ভুল পর্ব-১৬+১৭

0
3389

#ভুল ১৬তম পর্ব
#jannat_Nur

আমিরুল ইসলাম আজ খুবই চিন্তিত সে কি জীবনে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে! সেই ভুলের মাশুল এখন তাকে দিতে হবে। যে ভাইবোনের কথায় আজকে তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছে তারা তো কেউ আজ তার পাশে নেই, সবাই সবার মত ভালো আছে। আমিরুল ইসলামের কথা শেষ হলে সবাই তাদের নিজ নিজ ফ্ল্যাটে চলে গেল। একাকিত্বের মাঝে নিজেকে আজ উপলব্ধি করছে আমিরুল ইসলাম, রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তার জীবনের চরম বিপর্যয় ডেকে এনেছে। যাকে আগলে রেখে এতটা বছর পার করেছে সেই ছেলে আজ তার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে মায়ের পক্ষ নিয়ে। এই ভয়ের কারণে সে বাংলাদেশে আসতে চায়নি, কিন্তু তাই সত্যি হলো। সিরাত তার মাকে খুঁজতে গিয়েছে, যদি তার মাকে পায় তাহলে তো ভালো! না পেলে, যদি সুফিয়া বেগম মারা যায় তখন কি সিরাত ক্ষমা করবে তাকে। ভাবতে ভাবতে মাথায় চাপ দিচ্ছে সমস্ত টেনশন এসে, প্রেশার হাই হয়ে গেল। ছোট বোন রুমাকে ডেকে বলল তাড়াতাড়ি আমার মাথায় পানি দিয়ে দে। রফিক মিয়াকে বল আমার জন্য প্রেসারের মেডিসিন নিয়ে আসতে। রুমা আক্তার ভাইকে মাথায় পানি দিয়ে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলেন। তারপর রফিক মিয়াকে বললেন মেডিসিন নিয়ে আসতে, রফিক মিয়া জলদি চলে গেলেন ফার্মেসিতে। অবন্তী তার মামার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে! আমিরুল ইসলামের দুচোখ দিয়ে টপাটপ পানি পড়ছে।

মামা কাঁদবেন না দোয়া করেন সিরাত ভাইয়া যেন তার মাকে খুঁজে পায়, যা ভুল তো করার করেছেন। আমারও মনে হয় মামি নির্দোষ ছিল, এখানে আমার আব্বুর ষড়যন্ত্র ছিল। আপনি যদি ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতেন জীবনটা এরকম হতো না। আজকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখের সংসার থাকতো আপনার। এখন দেখুন আপনার ছেলে আপনাকে ঘৃণা করতেছে সবকিছুর মূল দোষী আপনাকেই ভাবতেছে। সত্যি ই আপনি কি মামিকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন? যদি তাই হয় কেন তাকে বিশ্বাস করলেন না। আপনি তো জানতেন মামির চরিত্র কেমন, দেশে এসে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতেন, কিছুদিন সময় নিতেন তাহলে দেখতেন সত্যিটা বের হয়ে আসতো। এখন আফসোস করে আর কি হবে, টেনশন কইরেন না! আল্লাহ যা করবে ভালোর জন্যই করবে, প্রত্যেকটা মানুষের অপরাধের শাস্তি আল্লাহ দিয়ে থাকেন। আপনি যদি অপরাধ করে থাকেন তার শাস্তি পাবেন! আমার বাবা-মা পরিবারের লোকেরা যদি অপরাধ করে থাকে আল্লাহ কাউকে ছাড় দিবেন না, দুইদিন আগে বা দুদিন পরে। মানুষ মানুষের নামে মিথ্যা অপবাদ দেয় তারা বুঝে না এর শাস্তি একদিন না একদিন হবে। মানুষের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া অনেক বড় অন্যায়, এটা শাস্তি হয় অনেক কঠিন।

অবন্তীর কথা শুনে আমিরুল ইসলাম বললেন, মা তুমি আমার ছেলেকে বুঝিও আমি তখন পরিবারের কথায় আর অনেক রাগের মধ্যে তার মাকে ডিভোর্স দিয়ে দেই, এবং তাকে রেখে সুফিয়াকে তাড়িয়ে দেই। সিরাত যেন আমাকে ছেড়ে না যায়, আমি তো তাকে অনেক ভালোবাসি! আমার জীবনের চাইতেও তাকে ভালোবাসি। সে আমাকে ছেড়ে গেলে আমি কি নিয়ে থাকবো, প্লিজ মা তুমি তাকে বুঝিও।

মামা এখন আপনি টেনশন করবেন না, সিরাত ভাইয়া বাসায় ফিরুক তার সাথে পরে কথা বলা যাবে। আমি চাচ্ছি মামিকে সে যেন খুঁজে পায়। আল্লাহ যেন তাদের মা ছেলেকে দেখা করিয়ে দেন, আর এই চক্রান্তের পিছনে যার হাত থাকুক সেই চক্রান্তকারীদের যেন সবার সামনে নিয়ে আসে, তাদের কঠিন শাস্তি হয়। সে যদি আমার বাবা-মাও হয়, তাদের শাস্তি হোক আমি এটাই চাচ্ছি।

সিরাত ঢাকা এয়ারপোর্টে এসে চারপাশটা অনেক খোঁজাখুঁজি করে যাচ্ছে। যেকোনো পাগল মহিলাকে দেখে বিচক্ষণের মতো তার সারা শরীর অবলোকন করছে। তার মামার বর্ণনা অনুযায়ী সেরকম কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। সারাদিন এয়ারপোর্ট এর আশেপাশে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে হোটেলে আসলো খুব খিদে পেয়েছে। খাবার খেয়ে হোটেলে রুম নিয়ে বিশ্রাম করল সিরাত। রাত নয়টার দিকে আবার বের হলো খুঁজতে, রাত একটা পর্যন্ত খুঁজে হোটেল রুমে ফিরে আসলো! তেমন কাউকে দেখতে পেল না যেমনটা তার মামা বলেছিল। সিরাতের মনে হাজারো প্রশ্ন সে কি তার মাকে খুঁজে পাবে, এতটা বছর কি বেঁচে আছে নাকি অনেক আগেই মারা গেছে। মারা গেছে ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে তার। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে তার মায়ের সঙ্গে যেন তার দেখা হয়, মাকে যেন জড়িয়ে ধরতে পারে! বলতে পারে মা তোমাকে অনেক ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া এতটা বছর আমি ভালো ছিলাম না, অনেক ভালবাসি তোমাকে। না ঘুমিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করে রাত পার করলো সিরাত। রাতে অনেকবার কল দিয়েছে অবন্তী, ফোন সাইলেন্ট করা ছিল সেদিকে খেয়াল করেনি সিরাত। সকালে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখে প্রায় ৫৫ টা মিস কল অবন্তীর। মেয়েটা মনে হয় সারা রাত তাকে কিছুক্ষণ পর পর কল দিয়ে গিয়েছে। সিরাত অবন্তীর নাম্বারে কল দিলো, ঘুমঘুম চোখে রিসিভ করলো অবন্তী।

তুমি রাতে কল রিসিভ করলে না কেন, খুব টেনশন হচ্ছিল, রাত চারটা পর্যন্ত আমি তোমাকে কল দিয়েছি। তারপর ঘুমিয়ে গেলাম, এখন তোমার কলের শব্দে ঘুম ভাঙছে। রাতে কল রিসিভ করো নি কেন?

ফোন সাইলেন্ট করা ছিল আমার সেদিকে খেয়াল ছিল না, টেনশন আম্মুকে খুঁজে পাই কিনা।

মামির মত কাউকে দেখতে পাওনি।

তেমন কাউকে খুঁজে পাইনি, শুধু এয়ারপোর্ট নয় এয়ারপোর্টের আশেপাশেও দেখেছি।

তুমি একটা কাজ করতে পারো, আজকে সেখানের আশেপাশের মানুষকে জিজ্ঞেস করবা মামির মত কাউকে কখনো দেখেছিল কিনা, মানে সেখানে অনেক দোকান আছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো।

ঠিক আছে আজকে আমি মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে দেখব, আসলে কি জানো এতটা বছরের একটা মানুষ অবহেলায় অনাদরে পড়ে থেকে বেঁচে আছে কিনা সেটাই তো আমার জানা নেই।

আগেই ভেঙে পড়ো না চেষ্টা করো আমার মন বলছে মামিকে তুমি খুজে পাবে।

এখানে যদি না পাই পাবনা মানসিক হসপিটালে যাব! গিয়ে দেখবো সেখানে আছে কিনা, আমি সহজে হাল ছাড়বো না।

তুমি খাবার ঠিকমতো খেয়েও, সুস্থ থাকতে হবে! না হলে মামিকে খুঁজবে কিভাবে। তুমি চলে যাবার পর কাল সকালে মামা সবাইকে ডেকে আবার সেই অতীতের কথা জিজ্ঞেস করেছে। মামির ঘর থেকে লোকটাকে বের হতে শুধু আব্বু দেখেছে, আর কেউ দেখেনি এটা শোনার পর মামাতো অনেকটা অনুতপ্ত। বলতেছে শুধু একজনের কথায় আমি আমার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিলাম। তখন তো তোমরা সবাই বলেছিলে লোকটাকে বের হতে দেখেছো। মামা অনেক আপসেট প্রেসার হাই হয়ে গিয়েছিল, মেডিসিন খেয়ে একটু সুস্থ হয়েছে। আমি তার পাশে ছিলাম আমাকে বলল তোমাকে বুঝিয়ে বলতে, তুমি যেন তাকে ছেড়ে না যাও, তোমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না।

অবন্তী তুমি কি তোমার মামার পক্ষ হয়ে এখন এগুলো বুঝাতে আসছো আমাকে? আমি যা বলেছি তাই করবো, সন্তান হারানোর কষ্ট তাকে বুঝাবো। আমার মাকে খুঁজে পাই বা না পাই তার শাস্তি তাকে পেতে হবে।

তুমি আমাকে ভুল বুঝনা আমি মামার পক্ষ হয়ে কথা বলছি না, তুমি কেমন আছো সেটা জানার জন্য আমি সারারাত কল করেছি। নিজেকে ঠিক রেখে মামিকে খুঁজো।

ওকে তোমার সাথে পরে কথা হবে আমি এখন বের হবো খুঁজতে।

সিরাত ফোন রেখে সুফিয়া বেগমকে খুঁজতে বের হলো। সাত দিন ঢাকা শহরের সব জায়গায় তন্নতন্ন করে খুঁজে সুফিয়া বেগমের কোন সন্ধান পেল না। সিরাত সিদ্ধান্ত নিল পাবনা মানসিক হসপিটালে যাবে। আমিরুল ইসলাম বারবার সিরাতকে ফোন করে যাচ্ছে বাসায় ফিরে আসতে! কিন্তু সিরাতের কথা আমি আমার মাকে খুঁজতে বের হয়েছি তাকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত বাসায় ফিরব না। আমিরুল ইসলাম বললেন তুমি বাসায় আসো তোমার সাথে আমি সুফিয়াকে খুঁজতে বের হবো, তুমি তোমার মাকে দেখলে নাও চিনতে পারো। এটা শোনার পর ভাবলো কথাটা সত্যি তার তো ভুল হতে পারে কিন্তু তার বাবা যদি সঙ্গে যায় অবশ্যই সে তার মাকে চিনবে। তাই যতই রাগ থাকুক বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গেলে ভালো হবে এটা ভেবে সে বাসায় ফিরে আসলো। বাসায় আসার পর সিরাত বাবার সাথে কোন কথা বলছেন না। আমিরুল ইসলাম নিজ থেকেই ছেলের সাথে কথা বলার জন্য আসলেন।

আমি জানি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা আমি করেছি এখন যদি আমাকে মেরে ফেলো তাহলে কি সে ভুল সংশোধন হবে। আমরা বাপ ছেলে মিলে তোমার মাকে খুঁজতে পারি! আমার সাথে অভিমান করে থেকো না, তুমি আমার সাথে কথা না বলে চুপ করে থাকলে আমার খুব কষ্ট হয়। বাবা তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট দিও না, আমি তোমার কাছে লজ্জিত অনুতপ্ত বাবা।

এ কথাগুলো আমার সাথে বললে সে দিনগুলো ফিরে আসবে না, যে দিনগুলোতে আমার মা কষ্ট পেয়েছে। মানুষের দ্বারে দ্বারে হয়তো আমাকে পাবার জন্য ঘুরেছে। এখন সে বেঁচে আছে কিনা কোথায় আছে, তার সাথে যে অন্যায় হয়েছে সে অন্যায়ের শাস্তি তোমরা কেন পাবে না। সে তো অন্যায় না করে অন্যায়ের শাস্তি পেয়েছে! নিরপরাধ হয়েও অপরাধের তকমা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। সবাই তাকে দেখে দুশ্চরিত্রা বলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আর তোমরা সবাই তার সাথে অন্যায় করে শাস্তি পাবে না এটা কিভাবে ভাবো। তোমরা অবশ্যই শাস্তি পাবে, আর যে এই ষড়যন্ত্রের পিছনে মূল হোতা তাকে শাস্তি পেতে হবে, কঠিনতম শাস্তি, তাকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। না তাদের, না তোমাকে কাউকে না।

সিরাত বাসায় এসেছে শুনে অবন্তী আসছে সিরাতের সাথে কথা বলতে। সিরাত এ কয়েকদিনে অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে। অবন্তী তাকে বলল তোমাকে না বলেছি নিজের খেয়াল রাখতে, ঠিকমতো না খেয়ে শরীরের কি অবস্থা করেছো তুমি। যদি অসুস্থ হয়ে থাকো মামিকে কিভাবে খুঁজবে? মামিকে খোঁজার জন্য হলেও তোমাকে ঠিক মতন খেয়ে সুস্থ থাকতে হবে।

কি করবো বলো আমার সবসময় এক ভাবনায় মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে! আমি আমার মাকে দেখতে চাই তাকে স্পর্শ করতে চাই তাকে জড়িয়ে ধরতে চাই। মায়ের আদর পায়নি সে আদরটা আমি পেতে চাই! আমার মা দেখতে কেমন আমি দেখতে চাই। এগুলো ভাবতে ভাবতেই আমার খাবার খেতে ইচ্ছা করে না ক্ষুধা লাগে না, মায়ের তৃষ্ণা আমাকে পাগল করে দিয়েছে। আমি আমার মাকে চাই অবন্তী, আমার মাকে আমি চাই, কোথায় পাবো তাকে কোথায় গেলে তার সন্ধান পাব। আমি পাগল হয়ে যাব তাকে না খুঁজে পেলে, আমার মা আমার জন্য যেমন পাগল হয়েছিল আমিও তার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি।

শান্ত হও এরকম করো না, তোমার কষ্ট দেখে আমারও কষ্ট হচ্ছে।

অবন্তী সিরাতের মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে। সে জানে সব কিছু হয়েছে তার বাবার কারণে, তাই নিজেকে অপরাধী মনে হয় অবন্তীর।
অবন্তী খাবার নিয়ে এসে সিরাতকে খেতে বলছে, তুমি খাবারগুলো খাও আমি তোমার সামনে বসে আছি, সবগুলো খাবে, দেখেছো শুকিয়ে কি হয়েছো! অল্প খেয়ে সিরাত আর খেতে চাচ্ছিলো না, অনেক জোরাজুরি করে সবগুলো ভাত সিরাতকে খেতে বাধ্য করল অবন্তী।
এদিকে রফিক মিয়া খুব ভয়ে আছে, সিরাত যেভাবে তার মাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে যদি তার মাকে খুঁজে পায়। সুফিয়া তখন সবাইকে বলবে তার সাথে রফিক মিয়া কি করতে চেয়েছিল। এবং আমিরুল ইসলাম ডিভোর্স দেওয়ার পর সে তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, এ কথাগুলো যদি পরিবারের সবাই জানতে পারে তাহলে সে এ বাসায় থাকবে কিভাবে। কেউ তাকে ক্ষমা করবে না, রফিক মিয়া ভিতরে ভিতরে খুব চিন্তা অনুভব করছে। আর চাইছে সিরাত যেন সুফিয়া বেগমকে খুঁজে না পায়।

পরের দিন আমিরুল ইসলাম এবং সিরাত পাবনার উদ্দেশ্য রওনা দিলো, বাবা ছেলের মধ্যে কোন কথা নেই। আমিরুল ইসলাম ছেলের সাথে কথা বলতে চাইলেও সিরাত তাকে ইগনোর করে চলছে। পাশাপাশি সিটে বসে থাকলেও সিরাত তার বাবার সাথে কথা বলছে না, এতে করে আমিরুল ইসলামের খুব অশান্তি লাগছে। সে কখনো ভাবতে পারেনি এত আদরের সন্তান তার সাথে এরূপ আচরণ করবে। এটাই হয়তো তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত, না হলে কেন এত ভালোবাসার সন্তান তাকে কষ্ট দিবে।

পাবনা হসপিটালে এসে ডাক্তারদের সাথে কথা বলে মহিলা পেশেন্টদের দেখার অনুমতি পেলেন। সিরাত আর তার বাবা সবগুলো পাগল মহিলাদের ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন কোথাও সুফিয়া বেগমের সন্ধান মিললো না। ছেলেকে বলল এখানে তোমার মা নেই তাকে আমি দেখলে চিনতে পারতাম। বাংলাদেশের ভেতর আরো অনেক বেসরকারি মানসিক হসপিটাল আছে আমরা সেখানেও তার খোঁজ করব, কোন হসপিটাল বাদ দেবো না, তুমি অধৈর্য হয়ো না তোমার মা যদি বেঁচে থাকে অবশ্যই আমরা তাকে পাবো। সিরাতের খুব কষ্ট হচ্ছে, ভাবছিল এখানে এসে হয়তো তার মাকে পাওয়া যাবে।

অনেক বেসরকারি হসপিটালে খোঁজা হলো সুফিয়া বেগমকে। সিরাত তার ফেসবুক আইডিতে তার মায়ের বর্ণনা দিয়ে পোস্ট আপলোড দিয়েছে। ময়মনসিংহ থেকে এক ব্যক্তি ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে বলেছে তার বর্ণনা অনুযায়ী একজন মানসিক রোগীর তার নিরাময় কেন্দ্রে আছে। সিরাত ও আমিরুল ইসলাম সেখানে যাচ্ছে।

চলবে….

#ভুল ১৭তম পর্ব
#jannat_Nur

সিরাত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কখন বাস এসে ময়মনসিংহ পৌঁছাবে। অপেক্ষার সময় পার হতে চায়না। সিরাত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যাচ্ছে এখানে সে যেন তার মাকে সে খুঁজে পায়। যতই ময়মনসিংহের কাছাকাছি আসছে ততই তার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ বাস স্টেশনে নেমে সিএনজি নেয়া হলো ফুলপুর যাবার উদ্দেশ্যে, মানসিক নিরাময় কেন্দ্র ফুলপুরে অবস্থিত। সময় যেন পার হতে চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে সে যাত্রা করছে! অবশেষে যাত্রা সমাপ্ত হলো। মানসিক নিরাময় কেন্দ্রের সামনে আসছে সিরাত, আমিরুল ইসলাম। আগে থেকেই নিজাম উদ্দিন এর সাথে কথা ছিল আজকে তারা আসবে, নিজাম উদ্দিন তাদেরকে নিরাময় কেন্দ্রের ভেতরে নিয়ে গেল।

আমাদের এখানে অনেক মানসিক রোগী ছিল আস্তে আস্তে সবাই ভালো হয়ে পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছে! আবার দুই এক জন মারা গিয়েছে, এখন আমাদের এখানে ২৫ জন রোগী আছে।

মারা গিয়েছে শুনে সিরার এবং আমিরুল ইসলাম দুজনেই মন খারাপ করে ফেলল।

আসুন এই যে মহিলা একে দেখুন, আপনার পোষ্টের বর্ণনা অনুযায়ী তার সাথে অনেকটা মিলেছে! তাই আমি আপনাকে নক দিয়েছি।

আমিরুল ইসলাম অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে মহিলাটির দিকে, তার পরিচিত মনে হচ্ছে! তাহলে কি এই তার স্ত্রী সুফিয়া, এটা ভেবে সে অনেকটা কাছাকাছি গেল মহিলাটি। আমিরুল ইসলাম নিজাম উদ্দিনকে বললেন, হাতের কব্জির উপর কাটা দাগ ছিল সেটা একটু দেখান তো, আমাকে দেখে তিনি ভয় পাচ্ছে। নিজাম উদ্দিন অনেক বছর ধরে সবার দেখাশোনা করে তাই নিজামকে দেখে কোন মানসিক রোগীরা ভয় পায় না, ভাবে সে তাদের মতই একজন। কব্জির উপর কাটা দাগ দেখে এবং গালের তিলটা ভালোভাবে খেয়াল করে আমিরুল ইসলাম সিরাতকে বললেন এটাই তোমার মা। কি মানুষ কি হয়েছে, কিভাবে চিনবো বলো, ফর্সা গায়ের রং কালো হয়ে গিয়েছে! স্বাস্থ্যবান ছিল এখন শরীরে হাড্ডি ছাড়া আর কিছু নেই।

সিরাত তার মাকে ধরতে গেলে সুফিয়া বেগম অনেকটা দূরে সরে গিয়ে বললেন, কে তোমরা আমার কাছে কি চাও? আমার ছেলেকে এনে দিবে।

আম্মু আমি তোমার ছেলে, আমি তোমার সেই ছোট্ট সিরাত! এতটা বছরে অনেক বড় হয়ে গেছি। আম্মু তোমাকে আমি খুঁজে পেয়েছি আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া।

সিরাতের কথা শুনে সুফিয়া বেগম মুখের দিকে তাকিয়ে আছে! তারপর বলল না না তুমি আমার ছেলে না, আমার ছেলে অনেক ছোট। তার বাবা তাকে নিয়ে আমেরিকা চলে গেছে, আমি আমেরিকা যাবো! তোমরা আমাকে আমেরিকা নিয়ে যাবে। এই লোকগুলো আমাকে আমেরিকা যেতে দেয়না, আমি তাদেরকে বলছি আমার ছেলে আমেরিকা থাকে! এরা সবাই বলে আমাকে নিয়ে যাবে, কতদিন হয়ে গেল এখনো নিয়ে যাচ্ছেনা।

সিরাত বলল আমি তোমাকে নিয়ে যাব, তুমি আমেরিকা যাবে।

হ্যাঁ যাবো, সত্যি তুমি আমাকে নিয়ে যাবে? তুমি অনেক ভালো, তুমি অনেক ভালো! বলতে বলতে সুফিয়া বেগম কান্না করে দিলেন।

নিজাম উদ্দিন আমিরুল ইসলামকে বললেন, কিছু কাগজপত্রে সাইন করে আপনারা তাকে নিয়ে যেতে পারেন! আশা করি ভালো চিকিৎসা পেলে আপনার স্ত্রী ভালো হয়ে যাবে। আমাদের এখানে তেমন চিকিৎসা দিতে পারিনি, বুঝেন ই তো এই গ্রামের ভিতর সরকারি তেমন কোন অনুদান পাইনা। নিজ খরচায় যেটুকু করতে পারি, সেটুকুই করতে চেষ্টা করি।

সিরাত নিজাম উদ্দিনকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানালো। বলল আপনি যদি আমার আম্মুকে এখানে নিয়ে না আসতেন হয়তো এত দিনে কোথায় না কোথায় পড়ে থাকতো। আপনি যা করছেন আপনার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। আর আমি চাইবো আপনার এই নিরাময় কেন্দ্রে আর্থিক সাহায্য করতে। আমি যতদিন বেঁচে আছি অসহায় মানসিক রোগীদের জন্য কিছু করে যেতে চাই। আপনি একটা প্রাইভেট কার ভাড়া করে দেন আম্মুকে নিয়ে ঢাকা যাব, সেখানে মানসিক হসপিটালে ভর্তি করাবো। দেখি ডাক্তাররা কি বলে, প্রয়োজনে ইন্ডিয়াতে নিয়ে যাব।

আপনার মত ছেলে যেন প্রতিটা মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়! আপনি এত বছর আমেরিকা থেকে এসে মাকে কত চেষ্টা করে খুঁজে বের করলেন, আর অনেক ছেলে আছে মাকে নিজ ইচ্ছায় বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। আল্লাহ আপনার মাকে ভালো করুক, তিনি যেন আপনার সাথে জীবনের বাকিটা সময় সুখী হতে পারে এই দোয়া করি।

প্রাইভেট কারে করে সিরাত তার মাকে ঢাকায় স্বনামধন্য এক মানসিক হসপিটাল এলে ভর্তি করলো। সুফিয়া বেগমকে খুঁজে পেয়েছে এ খবর আমিরুল ইসলামের বাসায় সবাই জেনে ঢাকায় আসছে সুফিয়া বেগমকে দেখতে। শুধু আসেনি রফিক মিয়া, সে খুব ভয়ে আছে, সুফিয়ার বেগমের যদি স্মৃতিশক্তি ফিরে আসে এবং তার সাথে করা নোংরামির কথা গুলো সবার সামনে বলে কি হবে তার। সুফিয়া বেগমকে দেখে কেউ ঠিকমতো চিনতে পারছেন না, কেমন ছিল আর কেমন হয়েছে। পরিস্থিতির কারণে মানুষের সৌন্দর্য বদলে যায়, অনাদরে অবহেলায় থেকে মানুষের বয়সটা অনেক বেশি মনে হয়। ৫২ বছর বয়সী সুফিয়া বেগমকে দেখে মনে হচ্ছে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা।

পরিবারের সবাই দেখে চলে আসছে কিন্তু অবন্তী থেকে গেল হসপিটালে। রুমা আক্তার তাকে অনেক জোরাজুরি করলো বাসায় ফিরে আসার জন্য, সে তার মাকে বলল মামির কাছে একজন মেয়ে মানুষ থাকা দরকার। মামা এবং সিরাত ভাইয়া তারা সব কাজ করতে পারবে না, আমি মামির দেখাশোনা করবো।

রুমা আক্তার বারবার বললেন, তোর বাবা কিন্তু রাগ করবে। অবন্তী জানিয়ে দিলো তিনি রাগ করলে আমার কিছু আসে যায় না। আমি তাকে বাবা মনে করি না। রুমা আক্তার অবন্তীর কথা শুনে মেয়েকে আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলেন! বুঝতে পারলেন মেয়ের সাথে বাড়াবাড়ি করে লাভ হবেনা, বরং সবার সামনে অপমানিত হতে হবে।
সবাই বাসায় আসলে রুমা আক্তার রফিক মিয়াকে বললেন, ভাবীকে দেখতে সবাই গেল তুমি কেন গেলে না? তোমাকে দেখছি কয়েকদিন ধরে চিন্তায় আছো, ব্যাপারটা কি আমাকে বলো।

আরে কি বলছো, আমি কেন চিন্তায় থাকবো, ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না, তাই নিয়ে মনটা খারাপ থাকে। অবন্তি কোথায় সে আসেনি।

না, তাকে আসতে বললাম বলল মামিকে দেখাশোনার জন্য আমি থেকে যাব! জোর করলাম তাও আসলো না।

মেয়েটার খুব বার বেড়ে গেছে, এমন তো ছিল না। সিরাত দেশে আসার পর থেকে মেয়েটা চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে, আমাদের মুখে মুখে তর্ক করে। ছেলেটা আসলেই একটা শয়তান, আমার মেয়েকে আমাদের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছে।

সিরাত কেন অবন্তীকে আমাদের বিরুদ্ধে উসকে দিবে! এতে তার কি লাভ।

লাভ লোকসান বুঝি না, সিরাত মনে করে আমাদের জন্য তার মা বাড়ি ছাড়া হয়েছে! সেটার প্রতিশোধ নিতে আমাদের মেয়েকে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে।

কথায় বলে না চোরের মনে পুলিশ পুলিশ, রফিক মিয়ার মনে এখন ভয় ঢুকে গেছে। আস্তে আস্তে তার চক্রান্তের কথা প্রকাশ পাবে এই ভয়ে সে সবসময় অস্থির থাকে।

সুফিয়া বেগমকে হসপিটালে ভর্তি করার পর তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে, আর অন্যান্য পরীক্ষাগুলো করা হয়েছে। ডাক্তার মুস্তাক আহমেদ সিরাতকে বললেন, আপনার মায়ের সমস্ত রিপোর্ট আমি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম। তার বড় কোন প্রবলেম নেই, আশা করছি কিছুদিন চিকিৎসা করলে তিনি ভালো হয়ে যাবে, আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন তিনি চাইলে অতি দ্রুত আপনার মা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবে! আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তাকে ভালো চিকিৎসা দিতে। এক মাস পর পর দিল্লি থেকে আমাদের এখানে মানসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসে, তার সাথে পরামর্শ করে আমরা চিকিৎসা দেব।

ডাক্তারের আশ্বাস শুনে সিরাতের মন অনেকটা শান্ত হলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তার মাকে সুস্থ করে দেবেন! সে এই বিশ্বাস রাখে, এবং মনে মনে নিয়ত করলেন তার নিয়মিত নামাজ পড়া দরকার। আমেরিকার মত দেশে থেকে ধর্মের প্রতি উদাসীন ছিল, এখন আর সেই ভুলটি করতে চাচ্ছে না। আল্লাহ তার মাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, আল্লাহর সান্নিধ্যে তার অবশ্যই যেতে হবে। ডাক্তারের কথা শোনার পরে হসপিটালের কাছে মসজিদ আছে সেখানে গেলেন নামাজ পড়তে। আল্লাহর কাছে আর্জি করলেন আল্লাহ যেন তাড়াতাড়ি তার মাকে ভালো করে দেয়, এবং যে তার মায়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে তাকে যেন লোক চোখের সামনে নিয়ে আসে। নামাজ পড়ে এসে সিরাত আমিরুল ইসলামকে বলল,

তুমি এখন বাসায় যেতে পারো, আম্মু এখানে ভর্তি আছে তার চিকিৎসা ঠিকঠাক ভাবে চলবে! আমি আছি অবন্তী আছে তোমার আর থাকার দরকার নেই। তুমি তোমার ব্যবসা সামলাও যেয়ে।

আমার ব্যবসা করার মন মানসিকতা এখন নেই, আমি এখানে থাকতে চাই তোমাদের সাথে। বাসায় গেলে মন এখানে পড়ে থাকবে।

পাপা আমি চাচ্ছি না তুমি এখানে থাকো, আমি যখন আমার মাকে দেখি তখন মনে হয় এই অবস্থার পিছনে তুমি দায়ী। তাই তোমাকে আমি সহ্য করতে পারতেছিনা, তুমি আমার জন্মদাতা পিতা আমি চাইনা তোমার সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করতে। তবু কেন জানি ইচ্ছা করে তোমার সাথে খুব বাজে বিহেভ করে ফেলি। নিজেকে খুব কন্ট্রোল করে রাখতেছি তাই চাচ্ছি তুমি আমার সামনে থেকো না, প্লিজ তুমি চলে যাও।

আমিরুল ইসলাম বুঝতে পারলেন, জোর করে কাজ হবেনা, সিরাত যখন বলেছে তাকে চলে যেতেই হবে।

ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি, তুমি ভালোভাবে থেকো, আর কখন কি হয় আমি কল করলে আমাকে জানিও। বাবা তোমার মাকে কিন্তু আমি অনেক ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, জানিনা আমার কি হয়েছিল আমি এত বড় ভুল সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিলাম। একটা কথা মনে রেখো তোমার মাকে যদি ভালো না বাসতাম এতদিনে তার জায়গায় অন্যজনকে দিয়ে দিতাম। আমার জীবনে অনেক মেয়ে আসতে চেয়েছে আমি কাউকে স্ত্রী হিসেবে তোমার মায়ের স্থান দিতে পারিনি। স্বীকার করি আমি ভুল করেছি এখন যদি আমি মরেও যাই তবু কিন্তু সেই ভুলের সংশোধন হবে না, যা হবার হয়েছে পারলে আমাকে মন থেকে ক্ষমা করে দাও।

সিরাত কোন উত্তর দিল না আমিরুল ইসলামের কথায়। তাই আমিরুল ইসলাম সুফিয়ার কেবিনে গেল। তাকে এক নজর দেখে অবন্তীকে বলল তোমার মামির খেয়াল রেখো, আমি চলে যাচ্ছি। সিরাত চাচ্ছে না আমি এখানে থাকি।

সিরাত ভাইয়া যখন যাচ্ছে না তাহলে আপনি চলে যান! আমরা দুজন তো আছি মামিকে দেখে রাখতে পারব, আপনার দরকার হলে আপনাকে জানাবো, তখন চলে আসবেন।

আমিরুল ইসলাম বাসায় ফিরে যাবার পর রফিক মিয়া তাকে বললেন, অবন্তী আসলো না কেন? কয়েকদিন পর তার ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা, লেখাপড়া করতে হবে না।

অবন্তী কেন আসেনি সেটা তাকে জিজ্ঞেস করো, আমি তো জানিনা! তুমি তাকে ফোন করতে পারো না।

অবশ্যই ফোন করতে পারি, কিন্তু মেয়ে তো আমার কথা শুনছে না।

তোমার মেয়ে যদি তোমার কথা না শুনে আর কার কথা শুনবে। তার ইচ্ছা হচ্ছে সেখানে থাকার থাকুক।

আপনি এটা কি বলছেন, ইচ্ছা হলেই হবে লেখাপড়া বাদ দিয়ে।

তুমি তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো কেউ তাকে জোর করে সেখানে রাখেনি।

রফিক মিয়া কল করে খুব রাগারাগি করলেন অবন্তীর সাথে। অবন্তী রফিক মিয়াকে জানিয়ে দিলো আমি এখন আসছি না। ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা দরকার হয় এই বছর আমি দেবো না, সামনে বছর দেবো।

রফিক মিয়া বুঝতে পারছেন না অবন্তী কেন এত বাড়াবাড়ি করছে। সে যে ঢাকায় যাবে সে সাহসও পাচ্ছে না, সুফিয়া বেগমের সামনে যেতে তার ভয় হচ্ছে।

সিরাত মার্কেটে গিয়ে অবন্তীর জন্য চার সেট থ্রি পিস কিনলো, আর নিত্য প্রয়োজনীয় যা কিছু লাগে সবকিছু কিনলো। এখানে থাকতে হবে অনেক দিন, অবন্তী এখানে থাকছে কোন জামা কাপড় আনেনি। সুফিয়া বেগমকে ঘুমের মেডিসিন দিয়ে রাখা হয় বেশিরভাগ সময়। যখন সজাগ থাকে সিরাতকে দেখে বলে আমাকে আমেরিকান নিয়ে যাও আমার ছেলের কাছে! তুমি না কথা দিয়েছিলে আমার ছেলের কাছে নিয়ে যাবে, তাহলে এখানে রাখছো কেন আমাকে। সিরাত তাকে বলে তুমি তো একটু অসুস্থ, সুস্থ হলে তোমাকে নিয়ে যাব! তখন তুমি তোমার ছেলেকে চিনতে পারবে।

সুফিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলেকে আমি চিনতে পারবো তুমি এখনই নিয়ে যাও। অবন্তীর দিকে তাকিয়ে বলে তুমি বলে দাও এই ছেলেকে আমার সিরাতের কাছে নিয়ে যেতে।

মামি এইতো আপনার সিরাত, এখন অনেক বছরে আপনার ছোট সিরাত অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। আপনি তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখুন আপনার মতই দেখতে।

সুফিয়া বেগম সিরাতের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর বলেন, কিন্তু আমার সিরাত তো ছোট ছিল এই ছেলে অনেক বড়। আমার ছেলে অনেক বড় হলো কিভাবে, এটা আমার ছেলে নয়।

আম্মু আমি তোমার ছেলে, আমি তোমার সিরাত। সিরাতের কথা শুনে সুফিয়া বেগম কি যেন ভাবতে থাকে, ভাবতে ভাবতে বলে সেটা কিভাবে সম্ভব আমার ছেলে ছোট ছিল! ঠিকমতো কথা বলতে পারতো না। তুমি কত বড় এটা আমি বিশ্বাস করি না। তোমরা আমাকে মিথ্যা বলছো।

তখন অবন্তী আর সিরাত চুপ করে থাকে, সুফিয়া বেগম বিড়বিড় করে একা একাই কথা বলে যায়।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে