মিষ্টার লেখক পর্ব-১০

0
828

#মিষ্টার_লেখক(১০)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
[কার্টেসি সহও সম্পূর্ণ কপি নিষিদ্ধ]

ছেলেটি চলে যাওয়ার পর ইমা কৌতুহলী হয়ে মোহনা কে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো তার পরিচয় কি?
মোহনা শুধু এটুকুই বললো, উনি আমার মেজ ভাইয়া। পাশের ফ্ল্যাটে থাকে!

ইমার মাথা হ্যাং হয়ে গেল! মানে কি এসব?মেজ ভাইয়া, আবার পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন তাও আবার ভাড়ার টাকাও দিলেন!কিছুই বুঝতে পারলো না ইমা। কিছুক্ষণ বসে থেকে সেদিনের কথা মনে পড়লো, আচ্ছা বেলকনিতে যে আপু টার সাথে কথা হলো উনার সাথে কোন যোগ সূত্র আছে নয়তো?
এসব ভাবতে ভাবতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় কিন্তু পাশের ফ্ল্যাটের বেলকনি ফাঁকা দেখতে পায়।কেউ নেই সেখানে।ইমা মন খারাপ করে আবার ফিরে আসে ডাইনিং রুমে।

নাস্তা শেষে রুমে ফিরে এলে মহিন বললো, এখনো অবধি রেগে আছো আমার উপর?

ইমা চুপ করে থাকে কোনো কথা বলে না। তখন মহিন বলে, ঠিক আছে মানুষজন যখন আমাকে পছন্দ করে না তখন আমি আর তার বাড়ি গিয়ে কি করবো? ভেবেছিলাম আজকে কাজ সেরে বিকালের দিকে রওনা হয়ে যাবো শ্বশুরবাড়ি। এখন আর যাবো না।

ইমা এবার সাথে সাথে বললো, না আপনি যাবেন।
মহিন লুকিয়ে মুচকি হেসে বললো, উহু যাবো না। মানুষজন আমার উপর রাগ করে আছে আর আমি কিনা তার বাড়ি যাবো? মোটেও না।

ইমা বললো, আমি আর রেগে নেই আপনার উপর। আপনি আমাদের বাড়িতে গেলে সবাই খুব খুশি হবে।

মহিন কাছে এসে বললো, সত্যি বলছো? আমার উপর রেগে নেই তুমি?
ইমা উপর নিচ মাথা দুলায়। মহিন খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে ইমাকে। তারপর বলে, সেদিন তুমি যখন মেসেজ রিকোয়েস্ট দিয়েছিলে তোমার বাবার আইডি থেকে তখন মেসেজটি সাথে সাথে দেখিনি আমি। এমন শত শত মেসেজ জমা হয়ে থাকে। আমি সাথে সাথে কখনোই দেখি না বা দেখার সুযোগ হয় না। কোন এক সময় অবসর সময়ে দেখে থাকি। তবে রিপ্লাই করি না। কারণ কারো সাথে কথা বললে এটার স্কিনশট নিয়ে মানুষ পাবলিক করে দেওয়ার ভয় থাকে।তাই পরিচিত মানুষজনের সাথে কথা বলা ছাড়া কারো সাথে কথা বলা হয় না।
তো একদিন তোমার মেসেজ টা দেখলাম তুমি সালাম দিয়ে লিখেছো সামান্য কারণে তোমাকে ব্লক করে এতো বড় অপমান না করলেও পারতাম। সাথে দেখলাম আইডি থেকে ব্লক করে দেওয়া। তখন একটু হাসি পেল কেন জানো? কারণ আমি তোমাকে একটা ব্লক করেছি কিন্তু তুমি আমাকে ডাবল ব্লক করেছো। তোমার আইডি থেকে প্লাস তোমার বাবার আইডি থেকে। বুঝলাম তুমি আমার থেকেও দ্বিগুণ রাগের অধিকারী নি ।

তখন ইচ্ছা করছিলো তোমার সম্পর্কে জানার। কিন্তু উপায় কি? কিছুক্ষণ ভেবে উপায় বের করলাম তোমার আইডি।আইডি থেকেই আমি অনেক ইনফরমেশন পাবো।তাই প্রথমে একটি ফেইক আইডি তৈরি করলাম কেননা তুমি আমার আইডি ব্লক করে রেখেছো বলে তোমার আইডির টাইমলাইনে যেতে পারছিলাম না।তাই ফেইক আইডি দিয়ে সহজেই তোমার আইডির টাইমলাইনে যাই। সেখানে তোমার হোম টাউন এবং স্কুল কলেজের নাম সব কিছু দেখলাম। সাথে তোমার করা কিছু পোষ্ট, বেশিরভাগ ই ইসলামীক পোস্ট। আমার খুব ভালো লাগলো,ফেইক আইডি থেকে তোমাকে রিকোয়েস্ট পাঠালাম। আফসোস তুমি একসেপ্ট করলে না।

তবুও সময় পেলেই তোমার টাইমলাইনে গিয়ে ঘুরে আসতাম। এটা যেন আমার নিয়মমাফিক রুটিং হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে তোমাকে দেখার তীব্র ইচ্ছা জাগলো। খুব দেখতে ইচ্ছে করলো তোমাকে।যদিও কল্পনায় তোমাকে এঁকেছি বহুবার। তবুও বাস্তব তোমাকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে, বন্ধু রাকিবুল হাসান কে দিয়ে মা বাবাকে তোমার কথা বলালাম।
মা প্রথমে রাজী ছিলো না এতো দূর বলে। পরে তিনিও মতলবের মেয়ে বলে রাজি হলো তোমাকে দেখতে যেতে।
তারপর আমরা সরাসরি তোমার কলেজে গিয়ে তোমার বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করলাম আমার মামাতো বোন কে নিয়ে।আর তার পর তোমার দেখা পেলাম।

ইমা মহিন কে ছেড়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, এতো কিছু?
মহিন ইমার গাল দুটো আঁকড়ে ধরে বললো, ইয়েস ম্যাম আপনাকে পেতে আমাকে এগুলো করতে হয়েছে। শুধু দূরত্ব বলে এতোটা দেরি হয়েছে না হয় কবেই আপনি আমার রানী হয়ে যেতেন।
ইমা লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। মহিন মুচকি হেসে নিজের অধরপল্লব দুটি ছুঁয়ে দেয় ইমার কাঁপা কাঁপা অধরপল্লব দুটোতে।
.
.
আজ মতলব থেকে ইব্রাহিম খলিল এবং তার পরিবার আর কিছু আত্মীয় স্বজন আসবেন।ইমাকে নিয়ে যেতে।তারা ইতিমধ্যে র‌ওনা হয়ে গেছেন। কেননা খুলনা শহরে আসতে আসতে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। তাই ভোর বেলায় র‌ওনা হয়েছেন। আসতে আসতে দুপুর হবে।
মহিনকে হসপিটালে যেতে হলো,আর ছুটি কাটাতে পারবে না। তবুও ইমাকে বলেছে ম্যানেজ করে বিকালে র‌ওনা হয়ে যাবে ইমাদের বাড়ি।

“লস্কর ভিলা” তে আজকে খাবারের সুভাসে মৌ মৌ করছে চারিদিকে। আত্মীয়-স্বজনে চারিদিকে মুখরিত।বড় ছেলের বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান বলে কথা। আজাদ লস্কর তার ছোট ছেলেকে নিমন্ত্রণ করে এসেছেন কিন্তু তারা কেউ আসেনি। হয়তো আসবে না।

ইমাকে কালো আর মিষ্টি রঙের মিশ্রণে কাতান শাড়ি পড়ানো হয়েছে। আজকে পার্লার এর মহিলাদের অনুরোধ করে হালকা সেজেছে ইমা। মোহনা বললো ভাবী মনি একটা কালো টিপ লাগিয়ে দেই? খুব সুন্দর লাগবে তোমাকে।
ইমা বললো, না আপু টিপ পরা নিষিদ্ধ তুমি জানো না?

মোহনা বললো, শুনেছি স্বামী বললে বা স্বামীর জন্য সবরকম সাজসজ্জা করা যায়। তাহলে?

ইমা বললো না আপু ইসলামে যেগুলা নিষিদ্ধ সেগুলো স্বামী বললেও করা যাবে না।
কপালে টিপ পরা হিন্দুয়ানী রুসুম। তাই তা পরিত্যাজ্য। শরীয়ত গর্হিত সাজ।
আর স্বামীর শরীয়ত বিরোধী হুকুম মানতে স্ত্রী বাধ্য নয়। কারণ, আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কারো আনুগত্য করা জায়েজ নেই। তাই স্বামীর আদেশ হলেও কপালে টিপ পরা স্ত্রীর জন্য বৈধ হবে না।

আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হয়ে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা জায়েজ নয়।[১]
স্বামী যদি শরীয়ত বিরোধী কোন কাজের হুকুম দেয় তাহলে তাকে অবশ্যই বুঝাতে হবে যে এটা অন্যায়।

মোহনা এবার বুঝতে পারে।তাই ইমাকে বললো তোমাকে ধন্যবাদ ভাবী মনি। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করার জন্য। আসলে আমি আগে জানতাম না। না জেনে আমিও কতো বার কপালে টিপ পড়েছি হিসাব নেই। জানি না আল্লাহ তা’আলা আমাকে মাফ করবেন কিনা।

ইমা বললো আমি তোমাকে কিছু কোরআন এর আয়াতের অর্থ বলি শুন,
আল্লাহ চাইলে সকল গুনাহ-ই মাফ করতে পারেন। তবে তিনি কুরআনে বলে দিয়েছেন যে, তিনি শির্কের গুনাহ মাফ করবেন না। এছাড়া অন্যান্য গুনাহ মাফ করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী (শির্ক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন।’’[২]

শির্ক ছাড়া অন্যান্য কাবীরা গুনাহগুলো মাফ পেতে সাধারণত তাওবাহ্ করার দরকার হয়। কিন্তু সগীরা গুনাহ মাফের জন্য সবসময় তাওবার প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কিছু ‘আমলের মাধ্যমে এসব ছোট-খাট গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়। তাই কাবীরা গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকলে সগীরা গুনাহগুলো আল্লাহ মাফ করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।

‘‘তোমরা যদি নিষেধকৃত কাবীরা গুনাহগুলো বা গুরুতর/বড় পাপসমূহ পরিহার করো তাহলে আমরা তোমাদের (ছোট) লঘুতর পাপগুলোকে মোচন করে দেব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবো।’’[৩]

অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
‘‘যারা ছোট-খাট অপরাধ ছাড়া কাবীরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজ হতে বিরত থাকে। নিশ্চয় তোমার রব অপরিসীম ক্ষমাশীল।’’[৪]

আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
‘পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এক জুমু‘আহ্ থেকে আরেক জুমু‘আহ্ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযান; এর মাঝে সংঘটিত (সগীরা) গুনাহ মুছে ফেলে, যদি কাবীরা গুনাহ থেকে সে বেঁচে থাকে তাহলে (নতুবা নয়)।’[৫]

অর্থাৎ কেউ যদি ফজরের সলাত আদায় করে, তারপর যোহরের সময় যোহরের সলাত আদায় করে তাহলে সে ফজরের সলাতের পর থেকে যোহরের সলাত পর্যন্ত যে সব সগীরা গুনাহ করেছে, যোহরের সলাত আদায় করার সাথে সাথে তার সেই গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। এ রকমই এক সপ্তাহে জুমু‘আহর সলাত আদায় করে পরের সপ্তাহের জুমু‘আর সলাত আদায় করলে এই দুই জুমু‘আর মধ্যবর্তী সাত দিনের সগীরা গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে।

একইভাবে এ বছর যারা রমাযান মাসের সিয়াম পালন করেছে এবং পরবর্তী বছরও রযামানের সিয়াম পালন করলে তার এই দুই রমাযানের মাঝের এক বছরের সগীরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে এই সময়গুলোতে কাবীরা গুনাহ করা যাবে না।

আবূ হুরায়রাহ্ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
‘‘পাঁচ ওয়াক্তের সলাত, এক জুমু‘আহ্ থেকে আরেক জুমু‘আহ্ পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব পাপ সংঘটিত হয়, সে সব পাপের মোচনকারী হয় (এই শর্তে যে,) যদি কাবীরা গুনাহসমূহ তাকে আবিষ্ট না করে (অর্থাৎ সে কোন কাবীরা গুনাহ না করে)।’’[৬]

আরও একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
‘‘যে ব্যক্তি ফরয সলাত উপস্থিত হলে সে জন্য উত্তমরূপে উযূ করবে। (অতঃপর) তাতে উত্তমরূপে ভক্তি-বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করবে এবং উত্তমরূপে ‘রুকূ‘’ করবে। তাহলে তার সলাত পূর্বে সংঘটিত কাবীরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য পাপরাশির জন্য কাফ্ফারা বা মাফের অবলম্বন হয়ে যাবে। আর এ বিধান সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য।’’[৭]

সাধারণভাবে ভালো কাজ খারাপ কাজকে মুছে ফেলে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘নিশ্চয় ভালো কাজগুলো মন্দকাজগুলোকে মিটিয়ে দেয়।’’[৮]

উপরিউক্ত আয়াত ও হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কাবীরা গুনাহ ছাড়া অন্যান্য গুনাহ আল্লাহ তা‘আলা সাধারণ নেক কাজের মাধ্যমে এমনিতেই ক্ষমা করে দেন। এর জন্য বিশেষ তাওবাহ্ জরুরি নয়। বিভিন্ন ‘আমলের মাধ্যমেই এসব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তবে বিভিন্ন হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, কিছু কিছু কাবীরা গুনাহও বিশেষ পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মের মাধ্যমে ক্ষমা করে দেন।

উপস্থিত আরো কজন মহিলা ছিলেন সেখানে,ইমার মুখে এতো সুন্দর কোরআন এর আয়াতের অর্থ শুনে খুশি হলো সবাই।আর মোহনা তো জড়িয়ে ধরল ইমাকে।
.
.
এতো আনন্দ হৈ হুল্লোড় এর মাঝে ইমা শুধু মহিনের মেজ ভাই কেন আলাদা থাকে এসব নিয়েই পড়ে আছে। রুমে মানুষজনের বির কমলে বেলকনিতে যায় ইমা। গিয়ে দেখে ঐ দিনের মেয়েটা কাপড় মেলে দিচ্ছে রোদে শুকানোর জন্য। তখন ইমার মুখে হাসি ফুটে উঠল…
_______
রেফারেন্স:
[১][মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১০৯৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৭০৭]
[২]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ৪৮, ১১৬।
[৩]. সূরা আন্ নিসা ০৪ : ৩১।
[৪]. সূরা আন্ নাজ্ম ৫৩ : ৩২।
[৫]. সহীহ মুসলিম : ৫৭৪।
[৬]. সহীহ মুসলিম : ৫৭২; জামি‘ আত্ তিরমিযী : ২১৪।
[৭]. সহীহ মুসলিম : ৫৬৫।
[৮]. সূরা হূদ ১১ : ১১৪।
________

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে