ভালোবাসি তোমায় পর্ব-১০

0
759

#ভালোবাসি_তোমায়
#A_mysterious_love_story
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১০

রুম থেকে এক দৌড়ে সিঁড়ির কাছে এসে থামলো হুর।

-“বাব্বাহ কি বাঁচা বাঁচলাম! মনে হচ্ছিলো এতক্ষন বা’ঘের খাঁচায় ছিলাম। ধুরু ভাল্লাগেনা ছাই! আমার চাল আমার উপরে উল্টো পড়লো! ”

-“কিরে আপাই তুই এখানে দাঁড়িয়ে একা একা কি বিড়বিড় করছিস! আর এই দিকে আমরা তোকে খুঁজতে খুঁজতে হয়’রান হয়ে গেলাম। ”
নিজের কপালের ঘাম মুছার ভান করে বললো হৃদ।

-“তাই তো কই ছিলি তুই। আমরা হুট করে দেখি তুই নেই আমাদের সাথে। আমরা তো একটু ছাদে গিয়েছিলাম। এরপর নেমে তোকে কতো খুজলাম! এই ফ্লোরেও তো তোকে দেখলাম না! ”
বললো লিয়া।

হুর মনে মনে চিন্তা করলো এখন এদের কিছু বললে তাকে নিয়ে হাসা-হাসি করবে। হুর জোড় করে হেসে বললো,

-“আরেহ আমি তো এখানে এই ফ্লোরেই ছিলাম। তোরা হয়তো ঠিকভাবে দেখিস নাই। তাই খুঁজে পাস নি। হেহে। আচ্ছা চল আমরা নিচে যাই। অনেকক্ষণ তো হলো। বাবা-মা নিশ্চই আমাদের খুঁজছে। ”

-“হ্যা ঠিক বলেছিস। চল নিচে যাই আমরা। ”

——————————————————————–

-“ভাইয়া ফাইয়াজ এর সাথে কথা বলেছিলেন আমাদের বাড়িতে থাকার ব্যাপার নিয়ে!”

-“হ্যা আপা কাল রাতে কথা বলেছিলাম ওর সাথে। ছেলে তো আমার মানতেই চাচ্ছিলো না। অনেক বোঝানোর পর রাজী হয়েছে। ”

-“ভাইয়া আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। ফাইয়াজ এর কোনো অযত্ন আমি হতে দেবো না। ”
হেসে বললেন মিসেস হেনা।

-“হ্যা আপা আপনাদের কারণেই তো একটু চিন্তা কমলো আমার। আমার ছেলের কোনো অযত্ন আপনারা করবেন না আমি জানি। ”

সবাই নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা বলতে লাগলো। মিস্টার হাসান, মিস্টার ফরিদ আর লিয়ার বাবা মিস্টার লাবিব নিজেদের বিসনেস নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। এর মাঝে নিচে নেমে এলো হুর, হৃদ আর লিয়া।

-“কিরে এতক্ষনে তোদের নিচে আসার সময় হলো!”

-“এইতো আম্মু একটু ঘুরে আসলাম। আচ্ছা আঙ্কেল ফাইয়াজ ভাইয়া কোথায়। আসার পর মাত্র একবার দেখেছিলাম। আর দেখলাম না। ”
মুখ টা ছোট করে বললো হৃদ।

-“দেখো তোমার ভাইয়া মনে হয় রুমে বসে কাজ করছে। তার কাজই ঐটা। হয় অফিসে কাজ করা নয়তো বাসায় বসে কাজ করা। ”
জবাব দিলেন ফরিদ সাহেব।

এমন সময় ফাইয়াজ নিচে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করলো,

-“কি কথা হচ্ছে আমাকে নিয়ে!”

হৃদ গাল ফুলিয়ে বললো,

-“আরেহ ভাইয়া তুমি এসেছো!তোমাকে আসার পর থেকে কতো খুঁজলাম। কিন্তু তোমার দেখা পেলে তো!”

ফাইয়াজ আলতো হেসে বললো,

-“আমার চ্যাম্প টা বুঝি আমাকে অনেক মিস করেছে! ভাইয়া তো একটা জরুরী কাজ করছিলো তাই নিচে আসে নি! এখন সব কাজ কমপ্লিট করে এসেছি। বাকি পুরো টাইম তোমাকে দিবো কেমন!”

হৃদ একগাল হেসে বললো,

-“ওক্কে ভাইয়া। ”

হুর এর গা জ্ব’লে উঠলো হৃদ আর ফাইয়াজ এর কথা শুনে। সে আস্তে আস্তে ভে’ঙ্গ’চি দিয়ে বললো,

-“উউহ পিরিত কতো। ঢং যত্তসব। এমনভাবে ভাইয়া ভাইয়া করছে যেনো তার কয় জনমের ভাইয়া লাগে। এরপর আসিস খালি আপাই এর কাছে!”

মিস্টার ফরিদ এবার উঠে দাঁড়ালেন।

-“তো চলো সবাই। লাঞ্চ টা করে নেয়া যাক। ”

সবাই সম্মতি জানিয়ে উঠে দাঁড়ালো ডাইনিং টেবিলে যাওয়ার জন্য। হুর দেখলো হৃদ আর লিয়া ফাইয়াজ এর সাথে একেবারে চিপকে আছে। যেনো তাকে চেনেই না। সে রা’গ করে ধূপধাপ পা ফেলে চলে গেলো আগে আগে।

হুরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লিয়া বলে উঠলো,

-“ম্যাডাম মনে হয় রে’গে গেছে রে হৃদ। বাসায় যাওয়ার পর আমাদের দুই জনের পিঠ ঠিক থাকলে হয়। আজকে মনে হয় পিঠের একটা হাড়গোড় ও আসতো থাকবে না।

হৃদ এর মুখটা ভ’য়ে চুপসে গেলো।

-“ঠিক বলেছো লিয়াপি। আমরা ওকে পাত্তা না দিয়ে ফাইয়াজ ভাইয়ার সাথে চিপকে আছি দেখে সেই চেতে’ছে। ”

ফাইয়াজ ওদের মুড ঠিক করার জন্য বললো,

-“আরে পেরা নেই চিল। আজকের মতো কোনোরকম সামলে নাও। কালকে থেকে তোমাদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমার। ”

হৃদ আর লিয়া দুইজনই ভীষণ অবাক হলো। লিয়া বললো,

-“কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব ভাইয়া?”

-“কারণ কালকে থেকে আমি হৃদ দের বাড়িতে থাকবো। বাবা এক মাসের জন্য দেশের বাহিরে যাবে।তাই আমাকে বলেছে আমি যেনো এক মাস হৃদদের বাড়িতে থাকি।”

লিয়া আর হৃদ খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। তারা দুইজনই এই অল্প সময়ে ফাইয়াজ কে অনেক আপন করে নিয়েছে। আর ফাইয়াজও তাঁদের অনেক স্নেহ করে এই ব্যাপারটা তারা লক্ষ্য করেছে। তাইতো তারা এতো টা খুশি। দুইজনই এক্সসাইটেড হয়ে একসাথে বললো,

-“সত্যিই! yeh সেই মজা হবে। ”

ফাইয়াজ ওদের এক্সসাইটমেন্ট দেখে আলতো হাসলো।

-“মিস হুর কে তোমরা বলবে না যে আমি তোমাদের বাড়িতে আসছি কেমন! ঐটা তার জন্য surprise থাকুক। ”

-“ওক্কে ভাইয়া।

-“আচ্ছা চলো লাঞ্চ করতে। ”

———————————————————————

হুররা চলে যাবে এখন। তাদের বাবা-মা বিদায় নিতে ব্যস্ত। হৃদ আর লিয়াও তাদের সাথে আছে। এই ফাঁকে হুর আবার বাগানে চলে এসেছে। লাঞ্চ এর পর একবার এসেছিলো এখানে। এই বাড়ির বাগান টা তার খুব খুব পছন্দ হয়েছে। যদিও তার ছাদেও অনেক গাছ আছে। কিন্ত এতো না। বাহারী বাহারী ফুলের মিষ্টি ঘ্রানে সে মনে হয় পা’গল হয়ে যাবে। এমন সময় হুট করে কানে কেউ ফুঁ দেয়াতে লাফিয়ে উঠলো হুর। বুকে থুঁ’তু দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো ফাইয়াজ। হুর রে’গে গিয়ে বললো,

-“আপনি সবসময় এভাবে হুটহাট এটা’ক করেন কেনো! সমস্যা কি আপনার!”

-“হুটহাট এটা’ক না করলে তো তুমি ভ’য় পেতে না। তোমার ভ’য় পাওয়া ফেস টা দেখতে সেই লাগে। ”

হুর নাকের পাটা ফুলিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

-“হনুমান একটা। ”

ফাইয়াজ কাছাকাছি থাকায় ঠিকই শুনতে পেলো হুর কি বলেছে। সে হুরের নাক ফুলানো দেখে আলতো হাসলো যদিও সেটা হুরের দৃষ্টির অগোচরে।

-“তো মিস রা’ক্ষ’সী চলে যাচ্ছেন তাহলে! দেখা হচ্ছে কিন্ত আবার। ”

হুর যদিও বুঝতে পারলো না দেখা হচ্ছে বলার মানে তারপরও সৌজন্যতা বজায় রাখার জন্য বললো,

-“অবশ্যই দেখা হবে। এবার আমি যাই!”

হুর তার ফামিলির লোকেদের আসতে দেখে তাদের কাছে চলে গেলো। ফরিদ সাহেব কে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো। আর ফাইয়াজ সে হুরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ তাদের গাড়ি দৃষ্টির অগোচর না হয়। তারপর মৃদু হেসে মাথা চুলকে বাড়ির দিকে চলে গেলো।

———————————————————————-

ঘুমাতে যাওয়ার আগে হুর ভাবলো,

-“আজকের দিনটা খুবই ভালো কেটেছে। শুধু ওই হনুমানটার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো ছাড়া। বুঝি না সে সামনে আসলে আমার এতো অদ্ভুত লাগে কেনো! আর তার দৃষ্টি! যাই হোক এইসব বাদ দে হুর। এবার একটা সুন্দর স্লিপ দরকার। ”

লাইট নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো হুর।

————————————————————————–

রাত আড়াইটা। হুরের রুমের বেলকনির দরজা খুলে কেউ একজন রুমে প্রবেশ করলো। ধীর পায়ে হুরের বেড এর কাছে এসে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসলো। হুরের মায়াবী মুখটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আরাম পেয়ে হুর আরও গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়লো। হুরের বাচ্চামি দেখে নিঃশব্দে হাসলো লোকটা। আলতো স্বরে বললো,

-“তোমার অনেক বি’প’দ হুরপরি। তোমার এই পর্যন্ত কতবার ক্ষ’তি করার চেষ্টা করা হয়েছে তা তুমি ঘুনাক্ষরেও টের পাওনি। আর আমি চাই ও না এইসব হিং’স্রতা তোমার সামনে আসুক। কিন্তু আমার জানা নেই কতক্ষন তোমাকে এভাবে নিরবে বাঁচিয়ে যেতে পারবো। আমার তোমাকে নিয়ে খুব ভয় হয় জানো! যদি তোমার কিছু হয়ে যায়! আমি ম’রেই যাবো বিশ্বাস করো। যেদিন থেকে তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি সেদিন থেকে তুমি আমার জীবন হয়ে গেছো।

অচেনা লোকটা হুরের কপালে পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে বললো,

-“তোমার কোনো ক্ষ’তি আমি হতে দেবো না। এরজন্য যতটা হিং’স্র হওয়া লাগে ততটা হবো। নিজের খুশির জন্য, নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য আমার তোমাকে চাই। কারণ তোমাতেই আমার জীবন, তোমাতেই আমার মর’ণ। ভালোবাসি আমার হুর কে। অনেক অনেক ভালোবাসি। ”

লোকটা হুরের কপালে আরেকটা গভীর চুমু খেয়ে সাবধানতার সাথে যেভাবে এসেছিলো সেভাবে চলে গেলো।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে