মন গহীনের শব্দ পর্ব-০৯

0
251

মন গহীনের শব্দ
| ৯ |
সুলেখা আন্টি নিজেকে সামলাতে পারল না আর। রাতের আলো আঁধারে রোডসাইড ল্যামপোস্টের আবছা আলোয় আমি দেখলাম, সে কাঁদছে।

আমি তাকে থামালাম না। সামনের নদীর দিকে তাকালাম। ছোট নদীটি এখন একেবারেই শান্ত। সেই শান্ত নদীটির দিকে তাকিয়ে অশান্ত হৃদয় নিয়ে আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম সুলেখা আন্টির কান্না থামার।

খুব দ্রুতই অবশ্য তিনি সামলে নিলেন নিজেকে। বললেন, “জানো সু, আমার জীবনটা প্রচুর অপূর্ণতায় পরিপূর্ণ। ছোটোবেলাতেই মাকে হারালাম। মাস পেরোতে না পেরোতেই বাবা আবার বিয়ে করল। সৎ মা প্রচন্ড দুর্ব্যবহার করতেন। তাও মুখ বুজে সব সহ্য করে ছিলাম। কিন্তু আমাকে তার সংসার থেকে তাড়ানোর জন্য শেষপর্যন্ত গয়না চুরির জঘন্য অপবাদ চাপিয়ে দিলেন মাথায়। সেদিন অমানবিক অত্যাচার করা হলো আমার উপর। নয় বছর বয়সী আমাকে মে মাসের প্রচন্ড গরমে হাত পা বেঁধে উঠোনের তপ্ত মাটিতে প্রখর সুর্যালোকে রেখে দেওয়া হলো সারাদিন। বাবা রাতে বাড়ি ফিরলে তাকে বলা হলো আমাকে বাড়িতে রাখলে সে নাকি আর থাকবে না।

পরদিন বাবা নিজেই গিয়ে আমাকে নানাবাড়ি রেখে আসলো। সাথে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল, আমাকে আর সে ফেরত নেবে না। নানা মারা গেছে অনেক আগেই, নানি বেঁচে থাকলেও পুরোপুরি মামাদের উপর নির্ভরশীল। চাইলেও তার পক্ষে আমার জন্য কিছু করা সম্ভব ছিল না। তার নিজেরই প্রতিনিয়ত ছেলের বউদের গঞ্জনা সহ্য করতে হতো। বাবা রেখে যাওয়ার পর নানাবাড়িতে আমাকে নিয়ে একপ্রকার হট্টগোলই বেঁধে গেল। তিন মামার কেউই নিজেদের সাথে আমাকে রাখবে না। অনেক তর্কবিতর্কের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, বড়মামা যেহেতু সবার বড় তাই তার সাথেই থাকতে হবে আমাকে। কিছুটা হলেও চিন্তামুক্ত হলাম আমি। সৎ মায়ের সংসারে ক্ষুধার কষ্ট আমি খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলাম। কতবেলা যে না খেয়ে কাটাতাম। এখানে নিশ্চই আমাকে কেউ না খাইয়ে রাখবে না। অন্তত পেটপুরে তিন বেলা খেতে তো পাব। সত্যিই খাওয়ার কষ্ট রইল না আমার। কিন্তু বড়মামির স্বরূপ খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করলাম কিছুদিনের মধ্যেই। মামি মায়ের মতো বেদম প্রহার করতেন না, অল্প আঘাতই এমনভাবে করতেন যার জন্য ভুগতে হতো আমাকে অনেকদিন।

যেমন ধরো একদিনের কথা বলি, তার পাঁচ বছর বয়সী ছোট ছেলেটাকে আমার কাছে দিয়ে বললেন দেখে রাখতে। অনেকক্ষন দেখে রাখার পর আমি কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম, এরমধ্যেই ছেলেটার কীভাবে যেন অল্প হাত কেটে গেল। যদিও সেটা একেবারেই সামান্য ছিল, তবু তার জন্য কঠিন শাস্তি দেওয়া হলো আমাকে। মামি রান্না করছিলেন তখন, গরম লোহার খুন্তি হাতেই এগিয়ে আসলেন আমার দিকে। ফ্রকটা তুলে তলপেটে চেপে ধরলেন সেটা। আমি আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলাম। এরকম আরও বহু অত্যাচার চলতো আমার উপর দিনের পর দিন। তবে এতকিছুর মধ্যেও একটা দিক থেকে আমি মামার প্রতি কৃতজ্ঞ ছিলাম। কিভাবে যেন মামিকে রাজি করিয়ে মামা আমাকে একটা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল। মামির সংসারে হাড়ভাঙা খাটুনির সাথে সাথে পড়ালেখাটাও চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোনোভাবে। এরকম করেই এসএসসি পাস করলাম।

তারপরেই বেঁকে বসলেন মামি। কিছুতেই আর পড়াবেন না। আমি মেনে নিলাম। অন্যের অনুগ্রহে যা হয়েছে তাই অনেক। কিন্তু কিছুদিন পরে আরও ভয়ংকর একটা কাজ করে ফেললেন মামি। মামার অনুপস্থিতিতে হুট করেই একদিন আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমার মতামতের তোয়াক্কা না করে একপ্রকার জোর করেই বিয়েটা দেওয়া হলো। এমনকি যার সাথে বিয়ে হবে, বিয়ের আগে তার চেহারাটুকুও দেখতে দেওয়া হলো না আমাকে। বিয়ে পড়ানোর পর তাকে দেখে আমি চমকে উঠলাম। মাত্র ষোলো বছর বয়স ছিল তখন আমার। কিন্তু যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার বয়স তখন কমপক্ষে পঞ্চাশ হবে।

ওবাড়িতে যাওয়ার কিছুদিন পর কাগজপত্র ঘেঁটে জানতে পেরেছিলাম তার বয়স ছাপ্পান্ন চলছে। মানে বুঝতে পারছ? আমার থেকে গুনে গুনে চল্লিশ বছরের বড় ছিল সে। ততদিনে আমি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে গিয়েছি একেবারে। খুব বড় স্বপ্ন আমি কখনোই দেখিনি৷ তবে খুব করে চাইতাম নিজের ছোট্ট একটা সংসার হোক। কুড়েঘর হলেও নিজের একটা ঘর হোক। একান্ত নিজের একটা মানুষ হোক। সবই ইচ্ছেই পূরণ হলো। কুড়েঘরের বদলে বিশাল রাজপ্রাসাদ পেলাম। স্বামী সংসার সবই হলো। কিন্তু সব হয়েও কিছুই হলো না আমার।

বিয়ের পর তার বয়স দেখেই আমি আন্দাজ করেছিলাম, এটা তার দ্বিতীয় বিয়ে। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পরে বুঝতে পারলাম, প্রথম স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থাতেই তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এমনকি তার প্রথম পক্ষে চারটা মেয়েও রয়েছে। সেই মেয়েদের মধ্যে বড় মেয়েটি আমার চেয়েও বছর দুয়েকের বড়, পরের জন আমার সমবয়সী। বিয়ের রাতেই তিনি আমার কাছে সবটা খুলে বললেন। তিনি আমাকে বিয়েই করতে চাননি আসলে। শুধুমাত্র মায়ের চাপে পড়ে করতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের বিশাল সম্পত্তির পুরোটাই তার মায়ের নামে। কিন্তু ছেলের প্রয়োজন সত্ত্বেও সেই সম্পত্তি তিনি কিছুতেই ছেলেকে দেবেন না। নাতির মুখ দেখতে পারলেই কেবল সম্পত্তি দেবেন ছেলেকে। প্রথম বউয়ের পরপর চার মেয়ে। শারীরিক জটিলতার জন্য তিনি আর সন্তান নিতে পারেননি। সেজন্যই বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করা। বিয়ের রাতেই তিনি জানালেন আমাকে তার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। শুধু মায়ের জেদের জন্যই কাজটা করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি৷ প্রয়োজনীয় কথাটুকু সেরে তিনি তার প্রথম স্ত্রীর কাছে চলে গেলেন। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এরকম একটা অসম সম্পর্ক আমার পক্ষেও মেনে নেওয়া সহজ ছিল না। এরপর প্রত্যেকটা রাতই এভাবে কাটতে লাগল। মাকে দেখিয়ে রাতে তিনি আমার ঘরে আসলেও সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর আবার চলে যান। সংসার স্বামী সবটাই তার প্রথম স্ত্রীর আয়ত্বে ছিল। তবুও তিনি আমাকে দেখতে পারতেন না একেবারেই। এতে অবশ্য তার দোষ দেওয়া যায় না। কোনো স্ত্রীর পক্ষেই নিজের স্বামীর অন্য স্ত্রীকে মেনে নেওয়া সহজ নয়। তাছাড়া তার মনে আরও একটি ভয় কাজ করত সম্ভবত। যতই সবকিছু তার হাতের মুঠোয় থাক, আমিও তার স্বামীর বিয়ে করা স্ত্রী। পুরুষের মন বদলায় ক্ষনে ক্ষনে। যদি কখনও আমার মোহে পড়ে সে আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়, এবং যদি সত্যিই আমার গর্ভে বংশের উত্তরাধিকারি আসে, তাহলে স্বামী সংসার সবই তার হাতছাড়া হয়ে যাবে। এমনকি সম্পত্তিও তার মেয়েরা পাবে না।

এভাবেই কেটে গেল কয়েকমাস। ওবাড়ির কেউ আমার সাথে কথা পর্যন্ত বলে না। এতগুলো মানুষ থাকা সত্বেও আমি একঘরে হয়ে গেলাম ওই বাড়িতে। নিজের জীবনটা আমার কাছে শুধুই প্রহসন বলে মনে হতো তখন। প্রায় ছয় মাস পার হয়ে যাওয়ার পর একদিন আচমকা তার পরিবর্তনটা লক্ষ করলাম আমি। নানা ছুতোয় আমার কাছে ঘেসার চেষ্টা করতেন। একদিন সরাসরিই বলে ফেললেন, তিনি আমাকেও তার স্ত্রীর মর্যাদা পুরোপরিভাবে দিতে চান। তার ইঙ্গিত বুঝতে অসুবিধা হলো না আমার। ততদিনে আমার নিজের স্বপ্ন,আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা সবই মরে গেছে। যে যা বলে সেটাই মেনে নেই। নিজের ভাগ্যকে এবারও মেনে নিলাম। শুধু আমি নই, তার এই পরিবর্তন তার প্রথম স্ত্রীও ভালো করেই বুঝতে পেরেছিলেন। সব বুঝে ফেলার পরেই মোক্ষম চালটা চাললেন তিনি।

একদিন দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে পায়ের উপর অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেল আমার। তাকিয়ে দেখলাম সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে খাটের পাশেই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আধশোয়া হয়ে আমাকে বিছানার সাথে চেপে ধরল লোকটা। আমি তখন আতঙ্কে চিৎকার করতেও ভুলে গেছি। কিছু একটা বলে চেঁচিয়ে উঠতে যাব, ঠিক তখনই ভেজানো কাঠের দরজাটা শব্দ করে খুলে গেল। বাড়ির সবাই প্রায় একসাথেই ঢুকল ঘরে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হলো আমাকে সেদিন। কিছু না করেও আমি হয়ে গেলাম চরীত্রহীনা। একপর্যায়ে তার প্রথম স্ত্রীটি চুলের মুঠি ধরে ঘরের বাইরে এনে ধাক্কা মারলেন আমাকে। সবার অগোচরে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন, খুব সখ হয়েছিল, এবাড়ির রানী হওয়ার, তাই না? আজ সেই সখ মিটিয়ে দিলাম।

আমি তখন কান্না ভুলে তার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম। বোঝার চেষ্টা করছিলাম সেই বিয়ে থেকে শুরু করে এই পুরো ব্যাপারটাতে আমার দোষটা আসলে কোথায়। দীর্ঘক্ষন আমার চরিত্র নিয়ে কাঁটাছেড়া করার পর বাড়ির সব সদস্যদের উপস্থিতিতেই আমাকে তালাক দিলেন তিনি। শেষমেষ সিদ্ধান্ত হলো, আমাকে আবার মামার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আবার সেই পুরোনো জীবন।

মামার বাড়িতে ফিরে আসার কিছুদিন পরেই আমার ফিরে আসার কারন ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। দলে দলে আশেপাশের বাড়ির মেয়ে বউরা আসতো। নানান কথা শুনিয়ে যেত। মামিও তাদের সাথে সায় দিতেন। বুড়ো স্বামী দিয়ে আমার হয় না বলে পরপুরুষ এনে আমি জ্বালা মেটাই, একাধিক পুরুষের সাথে আমার সম্পর্ক আছে এরকম আরও বহু নোংরা আপবাদ যা মুখে উচ্চারণ করতেও আমার বাঁধে। মাঝে মাঝে অতি কষ্টে আমার হাসি পেয়ে যেত। তাদের মতে বহু পুরুষের সাথে আমার বিছানায় সম্পর্ক রয়েছে, অথচ আমি তখনও কুমারী। গভীরভাবে কোনো পুরুষের স্পর্শ আমার গায়ে লাগেনি অব্দি। এভাবেই কেটে গেল কয়েক বছর। লোকেরা আমার নামে নিন্দা করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দিল ওসব। তারপর একদিন এলাম শহরে খালার বাসায়। খালা অসুস্থ তাই কিছুদিন তার সংসার দেখাশোনা করতে হবে। সেখানেই তোমার দাদি আমাকে দেখে পছন্দ করলেন। খালা পুরোনো কথা লুকিয়ে বিয়ে দিতে চাইলেও আমি নিজেই সব খুলে বললাম তোমার দাদিকে। তিনি জেনেশুনেই তার পুত্রবধু করে নিলেন আমাকে। আবারও চোখে না দেখেই অজানা অচেনা একটা লোকের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল। তোমার মায়ের ব্যাপারটা তোমার দাদি বিয়ের আগেই আমাকে বলেছিলেন। বিয়ের রাতে তোমার বাবাকে দেখে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকলাম। এত সুদর্শন পুরুষ আমি আমার জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি কখনও। আমার বিশ্বাস হতে চাইল না, এরকম একটা মানুষকে তার স্ত্রী ছেড়ে যেতে পারে।

নিজেকে নিয়ে ভাবা অনেক আগেই আমি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আঘাতে জর্জরিত হয়ে আমি বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম যে, কিছু কিছু মানুষ শুধু দুর্ভাগ্য নিয়েই পৃথিবীতে আসে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা সুখের দেখা পায় না। আমি মেনে নিয়েছিলাম, আমিও সেই দলেরই একজন। কিন্তু তোমার বাবার সাথে জড়ানোর পর আমি আবার নতুন করে স্বপ্নের আকাশে ডানা মেলে উড়তে শুরু করলাম। তারপর খুব জলদিই আবার মাটিতে মুখ থুবড়ে পরলাম। তোমার বাবা স্পষ্টই জানালেন, তার পক্ষে কখনও আমাকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এদিকে তোমার দাদি প্রতিনিয়তই চাপ দিতেন, যেভাবেই হোক তার এই রগচটা ছেলেকে আগের হাসিখুশি অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমিও বারবার সেই চেষ্টাই করতাম। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক স্বাভাবিক করারও সবরকম চেষ্টাই করতাম কিন্তু প্রতেকবারই প্রত্যাখ্যাত হতাম খুব কঠিনভাবে। মাঝে মাঝে রাগে বিছানা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হতো আমাকে। সেধে ঘনিষ্ঠ হতে গিয়ে অপমানিত হতে হতো প্রত্যেকবার। সেই সময়ের অনুভূতিটা আমি ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারব না। লজ্জায় তখন মরে যেতে ইচ্ছে হতো আমার। একসময় হাল ছেড়ে দিলাম। আরও একবার নিজের দুর্ভাগ্যকে মেনে নিলাম। তোমার দাদি প্রথমে নরম আচরণ করলেও একসময় বদলে গেলেন।

এবার আর আমি ভেঙে পড়লাম না। কারন ততদিনে আমার খারাপ থাকার অনেকগুলো কারনের মধ্যে একটা ভালো থাকার কারনও তৈরি হয়েছে। সেই কারনটা হলে তুমি। ওবাড়িতে যাওয়ার দিনই তুমি ‘মা মা’ বলে ছুটে এলে আমার কাছে। তোমার বাবা সাথে সাথেই তোমাকে বললেন, আমি তোমার মা নই। শিখিয়ে দিলেন আমাকে আন্টি বলে ডাকতে। তারপর থেকে তুমি আন্টি বলে ডাকলেও আমি আমার মেয়ের স্থানটা তোমাকেই দিয়ে দিলাম। আমার শত অপূর্ণতার মাঝেও পরিপূর্ণ হয়ে গেলাম তোমাকে পেয়ে।

এই কথাগুলো আজ পর্যন্ত আমি কারও সাথে শেয়ার করিনি। ভবিষ্যতেও হয়তো করতাম না। কিন্তু জীবনের এই অন্তিমলগ্নে এসে অন্তত একজনের সাথে হলেও সবকিছু বলতে ইচ্ছে হলো। তাহলে হয়তো নিজের কষ্টগুলো একটু হলেও হালকা হবে। তুমিতো আমার মেয়ে৷ একটা সময়ের পর মা আর মেয়েই নাকি হয়ে ওঠে একে অপরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু মনে করেই আজ তাই কথাগুলো তোমার সাথে অকপটে বলে ফেললাম। তবে কথা দাও, তুমি আজ যা যা জেনেছ এগুলো দ্বিতীয় কাউকে বলবে না কিংবা বুঝতে দেবে না কখনও।”

এতক্ষন যাবত চুপ করে তার বলা কথাগুলো শুনে যাচ্ছিলাম। আমি উপলব্ধি করলাম, এতগুলো বছর ধরে যে মানুষটা আমাদের পরিবারকে শুধু দিয়েই গেছে, সেই মানুষটার প্রাপ্তির ঝুলি একেবারেই শূন্য।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)

#আমাতুল্লাহ_স্বর্ণা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে