ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
828

ভালোবাসা ( এক অনুভূতি)

পর্ব:৯
লেখা: kashfuzjahan

– হ্যালো জিসান শুনতে শুনতে পাচ্ছ?? আমি আজ বাসায় যেতে পারব না। ( অন্তরা)

– কেন জানতে পারি ( জিসান)

– তোমাকে বলেছিলাম না যে বাংলাদেশ থেকে একজন পেশেন্ট আসবে। আর অবস্থা খুব খারাপ। তাই ২৪ ঘন্টা খেয়াল রাখতে হবে। একদিন আমি থাকব একদিন অনন্যা। এই ক্রিটিকাল কেস অন্যদের হাতে ছাড়তে ভরসা পাই না। ( অন্তরা)

– আচ্ছা ম্যাডাম। তা আপনি আসতে পারবেন না মানলাম। আমি তো আপনার কাছে যেতে পারি। ( জিসান)

– হ্যা আসতেই পার। কিন্তু যদি দুষ্টামি না কর তাহলে। (অন্তরা)

– কিিিি আমি দুষ্ট? এটা বলতে পারলা তুমি?? (জিসান)

– তুমি কত ভদ্র আয়ান কে দেখেই বোঝা যায়। একদম তোমার কার্বন কপি। ( অন্তরা)

– ওহ আচ্ছা তাহলে থাক যাব না ( জিসান)

– থাক এতো ঢং করার কিছু নাই। চলে এসো ( অন্তরা)

– আচ্ছা এতো করে যখন বলছো আসছি। ( জিসান)

– পাগল একটা.

মোবাইলে কথা শেষ করেই অন্তরা ভিতরে যায়। রোগীকে দেখতে।

– মিস্টার সাগর, আমাদের ট্রিটমেন্ট তো চলছে। প্লিজ দয়া করে নিচে গিয়ে এই ঔষধ গুলো নিয়ে আসুন। ( অন্তরা)

ডাক্তার এর কথা মতো সাগর নিচে যায় ঔষধ নিতে। আর এইদিকে বাড়ি থেকে হসপিটাল বেশি দুরে না হওয়ায় জিসান ও পৌঁছে যায় সেখানে। সাগর ঔষধ নিয়ে ফেরার সময় জিসানের সাথে দেখা।

– আরে সাগর দেখি। এখানে কেন তুমি?? ( জিসান)

– জিসান ভাই!! কোথায় ছিলেন আপনারা?? জানেন কতো খুজেছি আপনাদের কে?? রাতারাতি কোথায় চলে গিয়েছিলেন?? ( সাগর)

– আসলে আদ্রিয়ান চলে যাবার পর ওই রাতেই আমরা আমেরিকা চলে এসে ছিলাম। যাই হোক কে অসুস্থ?? ( জিসান)

– আসুন। নিজে দেখুন কে অসুস্থ। তাহলেই বুঝতে পারবেন। চলুন এখনি ( সাগর)

এক প্রকার টানতে টানতে জিসান কে উপরে নিয়ে যায় সাগর। জিসানও কিছু না বলে চলতে থাকে। কিন্তু উপরে গিয়ে আদ্রিয়ান কে দেখে অবাক হয়ে যায় জিসান।

– আ-আ-আদ্রিয়ান ( জিসান)

– কি হলো তুমি এই পেশেন্ট এর নাম জানলে কিভাবে?? চিনো তুমি ওকে??( অন্তরা)

– চিনব না কেন এযে আমাদের আদ্রিয়ান। আমাদের নওশির আদ্রিয়ান ( জিসান)

– কি বলছে এসব। তুমি তো বলেছিলে সে মারা গেছে। তাহলে এখন কিভাবে কি?? ( অন্তরা)

– আমিও তো বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। ( জিসান)

– সব পরে জানা যাবে আগে নওশি কে ফোন করি। বলেই বেড়িয়ে যায় অন্তরা।

ক্রিং ক্রিং

– হ্যালো নওশি কোথায় তুমি কি করছো। জয় আর নিলয় কোথায়?? ( অন্তরা)

– জয় ভাই অফিসে। আমি আর নিলয় ও অফিসের জন্য বের হব। (নওশি)

– অফিসে যেতে হবে না। নিলয় কে নিয়ে এখনি হসপিটালে চলে আস। আর অনন্যা কে বলো জয় কে নিয়ে আসতে। ( অন্তরা)

– ঠিক আছে। কিন্তু কেন ভাবী?? ( নওশি)

– সারপ্রাইজ ডিয়ার ননদিনী। তাড়াতাড়ি চলে এসো ( অন্তরা)

বড় ভাবীর কথা শুনে কলিজা কেপে উঠে নওশির। না জানি কি অপেক্ষা করছে তার জন্য। ভাইয়া ঠিক আছে তো?? দুর এতো ভাবার সময় নেই। নিলয় কে নিয়ে বেড়িয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

হাসপাতালে পৌছানোর পরেই নওশির হৃদপিন্ডের কম্পন বাড়তে থাকে। বড় ভাবী কিছুই বলছে না। সবাই আসলেই বলবে। সবার মুখ ভার। কিছুক্ষণের মধ্যে জয় আর অন্যনা চলে আসে।

– আমি যেটা বলতে যাচ্ছি তার জন্য সবাই নিজেকে শক্ত করে নাও। কারণ সহ্য নাও হতে পারে ( অন্তরা)

– ভাবী কি হয়েছে বলবেন তো। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে( জয়)

– কিভাবে যে বলি বুঝতে পারছি না। তোমাদের ভাই ও চুপ করে আছে। তোমরা কিভাবে নিবে বুঝতে পারছি না ( অন্তরা)

– ভাবী ভয় না দেখিয়ে বলে ফেলুন কথাটা ( নিলয়)

– আসলে কথাটা হলো,,,,,,,,,,,,,,, আদ্রিয়ান বেচে আছে। কিন্তু ওর অবস্থা খুবই খারাপ ( অন্তরা)

কথাটা যেন কেউ বিশ্বাস করতে পারছিল না। নওশি তো এক প্রকার দৌড়ে ভিতরে চলে গেল। তার আদ্রিয়ান পড়ে আছে। চোখ দুটো যেন স্তব্ধ হয়ে আছে। কিন্তু আদ্রিয়ান কে জিবিত দেখে নওশির কেমন রিয়্যাক্ট করা উচিত বুঝতেছে না।

কিছুক্ষন পর সবাই রুমে আসল। সাথে সাগর আর আরশিও।

– আসলে সাগরের অবস্থা যতটা খারাপ তার চেয়ে ওর বেচে থাকার ইচ্ছা শক্তি কম। তাই আমাদের উচিত ওর ইচ্ছা শক্তিকে ফিরিয়ে আনা ( অন্তরা)

– কিন্তু এসব কিভাবে কি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সেদিন তো আদ্রিয়ান আমাদের সামনে,,,,,,,,,,,,,,,,,,, ( জয়)

– আমি বলছি পুরো ব্যাপারটা। আসলে ওইদিন ওখান থেকে আদ্রিয়ান কে নিয়ে আমি হাসপাতালে যাই কারণ আমি মানতে পারি নি ও চলে যাবে এভাবে। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করে ওকে বাচাতে পারলেও এই অবস্থা হয় ওর। তোমাদের অনেক খোজার পরেও পাই নি। আর এতোদিন আরশি ওকে দেখে রেখেছে ( সাগর)

– আচ্ছা তোমরা যদি কিছু মনে না কর একটা কথা বলছি। আদ্রিয়ানকে বাসায় নিয়ে ট্রিটমেন্ট করি ও তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে। ( অন্যনা)

– সে আর বলতে। আমি সব ব্যবস্থা করে নিচ্ছি। সাগর আর আরশিও সাথে চলো। ( জয়)

কথা শেষ করে সবাই চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু নিলয় ভাবছে অন্য কথা বাচ্চারা এসব মেনে নিবে কিভাবে। কারণ তারা তো ছোট থেকে ওকেই বাবা বলে যেনে এসেছে। আদ্রিয়ানের বেচে থাকাটা একদিকে যেমন ওকে আনন্দ দিচ্ছে সাথে টেনশনও বাড়ছে। কি করে সামলাবে সব কিছু। ভাবতে ভাবতে বাড়ি পৌছে যায় তারা।

টিং টং,,

কলিংবেল এর শব্দ হবার সাথে সাথেই কাজের লোক দরজা খুলে দেয়। নোয়া ড্রয়িং করতে ব্যস্ত থাকলেও আয়ান ছুটে চলে আসে।

– মামু এরা কে গো চিনলাম না ( আয়ান)

– এটা তোমার একটা আংকেল আর আন্টি। বাংলাদেশ থেকে এসেছে। ( জিসান)

– অল আর বেঙ্গলি পিপল। আর ওইটা কে চেয়ারে এভাবে বসে আছে ( আয়ান)

– উনি??? উনি তোমার,,,,,,,,,,,,,,,, ( জিসান)

– উনি তোমার আর একটা আংকেল। অসুস্থ তো পড়ে কথা বলবে। অনেক মজা করবে ( নিলয়)

– আমার কারোর দরকার নেই তুমি আছো তাতেই হবে চলো এখন হোম ওয়ার্ক করায় দিবা। বলে নিলয় কে টেনে নিয়ে গেল আয়ান।

– বাবু কে কিছু বলতে দিল না কেন নিলয়( জিসান)

– ঠিক ই তো করেছে। দেখ,,, এতোদিন ওরা নিলয়কে বাবা বলে জেনেছে। এখন যদি জানে সব আলাদা তাহলে মানতে পারবে না। ওরা অনেক ছোট। ( অন্তরা)

– ঠিকই বলেছো নিয়তি যে ওদের সাথে কি খেলা খেলছে সেই জানে।

চলবে???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে