ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-২৭+২৮

0
918

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৭
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

তুহিনা খুব তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন একটা মহিলা। কিন্তু সে যে এইভাবে ধুকা খাবে সেটা তো আর বুঝতে পারে নি।যখন রাহাত এসে কান্না কাটি করে বলে যে ওর বাবা মা কেউ নেই। ওর অসহায় সেই ফেস দেখে বুঝার মতো কোনো উপায় নেই।এতো নিখুঁত অভিনয় বাস্তব জীবনে কেউ করতে পারে তুহিনার জানা ছিলো না।

জানো নীলা আমি বুঝতে পারিনি যে রাহাত আমাকে ঠকাবে আমি।

নীলা তুহিনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অতি আগ্রহ নিয়ে সব টা শুনার জন্য যে রাহাত আসলে কি করে তার কি কাজ। এতো মেয়েদের কেন তুলে আনে।না জানি কত মায়ের বুক খালি
করে দিয়েছে এই শয়তান টা।

ছোট বেলা থেকেই বাবার মুখে শুনতাম তিনি চাইতেন তার একটা ছেলে সন্তান হবে যাকে উনি বড় পুলিশ অফিসার বানাবেন।ছেলে তো আর হয়নি তাই আমাকে একদিন বললেন আমি যেনো তার ইচ্ছে পুরন করি তার মেয়ে হয়েই।বাবা অনেকটা শাসন আর করতেন। কড়া কথা বলতেন।মা আমাকে এসবের থেকে আগলে রাখতেন।

আমি ভাবতাম আমি মেয়ে সন্তান জন্যই বাবা আমাকে ভালোবাসেন না।কিন্তু এই কথা টা একেবারেই ভুল। বাবা আমাকে বকতেন ঠিকই কিন্তু ভালোবাসতেন।

তারপর বাবার ক্যন্সার এর মতো আরোগ্য রোগে মারা গেলেন।মনে হয়েছিল আমার মাথার উপর যে ছাদটা ছিলো সেটা আর নেই।আসলে বাবাদের ভালোবাসা হয় শামুকের খোলসের মতো উপরে শক্ত হলেও ভেতরে একেবারে নরম। আসলে বাবা দের বুঝা খুবই কঠিন। বাবার মৃত্যুর পর তার অস্তিত্ব আমি খুব অনুভব করতাম।

বাবার কথা রাখতেই পুলিশ অফিসার হয়ে বাবার স্বপ্ন করলাম।মা আর আমি অনেক ভালো ছিলাম।প্রথম মাইনে পেয়েই মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনি আর কিছু অনাথ বাচ্চাদের খাবার কিনে খাওয়ায়। ফেরার পথে একটা গাড়ি এসে আমাকে একদম পিসে দিতে যাচ্ছিলো তখন প্রথম রাহাতের সঙ্গে দেখা হয় আর সে দিন রাহাত ওকে বাঁচিয়েছিল। তাই তো রাহাতের এই ভালোবাসার নাটক ধরতে পারে নি।বিশ্বাস করেছিলো আর ওর এক কথায় রাহাতকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় আর নিজের বাড়িতেই রাখে। আর নিজের প্রিয় মানুষকে কেউ কখনো সন্দেহ করে না। চার বছরের সম্পর্কে সে দিন এক দিন ও ধরতে পারে নি যে রাহাত নারী পাচারকারী। একটা বেবিও কন্সিভ করেছিলাম এর মধ্যে। সারে তিন বছরের বাচ্চা ওকে মায়ের কাছেই রেখে আমি ডিউটি তে যেতাম। সারা দিন রাহাত কি করতো কিচ্ছু খেয়াল করতাম না।কারণ ওকে সন্দেহ করার মতো কারণ তো আমার কাছে ছিলো না।

এতো মেয়ে হাড়িয়ে যাচ্ছিলো ইনভেস্ট করছিলাম কিন্তু কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না।চোখের সামনেই সেই লোক ঘুরে বেরিয়েছে আমি ধরতেই পারিনি।টেনশনে মাথা কাজ করছিলো না।ঘুমোতে পারছিলাম না। রাহাত আমাকে শান্তনা দিতো সব ঠিক হয়ে যাবে বলে।তখনও ধরতেই পারিনি যে রাহাত এতো বড় একটা ক্রিমিনাল।

একদিন আমি ডিউটি থেকে তারাতাড়ি বাড়ি ফিরি।ঘরে ঢুকতে যাবো তখনি রাহাতকে৷ কোনো একজন মহিলার সাথে ফোনে কথা বলতে শুনি।আমি সব বলছিলো নয় জন মেয়ে হয়েছে আরো একজন লাগবে।আর আমার যেন কথা টা বিশ্বাস হতে চাইনি। আমার চোখ বেয়ে পানি পরছিলো।এটা শুনার জন্য আমি একদম প্রস্তুত ছিলাম না।সেদিন ওকে বুঝতেই দেইনি যে আমি সব টা শুনে নিয়েছি কারণ আমার জানার প্রয়োজন ছিলো এর সাথে যুক্ত থাকা সবার ব্যাপারে।

নীলার যেন এবার শুধু একটা কথা ম্য মাথায় আসছে সেটা হলো মিসেস রিশিকা খান।

মহিলা টি আর কেউ নয় আমার বাবার স্ত্রী রণশিক্ষা খান। আমাকে উনি বিক্রি করতে চাইতেন।বাবার সামনে কিছু না বললেও আড়ালে আমাকে নির্যাতন করতো। তাই আমি তার ওই কু-কীর্তির কথা জেনেও কিছুই বলতে পারিনি।

হ্যাঁ এই কথা টা আমি জানতে পারলাম তোমাদের বাড়ি গিয়ে।আমি শুভ্রকে জানায় সবটা রাহাতের বিষয়ে।আর তখনি শুভ্র এসে বলে তুমি নাকি মুখ ফসকে একটা কথা বলে ফেলেছিলে তোমার সৎমা তোমাকে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। আর তখনি সবটা ক্লিয়ার করার জন্য ইনভেস্টম্যান্ট শুরু করে দেই।খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সবটা। সব প্রমান ও জোগাড় করি শুভ্র আর আমি দুজন মিলে।সব টার পিছনে আরও দুজন আছে। জীনিয়া আর ফাহিম।আর দলের মেইন লিডার তোমার সৎমা।

যারা তোমাকে বার বার তুলতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারে নি।আর চলে আসার সুযোগ নিয়ে তুলে আনলো আমিও ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে বেরিয়ে আসি মাঝ পথেই আমাকে তুলে আনে।

এবার যেনো আর নীলা নিজের কান্না চেপে রাখতে পারলো না।শুধু মাত্র আজ তোমার এই অবস্থা তুহিনা আপু।আমার জন্য তুমি তোমার জীবনটা ঝুঁকির মুখে কেনো ফেললে বলো তো।আচ্ছা তোমার ছেলে সে ঠিক আছে তো।ওর সাথেও কিছু করেনি তো।

না মনে হয়না কিছু করতে পেরেছে। কারণ রাহাত নিজের ছেলেকে যথেষ্ট ভালোবাসে।বড় হওয়ার পর কাজের অংশিদার বানাতে চাই কিনা। কিন্তু কিছু করার আগে আমাদের এখান থেকে বেরোতেই হবে যে করেই হোক। আমাদের মাথা ঠান্ডা করে সবটা ভাবতে হবে।

কিন্তু আমরা কিভাবে বের হবো এখান থেকে তুহিনা আপু কিছু ভেবেছো ।

আছে একটা ক্লু যেটা থেকে শুভ্র আমাদের ঠিক খুজে পাবে।তুহিনা নিজের ঘার ঘুরিয়ে একটা জিনিস দেখালো নীলাকে।

আমার ঘারের নিচে জামার সাথে একটা মিনি চিপ লাগানো আছে দেখতে পাচ্ছো। কথা গুলো খুবই আস্তে আস্তে বললো তুহিনা।

নীলা নিজের মাথা টা,কিছু টা উপরে করে দেখতে পেলো সেটা।হ্যাঁ আপু আছে। কিন্তু এটা দিয়ে কি হবে। নীলাও কথা গুলো সাবধানে বললো।

এটা তে লোকেশন ট্র্যাকিং করা আছে। শভ্রর মোবাইলের সাথে কানেক্টেড। আমি যেখানেই থাকি না কেন ও ঠিক খুজে পেয়ে যাবে।আমি জানতাম এরকম কিছু হতে পারে তাই আগে থেকেই এটা করে রেখেছিলাম।

নীলার চোখে মুখে একটা আনন্দের আভাস পাওয়া গেলো।এখান থেকে বেরোনোর একটা আশা আছে তবে আমাদের। শুভ্র আমাদের ঠিক পেয়ে যাবে বলো।

তুহিনা মাথা নাড়লো। তুমি শুধু চুপচাপ দেখতে থাকো কি হয়।এখান থেকে সবাই কে বের করতে হবে।
তারপর ওইভাবেই তারা বসে আলোচনা করতে থাকে।ভোরের দিকে দুজনের চোখ লেগে যায়।আর ঘুমিয়ে পরে। সকালের কিচিরমিচির শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গেল দুজনেরই।

নীলা আর তুহিনা দুজনেই নড়াচড়া করছে। এতো শক্ত করে বাধা হয়েছে ওদের হাত পা। বেশি জোরে নরতেও পারছিল না।

তখনি দরজার খিরকি খোলার আওয়াজে দুজনেই চমকে যায় আর সামনের দিকে তাকায়।সামনে থাকা ছায়া মূর্তিকে দেখে বুঝার চেষ্টা জরে দুজনেই কে তারা।

আস্তে আস্তে তাদের মুখ স্পষ্ট হতে থাকে। দেখেই নীলা চমকে যায়। এটা কোন রুপ মিসেস খানের।

★★★★★

শুভ্র সেই থেকে তুহিনাকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না। ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তুহিনার কোনো বিপদ হলো না তো।শুভ্রর মাথায় কথা টা আসতেই শুভ্রর কপালে চিন্তার ভাজ পরলো। তুহিনা বাসা থেকে বের হওয়ার পরই নীলার কিডন্যাপ তার মানে কোনো ট্র‍্যাপ ছিলো না তো তুহিনা কে বাসা থেকে বের করার।এক্ষুনি তুহিনার বাসায় যেতে হবে।

কাকন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুজে ছিলো। শুভ্র কাকন কে আস্তে করে ডাকতেই কাকন হকচকিয়ে উঠলো। আর বাকি সবাই ও চোখ খুলে তাকালো।

মোল্লিকা কিছুক্ষন আগে ঘুমিয়ে পরেছিল।

কি হয়েছে শুভ্র বৌমার কোনো খোঁজ পেলি।
না মা তবে পেয়ে যাবো খুব তারাতাড়ি। সবাই জেগে থাকার ফলে চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।শুভ্র দু চোখের পাতা এক করতে পারেনি।অনেক বার সে তুহিনাকে ফোন করেছে বাট পাইনি।ওর বাসার নাম্বার ও নেই। তখনি শুভ্র দেখলো

তুহিনার মা( রাবেয়া) ফুয়াদকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালের ভেতরে আসছেন।

সাথে মিস্টার খান,, দাদী (শাহানা খান)। মুন্নি সবাই চলে এসেছেন।

শুধু জীনিয়া আর রিশিকাই আসে নি।

রাবেয়াঃ শুভ্র বাবা কি হলো বলো তো তুহিনাকে কাল রাত থেকে ফোনে পাচ্ছি না। ও তো তোমার বাসায় ছিলো।তাই তোমার বাসাই গেছিলাম গিয়ে জানতে পারলাম তোমরা সবাই হসপিটালে তাই এখানে আসলাম।ফুয়াদ কে পারছিলাম না। মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছিল।কোথায় তুহিনা।

শুভ্রঃ কি বলছেন আন্টি তুহিনা আপনার ওখানে যায়নি। ও তো ফুয়াদ অসুস্থ সে জন্য সকালেই বেরিয়ে গেলো।

রাবেয়াঃ কি বলছো বাবা ফুয়াদ অসুস্থ মানে। ও একদম সুস্থ। এই দেখো ওখন ঘুমাচ্ছে।কান্নাকাটি করে কিছুটা আগে ঘুমিয়েছে।

তার মানে আমি যা ভাবছি সেটাই নয় তো।

হঠাৎ শুভ্রর কিছু একটা মনে হতেই ফোন রেখে কাকন কে বললো চল আমাদের এক্ষুনি বের হতে হবে।

তখনি সামনে মিস্টার খান (নীলার বাবা) এগিয়ে গেলো।

মিস্টার খানঃ তুমি শুভ্র তাই তো নীলা কোথায় বাবা। আমি ইমরান খান নীলার বাবা। আমরাও তোমাদের বাড়িতে গেছিলাম। ওয়াচ ম্যান হসপিটালের ঠিকানা দিলেন।তাই এখানে চলে এলাম।

শুভ্র এর আগে মিস্টার খানকে সামনে থেকে কখনো দেখেন নি। তাই বুঝতে একটু সমস্যা হলো তার। শুভ্র একবার সবাইকে দেখে নিলো।

শুভ্রঃ দেখুন আংকেল অনেকটা লেট হয়ে গেছে আমাদের এক্ষুনি বের হতে হবে। সবটা পরে শুনে নিবেন ওদের থেকে।

তোমরা এদিকে খেয়াল রেখো।প্রাপ্তি তুমি হিয়া আর মাকে দেখে রাখবে। এখন সকাল হয়ে গেছে তেমন সমস্যা হবে না আর এখানে আর কোনো বিপদ হবে বলে মনে হচ্ছে না।আমাদের ইমিডিয়েটলী খুজে বের করতে হবে।

কাকন আর শুভ্র বেরিয়ে এলো হসপিটাল থেকে।

মিস্টার খান, দাদী, মুন্নি,, সবাই ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে।

শুভ্র আর কাকন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আর পুলিশ কে ফোন করলো। কাকন গাড়ি নিয়ে এসেছিলো। দুজনেই গাড়িতে উঠে বসলো। শুভ্র ড্রাইভিং করতে শুরু করলো।

আমরা বেরিয়ে তো এলাম কিন্তু যাবো কোথায়। আর পুলিশ কিভাবে জানবে আমরা কোথায় আছি।

আমি জানি ওরা কোথায় আছে। ট্র‍্যাক করে লোকেশন পেয়ে গেছি।আর পুলিশ কে লোকেশন পাঠিয়ে দিয়েছি।

কিন্তু তুই ট্র‍্যাক করলি কিভাবে।

শুভ্র নিজের মোবাইলটা দেখিয়ে বললো এইভাবে।আমরা আগেউ সন্দেহ করি। এরকম কিছু হতে পারে। তাই আমি তুহিনাকে একটা চিপ লাগিয়ে দিই যাতে কোনো বিপদ হলে আমরা সেখানে পৌঁছতে পারি।

ঠিক আছে তাহলে দেরি কেন করলি। এতক্ষনে আবার অঘটন ঘটতে পারে। নাকি ঘটেই গেছে কে জানে।আচ্ছা লোকেশন টা কোথায় দেখাচ্ছে।

লোকেশন টা কোনো জঙ্গলের ভেতর দেখাচ্ছে।আর তখনি আমার সন্দেহ হলো তুহিনা কোনো বিপদে আছে।এতো কিছুর মধ্যে আমি এই মিনি চিপের কথা ভুলেই গেছিলাম।

শুভ্র জোরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। লোকেশন অনুযায়ী।

চলবে,,,

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৮
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

আমি ভাবতেই পারছিলাম না মিসেস খান এতো টা ভয়ংকর একটা খেলা খেলতে যাচ্ছিলো। সেদিন আমার সাথে যে লোকটার বিয়ে দিতে চাইছিলেন সে কোনো প্রতিবন্ধী ছিলো না। বরং একটা দাগী স্মাগলার ছিলো। ওই ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার নাম করে আমাকে পাচার করার প্ল্যান করেছিলো।

এসব আপনি কেন করছেন আমার সাথে।বলুন কেন করছেন আমি তো আপনার মেয়েরই মতো। সেই ছোট থেকে তো মানুষ করেছেন।না হয় মন থেকে কোনো কিছুই করেন নি।তাও এতো দিনে আমার উপর কি এতো টুকুও মায়া পরে নি।আপনি না একটা মা।আর একজন মা কি কপ্রে এতো টা নিষ্ঠুর হতে পারে ছিহ্!

তুই ঠিকই বলেছিস আমি একজন মা। তাই তো এতো কিছু করছি।আমার ছেলের ভবিষ্যৎ আর আমার ভবিষ্যৎ এর জন্য। আর তুই থাকলে তো এটা কোনো ভাবেই হতো না।খান বাড়ির কোনো কিছুই কি আমার ছেলে পেতো,,, না পেতো না।তাই আমাকে এসব করতে হচ্ছে।

ছেলে মানে? নীলার ভ্রু যুগল যেনো না চাইতেও কুচকে গেলো।এত দিন তো আমি জানতাম আপনার দুটোই মেয়ে আছে ।তাহলে ছেলে কোত্থেকে এলো।

কেন এই তো আমার ছেলে। রাহাত কে দেখিয়ে বললো।জীনিয়া আর রাহাত দুজনের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো।

জীনিয়া নিজের বুকের নিচে হাত গুলো ভাজ করে গুজে দাঁড়িয়ে আছে।

নীলা আর তুহিনা দুজনের অবাক হয়ে
আর একে অপরের দিকে তাকালো। আর দুজনেই বলে উঠলো।
রাহাত আপনার ছেলে।কিন্তু এতো দিন তো সেটা বলেন নি কখনো।

হ্যাঁ রাহাত আমার ছেলে। জীনিয়া আর রাহাত আমার ছেলে মেয়ে।ওদের আমি পেটে ধরেছি।তাই তো ওরা আমার মতোই হয়েছে।

অন্য মেয়েরা তোমার কি ক্ষতি করেছে।এই নোংরা খেলা টা কেন খেলছো তুমি। তুহিনা রেগে গজগজ করতে করতে বললো।আর ঠিকই বলেছো।তোমার ছেলে মেয়ে তোমারই মতো নোংরা হয়েছে। কথায় আছে না রক্ত কথা বলে।
ভুল করছো তোমরা এখনো সময় আছে রাহাত ভালো পথে ফিরে এসো।না হলে অনেক পস্তাতে হবে।

কোনো দিনই না। এটা তো আমাদের বিজনেস। এটা কি করে ছেড়ে দিতে পারি।আমার বংশ পরম্পরায় ছিলো এটা।

কি বলতে চাইছেন আপনি।তার মানে মিস্টার খান ও এই কাজের সাথে জড়িত। নীলা যেনো কথা টা ভাবতেই পারছে না।মিস্টার খান এরকম একটা কাজে যুক্ত থাকতে পারেন।

জীনিয়া একটু ওগিয়ে এসে বললো।তোর বাপ কেন হতে যাবে আমরা তো আমাদের বাবার কথা বলছি।

তুহিনা আর নীলা আরো বেশি অবাক হয়ে গেলো।

তোমার বাবা মানে। আমি তো জানতাম মিস্টার খানই তোমার বাবা জীনিয়া আপু।

উনি আমাদের বাবা নোন। উনি শধু মাত্র আমার বাবার খুনি।আর কিচ্ছু না। রাহাত রেগে চেচিয়ে বললো কথাটা। আর আমি এর প্রতিশোধ নেবো তোমাকে মেরে ফেলে।

খুনি মানে কি বলতে চাইছেন আপনি। পরিষ্কার করে বলুন আপনার কোনো কথায় বুঝতে পারছি না। নীলার যেনো রুহ টা কেপে উঠলো।

রাহাত ওর বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে।আমার থেকে আমার স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে তোর বাবা ইমরান খান।আমার বাচ্চাদের অনাথ করে দিয়েছিলো তোর বাবা। তাই তো আমি প্রতিশোধ নিতে ইমরানকে বিয়ে করি। আর আমার প্রতিশোধ আজকে পুরন হবে তোকে মেরে ফেলে।

আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি না যে মিস্টার খান কাউকে খুন করতে পারে।হ্যাঁ ঠিক আছে উনি হইতো একটু কঠোর প্রকৃতির মানুষ কিন্তু কোনো খুনি হতেই পারেন না।

হ্যাঁ হ্যাঁ তোর বাবা ইমরান খান দায়ী ছিলো আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য।সেদিন যদি অই ইমরান আমার স্বামীর গোপন নারী পাচারের ব্যবসার কথা না ফাস করতো পুলিশের কাছে।তাহলে এতো কিছু হতো না। ইমরান আর আমার স্বামী ছিলো বন্ধু। কিন্তু ইমরান ছিলো সৎ। কোনো ভাবে আমার স্বামীর এই কাজের কথা ও জানতে পেরে যায়। আর পুলিশকে জানিয়ে সেই ডেরাই নিয়ে যায় যেখানে মেয়েদের রাখতো। আর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পালাতে গিয়ে এনকাউন্টারে মারা গেলো আমার স্বামী।সেদিন যদি ইমরান পুলিশ না নিয়ে যেতো তাহলে আমার স্বামী বেঁচে থাকতেন আর আমার ছেলে মেয়ে ওদের বাবার ভালোবাসা পেতো।

ইমরান খান তো ভুল কিছু করেন নি।আপনার স্বামী ছিলো একটা স্মাগলার।আর একটা স্মাগলার কে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ায় তো ন্যায়ের কাজ। তাই না। উনি একদম ঠিক কাজ করেছিলেন। আর তোমরা করছো৷ প্রতিশোধ নেওয়ার নেশায় ডুবে আছো। তোমরা ঠিকই এর শাস্তি পাবে। তুহিনা মুখ টা আলতো একটু বেঁকিয়ে হাসি দিয়ে বললো।

তুহিনা আপু থাক এদেরকে বলে কোনো লাভ নেই।তবে হ্যাঁ একটা কথা মাথায় রাখবেন মিসেস খান।পাপ কিন্তু বাপকেও ছাড়ে না।যেমন আপনার স্বামী কে ছাড়েনি। পাপীকে আল্লাহ তায়ালা ঠিকই তার প্রাপ্য শাস্তি দেবেন।আর আপনারাও পার পাবেন না।

এই চুপ বড্ড বেশি কথা বলিস তুই। যদি সেদিন তুই না পালাতে পারতিস না তাহলে অই শুভ্র চৌধুরীর সাথে তোর বিয়ে টা হতো না।বাই দ্যা ওয়ে তুই শুভ্র চৌধুরীর মতো একজন ধনী লোক কে কি দেখিয়ে ফাসালি বলতো।কি যাদু করেছিলি যে তোর মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করলো।

মম এর খেলে শেষ করো তো। একে মেরে দাও। আর আমি তখন শুভ্রকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবো।

হ্যাঁ শেষ করার জন্যই তো তুলেছি।মাঝ খান থেকে ওই ফাহিমটা বেগরবাই করছিলো। এই নীলার প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে। তাই তো ওই ফাহিম কে দল থেকে আউট করে দিয়েছি।এই মেয়ের কি দেখে যে এই ছেলে গুলো পাগল হয় বোকা ছেলে গুলোই জানে।

নীলার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
এতোটা খারাপ তোমরা ছিহ।আর কি বললি তুই আমার স্বামীর সাথে সংসার করবি।তো র এই জীবনে সে ইচ্ছে পুরন হবে না।আমি হতে দেবো না।আমার শুভ্রকে তুই কোনো দিনই পাবি না।নীলা রাগে ঝাঝালো কন্ঠে বললো।তুই তোর ওই ফাহিমকে নিয়েই থাক বুঝেছিস আমার স্বামীর দিকে নজর দিলে তোর চোখ উপরে দেবো। কাল নাগিনী একটা।

কোনো মেয়েই তার স্বামীর সাথে অন্য কাউকে ভাবতে পারে না।আর সহ্য করতে পারে।তেমন নীলারও এখন রাগে গা টা যেনো ফেটে যাচ্ছে।

জীনিয়া রাগে গজগজ করতে নীলাকে মারতে যাচ্ছিলো। রাহাত ওকে থামিয়ে দেই।

ভাইয়া মম ওকে থামতে বলো না হলে কিন্তু আমার হাত উঠে যাবে।নেহাত ভাইয়া আটকালো।না হলে আমার সাথে এই ভাবে কথা বলার কারনে ওকে এখানে শেষ করে দিতাম।

রিলেক্স বেটা। এর দম একটু পরেই শেষ। এখন চেচিয়ে নিক যত পারে।চলো আমাদের জীপ রেডি করতে হবে।বাকি মেয়েদের গাড়িতে তুলো।

জীনিয়া আর রাহাত রাগী চোখে তুহিনা আর নীলার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো।

আর রিশিকা নীলার সামনে বসে মুখের কাছে গিয়ে বললো তোর আর একটা সত্যি জানা দরকার। মরার আগে তোর একটা ইচ্ছে আমি পুরন করতেই চাই।

নীলার রেগে বললো আর কোন কুকীর্তির বাকি রেখেছেন আপনি।

তুহিনা মুখ ঘুড়িয়ে নিলো ঘৃণায়।আজ যদি আমার হাত পা বাধা না থাকতো না তোর মতো শয়তানি কুচকরী মহিলাকে আমার শায়েস্তা করতে এক মিনিট সময় লাগতো না।

রিশিকা জোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেই তুহিনার গালে।এই তুই চুপ করবি। ভেবেছিলাম তুই আমার ছেলের বউ তোকে কিছুই করবো না আর আমার নাতি কে নিয়ে সংসার বানিয়ে দেবো।কিন্তু এখন দেখি তোর মুখ টাও বন্ধ করতে হবে।

খবর দার আমার ছেলের দিকে নজর ও দেওয়ার চেষ্টা করবি তো তোর অবস্থা রাস্তার কুকুরের মতো করে ফেলবো।একবার শুধু ছারা পায়।তোকে আমি দেখে নিবো।

আব্বে চুপ তুই কি দেখবি। তোর খেলা তো আজই খতম করে দেবো।

আর নীলা তুই কিন্তু তোর বাবার অবৈধ সন্তান নোস । হ্যাঁ তুই তোর বাবার বেধ সন্তান। তোর বাবা কিন্তু তোর মাকে বড্ড ভালোবাসতো। তাই তো লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিলো।আমি সেটা জানতে পেরেই তো অকে ব্ল্যাক মেইল করি। তোর দাদুকে বলে দিতে চেয়েছিলাম।আর সেই ভয় দেখিয়েই তো তোর বাপ কে বিয়ে করি।তোর দাদু যদি জানতো তাহলে তোর বাপ কে সম্পত্তি থেকে এক কানা কড়িও দিতো না।আর আমার হাতের পুতুল হয়ে গেলো।

নীলা যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।কি শুনছে সে এসব। সে কি তবে তার বাবাকে ভুল বুঝতো এত বছর ধরে ভুল বুঝে এসেছে। শেষ বারের মতো কি একবার ও বাবাকে বাবা বলে ডাকতে পারবো না। বাবাকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না। নীলার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো।

হ্যাঁ হ্যাঁ কেদে কেদে বুক একে বারে ভাসিয়ে নে।শেষে যদি কাদার সময় না পাশ।এই বলে শয়তানি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।

নীলা কে কি বলে শান্তনা দেবে ভেবে পাচ্ছে না তুহিনা।তাও সে বলল প্লিজ নীলা তুমি কেদো না।শুভ্র ঠিক আসবে আমাদের কে নিতে।তুমি দেখো।

নীলা চোখ বন্ধ করে কাদছে।সে এইবার শব্দ করেই কেদে দিলো।

★★★★
এদিকে শুভ্র আর কাকন প্রায় গন্তব্যের কাছাকাছি চলে এসেছে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে একটা কাচা রাস্তা আছে। সেটা ধরেই কিছু টা এগিয়ে যেতেই গাড়ি থামিয়ে দিলো শুভ্র।কারণ আর এগোনো যাচ্ছে না।তাদেরকে হেটেই যেতে হবে।

শুভ্র এবার কি হবে।এখন ত আরো লেট হবে আমাদের। এর মধ্যে কোনো অঘটন না ঘটে যায়।

না না কিচ্ছু হবে না।শুভ্র আর কাকন প্রায় দৌড়ে ভেতরে যাচ্ছে।লোকেশন অনুযায়ী। নর্থের দিকে যেতে হবে ওদের।ঝড়েরবেগে ছুটে যাচ্ছে দুজনেই। সামনে যেতেই দেখতে পেলো লোকেশন ম্যাগাজিনে লাল চিহ্ন টার শেষ মাথায় চলে এসেছে। শুভ্র আর কাকন কিছুটা থেমে সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কোনো কথা বলছে না।ইশারায় কথা বলছে।

সামনে যেতেই দুজনেই একটা ডেরা দেখতে পেলো। যেখানে একটা জীপ দেখা হয়েছে। তারা ওখানেই দাঁড়িয়ে পরল। কারণ গার্ডস দেখা যাচ্ছে। যাদের প্রত্যেকের কাছে রাইফেল আছে।
একটা সুযোগের অপেক্ষা করছে শুভ্র। দরজার কাছ থেকে লোক সড়ার।শুভ্রর মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই সেখানে থাকা একটা মড়া গাছের ডাল তুলে নিয়ে ওদের উল্টো দিকে ছুড়ে মারলো।

গার্ডস টি শব্দ শুনেই শুব্দ ঘুরে তাকালো।আর কে কে বলে এগিয়ে গেলো সেদিকে।

শুভ্র আর কাকন আস্তে আস্তে দরজার ওখানে গিয়েই ভেতরে হুট করেই ঢুকে পরলো।আর লুকিয়ে পরলো।

ভেতরে বেশ অন্ধকার । আর কিছু বস্তার গদি
ছিলো। দুজনেই খুবই সাবধানে ভেতর প্রবেশ করছে।হঠাৎ দেখলো কেউ আসছে তাদের দিকেই।দুজনের চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো।এই বুঝি ধরে ফেলবে।দুজনেই সেখানে থাকা বস্তার আড়ালে মুখ চেপে বসে পরলো।

রিশিকা এই পাশ দিয়েই আসছিলো।হঠাৎ ওর মনে হলো হলের ভেতর কেউ ঢুকেছে। রিশিকা এগিয়ে আসছিলো।

শুভ্র দেখতে পেলো যে কোনো এক মহিলা ওদের দিকেই আসছে। তাই সে আশেপাশে খেয়াল করে দেখলো তাদের পাশেই বস্তারর মুখের সাথে দড়ি বাধা। কাকনকে ইশারায় বুঝালো শুভ্র।কাকন একটা বস্তার আর শুভ্র একটা বস্তার দড়ি খুলে নিলো।শুভ্র তার পকেটে থাকা রুমাল বের করে হাতে রাখলো।

রিশিকা এদিকে আসার পর কিছু বুঝে উঠার আগেই শুভ্র আর কাকন সঙ্গে সঙ্গে ওর ওপর ঝাপিয়ে পরলো।মুখে টা রুমাল দিয়ে বেধে দিয়ে হাত পা কাকন বেধে দিলো।

আচমকা এমন আক্রমন হওয়ায় রিশিকা অনেকটা ঘাবড়ে গেলো।উম উম শব্দ করছে।রিশিকা।

রিশিকাকে বস্তার আড়ালে ফেলে দিয়ে শুভ্র ভেতরে রুমের দিকে পা বাড়ালো।এখানে মোট তিনটে রুম।টিনের ছাউনি দেওয়া। জঙ্গলের ভেতর হওয়ায় ঘরটা দিনের বেলাও অন্ধকার লাগে।

হঠাৎ শুভ্রর ভেতরের রুমের দিকে যেতেই শুভ্র আর কাকনের চোখ স্থীর হয়ে যায়।

দ্রুত তারা সেখানে গিয়ে নীলা আর তুহিনার হাত পায়ের বাধন খুলে দেই।

তুহিনা আর নীলার মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে।
নীলা অস্ফুটে বলে উঠে শুভ্র আপনি।

ছারা পেয়ে তুহিনার নীলা কিছু বলার আগে শুভ্র হাত দিয়ে না করে কথা না বলতে।

নীলা ছাড়া পেয়েই শুভ্রকে জাপটে ধরে। শুভ্র নীলাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেই।

শুভ্র যতটা দ্রুত সম্ভব আমাদের পালাতে হবে।এক্ষুনি ওরা জীপ আনতে গেছে।

কাকন মাথা নাড়লো চল তারাতাড়ি এখান।ওরা চার জন আস্তে আস্তে পা ফেলছে। হঠাৎ তুহিনা কি মনে করে থামলো।তারপর পাশের রুমে থাকা মেয়ের গুলোর কথা মনে পরতেই সে ওখানে চলে গেলো।

শুভ্র আর কাকন কিছুই বুঝতে পারলো না।
হঠাৎ তুহিনা বাকি মেয়ে গুলোকে ছাড়িয়ে বাইরে বের করতে দেখেই বুঝলো তুহিনা কি করতে চাইছে।

তারপর বাকি মেয়ে গুলোকে নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডসকে সেখানে পড়ে থাকা একটা বাশ দিয়ে সজোরে আঘাত করে। আর অমনি সেখানেই লুটিয়ে পড়লো লোকটা।

সবাই তারাতাড়ি করে বেরিয়ে পরলো। কিছুটা দুরে যেতেই জীনিয়ে আর রাহাত গার্ডস দের নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো।

চলবে——

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে