও এদিক ওদিক চোখ বুলোচ্ছে।

রূপ একমাসের মাঝেই রিকভার করলেও তরীর চিন্তায় প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ত। তরীর চিন্তায় সারাদিন জায়নামাজে বসে কান্নাকাটি করত। খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করত না।

তরীর জ্ঞান ফিরলে সামনে সবাইকে দেখতে পায়। মা বাবা বোন,শশুড় কিন্তু ওর চোখ খুজছে রূপকে। একজন নার্স রূপকে খবর দেয় তরীর জ্ঞান ফেরার বিষয়ে। ডাক্তারের সাথে তরীর বিষয়েই আলোচনা করছিল সে। এ খবর শুনে দৌড়ে চলে আসে তরীর কাছে।

পাশে বসে তরীর হাতটি নিজের হাতের মাঝে গুটিয়ে নেয় রূপ।কথা না বলে শুধু চোখের জল ঝড়াতে থাকে সে। তরীকে এতদিন এমন অবস্থায় দেখে বাচার ইচ্ছেই হারিয়ে ফেলেছিল রূপ।

কিছুদিন পর হসপিটাল থেকে তরীকে রিলিজ করে দিলে,ওর সমস্ত কিছুর দেখাশোনার জন্য রূপ হসপিটালে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। একমাসের মত সময়ে রূপ তরীর রিকভারির জন্য দিনরাত চব্বিশঘণ্টা ওর সেবায় লেগে থাকে।

একমাস পর তরী অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে পুরোপিরি নয়। কলেজে যেতে চাইলে রূপ বারন করে। তাই বাড়িতেই পড়াশুনা শুরু করে সে।মাথায় ও পায়ে বেশি আঘাত লেগেছিল। তাই পুরোপুরিভাবে সুস্থ হতে একবছরের মত সময় লেগে যায়। এর পরপরই ওর এইচএসসি এক্সামও এগিয়ে আসে।এবং সব পরীক্ষা ভালোভাবেই সম্পন্ন হয় । এতদিনে তরী ও রূপ বন্ধুত্বপূর্ণ হলেও ওদের মাঝে কোন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। রূপ চেয়েছিল তরীর এইচএসসি এক্সাম শেষ করে কোথাও চান্স নিক তারপর সব দেখা যাবে।

সেই হিসেবে ভার্সিটির প্রেপারেশন নিয়ে অ্যাডমিশন দেয় তরী। অ্যাডমিশনের রেজাল্টের দিন দুপুরে তরী বারবার রুমে এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে। কি হবে এই টেনশনে ও ঘেমে উঠেছে,যদিও রুমে এসি চলছে।
একটুপর রিশাদ চৌধুরী গম্ভীর মুখ করে তরীর রুমে আসেন।

–তুমি কি এক্সাম ঠিকমতো দিয়েছিলে?
এ কথা শুনে তরীর টেনশন আরও বেড়ে যায়। না যানি কি হয়েছে।

–কেন বাবা?আমি চান্স পাইনি?(কাদো কাদো মুখে)

–তরীইইই!!(বলে চেচিয়ে ওঠে রিশাদ চৌধুরী) কই রে তোরা, মিস্টির প্যাকেটটা নিয়ে আয়।
তরী চমকে ওঠে, হাসিমুখে বলে,

–বাবা আমি?

–হ্যা মা, তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছ।

–নিশ্চুপ(চুপ করে জলমাখা চোখ নিয়ে বসে পড়ে মেঝেতে)

তরীকে উঠিয়ে মিস্টি খাইয়ে স্নেহের সাথে বুকে জড়িয়ে নেন রিশাদ চৌধুরী।তরী ছলছল চোখ নিয়ে ওনার দিকে তাকায়। আর বলে,
–বাবা?উনি কোথায়?

–কে,রূপ?ও তো সেই কখন বেরিয়েছে। আমাকে বলে যায়নি। তুমি না হয় ওকে ফোন কর। দেখ কোথায় আছে ও।

হাসিমুখে ফোনটা তুলে রূপের নম্বরে কল দেয় তরী। কয়েকবার বাজার পরও যখন ফোন ধরলোনা,তরী রেগে গিয়ে নিজের মোবাইলটা অফ করে রাখলো।

[আরেকটা কথা,এতদিনে তরীর চুল অনেক বর হয়ে গিয়েছে?।তাই চুল নিয়ে আর কোনরকম ঝামেলা নেই, যাই হোক প্রথমে এত বড় একটা কান্ড ঘটিয়ে দিয়েছিলাম ওর সাথে?]

সন্ধ্যা হয়ে গেল, তাও রূপ বাড়ি ফিরলো না, তাই উপায় না পেয়ে ছাদে চলে গেল। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। ছাদের দরজাটা লক করা। সেখান থেকেও মন খারাপ করে রুমে ফিরে এল। কিন্তু রুমে এসে দেখে,কয়েক মুহুর্তের মাঝেই কতটা চেইন্জ। সমস্ত রুমে বেলুন ছড়ানো, ও বিছানার ওপর একটা হালকা গোলাপি রংয়ের শাড়ীএর ওপর গোলাপের বুকে,একটা ভাজ করা কাগজ,এবং সাদা ও গোলাপির মিশ্রনের চুড়ি।
গোলাপ গুলো মুখের কাছে নিয়ে পাপরিগুলোর সাথে একটু ঠোঁট ছুইয়ে নেয় সে। একদম তরতাজা গোলাপ সবগুলো। শাড়ীর পাশে রাখা কাগজটির ভাজ খুলে দেখতে পায়,

“রেগে গেলেন তো, রূপের হলেন”

“দেড়ি না করে ব্যালকনিতে আসুন”

কথাটি পড়ে তরী হেসে দেয়। ধীর পায়ে গিয়ে ব্যালকনিতে গেলে সে দেখে, হাজারো রকমের ফুলের ওপর বিভিন্ন রংয়ের ডিম লাইট জ্বলছে। যাতে সব ফুলের সৌন্দর্য দিগুন পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ওখানে একটা কাগজে লেখা আছে,
“শাড়িটা অন্য কারও জন্য নিয়ে আসিনি,তাই শাড়িটা পরে জলদি ছাদে চলে আসুন”

তরী আর দেরি না করে শাড়ি ও চুড়ি পড়ে হালকা সাজে চলে গেল ছাদে।
ছাদটা ছোট ছোট সাদা, লাল, নীল,হলুদ,সবুজ ডিম লাইটে সাজানো হয়েছে, জায়গায় জায়গায় বড় বড় ফুলের তোরা বসানো রয়েছে, এবং একটা মাঝারি আাকারের চৌবাচ্চা রেখে তাতে ছোট ছোট মোমবাতি ও গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে দেয়া হয়েছে। এককথায় যাকে বলে, ছাদটির সৌন্দর্য হাজারগুন পরিমানে বেড়ে গেছে। তরী ছাদের যে জায়গায় দাড়িয়ে আছে তার পেছনে বসে কেউ একজন বলে ওঠে
“কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শুনো.
,আমি যে তোমায় ভালোবাসি কথাটি সত্য, তবে তোমায় আমি ভালোবাসতে জোর করবোনা,
শুধু একটিবার বলো ভালোবাসি,
আর কোনদিন ভালোবাসতে হবে না,
মরুভূমির তপ্ত বালিতেও পা দিতে হবে না,
আমার জন্য তোমাকে নিশিরাতে পা ভিজাতে হবে না,
আকাশ বাতাস শুনুক তোমার প্রতিধ্বনি,
সবাই জানুক কেউ আমায় ভালোবেসেছিল,
আমার হৃদয়ের ডাকে কেউ সাড়া দিয়েছিল,
শুধু এতুটুকুই চাই আমি,কাছে আসো বা না আসো কোন আপত্তি নেই।
হৃদয়কে না হয় একটিবার হলেও সান্তনা দিতে পারব
কেউ তো অন্তত একটিবার প্রানের ছোয়া দিয়েছিল।
মূহুর্তের মধ্যে শুকিয়ে যাওয়া নদীতে আবার ঝরের বেগে অশ্রুর বন্যা বয়েছিল।
শুধু এতটুকুই চাই আমি এর চেয়ে বেশি চাই না।
হয়তোবা আমি তোমায় আকাশের চাদটি এনে দিতে পারবোনা,
পূর্ব দিকে ওঠা সূর্য টিকেও হাতে তুলে দিতে পারবোনা,
পারবো রজনীর পর রজনী জেগে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে।
তুমি যে একটা পবিত্র ও প্রস্ফুটিত ফুলের মন্জুরি,
তুমি হবে কি এই আপনিময় #রূপের_তরী???
..
কথাগুলো শেষ হতে না হতেই তরী নিজেই বসে পড়ে রূপকে জরিয়ে ধরে বলতে থাকে,

–ভালোবাসি,প্রচুর ভালোবাসি।রজনীর পর রজনী না হয় একসাথে জাগবো,মরুভুমিতে না হয় একসাথে পা দিব,নিশিরাতে চাদের আলোয় দুজনে মিলে চন্দ্রস্নান করবো। রূপের তরী তো অনেক আগে থেকেই ছিলাম, তবে আজকে কথাটির পূর্নতা পেলাম।
জোস্নার আলোয় গা ভিজিয়ে আজ পূর্নতা পেল রূপ ও তরীর ভালোবাসা।।??
.
.
#চলবে___

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে