ভালোবাসি তোমায় পর্ব-০৯

0
714

#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৯

পুরো বাড়ি ঘুরে দেখছিলো হুর, লিয়া আর হৃদ। বড়োরা বসার রুমে কথা বলছে। মিস্টার ফরিদ তাদের কে বললো বাড়ি ঘুরে দেখতে। বড়ো দের কথার মাঝে তারা বসে বসে বোর হচ্ছিলো বুঝতে পেরে ফরিদ সাহেব তাদের বাড়ি ঘুরে দেখতে বলেছে।

বাড়ির বাইরের অংশ যতটা না বড় ভেতরের অংশ তার দ্বিগুন বড় বলে মনে হচ্ছে হুরের। এই বাড়িতে মাত্র দুজন মানুষ কিভাবে থাকে বুঝে পাচ্ছে না হুর। তবে অনেক সার্ভেন্টস আছে। হুর দ্বিতীয় তলা ঘুরে দেখছিলো। হুট করে পিছে ফিরে দেখলো হৃদ আর লিয়া নেই। সে আশেপাশে খুঁজেও তাদের পেলো না। হুর বুঝতে পারলো সে যখন চিন্তা করতে ব্যস্ত ছিলো তখন হয়তো ওরা অন্যদিকে চলে গেছে। হুর আর ঐদিকে মাথা ঘামালো না। সে তার মতো ঘুরে দেখতে লাগলো।

-“আচ্ছা এই ফাইয়াজ বেটা গেলো কোথায়! ভেতরে আসার পর মাত্র একবার দেখলাম উপরে উঠতে। আর নামলো না। গেলো কোথায়! ”

হাঁটতে হাঁটতে হুর দেখলো দ্বিতীয় তালার সব রুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ হলেও একটা রুমের দরজা ভেতর থেকে চা’পা’নো।হুর মনে মনে আন্দাজ করলো এটাই হয়তো ফাইয়াজ এর রুম।

আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিলো হুর। দেখলো রুম ফাঁকা। সে বিনা শব্দে রুমে প্রবেশ করে বুঝতে পারলো এটা ফাইয়াজ এর রুম। বিশাল দেয়াল জুড়ে ফাইয়াজ এর অনেক ছবি সুন্দর করে ঝোলানো। ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ আসছে।

-“ওহ! তারমানে মিস্টার শাওয়ার নিতে গেছেন। আপনাকে তো একটা পানি’শমেন্ট দেয়া দরকার মিস্টার ফাইয়াজ। আমাকে অ’প’মান করা, ফেলে দিতে চাওয়ার জন্য একটা ছোটোখাটো শা’স্তি তো বান্তা হ্যা! কাজে লেগে পর হুর… ”

হুরের নজর প্রথমে ড্রেসিং টেবিল এর উপর পড়লো। কিন্তু কাংক্ষিত জিনিস নজরে পড়লো না। হুর দ্রুত cupboard খুলে তার প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজতে লাগলো। কিন্তু যা দরকার ছিলো তা না পেলেও এমন কিছু পেলো যা সে এক্সপেক্ট করে নি! তবে সে আপাতত তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাচ্ছে না। তাকে তার মিশ’ন কমপ্লিট করতে হবে। ফাইনালি কাংক্ষিত বস্তু খুঁজে পেলো হুর। ড্রেসিং টেবিলের নিচের একটা ড্রয়ার এ রাখা ছিলো।

নিজের কাজ সম্পূর্ণ করে বিজয়ের হাসি দিলো হুর। কিন্ত সেই হাসি বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না হুরের। হুট করে ওয়াশরুম এর দরজা খোলার শব্দে লাফিয়ে উঠলো সে। কি করবে ভেবে না পেয়ে দ্রুত cupboard এর একপাশে লুকিয়ে পড়লো। এইদিক থেকে ওয়াশরুম দেখা যায় না। তারমানে তাকেও দেখা যাবে না। সে cupboard এর সাথে সেটে চোঁখ মুখ খি’চে দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু দুই মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন কোনো শব্দ পেলো না তখন অবাক হলো। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে লাগলো,

-“কি হলো ব্যাপারটা। কিছু হলো না কেনো!”

মুখের উপর কেউ ফুঁ দেয়ায় কেঁপে উঠলো হুর। চোঁখ বড়ো বড়ো করে সামনে তাকিয়ে দেখলো ফাইয়াজ তার দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। ভ’য়ে চি’ল্লাতে যাওয়ার আগেই হুরের মুখ চে’পে ধরলো ফাইয়াজ। হুর ফাইয়াজ এর দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো ফাইয়াজ শুধু একটা ট্রাউজার পড়ে আছে। উজ্জ্বল শ্যামলা দেহে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি জমে আছে। ভেজা চুল দিয়ে পানির ছোট ছোট কণা ঝরছে। স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তাকে। ফাইয়াজ কে এভাবে দেখে চোঁখ নামিয়ে নিলো হুর।ফাইয়াজ হুরের দিকে আরও ঝুঁকে এলো। হুরের মুখ থেকে হাত সরিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েস এ বললো,

-“মিস রা’ক্ষ’সী আমার রুমে কি করতে এসেছিলে হুম! কি ভেবেছিলে আমার রুমে ঢুকে আমাকে তেলে পা স্লি’প করে ফেলার প্ল্যান করবে আর আমি বুঝবো না!”

-“দে… দেখুন আ.. আ আমিতো আমিতো …”

-“তুমি তো কি … বলো মিস রাক্ষ’সী। ”

হুর কি বলবে! তার তো গলা দিয়ে আওয়াজ ই বের হতে চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে কথা গুলো গলায় এসে আটকে যাচ্ছে। ফাইয়াজ এর প্রতিটা নিঃশ্বাস তার কাঁধে, গলায় আ’ছ’ড়ে পড়ছে। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষ এতটা কাছে আসায় তার মনে হচ্ছে দম ব’ন্ধ হয়ে যাবে।

ফাইয়াজ কিছুটা দূরে সরে হুরের দিকে তাকিয়ে দেখলো হুর চোঁখ মুখ চে’পে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। হুরের অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো ফাইয়াজ।

হঠাৎ করে নিজেকে হালকা মনে হওয়ায় চোঁখ পিটপিট করে খুললো হুর। দেখলো ফাইয়াজ তার থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। অমায়িক লাগছে তাকে হাসি হাসি মুখে। এইসব চিন্তা মাথায় আসায় হুর মনে মনে নিজেকে দুই চারটা গা’লি দিলো।

-“কি খা’রা’প, শ’য়তা’ন, অস’ভ্য লোক ভাবা যায়। আমাকে ভ’য় দেখিয়ে এখন কি সুন্দর ভে’ট’কা’চ্ছে। যাই হোক এখন উ’ল্টো’পা’ল্টা কিছু বলা যাবে না। যেভাবেই হোক এখান থেকে আপাতত বের হতে হবে। ”
মনে মনে ভাবলো হুর।

-“কি মিস রা’ক্ষ’সী! কোন ভাবনায় বিভোর হয়ে আছো হুম! আমার রুমে কেনো এসেছিলে বললে না তো! ”

হুর চমৎকার একটা ভে’টকা’নি হাসি দিয়ে বললো,

-“আরেহ ভাইয়া হয়েছে কি আমি তো ভুল করে আপনার রুমে চলে এসেছিলাম। হৃদ আর লিয়া কোথায় যেনো চলে গেলো আর আমি ভুল করে এখানে চলে এসেছি হেহে …”

-“ওয়াশরুম এর সামনে তেল টাও ভুল করে ঢে’লেছো বুঝি! ”
এক ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো ফাইয়াজ।

-“ওই আরকি হেহে। আচ্ছা ভাইয়া আমি নিচে যাই হ্যা! সবাই মনে হয় আমাকে খুঁজছে। ”

হুর যেই যাওয়ার জন্য দুই কদম বাড়ালো অমনি ফাইয়াজ তার হাত ধরে টা’ন দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। হুট করে টা’ন দেয়ায় ভ’য়ে ফাইয়াজ এর গলা আঁকড়ে ধরলো হুর। ধীরে ধীরে চোঁখ খুলে ফাইয়াজ এর দিকে তাকিয়ে দেখলো সে কেমন অন্যরকম দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই দৃষ্টিতে যেনো এক সমুদ্র মুগ্ধতা বিরাজমান। অদ্ভুত নেশালো সেই দৃষ্টি গায়ে কা’প’ন ধরিয়ে দিচ্ছে হুরের। হুর দ্রুত সরে আসতে চাইলে তার কোমর চে’পে ধরে ফাইয়াজ। ভ’য়ানক ভাবে কেঁ’পে উঠে হুর।

-“এতো বড়ো অ’পরাধ করে শা’স্তি ছাড়াই পালিয়ে যাবে তা কি করে হয়! বলো তো কি শা’স্তি দেয়া যায় তোমাকে!”

-“প্লিজ ছেড়ে দিন। আর জীবনেও এমন কিছু করবো না। ”

হুর কে দেখে মনে হচ্ছে সে এখনই কেঁ’দে দিবে। ফাইয়াজ এর অনেক হাসি পাচ্ছে হুরের ফেস দেখে। কিন্তু মুখটা কে গম্ভীর করে রেখেছে। ফাইয়াজ আরও কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই লিয়া আর হৃদ এর আওয়াজ শুনতে পেলো। তারা হুর কে ডাকছে। তারমানে তারা হুর কে খুঁজতে খুঁজতে এদিকেই আসছে। তাই ফাইয়াজ হুর কে ছেড়ে দিলো। হুর কে ছেড়ে দিতেই হুর বড়ো একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। এতক্ষন তার দম আ’টকে ছিলো। হুর দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে ফাইয়াজ পিছন থেকে বললো,

-“ছেড়ে দিয়েছি তারমানে এই না যে পা’নিশমেন্ট পাবে না। তোমার শা’স্তি তুলে রাখলাম। সঠিক সময়ে সেই শা’স্তি দিবো। ”

হুর নিরাপদ দূরত্বে সরে বললো,

-“আপনার থ্রে’ট এ আমি ভয় পাই না হুঁহ। আপনি আমার কিছুই করতে পারবেন না। হনু’মান একটা। ”
কথাটা বলে আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না হুর। দিলো এক দৌড়।

এতক্ষন হাসি আটকে রাখলেও এবার হেসে ফেললো ফাইয়াজ।

-“ভাগ্য ভালো ঐ সময় মীররে ম্যাডাম কে দেখে ফেলেছিলাম। তাই তো বুঝতে পারলাম নিশ্চই কোনো গড়ব’ড় করেছে আমার রুমে। তাই এভাবে লুকিয়ে আছে। আজকের মতো মান সম্মান বেঁচে গেলো। উফঃ, এই মেয়ের থেকে বেঁচে থাকতে হবে। কাল থেকে তো তাদের বাড়িতেই থাকবো। কি কি স’হ্য করতে হবে কি জানি!”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে