ভেজাগোলাপ পর্ব-১৫+১৬

0
1267

#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-১৫

হলুদ করে ফিরতে বেশ দেরি হয়ে যাওয়ার বাসায় ফিরে গোসল করেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো রোদ্রি।

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই দেখলো মৌ পাশে নাই।ওর সাথেই তো ঘুমিয়েছিলো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় এগারোটা বাজে।।এত বেলা হয়ে গেছে অথচ ওকে কেউ ডাকেনি কেন?

নিচে নেমে দেখলো ওর চাচা চাচীরা সবাই আছে।সকালেই হয়তো চলে এসেছে।সন্ধ্যায়ই ছোট আয়োজন করে রোদ্রির বিয়ে পড়ানো হবে।যদিও রিদানের ইচ্ছা ছিলো বোনের বিয়ে ধুমধাম করে দিবে।তবে রোদ্রির ইচ্ছাটাকেই প্রাধান্য দিয়েছে সে।

হঠাৎই মৌ দৌড়ে আসলো।উত্ফুল্লভাবে বললো,

-চলো চলো আপু তোমাকে মেহেদি লাগিয়ে দেই।

মৌ এর কথার মাঝেই মিরা বললো,

-আরে মেয়েটা কিছু খাক আগে..নাস্তা টা করে নিক তারপর নাহয় মেহেদি লাগিয়ে দিস।এমনেও আজকে বিশেষ একটা দিন।বিভিন্ন কাজে পরে খাওয়ার সময় পাবেনা।

-আচ্ছা যাও খেয়ে নাও।বলে একটা বোকা বোকা হাসি দিলো মৌ।

বসে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে রোদ্রির।
মৌ বসে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে মেহেদি লাগাচ্ছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে নিখুঁতভাবে রোদ্রির হাতে মেহেদি লাগাতে পারাটাই তার জীবনের মূল লক্ষ্য।
রোদ্রি অধৈর্য গলায় বললো,

-মৌ আর কত লাগাবি?হয়েছে তো,অনেক সুন্দর লাগছে।

-আরে ধুর..চুপ থাকো তুমি।ভাইয়া বলে দিয়েছে আমাকে পুরো দুই হাত ভরে মেহেদি লাগিয়ে দিতে।যদি না লাগাও তাহলে জোর করার পারমিশন টাও দিয়ে দিয়েছে।বুঝলা?সো এখন নো কথাবার্তা।

মৌ এর কথায় রোদ্রি অবাক হওয়ার শেষ পর্যায়ে পৌছে গেল।ভ্রু কুচকে বিস্মিত নয়নে বললো,

-মানে?

মৌ এর হুঁশ ফিরলো এতক্ষনে,কোন কথাই পেটে চেপে রাখতে পারেনা সে।নীরাদ তাকে বলেছিলো রোদ্রিকে না বলতে।তবুও সে বলেই দিলো।
জিভে কামড় দিয়ে বললো,

-না কিছুনা।হেহে।

-উনি তোকে কি বলেছেন?

কাঁচুমাচু হয়ে গেল মৌ।

-আসলে আপু,ভাইয়া বলেছে তোমাকে মেহেদি লাগিয়ে দিয়ে সুন্দর করে ছবি তুলে তাকে পাঠাতে।তোমাকে অবশ্য বলতে নিষেধ করেছিলো কিন্তু আমিতো বলেই দিলাম বাদ দাও তুমি ভাইয়াকে না বললেই হবে।

-আচ্ছা,বলবোনা।বলে মুচকি হাসলো রোদ্রি।তার কেমন যেন খুশি খুশি লাগছে।জানেনা কেন?কিনতু খুব খুশি লাগছে।
___________
ফোনের স্ক্রীনে থাকা ছবিটাতে রোদ্রির মেহেদি রাঙা হাত দুটোর দিকে চেয়ে আছে নীরাদ।মেহেদির মাঝেই তার নামটা ফুটে আছে।হাহ্,অবশেষে তার প্রেয়সীর হাতে তার নাম।
কোমল হাতদুটো মেহেদির রঙে কেবলমাত্র তার জন্যই রাঙানো হয়েছে।
বধুবেশে শুধু তার জন্যই অপেক্ষা করবে তার প্রেয়সী।ভালোবাসাটা মানুষকে জীবনসঙ্গি হিসেবে পাওয়ার কথাটা ভাবতেও কেমন প্রশান্তি অনুভূত হয়।

কনের সাজে একদম পুতুলের মতো লাগছে রোদ্রিকে।লাল বেনারসির তার গায়ে।মোটামোটি ভারি সাজ।গয়নাগাটি পড়ানো।পুতুলের মতোই বসে আছে সে।নিচে কাজী চলে এসেছে।নীরাদরাও হয়তো চলে আসবে কিছুক্ষণ পড়ে।
কিছুক্ষণ পরেই তার মানুষটার অর্ধাঙগীনি হয়ে যাবে সে।তাদের অপ্রকাশিত ভালোবাসা পবিত্রতা পেয়ে যাবে।
___________
তিনবার”কবুল”বলে বিয়েটা হয়ে গেলো রোদ্রি আর নীরাদের।এখনো নীরাদ কে দেখার সুযোগ হয়নি রোদ্রির।
কাজি তার সম্মতি নিতে উপরে এসেছিলো।সে কবুল বলে সাইন করে দিতেই নিচে চলে গেছে।

সবার সাথে হাসিমুখেই কথা বলছে নীরাদ।অবশেষে তাদের বিয়েটা হয়েই গেছে।কিন্তু রোদ্রি এখনো নিচে নামছেনা কেন?সে কি বুঝতে পারছেনা তাকে বধুবেশে দেখার জন্য নীরাদ কতটা উযদগ্রীব।

অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো দুজনেরই।
রোদ্রিকে নীরাদের পাশে বসানো হলো।নীরাদ জানে রোদ্রি বরাবরই বেশি লজ্জা পায়।আজকেও তার ব্যাতিক্রম না।উল্টো আজতো লজ্জা পাবার পরিমাণটা একটু বেশিই,বউ বলে কথা।যদিও এই লজ্জা পাওয়াটাকেও ভীষণ ভালোলাগে নীরাদের।

ছবি তোলার জন্য একটু ক্লোজ হতে বললে নীরাদ একহাত দিয়ে রোদ্রিকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে।ধীর কন্ঠে বলে,

-এতো লজ্জা না পেয়ে ক্যামেরার দিকে তাকান মিসেস.নীরাদ।

রোদ্রি হেসে দেয়।নীরাদ মুগ্ধ হয়ে দেখে সে হাসি।নিজেও হেসে দেয়।এ যেন প্রাপ্তির হাসি।একরাশ পুর্ণতায় পরিপূর্ণ হাসি।

চলবে….

#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-১৬

গোলাপ দিয়ে সাজানো নীরাদের ঘর।বিয়ের শাড়ি পড়ে বিছানার মাঝখানটায় বসে আছে রোদ্রি।চোখে মুখে ভর করেছে একরাশ লাজুকতা।দরজা খোলার আওয়াজে মুখ তুলে তাকায় রোদ্রি।নীরাদ এসেছে।

দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে রোদ্রির দিকে দৃষ্টি দিলো নীরাদ।গুটিশুটি হয়ে বিছানায় বসে আছে সে।ধীরপায়ে রোদ্রির পাশে যেয়ে বসে নীরাদ।হাত বাড়িয়ে রোদ্রির হাতদুটোকে আবদ্ধ করে।রোদ্রির চোখে চোখ রেখে বলে,

-আমার সামনে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।ঠিকাছে?

রোদ্রি উপরে নিচে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি দেয়।

-খিদে পেয়েছে?খেয়েছো কিছু?

-জি খেয়েছি।মা খাইয়ে দিয়েছে।

নীরাদ হাসে।পুরুষ মানুষের জীবনে দুইজন নারীর ভূমিকা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ন।একজন তার মা আর আরেকজন তার স্ত্রী।আল্লাহর রহমতে নীরাদের জীবনের এই দুইজন মানুষই খুবই ভালো।

একহাত রোদ্রির গালে রেখে আলতো করে কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায় নীরাদ।চোখ বন্ধ করে ফেলে রোদ্রি।নীরাদের ভালোবাসার প্রথম ছোয়াঁ।
পানজাবির পকেট থেকে একটা বাক্স বের করে নীরাদ।খুলে দুইটা স্বর্ণের চিকন বালা বের করে।নিজেই রোদ্রির হাতে পরিয়ে দেয়।রোদ্রির গালে হাত রেখে বলে,

-এটা কখনো খুলবেনা।ঠিকাছে?

-আচ্ছা।

-ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।মেকাপ তুলে,ভারি শাড়ি ছেড়ে হাল্কা কিছু পরে নাও।

________
একটা সুতির শাড়ি পরে বেরিয়ে আসে রোদ্রি।চুলগুলো ছাড়া।সামনের কিছু চুল ভিজে গেছে।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে নীরাদ একপাশে আধশোয়া হয়ে বসে ফোন চালাচ্ছে।পরণে সাদা স্যান্ডো গেনজি আর ট্রাওজার।

-একসাথে ঘুমাতে প্রবলেম হবে?তাহলে আমি নাহয় সোফ..

-কোন সমস্যা নেই।বলে মুচকি হাসে রোদ্রি।

সাধারণভাবে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে রোদ্রিকে।নীরাদ মুগ্ধ নয়নে দেখে।মেয়েটা শাড়ি পরে আছে।এলোমেলোভাবে গায়ে জড়ানো শাড়িটা।বারবার টানাটানি করছে সে।বুঝাই যাচ্ছে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।
নীরাদ নরম কন্ঠে বলে,

-শাড়ি পরে আরামে শুতে পারবেনা,অসুবিধা হবে।সকালে শাড়ি পরো।এখন কামিজ পরে নাও।

-কোনো অসুবিধা হবেনা।আমি শাড়িই পরবো।শাড়ি না পরলে বিয়ে বিয়ে ভাব আসবেনা।

নীরাদ শব্দ করে হেসে দেয়।রোদ্রি মুখ কুচকে তাকায়।সন্ধিহান কন্ঠে বলে,

-হাসছেন কেন?আমি কি হাসার মতো কিছু বলেছি?

-নাহ্।ঠিকাছে।এখন ঘুমাও।কাল আবার বৌ-ভাত।রেস্ট না নিলে পরে অসুস্থ হয়ে পরবে।

নীরাদের বা পাশে যেয়ে শুয়ে পরে রোদ্রি।লাইট নিভিয়ে দেয় নীরাদ।সারাদিনের ক্লান্তিতে কিছুক্ষণেই ঘুমিয়ে পরে রোদ্রি।ঘুমের ঘোরে একহাত মেলে দেয় নীরাদের বুকের উপর।নীরাদ আলতো করে সেই হাতের উপর হাত রাখে।কতোইনা অপেক্ষা করেছে সে এই সময়টার জন্য।
জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে পরছে রোদ্রির মুখের উপর।ঘুমন্ত মুখের স্নিগ্ধতা যেন বাড়িয়ে দিচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
___________
সকাল ৯টা।
নীরাদের ঘুম ভেঙে যায়।কাঁধে ভারি কিছু অনুভূত হতেই চকিতে তাকায় সে।তার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রোদ্রি।বুকে রাখা হাতটা সারারাতেও ছাড়েনি নীরাদ।
একহাত দিয়ে কাঁথা টেনে দেয় নীরাদ।শাড়ি আর শাড়ির জায়গায় নেই মেয়েটার।ঘুম থেকে উঠে কাপড়ের বেহাল দশা দেখে অন্যকিছু ভেবে ফেলতে পারে।
খুব সন্তর্পণে রোদ্রির মাথাটা বালিশে রাখে নীরাদ।হাতটা ছাড়িয়ে উঠে যায়।

ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে রোদ্রি উঠে গেছে।পিটপিট করে তাকিয়ে আছে নীরাদের দিকে।
ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে চুলটা আচরাতে আচরাতে বলে,

-ঘুম হয়েছে?

-হু।

-উঠে কাপড় পাল্টে রেডি হয়ে নাও।মেহমানরা আসবে তোমাকে দেখতে।বলতে বলতে কাবার্ড থেকে দুটো বক্স বের করলো নীরাদ।টেবিলে রেখে বলল,

-এই গহনা গুলো পরে নিও।আমি নিচে যাচ্ছি।রাতে রিসিপসন অনেক কাজ আছে।

রোদ্রি টেবিলে রাখা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।শাওয়ার নিয়ে শাড়ি পরে বেরিয়ে আসে।গহনাগুলো পরে নিচে চলে যায়।

নিচে নামতেই দেখে….

চলবে…

[বি:দ্র:ভুলক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন প্লিজ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে