ভেজাগোলাপ পর্ব-৪+৫

0
1210

#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা_খান❤️
#পর্ব-৪

সোফায় বসে আছে নীরাদ।বেশ হাসসোজ্জল ভাবে কথা বলছে তার ভাইয়ের সাথে।”উনি এখানে কি করছেন?”প্রশ্নটা মাথায় আসলে মুখে বলার আগেই ভাবি পাশ থেকে বলল,

-তোর ভাইয়াই আসতে বলেছে,বুঝলি?ডিনারটা আমাদের সাথেই করতে বলেছে।সেদিন এত সাহায্য করল কিছু না করলে ব্যাপারটা খারাপ দেখায়।

-হুম,ভালো করেছো।

-তোর ফিরতে এত দেরি হলো যে?

-পরে বলবোনে ভাবি।এখন একটু ফ্রেশ হয়ে আসি?

-আচ্ছা যা।

ভাইয়ের সাথে দেখা করে,নীরাদকে সালাম দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল রোদ্রি।

________________

অন্ধকার রুমে আধশোয়া হয়ে বসে আছে ফারহান।হাতে জলন্ত সিগারেট।পাশেই বিয়ারের কাঁচের বোতল।আজকাল এসবে তার নেশা হয়না।বোতলের পর বোতল বিয়ার খেলেও মাতাল হয়না সে।তার চোখেমুখে শুধু একটাই নেশা,আর সেটা হলো রোদ্রির নেশা।রোদ্রিকে কাছে পাওয়ার নেশা সে কিছুতেই কাটাতে পারে না।
গত একবছর থেকে রোদ্রিকে নানাভাবে কাছে পাওয়ার চেষ্টা করেছে সে।কিন্তু সব চেষ্টাই বিফলে গেছে।মেয়েটা অনেক ঘাড়ত্যাড়া।সামান্য ছুয়ে দিলে এত রাগের কি আছে বুঝতে পারেনা সে।বিছানায় নাহয় বিয়ের পরেই যাবে।

টেবিলে হরেকরকম খাবার সাজানো।নীরাদ বসে আছে চুপ করে।ভাবির কথায় মনে হচ্ছে সে এগুলো সব নীরাদকে খাইয়ে ছাড়বে।
“রোদ্রি কোথায় মিরা?”রিদানের প্রশ্নে মুখ তুলে তাকায় মিরা।ব্যস্ত কন্ঠে বলে,

-ডেকেছি…চলে আসবে।

মিরার কথা শেষ না হতেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে রোদ্রি।নীরাদ কয়েক সেকেন্ড পলোকহীন তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।একটা মেয়েকে সাধারণভাবেই এতটা অসাধারণ কিভাবে লাগে?এর আগে যে দুইদিন দেখা হয়েছিলো তখন রোদ্রির মাথায় ঘোমটা দেয়া ছিল।কিন্তু আজ নেই।চুলগুলো হাতখোঁপা করা।

নীরাদের একেবারেই সামনের চেয়ারটায় বসেছে রোদ্রি।রোদ্রির পাশে মিরা।টুকটাক কথা হচ্ছে তাদের মাঝে।মিরা বারাবার ওঠে এটা ওটা দিচ্ছে নীরাদের প্লেটে।
রোদ্রি একমনে খাচ্ছে।খাওয়ার সময় কথা তার পছন্দ না।হঠাৎই নীরাদ বলে উঠল,

-আপনার বোন তো আমাকে রীতিমত চোরই বানিয়ে দিয়েছিল ভাইয়া।

রোদ্রি স্থির দৃষ্টিতে নীরাদের চোখে চোখ রাখে।লোকটার চোখে দুষ্টুমি খেলা করছে।মুখে প্রশস্ত হাসি।

-কি বলো!! রোদ্রি নীরাদকে তুই চোর বলেছিস?

রোদ্রি রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ নীরাদের দিকে।

-আমি কি জানতাম নাকি তুমি হসপিটালে?একজনের ফোনে অন্যকারো কন্ঠ শুনে যে কেও চোর ভাবাটাই খুব সাভাবিক নয় কি?

শব্দ করে হেসে ওঠে রিদান আর মিরা।

-ও একটু বাচ্চামো সভাবের।তুমি কিছু মনে করো না।

-হ্যাঁ সেটা তো আগেই বুঝেছিই।

“নীরাদ,তুমিতো কিছুই নিচ্ছো না।বলে মিরা আবারও উঠতে গেলে রোদ্রি থামিয়ে দেয়।

-তুমি এতবার উঠোনাতো।আমি দিচ্ছি।বলে তরকারির বাটি হাতে নেয়।

নীরাদের প্লেটে তরকারি দিয়েই যাচ্ছে রোদ্রি।নীরাদ বারবার না করা সত্তেও দিয়ে যাচ্ছে।নীরাদ থামানোর জন্য বেখেয়ালিভাবে রোদ্রির হাত ধরে শক্তকরে।রোদ্রি থেমে যায়।চমকিয়ে নীরাদের দিকে তাকায়।নীরাদ দ্রুত ছেড়ে দেয়।অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে দুজনেই।তবে রিদান আর মিরার সামনে কিছু বলেনা।

খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে রাখে রোদ্রি।নীরাদের দিকে পানি এগিয়ে দেয়।গ্লাস নেয়ার সময় নীরাদের চোখে স্পষ্ট জলজল করে উঠে রোদ্রির অনামিকা আঙ্গুলে পড়ানো সাদা পাথরের আংটি।মনে মনে দীর্ঘ:শ্বাস ছাড়ে সে।
রিদানের থেকে কথার ছলে জানতে পেরেছে মাত্র দেড় মাস আগেই ওর বাগদান হয়েছে।ইশশ..কেন যে আর কিছুদিন আগে তার সাথে রোদ্রির দেখা হলোনা?হলে হয়তো তার সাথে এই হৃদয়ের অসহ্য দহন যন্ত্রণার সাক্ষাত হতোনা।

চলবে??

#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-৫

দুপুরে ভার্সিটির পর বিকেল পর্যন্ত কোচিং করে তারপর বাড়ি ফেরে রোদ্রি।আজকে কোচিং করে বের হয়েই দেখে,ফারহান গেটের সামনে গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।রোদ্রি এগিয়ে যেতেই হাত টেনে গাড়িতে বসায়।
রোদ্রি তাড়াহুড়ো করে বলে উঠে,

-আমি আপনার সাথে যাবোনা।বাড়ি যাবো প্লিজ।

ফারহান সবেমাত্র সিটবেল্ট বাঁধছিলো।রোদ্রির কথায় ওর দিকে ফিরে তাকায় সে।রোদ্রির চোখে চোখ রাখে সে।চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে রোদ্রি।একহাত দিয়ে নিজের সিটবেল্টটা মুঁচরাতে থাকে সে।সে জানে ফারহান তার ভাই ভাবির অনুমতি নিয়েই তাকে নিতে এসেছে।তাই এই অযৌক্তিক যুক্তি দেখিয়ে লাভ নেই।
নতুন কোন বাহানা খোঁজার জন্য মস্তিস্কের মধ্য কয়েকবার চিরুনি অভিযান চালায় সে।
গাড়ি স্টার্টের শব্দে হুস ফিরে তার।করুণ চোখে ফারহানের দিকে তাকাতেই ভরাট গলায় বলে উঠে ফারহান,

-সিটবেল্টটা মুঁচরানোর জন্য নয়।ওটা বাঁধো জান।নয়তো বাঁড়ি খেয়ে বাহানা খোঁজার সেই মাথাটাই থাকবে না।
একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ড্রাইভিংয়ে মন দিলো সে।

বাধ্য হয়ে সিটবেল্ট বেঁধে সিটে মাথা এলিয়ে দিল রোদ্রি।খুব ক্লান্ত লাগছে তার।ঘুম পাচ্ছে অনেক।

আড়চোখে একবার রোদ্রির দিকে তাকাল ফারহান।এই মেয়েটাকে দেখলে ওর কামনা জাগছে ঠি কই তবে কোথায় যেন কিছু একটা বাঁধা দেয়।অনেক মেয়ের সাথেই সম্পর্ক ছিল ওর তবে ওই প্রথম মেয়ে যার সাথে জোর করে তেমন কিছুই করতে পারে না সে।মায়া লাগে খুব।

নিজের বাসার রোডে যেয়েও গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলে ফারহান।রোদ্রির বাসার সামনে এসে গাড়ি থামায়।
রোদ্রির কাছে যেয়ে হাল্কা করে ডাকে।রোদ্রি একটু নড়ে আবার ঘুমিয়ে যায়।ফারহান একদৃষ্টিতে কিছুক্ষন রোদ্রির গলার তিলটায় তাকিয়ে থাকে।হাল্কা করে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়।ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠে রোদ্রি।
ফারহান নি:শব্দে হেসে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।রোদ্রিকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে।
রিদান আর মিরার প্রশ্ন এড়িয়ে রোদ্রির রুমে যেয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় আলতো করে।নরম বিছানা পেয়ে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরে রোদ্রি।

ফারহান নিচে নামতেই মিরা প্রশ্ন করে,

-তুমি না বললে তোমার বাসায় নিয়ে যাবে?নিয়ে এলে যে?

-গাড়িতেই ঘুমিয়ে গেছে,ভাবি।ক্লান্ত লাগছিলো দেখে,আজকে রেস্ট নিক।অন্যদিন নিয়ে যাবোনে।

বিদায় জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসে ফারহান।ওকে ঘুমাতে দেখে যে শান্তিটা লাগছে সেটা জোর করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার মধ্য পেতোনা সে।

মেসেজের টুংটাং শব্দে ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই ফোনটা হাতে নেয় নীরাদ।
মেসেজে ঢুকে কপাল কুঁচকে যায় তার।বেশ কিছু ছবি পাঠিয়েছে ইমন।ডাটা কানেকশন স্লো তাই দেখা যাচ্ছেনা ছবিগুলো।এক মধ্যই আরিফের কল আসে।রিসিভ করে সে,

-হ্যাঁ,আরিফ বলো।

-স্যার,রোদ্রি ম্যাডাম আর উনার ফিওনসের কিছু ছবি পাঠিয়েছে আপনাকে।দেখেছেন?

-না,দেখিনি এখনো।রোদ্রি ঠি ক আছে?

-জি স্যার।

-আচ্ছা,ঠি ক আছে।তোমার পেমেন্ট পৌছে যাবে।

-আচ্ছা স্যার।খুশিমনে ফোন রেখে দিল আরিফ।

ছবি নিয়ে বেশি মাথা ঘামালোনা নীরাদ।রোদ্রি ঠি ক আছে এটাই যথেষ্ট তার জন্য।ফারহান ছেলেটার উপর ভরসা নেই তার।ফোনটা পাশে রেখে আবারও কাজে মন দিলো সে।

সন্ধ্যার দিকে ঘুম ভাঙে রোদ্রির।নিজেকে নিজের বিছানায় আবিষ্কার করে বেশ অবাক হয় সে।সে তো ফারহানের সাথে ছিলো।তাহলে এখানে কিভাবে এল?

দরজায় নক করার শব্দ হয়।

-রোদ্রি উঠেছিস?

-হ্যাঁ,আসো ভাবি।

রুমে ঢুকে লাইট জালায় মিরা।

-ভাবি?আমি না উনার সাথে ছিলাম?এখানে কি করে এলাম?

রোদ্রির কথায় ওর পাশে বসে মিরা।মাথায় হাত বুলিয়ে তখনকার কথা বলে।রোদ্রি অবাকের শেষ পর্যায়ে পৌছে যায়।তার ছোট্ট মাথায় একটা প্রশ্নই ঘোরে,”অসভ্য লোকটা এত ভালো হলো কেমনে”?

-ফারহান তোর অনেক খেয়াল করে রোদ্রি।দেখবি ওর সাথে তুই অনেক সুখী হবি।তোর ভাই তোর জন্য সঠিক মানুষই বেঁছে নিয়েছে।

মিরার কথার জবাবে কিছু বলেনা রোদ্রি।ভাবে,এই মানুষ দুইটাকে সে কিভাবে মানা করতো বিয়ের জন্য?

রাতের বেলা ফোন নিয়ে বসে নীরাদ।রোদ্রিদের ছবিগুলো বের করে অলস ভঙ্গিতে।প্রেয়সীকে দেখার প্রবল ইচ্ছা ফুটে উঠেছে তার।সামনে থেকে না হোক ছবিতেই তৃষনা মিটিয়ে নিবে সে।
তবে হয় তার উল্টো মুখে হাসির বদলে মুহুর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তার।মাথাটা ভারি ভারি লাগে।

ফোনটা পাশে রেখে চোখবন্ধ করে সে।রাগ কমানোর চেষ্টা করে।চোখের সামনে রোদ্রিকে চুমু খাওয়ার দৃশ্য ভেসে উঠে।কেমন এলোমেলো লাগে তার।কিনতু এটাতো সাভাবিক তবে সে কেনো মেনে নিতে পারছেনা?রোদ্রির মত থাকলে, এটাই তো হওয়ার ছিল, সে তো জানে রোদ্রি তার না।তবে কেন এত যন্ত্রনা?কেন নিজেকে কেন গুছিয়ে বোঝাতে পারছেনা সে?কয়েকদিনে এতটা এলোমেলো কেন হয়ে গেল সে?

হাজারটা “কেন” থাকলেও উওর একটারও নেই।নিজের জীবনের “প্রিয়” টাকে অন্যকারো “প্রিয়” হতে দেখার
ব্যাথাটা বুঝি এতটা তীব্র?

চলবে??

[ভুল-ক্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে