ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-২৯+৩০

0
911

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব২৯
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

সব মেয়েরা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে।তুহিনা ওদের এক হাতে দিয়ে পিছনে আগলে রাখছে।সব মেয়েরা কান্নায় করছে ভয়ে। তারা প্রত্যকেই বাচতে চাই নিজের পরিবার পরিজন কে নিয়ে।কিন্তু এই রাহাতের মতো কিছু ক্রিমিনাল লোক ওদের বাঁচতে দিতে চাইছে না।

তুহিনাঃ রাহাত প্লিজ আমাদের যেতে দাও না হলে কিন্তু এর ফল ভালো হবে না।তুমি যা করছো সেটা অন্যায়।এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরে নাও।আর পাপের বোঝা বাড়িয়ো না।

রাহাতঃ তোমার এতো বড় সাহস আমার ডেরার মেয়েদের নিয়ে পালাতে যাচ্ছো।আর শুভ্র চৌধুরী তুমি এখানএখানে কিভাবে এলে।আজ পর্যন্ত তো আমাদের এই ডেরাই কেউ ঢুকতেও পারে নি। তোমার হিম্মাত আছে বলতে হবে।নিজের বউ কে বাঁচাতে ঠিক চলে এসেছো দেখছি।তবে এসেছো যখন কাজীকে ডাকি।কি বলিস বোন।
মুখ বাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে।

জীনিয়াঃ অফফহো ভাইয়া আমি কি এভাবে বিয়ে করবো নাকি শুভ্রকে।আগে এই নীলার খেলা শেষ করো তারপর ধুমধাম করে পুরো শহরের মানুষ কে আমার আর শুভ্রর বিয়ের কার্ড দিয়ে ইনভাইটেশন দিয়ে আসবো। পুরো শহরের মানুষ জানবে জীনিয়া খান ওয়েডস শুভ্র চৌধুরী।

এতোক্ষন শুভ্র জীনিয়ার সব কথা শুনছিলো।কিছুই বুঝতে পারলো না সে। ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে ও আমাকে বিয়ে করতে চাই।শুভ্র মাথা ঠান্ডা কর। বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা করেই যা করার করতে হবে। শুভ্র চোখ বন্ধ করে নিজেকে সংবরন করার চেষ্টা করছে। এই জীনিয়াকে গুটি বানিয়ে ফেলি তাহলে।। মনে মনে।

নীলাঃ খবর দার জীনিয়া আপু তুমি আমার শুভ্রর দিকে যদি তাকিয়েছ তো ভালো হবে না।আমার হাসবেন্ড তোমাকে কোনো দিন ও বিয়ে করবে না।যদি আমি মরেও যায় তাও না।আর তোমরা আমার ক্ষতি করতে চাইলে কি আমার শুভ্র তোমাদের ছেড়ে দেবে ভেবছো।

কাকনঃ তোমরা হইতো ভুলে গেছো তোমরা কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছো। তোমাদের প্রত্যেকের যে কি হাল হবে তোমরা ভাবতেও পারছো না।ভুল করছো তোমরা।

রাহাতঃ এই তুই চুপ কর শুভ্রর চামচা।সারা জীবন তো তোকে চাকর বানিয়েই রেখেছে।তাও তুই ওর হয়ে সাফায় গাইছিস।

শুভ্র নীলার হাত ছেড়ে দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে জীনিয়ার দিকে।এমন ভাবে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মনে হয় ওর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
নেশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
যা জীনিয়ার চোখে পরতে সে একেবারে লজ্জায় মাথা নিচু করছে আবার মাথা উঠিয়ে শুভ্রকে দেখছে।

শুভ্রঃআগে যদি তোমার মতো এতো সুন্দরীকে পেতাম তাহলে ওই নীলাকে কিছুতেই বিয়ে করতাম না।আর না ওকে বাঁচাতে আসতাম।আসলে সেদিন তো তোমাকে দেখিনি ভালো করে। আজ যখন তুমি নিজেই আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছো তখন তোমার মতো এতো সুন্দরী একজন মেয়েকে কার সাদ্ধি আছে যে না করবে। প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছি। যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইড।

একেবারে সামনে গিয়ে একটু গা ঘেসে দাঁড়িয়ে পরল শুভ্র।

জীনিয়া একেবারে লজ্জায় লাল নীল হয়ে গদগদ হয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো। সত্যিই তুমি আমাকে বিয়ে করবে শুভ্র।তুমি কি সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছ।

শুভ্রঃ তা নয়তো কি আমি সারাটা জীবন ওই সেকেলে নীলার সাথে কি ভাবে কাটাবো বলো তো।আমার সাথে কি ওর যাই।আগে যদি তোমার সাথে দেখা হতো তাহলে কিছুতেই ওই বেহেনজি টাইপের মেয়েকে বিয়ে করতাম না। নেহাত মা জোর করে বিয়েটা দিলো না হলে তাও বিয়ে টা করতাম না।

জীনিয়াঃ হ্যাঁ তাই তো। এসব মিটে যাক আমি আর তুমি বিয়ে করে নিবো।

এদিকে শুভ্রর এহেন কান্ড দেখে নীলা তো পুরাই শকড। নীলার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে।এট সে কোন শুভ্রকে দেখছে।সুন্দরী কাউ কে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলো।আমাকে সেকেলে বললো।আর আমার কথার একটু দাম ও দিলো না। দু কদম পিছনে পিছিয়ে গেলো নীলা।

কাকন আর তুহিনা হইতো একটু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে। শুভ্রর হঠাৎ বদলে যাওয়া টা।দুজনেই চুপচাপ হয়ে আছে।কিছুই না বুঝার ভান করে আছে।

এদিকে রাহাত ও ভাবছে শুভ্র এতো তারাতাড়ি হঠাৎ করেই ভোল বদল। তার একটু খটকা লাগলো।

রাহাতঃ বোন তুই ভুল করছিস।শুভ্র তোর সাথে নাটক করছে।ওর ফাদে পা দিস না।

জীনিয়াঃ ভাইয়া তুই দেখলি না শুভ্র আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এটা তে কোনো অভিনয় নেই।শুভ্র তো বললো ও বিয়ে টা করতে চাইনি।জোর করে ওর মা ওদের বিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া শুভ্র তো এটাও বললো ও আমাকে বিয়ে করবে।তাই না শুভ্র।

শুভ্রঃ হ্যাঁ ডার্লিং। আমি তো ঠিক করেই নিয়েছি তোমাকেই বিয়ে করবো।

সকল গার্ডস দের মনোযোগ সরে গিয়ে জীনিয়া আর শুভ্রর দিকে চলে গেছে। হা করে তাকিয়ে আছে সবাই।

নীলাকে এর মধ্যে শুভ্র চোখ মেরে ইশারায় বুঝিয়ে দিয়েছে।সে এখন একটু স্বাভাবিক হলেও উপরে উপরে ভেঙে পড়ার নাটক করছে।

সবাই একদম নিস্তব্ধ হয়ে আছে। এটা যেনো বড় কোনো ঝড় উঠার আগের পুর্ভাবাস।

শুভ্র সুযোগ একটা গার্ডসের কাছ থেকে একটা হেচকা টান দিয়ে একটা রাইফেল নিয়ে ফট করে জীনিয়ার মাথায় ধরলো।

আচমকা এমন হবে রাহাত ভাবেনি।জীনিয়া বেস ঘাবড়ে গেছে।

জীনিয়াঃ এটা তুমি কি করছো শুভ্র। তুমি তো একটু আগেই বললে আমাকে বিয়ে করবে।তুমি এটা মজা করছো তাই না।এরকম মজা করে না জান।

শুভ্রঃ তো তুমি কি ভেবেছো আমি আমার ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসবো। এমন কথা ভাবলে কি করে। তোমার সকল গার্ডস দের বন্দুক গুলো ফেলে দিতে বলো না হলে তোমার মাথায় চালিয়ে দিবো একেবারে।

জীনিয়াঃ ভাইয়া আমাকে বাঁচা। তোর গার্ডসদের বল বন্দুক ফেলে দিতে।

রাহাতঃ তোকে তো বললাম যে শুভ্র নাটক করছে।
শুভ্রঃ তারাতাড়ি ফেলে দিতে বল নইলে গুলি চালিয়ে দেব।

শুভ্র শুট করার জন্য ট্রিগার চাপ দিবে।

তখনি রাহাত নিজের বোনের প্রান বাঁচাতে তারাতাড়ি করে সবাইকে বন্দুক ফেলে দিতে বলে।

সবাই বন্দুক ফেলে দিলো।এদিকে রাহাত সুযোগ পেয়ে নীলার দিকে বন্দুক তাক করে শুট করে দেই।

সেটা তুহিনা দেখতে পেয়ে তুহিনা আর নীলা কাছাকাছি থাকায় তুহিনা সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।তুহিনার পেট এফোড় ওফোড় করে বন্দুকের গুলি বেরিয়ে গেলো।সে মাটিতে পড়ে গেলো। আহ করে চিৎকার করে উঠলো সে।

কিছু রক্ত নীলার গায়ে ছিটকে গিয়ে পরল।নীলা চোখ মুখ খিচে দান আছে। পরক্ষনেই আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে যা দেখলো সে যেন পাথরের মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো।

এতো তারাতাড়ি ঘটনা টা ঘটে গেলো। কেউ বুঝে উঠার আগেই সবটা হয়ে গেলো। সবটা যেন থেমে গেছে একবারে। জঙ্গলের গাছে পাখি গুলা উড়াল দিলো বন্দুকের আওয়াজে। এই বুঝি তুহিনার প্রান টাও এই পাখিদের মতো উড়াল দেবে। জঙ্গলে পরে থাকা শুকনো পাতা রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলো।

পুলিশ বন্দুক চালানোর আওয়াজ পেয়ে দৌঁড়ে এদিকে ছুটে আসছে।পুলিশ ফোর্স নিয়ে এসে দেখে তাদের প্রান প্রিয় মহিলা পুলিশ অফিসার মাটিতে রক্তেমাখা শরীরে পড়ে আছে।ততক্ষনে যা ঘটার ঘটে গেছে।

বন্দুকের আওয়াজে বাকি মেয়েরা কানে হাত দিয়ে দুরে চলে গেলো।

কাকন আর নীলা তুহিনার কাছে ধপাস করে বসে পরল।

নীলা তুহিনার মাথা তুলে নিলো।এটা তুমি কি করলে তুহিনা আপু।হাউ মাউ করে কেদে উঠলো নীলা। এটা তুমি কেনো করলে। আমার জন্য নিজের জীবন টা এইভাবে শেষ করে দিলে।

এদিকে শুভ্র নিজের প্রিয় বন্ধুর এই অবস্থা দেখে যেনো স্তব্দ হয়ে গেছে। সে যে আর নড়তেই পারছে না। পা গুলো যেনো অষাঢ় হয়ে গেছে তার চোখ দিয়ে পানি পরছে তার।ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।হাত থেকে রাইফেলটা মাটিতে পড়ে গেলো।

শুভ্র তারাতাড়ি এদিকে আয়।তুহিনাকে বাঁচাতে হবে।

শুভ্রর যেনো ধ্যান ভেঙে গেল। সে দৌঁড়ে গিয়ে গেলো নিজের বন্ধুর এরকম বাজে অবস্থার কথা সে ভাবতে পারছে না।

রাহাত আর জীনিয়া ঘাবড়ে গিয়ে পালাতে যাবে তার আগেই পুলিশ ওদের সহ বাকি গার্ডসদের ধরে ফেলল।

আর বাকি মেয়েদের কেও পুলিশ নিয়ে গেলো।যার যার বাড়ি পৌঁছে দেবে।

স্যরি মিস্টার চৌধুরী আমাদের আসতে লেট হয়ে গেলো। আর যার জন্য আমাদের সবার প্রিয় মহিলা অফিসারের প্রান বিপন্নে।

তুহিনার চোখ দিয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। সে হাত দিয়ে নিজের পেট ধরে আছে। আর গোঙ্গাচ্ছে।তার ছোট্ট ছেলেটার মুখটা যে তার সামনে ভেসে উঠলো।কি হবে তার ছেলের।

কাকনঃ শুভ্র তারাতাড়ি ধর ওকে হসপিটাল নিতে হবে।

শুভ্র স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

শুভ্রঃ আপনার চুপ করুন। আপনারা যদি আর একটু আগে আসতেন তাহলে এখন আমার বন্ধুর এই অবস্থা হতো না।শুভ্রর চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।কেন করলি এটা তুই তুহিনা।কেন।

তুহিনাঃ আ-আ-মি য-দি এ-এটা না করতাম তাহলে নীলার আমার যায়গায় থাকতো। আর এটা আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না।ওর কিছু হলে তো তুই বাচতি না।আমি তোকে বলেছিলাম না আমি আমার বন্ধুর জন্য প্রান টাও দিয়ে দিতে পারি। অনেক কষ্টে কথা গুলো বললো তুহিনা।

নীলাঃ প্লিজ আপু তুমি আর কথা বলো না। তোমার কিচ্ছু হবে না।আমরা তোমার কিচ্ছু হতে দেব না।

তুহিনাঃন-নী–লা তু-তু-মি আ-আ-মা-র ছে-ছে-লে-কে দে-খে রে-খো। এইটুকু বলে তুহিনা নিজের চোখ বন্ধ করে ফেললো।তুহিনা নিজের শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে ফেলেছে।

মায়েরা বোধই এরকমই হয়। নিজের শেষ ত্যাগ করার আগ মুহুর্তেও নিজের সন্তানের কথা ভুলেন না।অথচ নিজের প্রান পাখিটা উড়ে যাবে কিন্তু নিজের সন্তানকে ভুলে নি তুহিনা।

নীলা চিৎকার করে কেঁদে দিলো

শুভ্রঃ আমি তোর কিচ্ছু হতে দেবো না।তোকে মরতে দেব না আমি। এই বলে তুহিনাকে শুভ্র কোলে তুলে নিলো। এই চোখ খোল প্লিজ বোন চোখ খোল।এই সেই কত কিছু বলছে।পাগলের মতো করছে শুভ্র।

কাকন আর নীলা দুজনেই শুভ্রর পিছনে ছুটছে।
তারাতাড়ি গাড়ি করে তুলে কোলে করেই বসে পরলো।

কাকন গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।তাও যেনো গাড়ি এগোতে চাইছে না।পথ টা শেষ হতে চাচ্ছে না।

নীলা তুহিনার মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে এটা সেটা বলছে।

কিন্তু তুহিনার যে প্রান পাখি টা উড়াল দিয়েছে সেটা কি তারা বুঝতে পারেনি।তার হৃদ স্পন্দন যে থেমে গেছে।

এটাই বুঝি বন্ধুত্ব। একজন প্রকৃত বন্ধু তার জীবনের পরোয়া না করে সব টা উজাড় করে দেই।যা তুহিনা আজ দেখিয়ে দিলো

চলবে–

#গল্পঃভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব৩০
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

নীলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র অফিস থেকে ফেরে নি।আজ মা কিছু একটা বলবেন। শুভ্র কে তারাতাড়ি অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে বলে দিয়েছেন।

আজ তুহিনার মৃত্যুর পনেরো দিন হয়ে গেলো।সারা বিশ্বে একটি তুহিনার মৃত্যুর খবর এক দরুন দৃষ্টান্ত হয়ে স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে।যাকে পুরো বিশ্ব অনন্ত কাল মনে রাখবে।এই ত্যাগ নিজের সবটা দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করা।আমরা অনন্ত কাল তোমাকে ভুলবো না তুহিনা।আমাদের হৃদয় আজীবন বেচে থাকবে তুমি।শুভ্র খুবই ভেঙে পড়ে নিজের প্রান প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু সে এতো সহজে মেনে নিতে পারেন নি।

একজন সৎ অফিসার একজন কর্তব্য পরায়ন অফিসার তার দায়িত্ব ভুলে না।আর একজন ভালো প্রকৃত বন্ধু তার এক বন্ধুর জন্য সব টা উজাড় করে দিয়ে নিজের প্রান দিয়ে দেওয়া। যা সবার মনে দাগ কেটে গেছে। সেদিন হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার পর তুহিনাকে মৃত ঘোষণা করে ডক্টর। তুহিনা মৃত্যুতে সবার মন হাহাকার করে উঠে। সেখানেই তুহিনার মা নিজের মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান।আর ফুয়াদ সে তো একটা বাচ্চা ছেলে। ও কি বুঝে এই পৃথিবীতে ওর আর আপন বলতে কেউ নেই। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর কিছু নোংরা মানুষের জন্য সে একেবারে এতিম হয়ে গেল।

কিন্তু না নীলা এই কথাটা আর দ্বিতীয় বার বলতে দেই নি।না ফুয়াদ কে মনে বুঝতে দিয়েছে মায়ের অভাব।হইতো পুরো পুরি পারে নি।প্রকৃত অর্থে মায়ের অভাব টা আসলে পুরো পুরি ভাবে কেউ পুরন করতে পারে না।কিন্তু নীলা তুহিনার কথা রাখবে। সে ঠিক করেছে আর কোনো বাচ্চা নেবে না। কারণ সে চাই না কোনো ভাবে ফিহা বা ফুয়াদ তার মায়ের অভাব বুঝুক।নীলা নিজের স্বর্বস্য দিয়ে ফুয়াদ আর ফিহাকে আগলে রাখছে।হ্যাঁ সেদিনের পর থেকে ফুয়াদ কে তার মায়ের অভাব একেবারেই বুঝতে দেইনি। ফুয়াদকে প্রথম প্রথম সামলাতে একটু কষ্ট হয়ে গেছিলো।ফিহা ফুয়াদ এখন তার দুই ছেলে মেয়ে। দুজনেই দৌঁড়ে ছুটে খেলা করে পুরো বাড়িতে।ফিহাকে এক সপ্তাহ পর সুস্থ হয়ে বাড়ি আসে। শুভ্রও এখন ফিহা ফুয়াদকে চোখে হাড়ায় একেবারে। অফিস থেকে ফিরে না দেখতে পেলে তার আর ভালো লাগে না।ফিহা ফুয়াদ বলে অজ্ঞ্যান এখন সে।

আর যাদের জন্য ফুয়াদ সবটা হাড়িয়েছে তারা শাস্তি পাচ্ছে।সেদিন রিশিকা কেও সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেই।একজন পুলিশ অফিসার কে খুন,,নারী পাচার করার অপরাধে রাহাত,, রিশিকা আর জীনিয়াকেও যাবৎ কারাদণ্ড দিয়েছে কারন তারাও সমান ভাবে দায়ী ছিলো।ফাহিম কোর্টে সাক্ষি দিয়েছে সমস্ত টা প্রমাণ হয়ে গেছে।

নীলা তার বাবার ভালোবাসা প্রথম পায়। বার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেছেন।ইমরান ও নিজের মেয়েকে বহু বছর পর বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করেন।সব টা এখন যেনো আল্লাহ তায়ালা এক নিমিষেই ঠিক করে দিলেন। কাকন প্রাপ্তি রোজ আসে নীলার কাছে।ওরাও এসে ফুয়াদ ফিহাকে নিয়ে মেতে থাকে। শাশুড়ী মা ননদ তাকে এতো টাই ভালোবাসা দিয়েছেন। কিন্তু মাঝে মধ্যে শাশুড়ী মা গম্ভীর হয়ে থাকেন সেটা কি জন্য নীলার জানা নেই।

নীলা তুহিনার কথা ভাবতেই তার চোখের কোনে পানি চলে এসেছে।তুহিনা এমনই একজন মানুষ যাকে ভুলার নয়।

সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলো। এসেই দেখে নীলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। এসে দেখল নীলা সেই একি ভাবে দাড়িয়ে আছে। শুভ্র পিছন থেকে নীলাকে জড়িয়ে ধরলো।

কি ভাবছো এতো।আমি এসে ঘরে ঢুকলাম তুমি কি বুঝতে পারো নি।স্বামীর একটু খেয়াল রাখো।সারাদিন তো তোমার আমার কথা মনেই পরে না।সারাদিন বাচ্চা সামলাও পাকা গিন্নি হয়ে গেছে একেবারে।

নীলা একটু নড়েচড়ে উঠলো। তারপর মুখ ঘুড়িয়ে বললো।

ওহ আপনি এসেছেন। নিচে যেতে হবে মা কিছু একটা বলবে। চলুন নিচে যায়। মাকে দেখে মনে হলো বেশ সিরিয়াস কিছু বলবেন।

দেখেছো আমি এতো কিছু বললাম। আর তোমার মধ্যে কোনো ভাবান্তরই নেই।ঠিক আছে চলো নিচে দেখি মা কি বলেন।

হ্যাঁ চলুন নিচে যাওয়া যাক।তারপর দুজনেই নিচে নেমে আসলো।

নিচে নেমেই দেখল কাকন, প্রাপ্তি, হিয়া, মা সবাই বসে আছে।

অন্য দিকে ফুয়াদ আর ফিহা বসে বসে ঝগড়া করছে।

ফিহাঃ মা আমাকে তোর থেকে বেশি ভালোবাসে।

ফুয়াদঃ না আমাকে বেশি ভালোবাসে।তুই যা এখান থেকে।

ফিহাঃ না আমি তোর থেকে ছোট তাই আমাকে বেশি।
ফুয়াদঃআমি তোর থেকে বড় তাই আমাকেই বেশি।তুই খুব ঝগড়া করছিস কিন্তু আমার সাথে।

ফিহাঃ তুই ও তো করছিস।তুই জানিস মা আমাকে কত্তো ভালোবেসে এঞ্জেল ডাকে।

ফুয়াদঃ মা আমাকেও সোনাই বলে ডাকে হুহ্।

এদের এসব দেখে সবাই একত্রে হেসে দিলো।নীলা এগিয়ে এসে বললো মাম্মাম তোমাদের দুজনকেই সমান ভালোবাসে ঠিক আছে। ঝগড়া করে না।ঝগড়া বাজে লোকেরা করে ঠিক আছে।

ঠিক আছে মা আমরা আর ঝগড়া করবো না।
এই বলেই দুজনেই নীলাকে জড়িয়ে ধরলো। নীলাও পরম যত্নে ওদেরকে নিজের বুকে আগলে নিলেন।

এতকিছুর মধ্যে নীলা তার শাশুড়ী মাকে গম্ভীর হয়ে বসে থাকতে দেখে ফিহা আর ফুয়াদকে অন্য দিকে গিয়ে। খেলা করতে বললেন।ফুয়াদ ফিহা দৌঁড়ে চলে গেলো ওই দিকে।

তারপর সবাই মনোযোগ দিলো মিসেস মোল্লিকার দিকে।শুভ্র আর নীলা সহ বাকি সবাই মোল্লিকার দিকে করে মুখ করে বসে পরলো।

আজ তোমরা এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি হতে চলেছো।আর আমি জানি না এর প্রভাব ঠিক কতটা তোমাদের উপর প্রভাব ফেলবে।বিশেষ করে আমার ছেলে।যার কথা ভেবেই আজ তিন বছর থেকে এই কথা টা লুকিয়ে রেখেছি।

সবাই সবার দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। একমাত্র হিয়া ছাড়া তার মধ্যে চমকানোর কোনো আভাস নেই।যেখানে সবাই অবাক হয়ে গেছে সেখানে হিয়ার মধ্যে কোনো রকম কোনো ভাবান্তর নেই।মনে হচ্ছে যেন সে সব টা জানে আগে থেকে।

আমি ফিহার বিষয় টা নিয়ে কথা বলবো এখন।সে আমার নিজের একমাত্র ছেলে শুভ্রর মেয়ে।

শুভ্রঃ হ্যাঁ মা আমি তো ওকে নিজের মেয়ে বলে মেনেই নিয়েছি।তাহলে আবার এই কথা উঠেছে কেন।

নীলাঃ আমি একটা কথা বলতে চাই মা। আমি ফিহায় নিজের মা নয়।আপনারা ভেবেছেন আমি ওর নিজের মা।কিন্তু আমি আর শুভ্র জানি সবটা।শুভ্র নিজেও জানে যে ফিহা আসলে কে ।মাথা নিচু করে বললো কথা গুলো।চোখে পানি চলে এসেছে নীলার কথা গুলো বলতেই।শ

মোল্লিকাঃ না ফিহা শভ্রর নিজের মেয়ে।ওর রক্ত বয়ছে ওর শরীরে। আর আমি এটাও জানি যে তুমি ফিহার নিজের মা নয়।তবে তুমি তো ওকে ওর মায়ের অভাব বুঝতে দাওনি।আর এমনি একজন কে খুজছিলাম ফিহার জন্য। কিন্তু এই কথা টা একদম সত্যি যে ফিহা শুভ্রর নিজের সন্তান। আমি সেদিন ফিহাকে শুভ্রর অফিস পাঠিয়েছিলাম।

এই কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই যেন আকাশ থেকে পরলো।কেউ হইতো এই কথা টা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না।

নীলা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো।তার বুকের ভেতর টা যেন মোচড় দিয়ে উঠলো।

শুভ্রঃ মা তুমি পাঠিছিলে ফিহাকে ওখানে কিন্তু
কেন মা।আমার সাথে কেন এমন টা করলে মা।

হিয়াঃ ভাইয়া মা একদম ঠিক কাজ করেছে তোর মেয়েকে তোর কাছেই তো পাঠাবে তাই না।আর কেন আমার পায়ের আজ এই অবস্থা আজ সবটা জানতে পারবি ভাইয়া। আমার পায়ের অবস্থার কথা তো তুই অনেক বার জানতে চেয়েছিলি কিন্তু কেন বলিনি জানিস। সেটাও তোর ভালোর জন্য। আজ তোকে সব সত্যির মুখোমুখি হতে হবে।তাতে যদি তোর কোনো কিছু হয় ও আমার বা মায়ের কিচ্ছু করার নেই।

সবাই যেন আরো একবার ঝটকা খেলো।
হিয়াকে এভাবে স্ট্রেইট কথা বলতে শুনেই বোঝা যাচ্ছে সে সবটা জানে।

নীলাঃ তুমি কি বলছো এসব। তোমার ভাইয়ার ক্ষতি হতে পারে মানে।

প্রাপ্তিঃ আন্টি এক্সাক্টলি কি এমন সত্যি যা জানলে ভাইয়ার ক্ষতি হতে পারে।

কাকনঃ হ্যাঁ আন্টি বলুন কি এমন সত্যি যা আমিও জানি না।বলুন আন্টি।

মোল্লিকাঃ তোমাদের সব প্রশ্নের উত্তর আজ তোমরা পাবে।কারন এখন শুধু আমার ছেলে নয় এখন নীলা ফিহা ফুয়াদ সবাই জড়িয়ে আছে।ওদের কথাও আমাকে ভাবতে হবে।
তবে শুনো সব টা কেনো এতো দিন আমি সবার থেকে আড়াল করে রেখেছি।

চার বছর আগের কথা।কাকন তোমার মনে আছে তোমার আংকেল মারা যাওয়ার পর সেই খবর শুনে শুভ্র কলেজ থেকে তারাহুরো করে আসার সময় একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে যার জন্য ওর মস্তিষ্কে আঘাত লাগে। তুমি ওকে নিয়ে গেছিলে ডক্টর এর কাছে।ডক্টর কি বলেছিলো মনে আছে তোমার।তারপর আমরা লন্ডনে চলে গেছিলাম শুভ্রর মামার বাসাই।আর শুভ্রর মাথায় গুরু তোড় ভাবে আঘাত লাগে স্মৃতি শক্তি হাড়িয়ে গেছিলো।তখন আমরা চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলাম।আমাদের

কাকনঃ হ্যাঁ আন্টি বাট এর সাথে ফিহার শুভ্রর মেয়ে হওয়ার কি সম্পর্ক।

মোল্লিকাঃ সম্পর্ক আছে বাবা।সেখানে যাওয়ার পর ডক্টর দেখায়।তারপর শুভ্র একেবারে স্বাভাবিক হলেও ওর কিছু মনে পরেনি।আমরা ওখানেই থেকে যায়।আমি চাকরি করি শুরু করি ওখানেই। শুভ্রর আর হিয়ার লেখাপড়া ভালোই চলছিলো।

তারপর সেখানে শুভ্রর পরিচয় হলো সাদিয়া নামের একটা মেয়ের সাথে। শুভ্র সাদিয়া বলতে একেবারে অজ্ঞাত ছিল যাকে ছাড়া শুভ্র এক মুহুর্তেও কিছু বুঝতে চাইতো না।ওদের বিয়ে দিয়ে দিই সেখানে।বিয়ের কিছুদিন পরেই জানতে পারি সাদিয়া প্রেগন্যান্ট। শুভ্র আর সাদিয়া আগেই লিভ ইন করে ফেলেছিলো।শুভ্র সাদিয়ার পুরো খেয়াল রাখতো।একেবারে মাথায় করে রাখতো।আমি অফিস থেকে এসে যে টুকু পারতাম। হিয়াও খেয়াল রাখতো যখন শুভ্র অফিস থাকতো এভাবেই কাটছিলো আমাদের সুখের সংসার।হঠাৎ সাদিয়ার লেবার পেইন উঠে।হিয়া বাসাই একা ছিলো। শুভ ওর মামার অফিসে ছিলো।আমিও অফিস ছিলাম।

চলবে——

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে