ভেজাগোলাপ পর্ব-৭+৮

0
1220

#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান
#পর্ব-৭

সময় গড়িয়ে চলেছে।
সেদিনের পর রোদ্রি ভেবেছিল ফারহান হয়তো আর অসভ্য আচরণ করবেনা তার সাথে।কিন্তু তার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে ফারহান তার আচরণে বহাল আছে।কারণে অকারণে সুযোগ পেলেই রোদ্রিকে বাজেভাবে ছুঁয়ে দেয় সে।ব্যাপারটা একদমই সহ্য হয়না রোদ্রির।কিনতু ভাই ভাবির কথা ভেবে কিছু প্রকাশ করেনা সে।

সন্ধ্যাবেলা নিজের রুমে রেডি হচ্ছিল রোদ্রি।আজ রাতে ফারহানের সাথে একটা পার্টিতে যেতে হবে তাকে।নামিদামি বিজনেস ম্যানরা আসবে সেখানে তাই ফারহান কেও ইনভাইট করা হয়েছে।তাই রোদ্রিকেও যেতে হবে তার সাথে।সে মানা করেছিল কিন্তু ফারহানের কথার সাথে পেরে ওঠেনি।বাধ্য হয়ে রাজি হতে হয় তাকে।একটু পরেই তাকে নিতে আসবে ফারহান।

মেরুন কালারের একটা থ্রিপিস পরেছে রোদ্রি।চুলগুলো ছাড়া তবে মাথায় ঘোমটা দেয়া ওড়না দিয়ে।ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক আর চোখে কাজল ছাড়া আর কোনো সাজগোজ নেই।তবে এতেই যেনো অদ্ভুত সুন্দর লাগছে তাকে।রোদ্রির গায়ের রং ফর্সা না।সে উজ্জল শ্যামলা সেজন্যই বোধহয় মেরুন রংটা বেশি মানিয়েছে।
রোদ্রির হাত ধরে গাড়িতে বসাল ফারহান।রোদ্রির পাশে বসে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টান্ট দিতে বলল।
ফারহান বসতেই রোদ্রি একটু চেপে গেল।

-তোমাকে তো আজ খুব হট দেখাচ্ছে জান।আজকে কিছু করে ফেললে কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবে না।বলেই বাঁকা হাসল ফারহান।

ফারহানের কথায় বুক কেঁপে উঠল রোদ্রির।শক্ত কন্ঠে বলল সে,

-এসব কি বলছেন আপনি?

-ডোন্ট বি এ্যাঙরি জান।রাগছো কেন?আমিতো তোমার প্রশংসা করলাম।

চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকল রোদ্রি।

-ওখানে যেয়ে কিন্তু আমার সাথে সাথেই থাকবে।ঠিকাছে?

-হুম।

এককোণায় ফারহানের পাশে চুপ করে বসে আছে রোদ্রি।তার পাশে বসেই ফারহান ড্রিংক্স করছে সাথে তার আরো দু তিনজন বন্ধু আছে।

আশেপাশের মেয়েগুলার ড্রেস-আপ দেখে মাথায় রাগ উঠে গেছে ওর।মনে মনে ভাবছে,এদের কি বাসায় কাপড় নেই?কারো কারো জামা তো হাঁটু অবধি যায়নি।পুরো জায়গাটা প্রায় অন্ধকার।আবছা আবছা নীল আলো।স্লো মোশনে একটা ইংরেজি গান বাজছে।
ড্রিংক্স এর গন্ধে বমি পাচ্ছে রোদ্রির।ফারহানকে ছাড়া কাউকেই চিনেন সে আর আশেপাশের মানুষগুলোকেও বিশেষ সুবিধার লাগছেনা তার।অগত্যা এখানে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই তার।

-ফারহান?শুনছেন?চাপা গলায় ডেকে উঠে রোদ্রি।
ফারহান তাকাতেই ওর লালচোখগুলো দেখে আৎকে উঠে রোদ্রি।তবে স্বাভাবিক কন্ঠেই ফারহান বলে,

-হ্যাঁ,বলো।

-আপনি ঠিক আছেন?

রোদ্রির প্রশ্নে ভ্রু কুচকালো ফারহান।তার কি হবে?

-আমার কি হবে জান?

-না কিছুনা।বলছিলাম যে,আপনি এতো খাচ্ছেন কেনো এইসব?কিছু হয়ে গেলে?

-কিছু হবেনা।তুমি…হঠাৎই থেমে যায় ফারহান।সামনের দিকে ইশারা করে বলে,

-ওটা নীরাদ না?

সামনে সত্যিই নীরাদকে দেখে চমকে উঠে রোদ্রি।মি.নীরাদ এখানে কিভাবে আসবে?পরক্ষনেই নিজের উপর বিরক্ত হয় এটা যেহেতু বিজনেসম্যানদের পার্টি তো এখানে নীরাদের আশাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

মৃদু গলায় জবাব দিলো সে,

-জি।

ততক্ষনে নীরাদ তাদের টেবিলের কাছে চলে এসেছে।রোদ্রিকে দেখে অবাকের সাথে খুশিও হয় সে।

ফারহান উঠে সৌজন্যর হাত বাড়িয়ে দেয়।

-হ্যালো,নীরাদ সাহেব কেমন আছেন?

-জি ভালো।আপনি?

-এইতো ভালোই।বউ সাথে থাকলে কি আর খারাপ থাকা যায় বলেন?

নীরাদ কিছু বললোনা।রোদ্রির দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো।রোদ্রিও জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করলো।

ফারহান ড্রিংক্সের গ্লাস এগিয়ে দেয়।বসতে বলে তাদের সাথে।নীরাদ ভদ্রভাবে এড়িয়ে যায়।সে ড্রিংকস করেনা।

ফারহান আবার বসে যায় ড্রিংক্স করতে।রোদ্রি বারবার মানা করছে আর খেতেনা।

একপর্যায়ে হুঁশ হারিয়ে ফেলে সে।রোদ্রিকে জোড় করে উপরতলায় নিয়ে যায়।এত মানুষের সামনে রোদ্রি চিৎকারও করতে পারছেনা।ফারহানের শক্তির সাথে কোনোভাবেই পেরে উঠছেনা সে।
ফারহান যেনো নিজের মধ্যে নেই।তার মাথায় চলছে শুধু রোদ্রিকে পাওয়ার নেশা।আর কিছুনা।
একটা রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিল সে।ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় রোদ্রির।তবে কি আজ খারাপ কিছু হতে চলেছে?

চলবে??

[ভুল-ক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।তাড়াহুড়ো করে লিখেছি তাই ভুল হতে পারে]

#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-৮

ফারহান দরজা বন্ধ করে পিছনে ফিরে রোদ্রির ভয়ার্ত চোখে চোখ পরে তার।শব্দ করে হেসে উঠে সে।
হাসির শব্দে ভয়টা দিগুন হয়ে যায় রোদ্রির।চোখের পানি ছেড়ে দেয় সে।

একপা একপা করে রোদ্রির দিকে এগিয়ে যায় ফারহান।রোদ্রিও পিছাতে থাকে।একসময় টেবিলের কোনায় পা লেগে পড়ে যেতে নেয়।পড়ে যাওয়ার আগেই হাত ধরে কাছে টেনে নেয় ফারহান।একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রোদ্রিকে।ফারহানের সপর্শে শরীর কেঁপে উঠে রোদ্রির।ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে সে।চোখের কোঁণ দিয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পরে পানি।কাঁপা গলায় বলে,

-ফারহান প্লিজ ছাড়ুন।এমন করবেন না।

-কেনো জান?আমাকে ভালো লাগে না?হুম?

ফারহান পুরোই মাতাল।কনঠ জড়িয়ে আসছে তার।কথাবার্তায় কেমন যেন জড়তা।

রোদ্রি বুঝতে পারছে ফারহান নিজের মধ্য নেই।রেগে কথা বললে সে আরো এগ্রেসিভ হয়ে পরতে পারে।তাই অনুরোধের সুরেই বলে,

-ফারহান আপনি আমাকে ছাড়ুন।এসব ঠি ক না।আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না?ছাড়ুন বলছি।বলে ফারহানের বাহুতে হাত দিয়ে ধাক্কা দেয় রোদ্রি।কিন্তু সরাতে পারে না।

এবার আর সামলাতে পারেনা ফারহান।একহাত দিয়ে রোদ্রির মুখ চেপে ধরে।ওড়না সরিয়ে ফেলে দিয়ে খুব রুডলি গলায় ঠোঁট চেপে ধরে।অনবরত হাত দিয়ে ধাক্কা দেয় রোদ্রি।কোনোভাবেই ছাড়াতে পারেনা নিজেকে।মনে মনে বারবার আল্লাহকে ডাকে।

উপরতলার ওয়াশরুমে এসেছিল নীরাদ।বের হতেই দেখলো রোদ্রিকে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো ফারহান।
কপাল কিনচিত কুচকে এলো তার।রোদ্রি সেরকম মেয়েই না যে ফারহানের সাথে রুমে রাত কাটাবে।তবে কি ফারহান জোর করছে রোদ্রির সাথে?ভাবতে ভাবতেই সেই রুমের দরজার সামনে যায় নীরাদ।কিছুক্ষন অপেক্ষা করে তাদের বের হওয়ার জন্য।বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেলেও তারা বের হয়না।রুমের থেকে তেমন আওয়াজ পাচ্ছেনা সে।বাধ্য হয়েই দরজায় কান লাগালো নীরাদ।মৃদু কন্ঠে চাপা কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।ভয় পেয়ে যায় নীরাদ।রোদ্রির কিছু হলোনাতো?
দরজা ধাক্কায় সে।ভরাট গলায় ডাকে,

-মিস.রোদ্রি?মিস রোদ্রি?

নীরাদের কন্ঠ শুনে যেন প্রান ফিরে পায় রোদ্রি।ডাকতে চায় তবে পারেনা।শক্ত করে মুখ চেপে আছে ফারহান।
মুখ দিয়ে জোরে জোরে “উমম””উমম” শব্দ করে সে।

-মিস.রোদ্রি?আপনি ঠি ক আছেন?

এবার ফারহানের হাতে কামড় বসায় রোদ্রি।”নীরাদ,প্লিজ বাঁচান আমাকে”বলে চিৎকার দেয় সে।
ফারহান একবার তাকিয়ে আবারো মুখ ডুবায়।তার কানে কোনো কথাই যাচ্ছেনা।

রোদ্রির চিৎকার শুনে নীরাদ দ্রুত কয়েকবার কাঁধ দিয়ে বাড়ি দেয় দরজায় একপর্যায়ে ছিটকিনি খুলে যায় দরজার।ভেতরে ঢুকে এই অবস্থা দেখে দৌড়ে ফারহানের কলার টেনে রোদ্রির কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়।রাগে কপালের রগগুলো ফুলে উঠেছে নীরাদের।ফারহানের নাক বরাবর একটা ঘুষি মারতেই নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে।এমনেই মাতাল ছিল তার উপর আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পরে যায় ফারহান।
আবারো ফারহানকে মারার জন্য হাত বারাতেই আচমকা রোদ্রি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নীরাদকে।নীরাদের বুকে মাথা রেখে পিঠের দিকের শার্ট খামছে ধরে জোরে শব্দ করে কান্না করে দেয়।অস্থির হয়ে উঠে নীরাদ।রোদ্রির কান্না সহ্য হয়না তার।মেয়েটার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে সে।রোদ্রিকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরেনা।আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।কান্নার বেগ আরো বেড়ে যায়।এখনো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে নীরাদ।

-মিস.রোদ্রি?শান্ত হোন।আপনি ঠি ক আছেনতো।কিছু হয়নি।

কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে রোদ্রি।থেমে থেমে বলে,

-আপনি…আপনি না থাকলে তো….

-আচ্ছা,আমি আছিতো।কান্না থামান।ভয়ের কিছু নেই।

রোদ্রিকে আলতো করে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয় নীরাদ।কেউ এই অবস্থায় দেখে ফেললে ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে।
মেঝে থেকে ওড়নাটা তুলে রোদ্রির হাতে দেয়।দ্রুত গায়ে জড়ায় রোদ্রি।মনে মনে আল্লাহর কাছে হাজারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নীরাদকে পাঠানোর জন্য।

চোখের কাজল লেপটে গেছে।লিপস্টিক ছড়িয়ে গেছে।কাঁদতে কাঁদতে চোখফুলিয়ে ফেলেছে রোদ্রি।
পকেট থেকে রুমাল বের করে এগিয়ে দেয় রোদ্রির দিকে।নরম গলায় বলে,

-মিস.রোদ্রি মুখটা মুছে নিন।আর ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন।আপনাকে বাসায় দিয়ে আসব আমি।রাত হয়ে গেছে।

মাথা কাত করে সম্মতি দেয় রোদ্রি।হাত উঠিয়ে ফারহানের দিকে ইশারা করে।

-ওকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবেনা।ওকে আমি দেখছি।আপনি যান।কন্ঠে তীব্র রাগ প্রকাশ প্রায় নীরাদের।

_______________
মাথা নিচু করে গাড়িতে বসে আছে রোদ্রি।হাত দিয়ে চোখ মুছছে বারবার।পাশেই নীরাদ ড্রাইভ করছে।

-তো আপনি আপনার ভাইয়া ভাবির কথা ভেবে চুপ ছিলেন?ফারহান যে দিনের পর দিন আপনার সাথে এমন আচরণ করেছে,আপনার কি মনে হয় আপনার ভাই ভাবি এগুলো জানলে খুব খুশি হতো?আপনি মারাত্মক বোকা একজন মেয়ে।উনাদের যদি আপনি একবার জানাতেন তাহলে হয়তো আজ এই পরিস্থিতি তৈরিই হতোনা।
আপনি কি বুঝতে পারছেন আমার কথা?

কাঁদতে কাঁদতেই উপর নিচে মাথা নাড়ায় রোদ্রি।

কিছুক্ষণ রোদ্রির দিকে তাকিয়ে থাকে নীরাদ।মেয়েটা মনে হয় আজকে চোখের সব পানি শেষ করেই ক্ষান্ত হবে।

-কান্না করা বন্ধ করেবেন না তাইতো?ওকে ফাইন।কান্না করেন।তারপর যখন মাথা ব্যাথা করবে তখন বুঝবেন।এমনেও আপনি নিজের ভালোটা বুঝেননা।আসলে যারা বুঝতে চায়না তাদের বুঝিতে লাভ নেই।
আর আমার কথা শুনে তো আপনার কোন লাভ নেই।আমি তো বাইরের মানুষ।

-আপনি ভুল বুঝছেন।আমি সেরকম বলিনি।আমি..

-আমি তো তাও ভুল বুঝেছি মিস।আপনি তো ভুল ঠি ক কিছুই বোঝেন না।

রোদ্রি কিছু বলেনা।মন খারাপ হয় তার।নীরাদ রেগে আছে।তার সাথে রাগ না দেখালেও সে বুঝতে পারছে।

__________
বাসায় পৌছে কলিংবেল বাজাতেই গেট খুলে মিরা।খুলতে খুলতেই বলে,

-তোর এতো দেরি হলো…এতটুকু বলে থেমে যায় মিরা।সামনে নীরাদের পাশে রোদ্রিকে দেখে অবাক হয়।
বিস্মিত কন্ঠে বলে-

-নীরাদ তুমি?এতরাতে?রোদ্রি..তোমার সাথে?তোর চোখমুখ এমন দেখাচ্ছে কেন রোদ্রি?কি হয়েছে!!

-ভাবি,ওকে রুমে যেতে দিন।আমি বলছি কি হয়েছে।আর রিদান ভাইয়া কি জেগে আছেন?আপনাদের সাথে আমার কিছু কথা ছিল।

-আসো ভেতরে আসো।রোদ্রি রুমে যা।আর নীরাদ আসো, রিদান জেগেই আছে।

রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো রোদ্রি।ও ভাবতেও পারেনি আজকে এমন কিছু হবে।নীরাদের করা কেয়ারগুলো প্রচন্ড ভালো লাগে ওর।কেমন একটা শান্তি শান্তি লাগে।মনে হয় নীরাদ পাশে থাকলে ওর কোন খারাপ হতে পারবেনা।নীরাদ ওর সাথে খারাপ কিছু হতেই দিবেনা।
কিছুদিনের পরিচয় অথচ কত ভরসাপূর্ণ অনুভূতি।
একটা কথা আছেনা,

ভালোবাসার জন্য অনন্তকালের প্রয়োজন নেই।
একটি মূহুর্তই যথেষ্ট!
—–ইভান তুর্গেনিভ

চলবে….???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে