মেঘ বিয়োগের মৌসুম পর্ব-১৬

0
406

#মেঘ_বিয়োগের_মৌসুম
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৬

সেদিন প্রাক্তন স্বামীর কল আর আজ প্রাক্তন ননদের কল পেয়ে কোনো এক অজানা ভয়ে বুকটা কাঁপছে বেলার। অতীতের সবকিছু শেষ করে এসেছে সে তবুও যেন ওরা পিছু ছাড়ছে না। তবে কি সিমটা দেশ ছাড়ার আগেই আরও একবার চেঞ্জ করতে হবে!

বাহিরে এসে কলটা রিসিভ করে বেলা। ওপাশ থেকে শান্তশিষ্ট গলায় রিমি বলে ওঠে,” কেমন আছেন, ভাবি?”

বেলা এপাশ ওপাশ তাকিয়ে দেখে বলে,” কল দিয়েছেন কেন?”
” আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করল।”
” আমি এত ভালো মানুষ হলাম কবে থেকে? আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে! আমি কি ভুল শুনছি?”
” প্লিজ ভাবি।”
” নতুন ভাবি ভালোবাসছে না? এতো ভালোবাসায়, অপছন্দ করা পুরোনো প্রাক্তন ভাবিকে মনে পড়ছে? আমার মতোই ভালোবাসছে সে? সবাই তো নিশ্চয়ই খুব ভালো আছেন! এই ভালো সময়ে খারাপ মানুষকে মনে করার কারণ কী? দেখাতে চাইছেন যে আপনারা খুব ভালো আছেন?”
” ভাবি ভুল বুঝছেন।”
” সঠিক আমি তোমাদের আর কোনোদিনই ভাবতে পারব না রিমি। আমাকে নেক্সট টাইম কল করিও না। কখনোও না।”
” আপনাকে ছাড়া আমরা ভালো নেই৷ সবকিছু অন্যরকম হয়ে গেছে। কোনোকিছু আমাদের ইচ্ছেমতো হয় না।”
” সবকিছুর ভার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। বিচার মানুষ করলে তো ফাঁকফোকর দিয়ে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু আল্লাহ ছেড়ে দেন না। গুণে গুণে সবকিছুর ফল তোমরা পাবে৷ ”
” পাচ্ছি তো ভাবি। আপনি কি ফিরে আসতে পারবেন? আমি নিজে ভাইয়ার সাথে কথা বলব।”
” একদিন নতুন ভাবির জন্য তুমি কতকিছু করেছিলে। কত আনন্দ করছিলে আমি চলে আসব শুনে, আহা! আর আজ কি না আমাকে ফিরতে বলছ? সবকিছু এতো সহজ ভাবো কেন? সবকিছু এতো সহজ ভাবলে পস্তাতে হবে খুব।”
” উনি কোনো কাজ করে না বাসার সব কাজ আমাকে আর আম্মাকে করতে হয়। তবুও সারাক্ষণ খারাপ ব্যবহার করতেই থাকে৷ ভাইয়াকেও ছাড়ে না। কথায় কথায় বলে,” আমাকে প্রথমজন পাওনি, আমি এখানেই মাটি কাঁমড়ে থাকব, সবাইকে দেখে নেব।”

বেলা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে। এসব তার একদমই শুনতে ইচ্ছে করছে না। ওপাশে রিমি কথা বলেই যাচ্ছে। অতীত বারবার ফিরে আসতে চাইছে যেটা বেলার কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না।

বেলা রিমিকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,” শোনো রিমি, তোমাদের যা ইচ্ছে হয় তোমরা করো তবে এভাবে আমাকে আর কখনো কল করবে না। আমি ভাই কোনোভাবেই চাই না যে আমার অতীত আমার কাছে ফিরে আসুক৷ যে থুথু ফেলেছি সেটা আর আমি কোনোভাবেই ফিরিয়ে নিতে পারব না। তোমরা দুই ভাইবোন আমাকে ডিস্টার্ব করা বন্ধ করো। এরপর থেকে আমার নাগাল এমনিতেও পাবে না৷ আমি আজই সিমচেঞ্জ করব। ভুলেও আমার দিকে পা বাড়াবে না তোমরা। রাখছি।”
” ভাবি…”
” আমি তোমার ভাবি নই রিমি।”
” আমাকে ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?”
” সবাইকে ক্ষমা করতে নেই। সবাইকে ক্ষমা করে দিলে নিজের ওপর অবিচার করা হবে। ”
___

বেলা রুমে এসে দেখে ওয়াহাজ চুপচাপ বসে আছে। মৌ-এর বাবা মুহিব আহসান বারান্দায় দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছেন। বেলা ধীরপায়ে ওয়াহাজের পাশে গিয়ে বসে।

বেলাকে দেখেই ওয়াহাজ বলে,” এতক্ষণ লাগলো আসতে? আমাকে একা রেখে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না ওয়াজিহা।”
” এসব ছাড়ো, আঙ্কেল কি বলল? তোমার শ্বশুর হতে রাজি হয়েছে?”

ওয়াহাজ বারান্দায় তাকিয়ে ইশারা করে বলে,” অন্যকারো শ্বশুর হবে না জন্য কল করে মৌকে যারা দেখতে আসতে চেয়েছিল তাদের নিষেধ করে দিচ্ছে। প্রথমদিকে একটা ধমক দিয়েছে।”

বেলা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ” কাকে? তোমাকে?”
” হ্যাঁ। ”
” আল্লাহ! কেন?”
” আজকে বলতে এসেছি তাই। তুমি চলে যাওয়ার পরে আমি চুপ করে বসে আছি আর উনি বলে উঠলেন- ছেলেদের কেন মুখ ফুটবে না? আজকের দিনে চিপায় পড়ে বলতে আসছ? এর আগে কী করছ? এমন তো না যে আমার মেয়েকে আজই পছন্দ হয়েছে তোমার। ”

কিছুক্ষণ পর মুহিব আহসান বারান্দা থেকে রুমে এলেন। ফোনটা পাঞ্জাবির পকেটে রাখতে রাখতে বললেন,” নেহাৎ তুমি আমার ভীষণ পছন্দের জন্য আমার আরেক রূপ দেখলে না। তুমি ছেলে খারাপ হইলে সোজা আমার মেয়ের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার দায়ে বাসা থেকে বের করে দিতাম।”

ওয়াহাজ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,” বিয়ে হলে এমনিতেও আপনার বাসায় থাকব না আঙ্কেল।”
” কী বলছ”
” বউ নিয়ে শ্বশুর বাড়ি থাকব,ঝগড়া লাগলে আপনার মেয়ে বাপের বাড়ি যেতে পারবে না। আমি তার রাগ ভাঙিয়ে বাসায়ও নিয়ে আসতে পারব না। কী একটা মুশকিল হয়ে যাবে না বলেন?”
” আমি বিয়েতে রাজিই হলাম না আর তুমি বিয়ের আগেই ঝগড়ার কথা বলছ? কী ছেলে তুমি!”

পাশে থেকে বেলা বলে ওঠে,” আঙ্কেল আপনি নিশ্চয়ই বিয়ের আগে ঝগড়ার কথা বলেননি তাই বলে কি আন্টির সাথে আপনার ঝগড়া হয় না? ভাইয়া তো ঠিকই বলেছে, রাগ করে বাপের বাড়ি না গেলে কি ভালো লাগে নাকি!”

” তোমাদের চুপচাপ স্বভাবের বাহিরে কথায় হারানোর আরেকটা স্বভাব আছে সেটা জানতাম না তো!” মুহিব আহসান কথাটা বলেই নিজের জায়গায় বসে মৌকে ডাকলেন তার ইচ্ছে আছে কি না।

মৌকে ডাকার সাথে সাথে মৌ নিজের রুম থেকে বের হয়ে বাবার কাছে আসবে তখনই ফাহমিদা বেগম এগিয়ে এসে মেয়েকে বলেন,” কী হচ্ছে ভেতরে বল তো? কী নিয়ে কথা বলছে এতক্ষণ ওরা? তোর বাবা বাহিরেও আসছে না৷ আমার তো ওদিকে যেতেই ভয় করছে। চা করেছি, নিয়ে যা তুই। ”
” ঠিক আছে, দাও।”

মৌ চা নিয়ে দরজায় নক করতেই মুহিব আহসান ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন।
সবাইকে চা দিয়ে দাঁড়াতেই মুহিব আহসান মেয়েকে প্রশ্ন করেন,” ওয়াহাজকে তোমার কেমন লাগে?”

বাবার এমন প্রশ্নে বেশ ঘাবড়ে যায় মৌ। বেলার দিকে অসহায় চোখে তাকায় সে। বেলা মুচকি হেসে মাথা উপর নিচ ঝাঁকিয়ে ভালো খবরের আভাস দেয়।

মৌকে চুপ থাকতে দেখে মুহিব আহসান আবার বলে ওঠেন,” ওয়াহাজ ছেলে হিসেবে খারাপ না। তোমারও বিয়ে আসছে অনেকদিন ধরেই। আমি তোমার জন্য ওয়াহাজকে পছন্দ করেছি। আমার মনে হয় তোমার কোনো আপত্তি থাকার কথা না তবুও যদি কিছু বলার থাকে তাহলে বলতে পারো।”

মৌ মাথা নিচু করে বলে,” বাবা, তুমি যা ভালো মনে করবা সেটাই হবে। আমার কোনোকিছুতেই আপত্তি নেই।”

বেলা সহাস্যমুখে বলে ওঠে,” আজ যাদের আসার কথা ছিল ওই পক্ষের ছেলের সাথে বিয়ে হলেও আপত্তি নেই?”

মৌ কিছু না বলে বাবার দিকে তাকিয়ে আবার বেলার দিকে তাকায়৷ মুখে কিছু বলতে না পারলেও চোখ দিয়ে যেন অনেক কিছু বুঝিয়ে দিচ্ছে। যার অর্থ – এখনই চুপ করবে, আর একটা কথাও না। বেশি কথা বললে অবস্থা খারাপ করে দেব।
_____

ওয়াহাজ সকাল সকাল কোনো একটা কাজে বেরিয়েছে। নাস্তা করার পর বেলাকে বলে বেরিয়েছে সে। এদিকে মৌ বাসায় হাজির আজ সে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাবে। অনেক বলে ফারাজকে রাজি করিয়েছে সে। এ বাসায় এসে দেখে ওয়াহাজ বাসায় নেই৷ ফারাজকে বাহিরে বসিয়ে রেখে মৌ বেলার রুমে চলে যায়।

” তোমার ভাইয়া তো বাহিরেই আছে। উনাকে কল দিয়ে ডেকে নেব, চলো। তুমি না গেলে আমার একদমই ভালো লাগবে না। ভাইয়াও কিছু বুঝবে না কেনাকাটায়৷ সেফটির জন্য তাকে নিয়ে যাচ্ছি।”

বেলা, ওয়াহাজের ফোনে কল দিতে দিতে বলে,” ভাইয়া কল রিসিভ করছে না। তাকে না জানিয়ে বাহিরে যাই কীভাবে?”
” ফারাজ ভাইয়া তো আছে। কোনো সমস্যা হবে না। ”
” কিন্তু…”

” উনাকে বল, আমার সাথে গেলে আমি সেটার সুযোগ নিয়ে উনাকে বিয়ের প্রোপোজাল দেব না বা জোর করে কাজী অফিসে নিয়ে যাব না। আমাকে যে ধরণের ছেলে ভাবছে আমি সেরকম ছেলে নই। ”

দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলে ফারাজ। মৌ আর বেলা একসাথে বাহিরে তাকায়।

বেলা আমতা আমতা করে বলে,” আপনি এরকম করবেন আমি সেটা কখন বললাম?”
” তাহলে তৈরি হয়ে নিন। আমি সুযোগকে কাজে লাগাবো না।”

মৌ পর্যায়ক্রমে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,” কী চলছে তোদের মাঝে বল তো?”

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে