মিসেস চৌধুরী পর্ব-০৯

0
1759

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_09
#Writer_NOVA

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে ব্যস্ত আকশি।আজকাল তার কিছুই ভালো লাগে না।অবশ্য দুদিন আগে ফিহাকে দেখার পর থেকেই এসব সমস্যা হচ্ছে। কেন জানি খুব শূন্য শূন্য লাগে জীবনটা।পড়াশোনায় ভীষণ ভালো ছিলো আকশি।সবসময় শুধু পড়া আর পড়া।যার কারণে কখনও মেয়েদের সময় দেওয়া তো দূরে থাক তাকানোর সময়টুকু হয়নি।ওর সমাবয়সীরা যখন মাঠে ফুটবল খেলছে কিংবা কোথাও বসে আড্ডা দিচ্ছে সেখানে আকশি পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে আছে। যার কারণে ওর বন্ধুও তেমন ছিলো না।নবম শ্রেণিতে আদিয়াতের সাথে পরিচয়। আজও সেই বন্ধুত্ব অটুট আছে।বন্ধুর মতো বন্ধু একটা হলেই যথেষ্ট। দশটার প্রয়োজন নেই।

সবকিছুতে আকশির এখন ফিহাকে মনে পরে।হঠাৎ করে ফিহার হাসি হাসি মুখ মনে পরে যায়।ওর চাহনি,কথা বলার স্টাইল, মায়াবী চেহারা, সেই ইনসেন্ট ফেস সবকিছু যেনো ওর চোখে ভাসছে।নিজের মাথার পেছনের চুলগুলো মুঠ করে ধরে কয়েকটা ঝারা মারলো। তারপর মুচকি হাসলো।

আকশিঃ আমি বুঝতে পারছি না বারবার আমার ঐ মেয়েটার কথা মনে পরছে কেন?সবচেয়ে সুন্দর ছিলো ওর হাসিটা।আমি বোধ হয় পাগল হয়ে যাবো।কি ভাবছি আমি?ভাবনায়, কল্পনায়,স্বপ্নে সব জায়গায় শুধু ঐ মেয়েটা।ওর হাসির ঝংকার এখনো আমার কানে বাজছে।আমি যে কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছি না।এবার মনে হয় সত্যি কোন মেয়ের প্রেমে পরলাম।তাও মেয়েটার হাসি দেখে।

পাগলীরে তোর মুখের হাসিতে,
পরবো আমি প্রেমের ফাঁসিতে।
তুই কি আসবি দেখিতে??
আমায় একটু ভালবাসিতে।
পাগল করা তোর ঐ চাহনীতে,
আমি হাজারবারও পারিবো মরিতে
ভাবনার সাগরে ফেলে জল
শুধু একটিবার আসবি বল।
(লেখনীতেঃ নোভা)

নিজের মনে কবিতা আবৃত্তি করে আপন মনে হেসে উঠলো আকশি।নাহ্ সত্যি তাকে প্রেমের ভূতে ধরেছে।সেটা হলো ফিহার প্রমের ভূত।সেটাকে কি করে সামলাবে তা আকশি জানে না।এই দুই দিনে সারা দিন রাত ফিহার ওপর নজর রেখেছে সে।এতে করে আকশি ফিহার কোন বেড হেবিটতো পাইনি বরং আরো দূর্বল হয়ে পরেছে ।সবজায়গায় ফিহাকে দেখে,কোন মেয়ে কথা বললেই মনে হয় ফিহা কথা বলছে।এমনকি স্বপ্নে পর্যন্ত ফিহার হাসির শব্দ শুনতে পায়।তার মানে আমাদের আকশি মহাশয় পুরো দমে ফিহা নামক অসুখে অসুস্থ হয়ে পরেছে।ফিহার মিটিংয়ের শুরুতে ইনোসেন্ট ফেস মনে করে মিটমিট করে হেসে উঠলো আকশি।ঠিক তখনি ওর পাশে এসে দাঁড়ালো আদিয়াত।ভ্রু কুঁচকে আকশির দিকে তাকিয়ে আছে সে।অথচ আকশি দ্বীন-দুনিয়া ভূলে ফিহার ভাবনায় মগ্ন।আদিয়াত শেষে আকশিকে জোরে একটা ধাক্কা দিলো।ভাবনা থেকে ফিরে ওর দিকে তাকালো আকশি।

আকশিঃ কি হলো এভাবে ধাক্কা মারলি কেন?

আদিয়াতঃ পাগলের মতো হাসছিস কেন? আমি কয়েক মিনিট ধরে তোর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি। অথচ তুই কি জানি ভেবে নিজের মনে হেসেই চলেছিস।তোর কি হয়েছে বলতো?দুই দিন ধরে তোর মতি গতি আমার ভালো ঠেকছে না।

আকশিঃ ক ক কই আমার আবার কি হবে?আমি ঠিক আছি।আমার কিছু হয়নি।(আমতা আমতা করে)

আদিয়াতঃ এই তুই কি লুকাচ্ছিস আমার থেকে।একদম মেয়েদের মতো ন্যাকামো করবি না।তোর ভাব-ভঙ্গি আমার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।সেদিন তোদের অফিস থেকে আসার পর থেকে তোর আচার-আচারণ কিছুই আমার সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না।কি রকম কি রকম জানি করিস?

আকশিঃ আমি ঠিকই আছি।শুধু তোর মাথাই গিয়েছে।

আদিয়াতঃ এক মিনিট, এক মিনিট।তুই আবার প্রেমে পরিস নি তো।তোর মাঝে আমি প্রেমে পরার লক্ষ্যণ গুলো খুঁজে পাচ্ছি।

আকশিঃ এসব ফালতু পেচাল বাদ দিয়ে আমি যে কাজে পাঠিয়েছিলাম তার খবর বল।

আদিয়াতঃ ঐ মেয়েটা সম্পর্কে এতো কেন জানার আগ্রহ তোর?আমার কাছে ব্যাপারটা কি রকম জানি রহস্য রহস্য লাগছে।

আকশিঃ তোর রহস্য তোর কাছে রাখ।আর কাজের কথায় ফিরে আয়।সকল ইনফরমেশন জলদী করে দে।আমার পরবর্তী স্টেপ নিতে হবে।

আদিয়াতঃ দিচ্ছি দিচ্ছি। মেয়েটার ইনফরমেশনের জন্য মনে হচ্ছে তোর জানটা বের হয়ে যাচ্ছে।

আকশি বারান্দা থেকে চলে এলো।ওর পেছন পেছন আদিয়াতও রুমে ঢুকলো। আকশি সোফায় বসে ল্যাপটপ ওন করতে করতে বললো।

আকশিঃ বেশি বকবক না করে বলতো।
আদিয়াতঃ মেয়েটার নাম ফিহা।
আকশিঃ ফিহা,বাহ্ খুব সুন্দর নাম তো।
(বিরবির করে)
আদিয়াতঃ কিছু বললি??
আকশিঃ না না কিছু বলি নি।তুই বলতে থাক।

আদিয়াতঃ ফিহা ছোট থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছে। আপন বলতে এতিমখানার মানুষ। সাথে আছে ওর এক বেস্ট ফ্রেন্ড। পাবলিক ভার্সিটিতে নিজের খরচে পড়াশোনা করেছে।পড়াশোনার পাশাপাশি বেশ কয়েকটা টিউশনি করতো।তারপর ম্যানেজমেন্টে অনার্স পাস করে সেই এতিমখানায় বাচ্চাদের টিচার হিসেবে যোগ দেয়।

আকশিঃ হুম তারপর।বাবা কি করে চিনলো ফিহাকে?
আদিয়াতঃ প্রায় সময় আঙ্কেল মানে তোর বাবা, ফিহা যে এতিমখানায় চাকরী করতো সেখানে বাচ্চাদের জন্য পোশাক, খাবার নিয়ে যেতো।সেখানেই ফিহাকে দেখতে পায় আঙ্কেল। তার অনেক পছন্দ হয় ফিহাকে।ভাই-ভাবী মারা যাওয়ার পর অনিয়াকে লালন-পালন করা টাফ হয়ে যাচ্ছিলো।তাই আঙ্কেল ফিহাকে নিয়ে আসে।কিন্তু ফিহাকে কি পরিচয় দিবে সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেন তিনি। তখন তার মাথায় একটা বুদ্ধি চলে আসে।তিনি সবার কাছে প্রচার করে দেন ফিহা তোর স্ত্রী। অনিয়া তোর ও ফিহার সন্তান। আর তোদের দুই বছর আগে বিয়ে হয়েছে। এতে করে কেউ ফিহার দিকে আঙুল তুলে কথা বলতে পারেনি,কেউ বাজে মন্তব্য করেনি।যেহেতু তুই দুই বছর লন্ডনে ছিলি তাই ব্যাপারটা কোন ঘোলাটে হয় না।সবাই খুব সহজে বিশ্বাস করে নেয়।

আকশিঃ কিন্তু বাবা ওকে রাজী করালো কিভাবে?যতটা মনে হলো ফিহার টাকার কোন লোভ নেই।

আদিয়াতঃ তুই ঠিক ধরেছিস।ফিহাকে আঙ্কেল অনেক টাকা দিবো বলেছিলো।কিন্তু ফিহা সাফ সাফ মানা করে দেয়।সে নিজেকে মিথ্যা পরিচয়ে গড়তে পারবে না।কিছুতেই ফিহা রাজী হচ্ছিল না।কিন্তু অনির দিকে তাকিয়ে রাজী হয়েছে। অনিকে কোন টাকা ছাড়া লালন-পালন করার দায়িত্ব নেয় সে। আঙ্কেল অনিকে দেখে রাখার জন্য ফিহাকে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিতে চেয়েছিলো।ফিহা সেটা নিতে রাজী হয়নি।বরং আঙ্কেলকে সোজা সাপটা ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে সে মাতৃত্বকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে পারবে না।বেচারী প্রথমে কোনকিছু তে রাজী হতে চাই নি।শুধুমাত্র অনির মুখেের দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিয়েছে। ফিহা চায়নি অনিও ওর মতো এতিম হয়ে বেড়ে উঠুক।এই হলো ফিহার যাবতীয় বায়োডাটা।

আকশিঃ আই সি।তাহলে তো এবার মিসেস চৌধুরীকে একটু জ্বালাতন করাই যায়।দেখি চেষ্টা করে, মিথ্যে মিসেস চৌধুরীকে সত্যিকারের মিসেস চৌধুরী বানাতে।

মনে মনে কথাগুলো বলে টেডি স্মাইল দিলো আকশি।ওর মনে এখন শয়তানি বুদ্ধি এসে ভিড় করেছে।

আদিয়াতঃ মিটমিট করে হাসছিস কেন?
আকশিঃ সময় হলে জানতে পারবি।এখন আমি তোকে কিছু বলবো না।
আদিয়াতঃ তোর ভাব-সাব আমি কিছু বুঝছি না আকশি।আমায় এখন একটু বুঝিয়ে বলবি তোর মনে কি চলছে?
আকশিঃ আমি জানি না ওকে ভালবেসেছি কি না।তবে ওর জন্য আমি অন্য রকম কিছু ফিল করছি।আমি খুব জলদী সব ঠিক করে তোকে জানাবো আদিয়াত।(মনে মনে)
আদিয়াতঃ তুই হঠাৎ, হঠাৎ কোথায় হারিয়ে যাস বল তো?
আকশিঃ এক জায়গায় যেতে হবে তারাতাড়ি চল।
আদিয়াতঃ কোথায় যাবো?
আকশিঃ বেশি কথা বলিস না। গেলেই দেখতে পারবি।

ল্যাপটপ বন্ধ করে আদিয়াতকে টানতে টানতে কোথায় জানি নিয়ে গেলো আকশি।আদিয়াত বার বার ওকে জিজ্ঞেস করছে কোথায় যাবে?কিন্তু আকশির একি উত্তর গেলেই দেখতে পারবি।আপাতত আকশির সাথে যাওয়া ছারা আদিয়াতের অন্য কোন উপায় নেই।

মন খারাপ থাকলেই ফিহা অফিসের কেবিনের আবছা সবুজ রঙের কাচের সামনে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে থাকে।অনিয়াকে নিয়ে আবদুল সাহেবে বাইরের বাগানে গিয়েছে। সাথে টেবলেটও যোগ দিয়েছে। ফিহার একা একা ভালো লাগছে না।হঠাৎ করে একটা ছেলে পেছন থেকে ওর চোখ হাত দিয়ে আটকে ধরলো।ছেলেটার হাতে নানা রংয়ের অনেকগুলো হার্ট শেইপ বেলুন।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে