ভালোবাসি পর্ব-০৩

0
1028

গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০৩

সাবার কর্মকান্ডে আমি অবাক হয়ে সাবাকে জিজ্ঞেস করি.
-তুই কি উনাকে চিনিস?

আমার প্রশ্নে সাবা আমানকে ছেড়ে দিয়ে জিভে কামড় দিয়ে বলে,

-যা দিলাম সব প্লেন পোপার্ট করে.

আমি ব্রু খুচকে জিজ্ঞেস করলাম.

-কোন প্লেনের কথা বলছিস তুই?

সাবা অসহাইয়ের মতো মুখ করে বলে ,

-কি করে বলি বল তো .সব কিছু শুনার পর তো তুই নির্ঘাত আমাকে এক উস্টা দিয়ে উগান্ডা পাঠাবি.

সাবাড় কথা শুনে মনে হচ্ছে ডাল মে জারুর কুছ কালা হে.আমি ছোট ছোট চোখ করে জিজ্ঞেস করলাম.

-কি করেছিস শুনি!যদি এমন কোনো কাজ করে থাকিস যাতে করে আমার তোকে উগান্ডা পাঠাতে মন চাইবে তাহলে সত্যিই আমি কিন্তু তোকে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো.

-তাহলে আমি বলবো না.

এতক্ষন ধরে মি. আমান চৌধুরী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছিলো.এখন সে হালকা হেসে সাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে.

-সাবা এবার মেডামকে সব কিছু বলে দে.এমনিতে এখন সব কিছু ঠিক হয়ে গিয়েছে তারপর ও যদি উনি ঘাড় ত্যারামি করতে চাই তাহলে আমি ত্যারা ঘাড়কে সোজা করে দিবো.

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম.

-এই যে মি. আপনি কি বলছেন বলুন তো.কার ঘাড় সোজা করবেন .আর সাবা তুইই বা আমার থেকে কি লুকাচ্ছিস.

সাবা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে .

-ভাইয়া তোমার ভরসায় বলছি কিন্তু .আমার কিছু হয়ে গেলে তার সম্পূর্ণ ধায় ভার কিন্তু তোমার.

সাবাড় কথায় এইটুকু বুঝলাম ওরা দুজন এক জন আরেকজনকে আগে থেকে চেনে.কিন্তু কিভাবে?আর চিনেই যখন তখন সাবা কেন আমাকে কিছু বললো না.এই সব প্রশ্নের উত্তর সাবাই দিতে পারবে.তাই আমি ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম.

-দেখ তোর এতো ঢং আমার আর ভালো লাগছে না.তুই কি এখন সবটা বলবি নাকি তুই বলার আগেই তোকে লাথি মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো কোনটা?

সাবা ভাবার এক্টিং দেখিয়ে বলে

-না আগে বলেই নেয়.তারপর না হয় উগান্ডা থেকে ঘুরে আসব ।

-হুম.তাহলে এত পেচাল না মেরে আসল কথা বল.

সাবা এবার বলতে শুরু করলো.

-শুন তাহলে .এই যে আমার পাশে যে হেন্ডসাম ডেশিং বয় দাঁড়িয়ে আছেন উনি হলেন আমার একমাত্র মামার এক মাত্র ছেলে আমান চৌধুরী তার মানে হলো আমার কাজিন.তবে ভাইয়াকে আমি কখনো মামাতো ভাই হিসেবে দেখিনি সব সময় নিজের আপন ভাই হিসেবে দেখেছি আর ভাইয়াও আমাকে সব সময় নিজের বোনের মতো ভালোবেসেছে.১ মাস আগে ভাইয়া বিদেশ থেকে দেশে ফিরে.এখন থেকে ভাইয়া উনার বিজনেস দেশে থেকেই সামলাবে.মামাও তাতে খুশি হয়ে গেলো আর ছেলের বিয়ের বয়স ওতো হয়ে গিয়েছে তাই পাত্রী খোঁজার গুরু ভার মামা আমার কাঁধে দিলো.আর পাত্রীর কথা বলতেই আমার না সবার প্রথমে তোর নাম মাথায় এলো.তোর মতো গুণবতী.লক্ষীমতি.রূপবতী .রাগিবতী আর একটা মেয়েও দুনিয়াতে নাই.তাই মামাকে ইরফানের নাম্বারটা দিয়ে দিলাম আর তারপর তো কাল সব হলোই.ও আর হে তোকে দেখতে আসার আগেই ভাইয়া আমার থেকে তোর সম্পর্কে সব ডিটেলস ও জেনে নেয়.আর আমিই ভাইয়াকে তোর প্লেনের কথাটা বলে দিয়েছিলাম.তাই ভাইয়া আগে থেকেই জানতো তুই যে নাটক করছিস.

কথাগুলো বলে সাবা মাথা নিচু করে বলে

-সরি দোস্ত .জানি এখন তুই মারাত্মক পরিমানে রেগে যাবি.কিন্তু বিশ্বাস কর আমার চোখে তোর জন্য বেস্ট লাইফ পার্টনার আমান ভাইয়াই .

সাবার পুরো কথা শুনে রাগে মনে হচ্ছে আমার কান দিয়ে গরম ধুয়া বের হচ্ছে .ইচ্ছে করছে এই দুই ভাই বোনকে একসাথে নিয়ে সামনের ডোবাটাই চুবিয়ে আনি.নিজেকে কোনোরকমে শান্ত করার চেষ্টা করছি.আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আমান সাবাকে ফিসফিস করে বলে .

-কিরে তোর বান্ধবী দেখি কোনো কথা বলছে না .আমি তো আরো ভাবলাম সব জানার পর দু জনকে একসাথে মাথায় তুলে আছাড় দিবে .কিন্তু মেডাম তো দেখছি একদম শান্ত.

সাবা আমানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে .

-আহারে ভাইয়া বুঝতে পারছো না এ হলো ঝড় আসার পূর্ব লক্ষণ কোনো বড় সড় ঝড় আসার আগে পরিবেশটা এমন শান্তই থাকে.

কিন্তু আমি কোনো প্রকার রিএক্ট না করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম.আমার এই আচরণ বোধ হয় সাবা আর আমান কেউই হজম করতে পারলো না .সাবা মন খারাপ করে বললো .

-প্রত্তু নিশ্চই কষ্ট পেয়েছে ভাইয়া .ও যখন আমার কোনো কথায় কষ্ট পায় তখন ও এইভাবেই আমার সাথে রাগ না দেখিয়ে আমাকে ইগনোর করে.এখন ও তাই করছে .

আমান সাবাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
.
-আরে পাগলি মন খারাপ করিস না .তোদের সম্পর্কটা খুব স্ট্রং দেখবি প্রত্যাশা বেশিক্ষন অভিমান করে থাকতে পারবে না.একটু পরই এসে তোর সাথে কথা বলবে.

-হুম .কিন্তু তোমার এখানে আসার কারণটাই তো জানতে পারলাম না .

-ওহ হে সব কিছুর মাঝে আসল কাজের কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম.আসলে মা পাঠিয়েছে প্রত্যাশার চুরির মাপ নেয়ার জন্য.কিন্তু এখন ও যা রেগে আছে ওর কাছে চাইবো কিভাবে সেটাই ভাবছি .

-না না এখন ওর কাছে কিছু বলতে গেলে এটম বোমা ফেটে যাবে .তার চেয়ে তুমি দাড়াও আমি ওর একটা চুরি তোমাকে দিচ্ছি .

-আচ্ছা তাহলে দে .

সাবা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা চুরি বের করে আমানকে দিয়ে বললো .

-নাও ভাইয়া এটাই প্রত্যাশার হাতের পারফেক্ট মাপ।

-ওহ ওকে .আমার কাজ হয়ে গেছে এবার আমি যাই.আর তোর বান্ধবীর রাগ কমলে ওকে বুঝিয়ে বলিস যেন আমাকেও ভুল না বুঝে .

-আচ্ছা ভাইয়া তুমি টেনশন করো না ও তোমায় ভুল বুঝবে না।

আমান সাবার মাথায় হাত বুলিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে তার শাশুড়ি মাকে বিদায় জানিয়ে ড্রয়িং রুমের কাছে যায়.সেখানে গিয়ে দেখে প্রত্যাশা সোফায় বসে মোবাইলে কি যেন করছে.আমান তাকে একবার ডাকে .কিন্তু প্রত্যাশার কোনো রেস্পন্স না পেয়ে সে আল্লাহ হাফেজ বলে বেরিয়ে যায়.

সন্ধ্যা ৬.৩০টা ,

ড্রয়িং রুমের মাঝখানে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে সাবা .আধ ঘন্টা যাবৎ সে এইভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে প্রত্যাশাকে বলে ,

-বান্ধবী আর কতক্ষন এইভাবে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো .স্কুল কলেজ লাইফে ও তো কখনো এইভাবে কান ধরে দাঁড়ায়নি .

আমি মনোযোগ দিয়ে মোবাইল গুতাচ্ছিলাম .সাবার কথায় একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবার মোবাইলে মনোযোগ দেয় তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলি .

-আমাকে মিথ্যে বলার আগে মনে ছিলোনা যে আমি জানতে পারলে তোমাকে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দেব .

সাবা এবার ঠোঁট উল্টিয়ে বলে.

-আমার মিথ্যা কি তোর কোনো ক্ষতি করেছে নাকি .বরং আমি মিথ্যা বলাই তুই আমান ভাইয়ের মতো এমন হেন্ডসাম ডেশিং একটা জামাই পাচ্ছিস কোথায় তুই আমার তারিফ করবি তা না উল্টা আমাকে শাস্তি দিচ্ছিস .হায় কপাল দুনিয়াতে ভালো মানুষের কোনো দামই নেয়.

আমি ব্রু কুঁচকে বললাম.

-তুই কি চাস বিয়ের আগেই হানিমুনের জন্য উগান্ডা যেতে?

সাবা মাথা নাড়িয়া না বলে.

-হুম তাহলে গুড গার্লের মতো কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক.উইথ আউট এনি টক.ওকে বেবি !

সাবা বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললো .

-জানু শোননা আমাকে তো বাড়িতে ফিরতে হবে তাই না.

-কোনো বাড়ি ফেরা হবে না .

দরজার দিকে দাঁড়িয়ে দেখি আম্মু হাতে একটা ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে .রুমে এসে ট্রেটা টেবিলের উপর রেখে সাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে .

-প্রত্যাশার বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তুই এই বাড়িতেই থাকবি . তোর বাবা মার্ সাথেও আমার কথা হয়েছে .উনারাও সম্মতি দিয়েছেন.আর প্রত্যাশার বিয়ের পর তো পার্মানেন্টলি এই বাড়ির মেয়ে হয়ে যাবি তাই আগে থেকেই থাকার অভ্যাস করেনে.

-কিন্তু মামনি..

-কোনো কিন্তু না আম্মু কি বলেছে শুনিসনি.সো আর কোনো কথা হবে না আম্মুর কথায় শেষ কথা .

-হুম .নে এবার দুজন কফি খা.

কথাটা বলেই আম্মু আম্মুর রুমে চলে যায় আর সাবা আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে বলে ,

-আমি কি কফিটা খাবো?

আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম ,

-এবারের মতো মাফ করে দিলাম .আর যদি কোনো দিন কোনো মিথ্যা কিংবা আমার থেকে কিছু লুকিয়েছিস না তাহলে তোকে আমি ফ্যানের সাথে উল্টা লটকিয়ে ইচ্ছা মতো ধুলায় দিবো ।

সাবা খুশিতে গদগদ হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে .

-আচ্ছা সোনা আর কোনো কিছু তোর থেকে লুকাবো না প্রমিস .

-আচ্ছা আচ্ছা এবার ছাড় আমায়.
সাবাকে আমাকে ছেড়ে দিয়ে যেই কফির মগটা হাতে নিতে যাবে অমনি কেউ ছো মেরে সেটা নিয়ে নেয় .

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে