রঙ তুলির প্রেয়সী ১১.

0
2536

রঙ তুলির প্রেয়সী
১১.

মাহির হাতে ছবিটা দেখে অবাক হয়ে তাকালো জাওয়াদ। তারপর হেসে দিলো। মাহি নাক ফুলিয়ে বললো, ‘হাসছিস কেন তুই? আমিতো তোর একটা ছবি এঁকেছি। তুই জীবনেও আমার এঁকেছিস?’

জাওয়াদ নিজের ছবি আঁকা চালাতে চালাতে বললো, ‘আমার কী ঠেকা লেগেছে? তোর ছবি আঁকার জন্য ছবি আঁকা শিখলাম?’ বলে ছবির ফিনিশিং দিলো জাওয়াদ। একটানা দু’দিন থেকে ছবিটা আঁকছিলো সে।

‘ওহ, তাই বল। আমি কে তুই আমার ছবি আঁকবি? থাক। এটা রাখ, আমার পক্ষ থেকে উপহার। অনেক যত্ন করে এঁকেছি।’ বলে হাতের ছবিটা চেয়ারের ওপর রেখে ঘুরে দাঁড়ায় মাহি। চোখ ছলছল করছে তার। পা বাড়ালো চলে যাওয়ার জন্য আর তখনই পেছন থেকে জাওয়াদ ওর একটা হাত চেপে ধরে। মাহি ফোঁস করে পেছনে না তাকিয়েই বলে, ‘ছাড় বলছি। ছাড়।’

‘কী বললি তুই? তুই কেউ না?’

ফিরে তাকায় মাহি। জাওয়াদের চোখে চোখ রেখে বলে, ‘কে হই আমি তোর?’

জাওয়াদ নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। আস্তে আস্তে টেনে মাহিকে নিজের কাছে এনে দাঁড় করায়। নিজের মুখোমুখি। তারপর ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তুই কেউ না?’

মাহির স্থির দৃষ্টি তখনও জাওয়াদের চোখের ওপর। সে শীতল কণ্ঠে বললো, ‘কে?’

জাওয়াদ কিছু না বলে মাহির হাত ছেড়ে দেয়। তারপর মাহির পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাহির দু’বাহু ধরে তাকে নিয়ে সেই ছবিটির সামনে দাঁড় করায় যেটা সে আঁকছিলো। মাহির ছবি, বাতাসে মাহির চুল উড়ছে আর সে হাসছে প্রাণখোলা হাসি। ছবিটির সামনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো মাহি। ছলছল করা নোনা জল টুপ করে গাল বেয়ে পড়লো তার। সে ফিরে তাকায় জাওয়াদের দিকে। জাওয়াদ দু’হাতে মাহির মুখটা উঁচু করে চোখে চোখ রেখে বললো, ‘তুই আমার প্রেয়সী। আমার রঙ তুলির প্রেয়সী!’ বলে মাহির কপালে একটা নিবিড় চুমু দিলো জাওয়াদ। আবেশে চোখ বুজে এলো মাহির। দু’হাতে আঁকড়ে ধরলো সে জাওয়াদকে। কিছুক্ষণ ওভাবে কেটে যাওয়ার পর মাহি জাওয়াদকে ছেড়ে দিলো। তারপর নিজের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এটা কী করছিস? ছবি আঁকার সময় একদম গোসল করে ফেলিস রঙ দিয়ে। এখন আমার কাপড়চোপড় ও খারাপ করে দিলি!’

‘যাক বাবা! তুই-ই তো জড়িয়ে ধরলি। আমি ধরেছি?’ কপাল কুঁচকে বললো জাওয়াদ।

মাহি বললো, ‘তাও তো আমি ধরেছি। তুই তো ধরিসওনা।’

আবারও ঠোঁট কামড়ে হাসে জাওয়াদ। বলে, ‘ধরার কথা ভেবে বলছিস? আমি ধরলে শুধুই ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবোনা। অনেক কিছু করেও ফেলতে পারি!’ বলে চোখ টিপ দিলো সে। মাহি লজ্জা পেলো। ঘুরে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো, ‘ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি। সবাই তো শুয়ে পড়েছে, ভেবেছিলাম শুয়ে পড়বো। এই রাত বিরেতে আমাকে গোসল করাচ্ছিস।’

জাওয়াদও হেসে ভেতরে গেলো ফ্রেশ হতে। চটপট শাওয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। দেখলো পাশের বারান্দায় মাহি চুল থেকে তোয়ালে খুলে দড়িতে মেলে দিচ্ছে। হালকা আলোয় দেখলো জাওয়াদ, মাহি একটা টাইটস আর সাদা টি-শার্ট পরে আছে। হাত উচু করে তোয়ালে মেলে দেয়ার সময় তার টি-শার্ট উঁচু হয়ে ফর্সা পেট খানিক উন্মুক্ত হয়েগেলো। চেয়ে থাকতে পারেনা জাওয়াদ, চোখ ফিরিয়ে নিলো। বুকের ভেতর কেমন যেন হাহাকার করছে তার। দুইটা মাস দূরে থাকতে হবে ভাবতেই বুক পুড়ে, খুব পুড়ে! এমন সময় পেছনে মাহির উপস্থিতি টের পায় জাওয়াদ। আস্তে করে বলে, ‘এসেছিস!’

মাহি নিঃশব্দে এসে দাঁড়ায় জাওয়াদের পেছনে। তারপর হুট করে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রাখে। মাহির স্পর্শে সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ খেলে জাওয়াদের। সে দুরুদুরু বুকে মাহিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। মাহি আরো জোরে আঁকড়ে ধরে। জাওয়াদ খেয়াল করে তার পিঠের ওপর শার্ট ভিজছে। মাহি কাঁদছে! চট করে পেছন ফিরে মাহির মুখ দুহাতে ধরে জাওয়াদ। ব্যস্ত হয়ে বলে, ‘এই কাঁদছিস কেন তুই? কিজন্য?’

‘আমাদের আর দেখা হবে জাওয়াদ?’ ভেজা চোখে বললো মাহি।

জাওয়াদ অবাক স্বরে বললো, ‘আশ্চর্য! দেখা কেন হবেনা? আমি একেবারে তো যাচ্ছিনা। মাত্র দুমাসের ট্রিপ রে পাগলি!’

‘কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি আর এভাবে তোকে জড়িয়ে ধরতে পারবোনা।’ বলে জাওয়াদকে আঁকড়ে ধরে মাহি।

জাওয়াদ মাহিকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলে, ‘পাগলামি কথাবার্তা ছাড়। এতো কান্না শিখলি কোত্থেকে?’

মাহি মাথা তুলে জাওয়াদের দিকে তাকায়। দু’হাতে ভালো করে চোখ মুছে। তারপর জাওয়াদের দু’পায়ের উপর উঠে দাঁড়ায়। জাওয়াদের খুব কাছে গিয়ে বলে, ‘আমাকে আদর করবি? হতে পারে এরপরে আর সুযোগ পাবিনা…’

জাওয়াদের বুকটা কেঁপে ওঠে। মাহিটাও না! এমন এক একটা কথা বলে। জাওয়াদ ঢোঁক গিলে ধরা গলায় বলে, ‘মাহি পাগলামির সীমা আছে। এসব কেমন কথা? আমি কী হারিয়ে যাচ্ছি?’

‘আমিতো হারিয়ে যেতে পারি জাওয়াদ…’ মাহির কন্ঠ খুব শীতল শোনালো। এতোটাই শীতল যে জাওয়াদের বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠলো। জাওয়াদ ধমকের স্বরে কিছু বলতে যাবে তখনই মাহি একটা আঙ্গুল জাওয়াদের ঠোঁটের ওপর চেপে ধরে বললো, ‘একটা চুমু দিবি? অনেকক্ষণ ধরে? সত্যি বলছি, আর কিন্তু সুযোগ পাবিনা…’

জাওয়াদ মাহির ঠোঁটের নিচের সুন্দর তিলটায় হালকাভাবে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, ‘মাহি এমন করে কেন বলছিস তুই?’

‘উফ জাওয়াদ! বড্ড কথা বলিস!’ বলে হুট করে নিজের ঠোঁট জাওয়াদের ঠোঁটে ছোঁয়ায় মাহি। হুট করে জাওয়াদ বুঝতে না পারলেও পরে নিবিড়ভাবে মাহিকে নিজের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে চুমু দেয় জাওয়াদ, মাহির কথামতো… অনেকক্ষণ ধরে। তারপর আরো অনেক অনেক চুমু দিয়েছিলো জাওয়াদ তার প্রেয়সীর গালে, গলায়, ঘাড়ে। জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ ভেজা চুলের মাতাল করা ঘ্রাণ নিয়েছিলো। সেদিনই সে পেয়েছিলো প্রেয়সীর শেষ ছোঁয়া। প্রেয়সীর ঠোঁটে শেষ বারের মতো ছোঁয়াতে পেরেছিলো নিজের ঠোঁট! শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরেছিলো বুকে…
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
দরজায় ঠকঠক আওয়াজে ঘোর কাটে জাওয়াদের। চোখ খুলে তাকায় সে। টের পায় তার চোখ বেয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়েছে। হাসলো জাওয়াদ। অনেকদিন পর জল গড়ালো কিনা! আবার ঠকঠক আওয়াজ হলো দরজায়। সময় দেখে নিলো জাওয়াদ, রাত সাড়ে ন’টা বাজে। এতো সময় কেটে গেল! জাওয়াদ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো তিথি দাঁড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে। সাদা রঙের টপস আর নীল স্কার্ট পরা। চুলগুলো খোঁপা করা। গলায় নীল স্কার্ফ পেঁচানো। তিথির মুখের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতরটা যেন তোলপাড় করতে লাগলো জাওয়াদের। কী হলো হঠাৎ করে ওর? এমন তো ও ছিলোনা! এই মেয়েটাকে দেখলে ওর এমন হচ্ছে কেন? কেন ইচ্ছে করছে ওকে…

‘কী ব্যাপার? শুনতে পাচ্ছেন না?’ তুড়ি বাজায় জাওয়াদের চোখের সামনে তিথি। জাওয়াদের হুঁশ আসে। তিথি কী ওকে কিছু বলছিলো?

‘হ-হ্যাঁ?’ তিথির ঠোঁটের নিচের তিলটা একবার দেখে জাওয়াদ। তারপর আবার তাকায় তিথির চোখের দিকে।

‘হ্যাঁ হ্যাঁ কী? খেতে যাবেন না? সবাই এতোবার ডেকে গেল!’

‘কখন?’ অবাক হয় জাওয়াদ।

‘ওমা! সেই কখন থেকে!’

‘আমি খাবোনা। বলে দিও, ক্ষিধে নেই।’ বলে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তিথিকে দেখতে লাগলো জাওয়াদ। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ঘরের ভেতরে এনে বসিয়ে রেখে দেখতে থাকুক।

‘কেন? মোটা হয়ে যাচ্ছেন নাকি? ডায়েট?’

জাওয়াদের যেন কানে যাচ্ছেনা কথা। সে দেখছে তিথিকে। মন দিয়ে। তিথির যেন কেমন লাগলো। অদ্ভুত এক চাহনি জাওয়াদের। তিথির বুকটা কেমন করে উঠলো। এভাবে কেন তাকিয়ে আছে? সে হুট করে বলে বসলো, ‘এভাবে তাকাচ্ছেন কেন আমার দিকে?’

তিথি কথাটা বলামাত্র জাওয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেললো। আস্তে করে বিড়বিড় করলো, ‘আমার সামনে এসোনা… এসোনা…’

‘হ্যাঁ?’ তিথি বুঝতে পারলোনা জাওয়াদ কী বললো। ‘কী বলছেন?’ বলে হাত নাড়লো জাওয়াদের সামনে।

‘আমি খাবোনা। আমার ক্ষিধে নেই।’ বলেই তিথির মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিলো জাওয়াদ। তিথি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। কী হলো? হুট করে এমন করলো কেন? তিথি ভেংচি দিলো। নিজে নিজেই জোরে জোরে বললো, ‘ভেবেছিলাম আর মোগ্যাম্বো বলবোনা। কিন্তু তুমি আসলেই মোগ্যাম্বো। এটা ছাড়া আর কিছুই যায়না তোমার সাথে। খাইওনা ভাত। একদিন না খেলে কিছু হবেনা, যেই বডি তোমার! হুহ!’ বলেই গটগট করে হেটে চলে গেল তিথি। দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো জাওয়াদ। তিথির বলা কথাগুলো শুনেছে সে। শব্দ করে হেসে দিলো জাওয়াদ। তারপর নিজের চুলে হাত বুলালো। ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসলো। আচ্ছা, মাহির বলা কথাটাই কী সত্যি হলো? এই দু’বছর পর?
_________________

‘জাওয়াদ খাবেনা?’ টেবিলে বসতে বসতে বললো রিয়াদ।

মুনতাহা সবার প্লেটে খাবার তুলে দিতে দিতে বললেন, ‘ক্ষিধে নেই বললো। ডাকলাম শুনলোও না। পরে নাকি তিথিকে বলেছে খাবেনা।’

‘কী হলো হঠাৎ। আমি দেখে আসি।’ বলে উঠতে লাগলো রিয়াদ। হেলাল আহমেদ আঁটকে দিয়ে বললেন, ‘থাকুক। একা থাকতে দাও। ওর ক্ষিধে পেলে নিজেই এসে খেয়ে নেবে।’

আদিয়া বললো, ‘আজকে কফিও চায়নি।’

‘না চাক। খাও তোমরা। ওর সবকিছুই তো জানো।’ বললেন হেলাল আহমেদ। কেউ আর কোনো কথা বললোনা। তিথি চুপচাপ খাচ্ছে আর ভাবছে, কী অদ্ভুত ছেলেটা! এক এক সময় এক এক রকম!
______________

জাওয়াদ নিজেকে আঁটকে রাখতে পারছেনা। বারবার সময় দেখছে। ঘড়ির কাঁটা রাত দু’টো ছুঁইছুঁই। রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য বারবার দরজার কাছে গিয়ে ফিরে আসছে জাওয়াদ। দরজা খোলা পাবে কি? অনেক দোনা মোনা করে দরজা খুলে বাইরে বেরোলো জাওয়াদ। তারপর ভালো করে চারিদিকে দেখলো। নাহ, কেউ নেই। ধীর পায়ে হেঁটে তিথির রুমের সামনে গেল সে। বুকটা কাঁপছে। কিন্তু নিজেকে সামলাতে কষ্ট হচ্ছে আজ তার। মরে যাচ্ছে যেন সে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুলতে গেল জাওয়াদ। অবাক হলো, দরজা খোলা। এই মেয়ে পাগল নাকি? দরজা খুলে ঘুমায়! দরজা খুলে আরেক দফা অবাক হলো জাওয়াদ। লাইট জ্বালানো। লাইট জ্বালিয়ে কেউ ঘুমায়? হেসে দিলো জাওয়াদ। তাকিয়ে দেখলো দরজার দিকে মুখ করে কাত হয়ে শুয়ে আছে তিথি। গায়ে একটা চাদর জড়ানো। ঘুমোচ্ছে গভীরভাবে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে তিথির ঠিক সামনে হাঁটুগেড়ে বসলো জাওয়াদ। খুব কাছ থেকে দেখতে লাগলো তিথিকে সে। যতোই দেখছে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে খুব সাবধানে একবার ছুঁয়ে দিলো সে তিথির ঠোঁটের নিচের তিলটাকে। খুব, খুব ইচ্ছে করছে এই কপালটায় একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিতে। এতোদিন পরে কেনো এই মেয়েটার জন্য এমন করছে জাওয়াদ সে জানেনা। সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে তার। কী হবে না হবে কিছু না ভেবেই খুব সাবধানে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায় সে তিথির কপালে। তিথির ঘুম তখনও ভাঙ্গেনি। হাসে জাওয়াদ। এতো গভীর ঘুম! কোলে করে তুলে নিয়ে গেলে কেমন হয়? পরক্ষণেই সে নিজের ভাবনার জন্য নিজেই বোকা বনে যায়। ইশ, সারারাত এভাবে এখানে বসে থেকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। জাওয়াদ একবার নিজের বুকের ওপর শার্ট খামচে ধরে। এখানে থাকলে আরো অনেক নিষিদ্ধ ইচ্ছারা জাগবে। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে। কিন্তু সে যেতে পারছেনা, এখানে এই মেয়েটার কাছে থাকতে তার ভালো লাগছে। ওকে দেখতে তার ভালো লাগছে। মনের সাথে যুদ্ধ করে উঠে দাঁড়ায় জাওয়াদ। আরেকবার তিথিকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে ঘুরে বেরিয়ে গেল। সাবধানে দরজা লাগিয়ে পা বাড়ায় নিজের রুমের দিকে।

দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসলো তিথি। সারা শরীর কাঁপছে তার। একটু বেশিই কাপছে। হাসফাস করছে। শরীরের ওপর থেকে টেনে চাদরটা সরালো সে। উঠে গিয়ে এক গ্লাস ভর্তি জল ঢকঢক করে গিললো। তারপর ফ্লোরে বসেই হা করে নিশ্বাস নিতে লাগলো জোরে জোরে। ঢোঁক গিললো বার পাঁচেক। এটা সত্যি ছিলো? ও এসেছিলো? কপালে… চোখ দিয়ে জল গড়ায় তিথির। ভাগ্যিস ভুল করে লাইট জ্বালানো অবস্থায়ই ঘুমিয়ে গেছিলো। নয়তো অন্ধকারে না চিনে অনেক জোরে চিৎকার দিতো তিথি। দরজা খোলার শব্দ শুনেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। জাওয়াদকে দেখে একেবারে রোবট হয়ে শুয়ে ঘুমের ভান করছিলো। তিথির বুক কাঁপতে থাকলো। কী করবে সে এখন? কী করলে এখন তার শান্তি লাগবে? বড্ড অশান্ত হয়ে আছে মনটা। কেন যেন মনে হচ্ছে এক্ষুণি সে জ্ঞান হারবে… পৃথিবীটা যেন ঘুরছে… কী চলছে জাওয়াদের মনে? তিথির মতোই কিছু কি সে ভাবছে?
___________________

আজ জাওয়াদ ঘুমোবেনা। আজ তার অনেক কাজ। অনেক বড় কাজ। আলমারি থেকে সেই জিনিসের ব্যাগটা বের করতে গিয়ে মাহির ডায়েরিটা চোখে পড়ে জাওয়াদের। ডায়েরিটা হাতে নিলো জাওয়াদ। তারপর ত্রস্ত পায়ে বিছানায় গিয়ে বসলো। আজ আবার পড়বে সে এই ডায়েরিটা। শেষ বারের জন্য। হয়তো কাঁদবেও এটা পড়ে, শেষ বারের জন্য।
__________

চলবে…….
@ফারজানা আহমেদ
গ্রুপ লিংক- https://www.facebook.com/groups/831432960641690/?ref=share

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে