রবীন্দ্রনাথ পালের সৎকারে আসেনি স্বজনরা।

0
620

রবীন্দ্রনাথ পালের সৎকারে আসেনি স্বজনরা।
এগিয়ে এলেন মহল্লার সংখ্যালঘু মুসলিমগণ।

কোভিট-১৯-এ ইহকাল ত্যাগ করেছেন ভেবে রবীন্দ্রনাথ পালের সৎকারে এগিয়ে আসনি স্বজনরা
এগিয়ে এলেন মুসলিম প্রতিবেশীগণ।

৬২ বছর বয়সী কাঠ ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ পাল। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে স্বজনদের গড়িমসিয়া আর টালবাহানার শেষ নেই। কারো অজুহাত লকডাউন, আবার কারো কোনো খোঁজও নেই। রবীন্দ্রনাথের পালের একমাত্র ছেলে তম্ময় বাবার এমন পরিত্যক্ত অবহেলিত লাশ নিয়ে দিশেহারা। নেই কানো আত্মীয় কিংবা স্বজন প্রতিবেশীর সাড়াটুকুও..!!

ঠিক তখনই এ কাজে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলেন মহল্লার সংখ্যালঘু মুসলিম প্রতিবেশীরা। রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রেন টিউমারের রোগে ভুগছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায় যে ;- ‘দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন টিউমারে ভুগছিলেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার উলুবেড়িয়া পৌরসভার ২২ নাম্বর ওয়ার্ডের কাঠ ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ পাল।’

সারা দুনিয়াজুড়ে করোনা ভাইরাসের তীব্রাঘাতের এমন করুণকালে শনিবার তিনি মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর স্বজনদের সঙ্গে যোগযোগ করেন ছেলে তন্ময়। তবে করোনায় আক্রান্ত হবার ভয়ে করে রবীন্দ্রনাথের লাশ সৎকার করতে আসেনি স্বজনরা। গুটি কয়েক আসতে চাইলেও লকডাউনের অজুহাত দেখিয়েছেন। অর্থাৎ কেউ আসতে মনস্তটুকুও করেননি। দায়িত্ব বুঝা তো দূরের কথা। মনুষত্ব ও?!

কিন্তু তন্ময়ের মহল্লার সংখ্যালঘু মুসলিম প্রতিবেশীরা রবীন্দ্রনাথের লাশ বহন ও সৎকার কাজে এগিয়ে আসেন। তবে আপত্তি অন্য জায়গায়। স্থানীয় শ্মশান কর্তৃপক্ষ লাশ সৎকার করার অনুমতি দিচ্ছিলো না। স্থানীয় দু’টি শ্মশান থেকে রবীন্দ্রনাথের লাশ নিয়ে ফিরে আসতে হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

স্থানীয় প্রশাসন জানান যে, ‘লকডাউনের মাঝে কোনো এলাকাতেই মেডিকেল ডেথ সার্টিফিকেট দেখালে লাশ সৎকারে শ্মশান কর্তৃপক্ষ বাধা দিতে পারে না। কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ব্যবস্থা।’ দিশেহারা তন্ময় ও মুসলিম প্রতিবেশীগণ। কী যে করে তারা..! অবশেষে
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হিন্দু রীতি মেনে মুসলিম প্রতিবেশীদের নিয়ে বাবার লাশ সৎকার করেন ছেলে তন্ময়।

খুব ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তন্ময় বলল, ‘দুর্দিনে মানুষ চেনা যায়। ছোটবেলায় পড়েছিলাম, শেষ দিনের সঙ্গীই বন্ধু হয়। প্রতিবেশী মুসলিমরা হয়তো আত্মীয় নন। তবে নিজের আত্মীয়দের থেকে অনেক কাছের মনে হয়েছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করা যাবে না।’

সৎকারে অংশ নেয়া মুসলিমরা বলেন, ‘এত প্রশংসার কারণ দেখছি না। প্রতিবেশি হিসেবে এটা আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য। বিপদে আপদের মানুষে মানুষের কাছে এগিয়ে আসবে, পাশে থাকবে, এই তো। আর বড় কথা হল, এক পাড়ার মানুষ হিসেবে সম্প্রদায় ভুলে বিপদে একে অপরে কাছে থাকাই আমাদের দায়িত্ব।’

নতুন কোনো কেচ্ছা নয়। মুসলিম সমাজের বাস্তবতা এসব! মানবাতা- আত্মীয়তা, সামাজিক-পারিবারিক- আন্তর্জাতিক আধুনিক-বিজ্ঞানীক সবই ইসলামে কেন্দ্রভক্ত। ইসলাম মানবতার কথা বলে। ইসলাম আমার, মুসলিম আমি চির উন্নত মম শির।

লেখকঃ কাজী তানভীর
রচনাকালঃ ৫-৪-২০২০
হাটহাজারী,চট্টগ্রাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে