ভুল পর্ব-১৮+১৯

0
2278

#ভুল ১৮তম পর্ব
#jannat_Nur

প্রায় একমাস হতে চলল সুফিয়া বেগম মানসিক হসপিটাল চিকিৎসাধীন রয়েছেন!
আগের থেকে অনেকটা উন্নতি হয়েছে তার মানসিক অবস্থার। এরমধ্যে রফিক মিয়া ঢাকায় গিয়েছিলেন অবন্তীকে নিয়ে আসতে। অবন্তী বলেছে যতদিন মামি ভালো না হয় ততদিন আমি এখানে থাকবো। বাবা মেয়ে একপ্রকার ঝগড়া হয়ে যায় কিন্তু তবু রফিক মিয়া অবন্তীকে নিয়ে আসতে পারেনি।
রফিক মিয়া মেয়েকে বলে এসেছে আজ থেকে তুই আমার মেয়ে না, যে মেয়ে বাবা-মার কথা শুনে না তেমন মেয়ের দরকার নেই। অবন্তী তার বাবাকে বলে দিয়েছে এটা আর নতুন কি আমি তোমাকে বাবা বলে মনে করি না।

ঢাকায় কয়েকটা ফ্যাশন হাউসের সিরাত ইন্টারভিউ দিয়েছে, তার ইচ্ছা তার মা ভালো হলে বাবার বাসায় ফিরে যাবে না। মাকে নিয়ে ঢাকাতেই থাকবে, তাই তাকে নিজে কিছু করতে হবে! সে কারণেই কয়েকটা ফ্যাশন হাউজে তার ইন্টারভিউ দেওয়া।
আমেরিকার নিউ জার্সি ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের উপর গ্রেজুয়েশন করা এমন মানুষকে সব ফ্যাশন হাউসে ই চাইবে। দুইটা ফ্যাশন হাউজ থেকে তার চাকরি নিশ্চিত হয়েছে, এখন সিরাতের যেখানে ভালো লাগবে সুযোগ সুবিধা বেশি পাবে সেখানে চাকরিটা করবে। বিডি ফ্যাশন নামের আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাশন হাউসে, ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়ে সিরাত ঢাকার উত্তরায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিলো। সিরাত এখন অপেক্ষা করছে তার মা সুস্থ হলেই মাকে নিয়ে এখানে চলে আসবে।

আমিরুল ইসলাম যখন শুনতে পারলেন তার ছেলে অন্যের ফ্যাশন হাউসে চাকরি করবে, এটা সে মানতে পারছেন না। সে নিজে অনেক টাকার মালিক গার্মেন্টস ব্যবসা আছে, তার অফিসে তার ছেলে এমডি হিসেবে থাকবে, আর তার একমাত্র ছেলে করবে অন্যের ফ্যাশন হাউজে চাকরি। এটা কিছুতেই আমিরুল ইসলাম মেনে নিতে পারছেন না, ঢাকায় এসে সিরাতের সাথে সামনাসামনি হলো।

আমি এটা কি শুনলাম তুমি নাকি বিডি ফ্যাশন হাউসে চাকরি নিয়েছো! তোমাকে কেন অন্যের ফ্যাশন হাউসে চাকরি করতে হবে, আমার গার্মেন্টস ব্যবসা কে দেখাশোনা করবে? তুমি আমার একমাত্র ছেলে হয়ে অন্যের অধীনে চাকরি করবে। তোমার অধীনে চাকরি করবে অনেক মানুষ, আর তুমি কিনা অন্যের ফ্যাশন হাউসে কাজ করবে। আমি চাই তোমার মা সুস্থ হলে বাসায় নিয়ে এসে তুমি আমার সাথে বিজনেস করবে।

স্যরি পাপা আমি তোমার কথা রাখতে পারব না! কথা না রাখার প্রথমত কারণ হলো আমার মাকে তোমাদের এখানে নিয়ে যাব না। আর দ্বিতীয়ত আমি আমার মাকে নিয়ে আলাদা থাকতে চাই, তোমার সাথে থাকবো না।

সিরাত দেখো এরকম করো না, আমি ভুল করেছি তুমি আমার ছেলে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি! তোমার মা সুস্থ হোক তার কাছে ক্ষমা চাইবো, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমরা এখন একসঙ্গে থাকবো। আর তোমার মাকে যে জোর করে ডিভোর্স দিয়েছিলাম সেখানে তোমার মায়ের সম্মতি ছিল না, তাই আমাদের ডিভোর্সটা হয়নি! দুজনের মতামতের ভিত্তিতে ডিভোর্স হয়, তোমার মায়ের মতের মূল্য দেইনি আমি, তাহলে তোমার মাকে ডিভোর্স দেওয়া হয়নি।

পাপা সেটা হয় কি হয়নি আমার জানার কোন দরকার নেই, আমি তোমার সাথে থাকবো না। আমাকে নিয়ে ২১ বছর তুমি ছিলে, নাহয় আরো ২১ বছর আমি তোমাকে ছাড়া আমার মায়ের সঙ্গে থাকলাম। সেই একুশ বছরের আমার মা যে কষ্টটা পেয়েছিল সেই কষ্টটা তোমার বুঝতে হবে, আমি তোমাকে বোঝাতে চাই সন্তান হারানোর কষ্ট।

আমিরুল ইসলাম অনেক আকুতি মিনতি করেও সিরাতকে বুঝাতে ব্যর্থ হলেন! তার মনে হচ্ছে মরে যেতে পারলে ভালো হতো। আত্মহত্যা করা মহাপাপ যদি না হতো আমিরুল ইসলাম আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেন। এত আদরের ছেলে তার সাথে এরূপ ব্যবহার করবে স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। এটা মনে হয় তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত, কি আর করা শত কষ্ট হলেও এ প্রায়শ্চিত্ত তার করতেই হবে।

সিরাতের অফিসে যেতে হয় সকাল ৯ টা এবং ফিরে বিকেল সাড়ে চারটায়, তারপর এসে হসপিটালে যায়। অবন্তী এমনভাবে সুফিয়া বেগমের খেয়াল রাখে সিরাতের আর কোন ভাবনা নেই। সে জানে অবন্তী মনে প্রাণে তার মাকে সুস্থ করতে চেষ্টা করতেছে। নিজের মেয়ে মায়ের জন্য যতটুকু করে অবন্তী তার মায়ের জন্য ততটাই করছে। সিরাতের মনে হয় অবন্তী রফিক মিয়ার মেয়ে না, বাবা এত নিষ্ঠুর এবং নিচু মনের মানুষ আর মেয়েটা হয়েছে অন্যরকম। অবন্তী আছে বলেই সিরাত নিশ্চিন্তে চাকরি করতে পারছে! মেয়েটা তার মার জন্য অনেক করতেছে।
হয়তো এটাও কারণ হতে পারে তার বাবার জন্য আমার মায়ের এই অবস্থা, তাই অবন্তী আমার মাকে সুস্থ করতে আম্মুর সাথে আছে, সিরাত মাঝেমাঝে এমনটাই ভাবে।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজ পড়ে সিরাত যখন মসজিদ থেকে বের হয়, মসজিদের সামনে অসুস্থ একটা লোক খুড়িয়ে খুড়িয়ে আসছিল! সিরাত তার পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছিলো লোকটা তাকে দেখে বলল বাবা আমাকে কিছু সাহায্য করবে? আমি এখানে এসেছি সাহায্য পাবার আশায়। ঢাকা শহরের প্রায় সব মসজিদে ঘুরে ঘুরে সাহায্য তুলতেছি, আমি অসহায় মানুষ আমাকে যদি তুমি সাহায্য করো খুব উপকৃত হবো। আমার মনে হচ্ছে তুমি অনেক ভালো মানুষ আমাকে কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করবে। আমি জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি যদি অপারেশন না করতে পারি আমার পায়ে পচন ধরে যাবে। ডাক্তার বলেছে তাড়াতাড়ি অপারেশন করতে, অপারেশন করতে দুই লাখ টাকা লাগে। খেতে পারি না দুই লাখ টাকা কোথায় পাবো। এক মাস ধরে ঘুরে ঘুরে বিশ হাজার টাকার মতো জমিয়েছি, আরো এক লাখ আশি হাজার! এই টাকা জমাইতে আমার এক দেড় বছরের লেগে যাবে, ততদিনে আমার পায়ে পচন হলে ক্যান্সার হয়ে আমি মারা যাব।

লোকটার কথা শুনে সিরার তাকে ধরে নিয়ে মসজিদের পাশে বেঞ্চে বসলো। সিরাত লোকটার কাছে বসে জানতে চাইলো আপনার পায়ে কি হয়েছে দেখি, কোথায় পচন ধরেছে।

লোকটা লুঙ্গি উঁচু করে হাটু বের করলেন, কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা হাটু দেখিয়ে বললেন দুই বছর আগে এখানে একটা ফোঁড়া উঠেছিল! প্রথমে এত গুরুত্ব দেইনি সেই ফোঁড়া থেকে আস্তে আস্তে ঘা হয়ে যায়। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি ভালো হয়নি, তাই ঢাকায় এসেছি। ডাক্তার বলেছে তিন মাসের মধ্যে অপারেশন করতে, না হলে নাকি আমাকে বাঁচানো যাবে না। এক মাস তো চলে গেল আর এই দুই মাসের মধ্যে আমি এক লাখ আশি হাজার টাকা কোথায় পাবো।

কেন আপনার ছেলে মেয়ে নেই? তাদেরকে বলেন টাকার জোগাড় করতে।

আমার কপাল, ছেলে থেকেও না থাকার মত। দুইজন ছেলে আছে তারা বলে আমরা ঠিকমত খেতে পারিনা তোমাকে চিকিৎসার টাকা কোথা থেকে দিবো।

আপনার কি জমিজমা নেই সেগুলো বিক্রি করে চিকিৎসা করেন, জীবনের মূল্য দেন আগে।

জমি ছেলেদের নামে লিখে দিয়েছি, এখন তারা বিক্রি করতে দিবে না। বলে জমি বিক্রি করে দিলে আমরা থাকবো কোথায়, তোমার বয়স হয়েছে যতদিন হায়াত আছে বেঁচে থাকবে, মরন আসলে মরে যাবে।

বল বাবা কেউ কি এভাবে কষ্ট পেয়ে মরতে চায়। আমার এখানে প্রচুর ব্যথা করে খুব কষ্ট করে লাঠি ভর দিয়ে হেঁটে হেঁটে টাকা তুলছি। আমার স্ত্রী সেও আমাকে দেখতে পারেনা, সেও ছেলেদের পক্ষে। এই শেষ জীবনে এসে বুঝতে পারছি জীবনে যা পাপ করেছি এই পাপের শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছেন।

আরে না আপনি ভুল ভাবছেন আল্লাহ মানুষকে বিপদ আপদ রোগব্যাধি দিয়ে পরীক্ষা করেন! দেখে তার উপর মানুষ বিশ্বাস রাখে কিনা। ধৈর্য ধরেন ঠিক হয়ে যাবে।

না বাবা আমার মত পাপী হয়তো এই দুনিয়ায় কমই আছে, কি পাপ না করেছি আমি। সবকিছু আমার দ্বারা সম্ভব ছিল! টাকার জন্য আমি সব করেছি, আর এখন এই টাকার কারণেই চিকিৎসা করতে পারতাছি না। নিজের স্ত্রী সন্তান আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, চিকিৎসা করাতে ঢাকা আসার জন্য ছেলেদেরকে বলছিলাম, তারা আসেনি আমার স্ত্রী এসেছিল। আমাকে হসপিটালে রেখে আবার চলে গেছে, তাকে বলছিলাম আমাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে নিয়ে যেতে সাহায্য চাইতে, সে বলল পারবেনা। আমাকে রেখে গ্রামে চলে গেল।

কি বলেন আপনার স্ত্রী আপনাকে রেখে চলে গেল! মানুষ এমনও হয়, এরকম একজন অসুস্থ মানুষকে রেখে কিভাবে তিনি গেলেন। আপনার গ্রাম কোথায়

আমার গ্রাম নবীনগর গাজীপুর।

কি বলেন আপনি নবীনগরের? আমার গ্রামের বাড়ি তো সেখানে।

তোমার গ্রামের বাড়ি নবীনগর, তোমার বাবার নাম কি?

নবীনগরের সিকদার বাড়ি চেনেন, শিকদার বাড়ির বড় ছেলে আমিরুল ইসলাম আমার বাবা।

অসুস্থ ফজল উদ্দীন সিরাতকে প্রশ্ন করলেন তুমি আমিরুলের ছেলে, আমিরুল ইসলাম সিকদার তোমার বাবা। তোমার বাবা-না আমেরিকা থাকে তিনি কি দেশে চলে আসছেন? তোমরা কয় ভাইবোন?

আমরা বাংলাদেশে আসছি এক বছর হবে, আমার কোন ভাইবোন নেই, আমি বাবার একমাত্র সন্তান।

কেন তোমার বাবা কি দ্বিতীয় বিয়ে করেননি? দ্বিতীয় পক্ষের কোন ছেলেমেয়ে নেই।

না তিনি আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি, কেন আপনি আমার বাবার পরিচিত নাকি।

ফজল উদ্দিন গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন, তিনি কি যেন ভাবছেন। সিরার তাকে জিজ্ঞেস করল কি হলো বলেন চাচা আপনি আমার বাবার পরিচিত।

তোমার মায়ের নাম সুফিয়া বেগম, তুমি সুফিয়া বেগমের ছেলে তাই না। মা ছাড়া বড় হয়েছো শুধু আমার কারণেই। আজকে আমার এই পরিণতি কেন জানো, সামান্য কিছু টাকার কারণে একটা নিরপরাধ মানুষের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি।

আপনি কি বলছেন, আপনি কিভাবে আমার মায়ের জীবন নষ্ট করলেন।

তোমার মা কি এখনো বেঁচে আছে, তাকে খুঁজে পেয়েছো?

আমি আমেরিকা থেকে আসার পর অনেক চেষ্টা করে মাকে খুঁজে পেয়েছি, এখন সে ঢাকা মানসিক হসপিটালের ভর্তি আছে।

শুনেছিলাম তোমার মা তোমার কারণে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় তোমাকে খুঁজেছে। এই সব হয়েছে আমার কারণে।

আপনার কারণে কেন আমার মা অপরাধী হয়েছে সেটা যদি ক্লিয়ার করে বলতেন।

তাহলে শুনো, আমি তখন তোমার ছোট ফুপা রফিক মিয়া সাথে ব্যবসা করতাম। আমাদের মধ্যে অনেক মিল ছিল, এমন কোন কাজ করিনি আমরা যা বলা যাবে না! সব অন্যায় কাজ আমাদের দ্বারা হয়েছে। বলা গেলে আমাদের চরিত্র একদমই ভালো ছিল না। রফিক মিয়ার ইচ্ছা ছিল তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক করার, সে আমাকে অনেকবার বলেছে সুফিয়াকে পছন্দ করে। একদিনের জন্য হলেও তাকে সে পেতে চায়। কিন্তু তোমার মা তাকে সে সুযোগ দেয়নি, অনেক ভালো চরিত্রের ছিল তোমার মা। রফিক মিয়া সুযোগ না পেয়ে তোমার মায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তার ধারণা ছিল তোমার বাবা যদি তোমার মাকে ডিভোর্স দেয়, সে তাকে বিয়ে করবে। একদিন নাকি তোমার মায়ের রুমে যেয়ে তাকে পালিয়ে যাবার জন্য প্রস্তাব দেয়। তোমার মা তাকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে, রফিক বলে তার সাথে রাত কাটাতে। তখন তোমার মা রফিককে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড় খাওয়ার পর আমার সাথে এসে বলে যেভাবেই হোক এই মহিলাকে আমি হাতের মুঠোয় নেব, তার অহংকার আমি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ছাড়বো। আমি তাকে বললাম সেটা কিভাবে করবি। সে বলল তোর একটু সহযোগিতা দরকার, তুই যদি আমাকে সাহায্য করিস সুফিয়াকে আমি হাতের মুঠোয় পাব! বন্ধু হয়ে তুই আমার জন্য এই কাজটা করতে পারবি না। আমি বললাম ঠিক আছে কি করতে হবে আমাকে বল, বন্ধু হয়ে বন্ধুর জন্য সব করতে পারি আর তোকে সাহায্য করতে পারবো না। রফিক মিয়া বলল রাতের অন্ধকারে আমাকে সুফিয়া বেগমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। রাত ঠিক দুইটা তখন সে উঠে সবাইকে ডেকে দেখাবে সুফিয়া বেগমের রুম থেকে পুরুষ মানুষ বের হয়ে যাচ্ছে। আমি তখন এক বাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। বললাম এটা তো একটা সামান্য ব্যাপার, তোর জন্য এতটুকু করতেই পারি। কিন্তু এটা ভেবে দেখলাম না একটা নিষ্পাপ মহিলার সংসার ভেঙে যাবে, তার দুধের শিশু এতিম হবে। এতই পাপিষ্ঠ ছিলাম এই চিন্তা ধারা মাথায় আসেনি। তার প্ল্যান অনুযায়ী আমি তাই করলাম, আমি রাত ২ টার আগে তোমার মায়ের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। রফিক মিয়া তখন উঠে তোমার ফুপিকে ডাক দিছে এবং তোমাকে চাচাদের ডাক দিয়েছে। তারা সবাই দেখেছে আমি তাদের বাসা থেকে বের হয়ে পালিয়ে গিয়েছি, কিন্তু কেউ আমাকে চিনতে পারেনি। তারপরে শুনেছি তোমার বাবা বিদেশ থেকে এসে তোমাকে রেখে দিয়ে সুফিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। রফিক মিয়া তখন তোমার মায়ের কাছে গিয়ে আবারও সেই প্রস্তাব দিয়েছিল, তোমার মা তখন তোমার চিন্তায় পাগল প্রায় অবস্থায়। রফিক মিয়ার কথায় তাকে চড় থাপ্পড় মেরে সেখান থেকে চলে গিয়েছিল। রফিক মিয়া পারেনি তোমার মায়ের সাথে খারাপ কিছু করতে। কিছুদিন পর শুনি তোমার মা তোমার সুখে পাগল হয়ে ঢাকা চলে গিয়েছে। যে পাপ আমি করেছি তখন তা না বুঝলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে উপলব্ধি করতে থাকি জীবনের সর্বোচ্চ পাপ করেছি তোমার মায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা নাটক করে। সেটার শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছে, কিন্তু আমি চাই তোমার মায়ের জীবনটা নষ্ট করার পিছনে যে ব্যক্তি মূল ষড়যন্ত্রকারী তারা শাস্তি হোক।একজন নির্দোষ ব্যক্তি এত বছর অপরাধ না করে শাস্তি পেয়েছে, আর সে অপরাধী হয়ে আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছে তার শাস্তি হওয়া দরকার। তার ভালো মানুষের মুখোশটা সবার সামনে উন্মোচিত হবার প্রয়োজন।

আপনি এ কথাগুলো সবার সামনে বলতে পারবেন।

অবশ্যই বলতে পারবো অন্তত সত্য বলে মরতে পারলে কিছুটা পাপ মোচন হবে আমার।

চলবে….

#ভুল ১৯তম পর্ব
#jannat_Nur

চাচা আপনি যে কথাগুলো বললেন এই কথাগুলো একদম সত্যি তো? দেখুন কোন মিথ্যা বলবেন না। কারণ আমি আমি চাই সত্যিটাই সবার সামনে আসুক। আপনি যদি কোন হিংসার বশবর্তী হয়ে রফিক মিয়া নামে অপবাদ দেন সেটা কিন্তু ঠিক হবে না। এখনো ভেবে দেখুন বয়স প্রায় শেষ বাঁচবেন আর কয়েকদিন যা সত্যি তাই প্রকাশ করবেন এর বাহিরে যেন একটা কথা মিথ্যা না হয়।

আমি যত বড়ই পাপী হই আমি এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি মিথ্যা বলে পাপ করে কেউ রেহাই পায় না! সেটা থেকে আমিও রেহাই পাচ্ছি না, আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতেছি। তবুও কি আমি মিথ্যা বলব? শেষ বয়সে সত্যিটা বলে মরতে চাই, তাই তোমার পরিচয় পেয়ে আমি তোমার কাছে সত্যিটা বললাম। এখন তুমি যদি বিশ্বাস না করো আমি কি করবো বলো বাবা! কিন্তু এটুকু বিশ্বাস রেখো একজন মরণ পথযাত্রী মানুষ কখনো মিথ্যা বলে না।

ওকে আমি বিশ্বাস করলাম আপনি সত্যি বলছেন তাহলে আমার সাথে নবীনগরে চলেন। সবার সামনে সত্যিটা বলবেন, তার আগে চলেন হসপিটালের ভিতরে যাই আমার মাকে দেখুন! সে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে।

চলো তোমার মাকে দেখব, যে মানুষটার জীবনে আমি সর্বনাশ করেছি তাকে কখনো দেখিনি! না দেখে তার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছি, এটার ক্ষমা আমি হয়তো পাবো না। তোমার মা তাড়াতাড়ি সুস্থ হোক আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি, তিনি সুস্থ হলে তার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে নেব।

সিরাত ফজল উদ্দিনকে নিয়ে হসপিটালে আসলো! সুফিয়া বেগমকে খাবার খাওয়াছিলেন অবন্তী। সিরাতের সাথে বৃদ্ধ লোকটাকে দেখে অবন্তী জিজ্ঞেস করলেন কে এই লোক? তোমার সাথে এখানে কেন এসেছে।

যার কারণে এত কিছু নাটক হয়েছিল সেই লোকটাই এই লোক। সিরাতের কথা না বুঝতে পেরে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে অবন্তী। সিরাত আবার বলল তোমার বাবা যাকে আমার মায়ের রুম থেকে বের হতে দেখেছিল সে এই লোক। তার মুখ থেকে শুনো সে কি বলে, তোমার বাবা তাকে দিয়ে কেমন অভিনয় করিয়েছিল।

ফজল উদ্দিনকে অবন্তীর পরিচয় দিয়ে সিরাত বলল, চাচা এর নাম অবন্তী আমার ফুফাতো বোন! আপনার প্রিয় বন্ধু রফিক মিয়ার মেয়ে।

ফজল উদ্দিন জিজ্ঞেস করল তুমি রফিক মিয়ার মেয়ে? তোমার বাবা খুব খারাপ মানুষ, আমি যে ভালো তা নয়। আমিও তার সাথে মিলে নির্দোষ একটা মানুষের জীবন নষ্ট করেছি।

অবন্তীকে সমস্ত ঘটনা বললেন ফজল উদ্দিন। অবন্তী সিরাতকে বলল তুমি এই চাচাকে নিয়ে বাসায় যাও সবার সামনে প্রমাণ কর সুফিয়া মামি নির্দোষ! সমস্ত দোষ আমার বাবার। কি বলবো বলো তাকে বাবা বলতেও লজ্জা বোধ হচ্ছে, জন্ম দিয়েছে বলে নাম ধরে ডাকতে পারছি না, ইচ্ছে করতেছে তাকে নাম ধরে ডাকতে। এত নিলজ্জ মানুষ আমার লাইফে এটাই প্রথম দেখা, শয়তানের শয়তানি হার মানাবে এই লোকটার চক্রান্তের কাছে। কিভাবে নাটক সাজিয়ে মামিকে জালে ফাঁসাতে চেয়েছিল, কিন্তু তার মনস্কামনা পূর্ণ করতে পারেনি। ধিক্কার বাবা নামের এই মানুষটাকে, তুমি এখনই এই চাচাকে নিয়ে নবীনগর যাও।

হসপিটাল থেকে বের হয়ে সিরাত ফজল উদ্দিনকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢুকলো! দুপুরে খাওয়া হয়নি নামাজের পরেই ফজল উদ্দিনের সাথে দেখা হয়েছে। খাবার অর্ডার করলো দুজনের জন্য, সিরাত ফজল উদ্দিনকে বলল আপনার কি খেতে ইচ্ছা করে ওয়েটারকে বলেন।

বাবা তোমার যা ইচ্ছা আমাকে খাওয়াতে পারো! মানুষের বাড়িতে চেয়ে যা পায় তাই তো খাই।

তবুও আপনার যদি কিছু খেতে ইচ্ছা থাকে বলতে পারেন। ফজল উদ্দিন ওয়েটারকে বলল গরুর মাংস আর ভাত দিতে। তিনি সিরাতকে বললেন, অনেকদিন গরুর মাংস খাইনা মনের ইচ্ছা ছিল তুমি কি ভাববে তাই বলতে চাইনি।

সমস্যা নেই আপনার যা যা খেতে ইচ্ছা হয় আপনি খেয়ে নেন।

দুজনে খাবার খেয়ে ঢাকা থেকে নবীনগরের বাস ধরলেন, সন্ধ্যার আগে সিরাত বাড়িতে আসলো। তখন আমিরুল ইসলাম বাসায় ছিল না, রুমা আক্তার এতদিন পর ভাইয়ের ছেলেকে বাড়িতে ফিরতে দেখে খুশি হলেন। কিন্তু সাথে একজন বৃদ্ধকে দেখে সিরাতকে জিজ্ঞেস করলেন তোমার সাথে এই লোকটাকে চিনতে পারলাম না।

রুমা আক্তার লোকটাকে দেখে বুঝতে পারছে লোকটা অনেক গরিব, সিরাতের সাথে কেন এখানে এসেছে সেটা সে ভাবতেছে। সিরাত রুমা আক্তারকে বলল, এই মানুষটা খুব দরকারী একজন মানুষ। তাই তাকে নিয়ে এসেছি, আঙ্কেল কোথায় তাকে বলবেন সন্ধ্যার পর বাসায় থাকতে।

কেন বাবা সন্ধ্যার পর কি হবে, অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রুমা আক্তার।

হবে অনেক কিছু, সত্যি আর মিথ্যা প্রমাণ হবে! অপরাধী সবার সামনে আসবে।

সিরাতের কথা রুমা আক্তার কিছুই বুঝতেছেনা। ছেলেটা কি বলছে আবোল তাবোল, মায়ের মত পাগল হলো নাকি! এমন ভাবতে ভাবতে সে তার ছোট ভাইয়ের বউদের কাছে গেলো।
সিরাত রুমে এসে ফ্রেশ হলেন, ফজল উদ্দিনকে বললেন আপনি ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নেন! আমি সবাইকে কল করে বলতেছি বাসায় চলে আসতে।

একে একে সবাইকে কল দিয়ে বাসায় আসতে বলল সিরাত। সবাই জানতে চাইলো কি কারণে সন্ধ্যার পরে বাসায় আসতে হবে, সিরাত কাউকে কিছু বলল না। সিরাতের বড় ফুফি ও বড় ফুফির জামাইকেও আসতে বলা হলো।

সিরাত বাসায় এসেছে এটা শুনে আমিরুল ইসলাম খুশি হলেন! যাক ছেলেটার রাগ তাহলে কমেছে এমনটাই ভেবে তিনি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আমিরুল ইসলামের তিন ভাই বাসায় আসলেন। সবাই যখন ড্রয়িং রুমে বসে আছে আমিরুল ইসলাম ফজল উদ্দিনকে দেখে সিরাতকে বলল এই লোক এখানে কেন? তুমি এই লোককে কেন নিয়ে আসছো। আমিরুল ইসলাম আগে থেকেই জানে ফজল উদ্দিন তেমন ভালো মানুষ না। সিরাত আগেই তার বাবাকে কিছু বলল না। সবাই ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করলেও রফিক মিয়া এখনো আসেনি, সে তার রুমে। সিরাত রুমা আক্তারকে বলল সবাই চলে আসছে তোমার স্বামী আসে না কেন, তাকে এখনি নিয়ে আসো! তাকে ছাড়া তো আর কথা শুরু করা যাবেনা। রুমা আক্তার রফিক মিয়াকে নিয়ে আসলেন। রফিক মিয়া বুঝতে পারছেন না কি হয়েছে সিরাতের, তার মনে সব সময় ভয় কাজ করে এখনো ভয় পাচ্ছে! রফিক মিয়া এসে বসলে সিরাত ফজল উদ্দিনকে ডাক দেয়। ফজল উদ্দিন যখন রুমের ভিতর প্রবেশ করে সবাই স্বাভাবিক থাকলেও রফিক মিয়ার হার্টবিট বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে, ভাবে আজ বুঝি তার রক্ষা নেই। সিরাত শুধু তার মাকে খুঁজে বের করেনি সাথে ফজলকেও খুঁজে বের করেছে।

সবাইকে উদ্দেশ্য করে সিরাত বলে ২১ বছর আগের ঘটনা আপনারা যা জেনেছেন সেটা আপনাদেরকে ভুল দেখানো হয়েছিল, সত্যটা আজকে জানতে পারবেন।

সিরাতের কথা বলার মাঝখানে এলাকার মেয়র এবং কমিশনার এসে উপস্থিত হলেন। সিরাতের মায়ের বিচারের সময় যে চেয়ারম্যান ছিল সে এখন বেঁচে নেই। এই এলাকার মেয়র মকবুল চৌধুরী তিনি এসেছে এবং ওয়ার্ড কমিশনার সবুজ আহমেদ এসেছে। সিরাতের মায়ের বিচারের সময় যে মেম্বার ছিল সেই মেম্বারের ছেলে সবুজ আহমেদ। সবার সামনে ফজল উদ্দিন রফিক মিয়ার সাজানো নাটক প্রকাশ করলেন, তার মনে কি চক্রান্ত ছিল কি কারণে সিরাতের মায়ের নামে অপবাদ দিয়ে কলঙ্কিত করেছিল সমস্ত কিছু সবার সামনে বললেন। এবং সে নিজেও অপরাধী সেটাও স্বীকার করলেন! সেই নাটকের বিনিময়ে রফিক মিয়া তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল এটাও বললেন সবার সামনে। এবং সেই পাপের শাস্তি হিসেবে আজকে আল্লাহতালা তাকে এত বড় রোগ দিয়েছেন সেটা বলে কান্না করতে থাকলো ফজল উদ্দিন। রফিক মিয়া ফজল উদ্দিনকে বললেন তুই আমার নামে মিথ্যা কথা বলছিস, আমি তোকে ছাড়বো না! তুই কেন আমার নামে মিথ্যা বলছিস? তোকে আমি মেরে ফেলবো, এটা বলে রফিক মিয়া ফজল উদ্দিনকে মারতে তেড়ে গেলেন। সামনে গিয়ে দাঁড়ালো আমিরুল ইসলাম। রফিক মিয়াকে ধরে ইচ্ছামত মারতে থাকলো আমিরুল ইসলাম।

তোর জন্য আমার সাজানো গোছানো সংসারটা তন্নছন্ন, তুই আমার বোন জামাই হয়ে এত বড় সর্বনাশ করতে পারলি! আমার শিশু বাচ্চাটাকে মা হারা করেছিস, কত কষ্ট করে আমার ছেলেকে আমি মানুষ করেছি। তোর কারণে আমার ছেলে এখন আমাকে ঘৃণা করে, সে মনে করে তার মায়ের সাথে যা হয়েছে তার সবচেয়ে বড় দোষ আমার। হ্যাঁ আমি বড় অপরাধী তোদের কথা বিশ্বাস না করে যদি আমার স্ত্রীকে বিশ্বাস করতাম, আমার জীবনটা এমন হতো না। সুফিয়াকে পাগল হতে হতো না। সবকিছু হয়েছে তোর কারণে, তোকে আমি মেরে ফেলবো। রুমা আক্তার আমিরুল ইসলামের হাত থেকে স্বামীকে ছাড়াতে চাইলেন। আমিরুল ইসলাম বোনকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে বললেন যে আমার সামনে আসবে আজকে তাদেরকে আমি রফিকের মত মেরে শেষ করে ফেলব। মেয়র মকবুল চৌধুরী আমিরুল ইসলামকে বললেন ভাই পাগলামি করলে হবে না, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েন না। সে যা অন্যায় করেছে তার শাস্তি আইন দিবে, থানায় ফোন করে দিচ্ছি পুলিশ এসে রফিক মিয়াকে ধরে নিয়ে যাবে। ফজল উদ্দিনকেও ধরে নিয়ে যাবে, অপরাধ দুজনেরই সমান। কিন্তু ফজল উদ্দিন সত্যটা বলার কারণে আদালতে তার শাস্তি কম হবে।

ফজল উদ্দিন ভয়ে কান্না করতে থাকলো! সিরাতকে বলল বাবা তুমি তো জানো আমার দুই মাসের মধ্যে অপারেশন না করতে পারলে পায়ে পচন ধরে যাবে। পুলিশ ধরে নিয়ে গেলে আমি তো সেখানেই মারা যাবো।

আপনি ভাববেন না আমি আপনাকে জামিনে ছাড়িয়ে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। কিন্তু এখন আপনারা দুজনেই অপরাধী তাই দুজনকে জেলে যেতে হবে।

রুমা আক্তার আমিরুল ইসলামের পায়ে পরার যোগাড়। ভাইয়া তুমি আমার স্বামীকে ক্ষমা করে দাও, সে অপরাধ করেছে এখন তাকে জেলে দিলেই কি সেটা আর ফিরে আসবে। আমিরুল ইসলাম বোনের গালে থাপ্পর মারলেন,

চুপ কর একদম, তোদের মুখ আমি দেখতে চাইনা! তোরা সবাই সেদিন আমাকে বলেছিলি সুফিয়া খারাপ। তোদের জন্য সে এতকিছু করেছে, পরিবারের সব কাজ করতো তবু তোদের মন পায়নি। তোরা নির্দয় মানুষ, আমিও নির্দয় ছিলাম তোদের কথা শুনে, তোদেরকে বিশ্বাস করে। ভাবছিলাম আমার ভাইবোন কখনো মিথ্যা বলতে পারে না! আমার মা বলেছিল সুফিয়া কখনো এমন কাজ করবেনা, আমার মায়ের কথা যদি সেদিন শুনতাম আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে যেত না। আমিরুল ইসলামের কথা শুনে তার তিন ভাই এবং ভাইয়ের বউয়েরা সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেল। তারা জানে সেদিন সুফিয়ার বিরুদ্ধে সবাই কথা বলেছিল, কেউ সুফিয়াকে সাহায্য করেনি।

থানা থেকে এসআই সুমন আহমেদ চারজন কনস্টেবল নিয়ে আমিরুল ইসলামের বাসায় আসছেন। রফিক মিয়াকে এবং ফজল উদ্দিনকে থানায় নিয়ে গেলো। আমিরুল এবং সিরাত দুজনে ই থানায় গেলেন। সিরাত রফিক মিয়াকে বলল আপনি যদি সত্যিটা স্বীকার করেন তাহলে হয়তো কিছুটা মাফ পেতে পারেন, যদি স্বীকার না করেন কিভাবে স্বীকার করানো হবে সেই পদ্ধতি আমার জানা আছে। বাংলাদেশের পুলিশ যেদিকে টাকার জোর থাকে সেদিকেই থাকে সেটা তো বুঝতেই পারছে না। যখন আমার মা অসহায় ছিল আমাকে পাবার জন্য পুলিশের কাছে কান্নাকাটি করে, পুলিশ কিন্তু আমার মাকে সাহায্য করেনি, আমার বাবার টাকা দেখে বাবার পক্ষে নিয়েছিল। নাহলে তিন বছরের বাচ্চাকে বাবা নিয়ে যেতে পারে না, সন্তান যতদিন বড় না হয় আইনত মায়ের কাছে থাকে! আইনও সেদিন টাকার জন্য মিথ্যে হয়ে গিয়েছিল।

প্রথমে রফিক মিয়া স্বীকার করতে চায়নি।
সিরাত এসআই সুমনের সাথে কথা বললে চলে আসলো। এস আই সুমন আহমেদ লকাপের ভেতর যেয়ে রফিক মিয়াকে উত্তম মাধ্যম দিলেন, এই বয়সে বেশি মার সহ্য করতে পারলো না রফিক মিয়া! সে বেহুশ হয়ে গেল। তখন এসআই সুমন আহমেদ কনস্টেবলকে বললেন, পানি নিয়ে আসো মুখে পানি ঝাপটা দিয়ে হুশ ফেরাও। শয়তান ব্যাটার শয়তানি বের করব, এমন খবিশ শয়তানদের জন্যই শত শত মানুষের সংসার ভেঙে যায়।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে