ভালোবাসার ভিন্ন রং পর্ব-০১

0
2217

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রং
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১

১৮ বছর বয়সী সদ্য বউ সেজে বসে থাকা রোদ যখন শুনতে পেল তার স্বামীর একটা ক্লাস নাইনে পড়া ছেলে আছে তখন রোদের বুকটা ধক করে উঠলো। নিজেকে কি আর ঠিক রাখা যায়? না যায় না কিন্তু রোদ রেখেছে। একদম স্বাভাবিক যেন এতে ওর কিছু যায় আসে না। শুধু মনে পরলো ১ বছর আগের কথা। যদি বিয়ে টা না হয়। আদ্রিয়ান যদি বিয়ে না করে ভাবতেই পাশে বসে থাকা আদ্রিয়ানের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখলো যার কোলে আপাতত মিশি ঘুমিয়ে আছে। সুঠাম দেহের আদ্রিয়ান একহাতে ঘুমন্ত মেয়েকে বুকে চেপে ধরে অন্য হাতে রোদকে জড়িয়ে ধরলো। রোদের বড় চাচা আশ্রুচোখে তাকালো একবার ভাতিজীর দিকে তো একবার ছোট ভাইয়ের দিকে। তার নিজের দোষে আজ ছোট্ট রোদের এই পরিস্থিতি। হাসি খুশি চঞ্চল মেয়েটার আজ বেহাল দশা।আদ্রিয়ান অবাক দৃষ্টিতে একবার তাকালো সামনে তো একবার নিজের পরিবারের দিকে। সামনেই যুবতী এক নারী দাঁড়িয়ে আছে। যে একসময় আদ্রিয়ানের বুকে রাজত্ব করত কিন্তু এখনও কি তাই? আজ ৪ বছর পর কি চাইছে এই নারী আদ্রিয়ান থেকে। মাইশা আবারও বলে উঠলো,

— নিশ্চিত এরা কেউ আপনাদের আগে বলে নি যে ওর ছেলে আছে। ছেলেকে হোস্টেলে রেখে এখানে মেয়ে নিয়ে বিয়ে করছে। আমার দায়িত্ব ছিলো আপনাদের জানানো তাই জানিয়ে দিলাম।

হঠাৎ করে থাপ্পড় পরলো মাইশার গালে। তার মা ই মেরেছে। সাবা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার নিজের বোন যে এতটা নিচে নেমে যাবে তা কেউ ভাবতে পারে নি। মাইশা কিছু না বলে চলে গেল। সেই সময়ই রাদ গর্জে উঠলো। তার একমাত্র বোন তো আর ফেলনা না যে যার না তার সাথেই বিয়ে দিয়ে দিবে। এমনিতেই রাজি ছিলো না রাদ এখন তো আরো না। রোদের পুরো পরিবার শক্ড হয়ে আছে। কাবিন বলে তেমন কেউ নেই এখানে শুধু ঘরের আর নিকট আত্মীয়রাই আছে। রাদ এসে টেনে ধরলো রোদের হাত। কিন্তু রোদের এক হাত আদ্রিয়ানের হাতের মুঠোয়। রোদ ও শক্ত করে ধরে আছে। রাদ ছাড়াতে চাইলেও রোদই বললো,

— ভাইয়া ছাড়।

রাদ অবিশ্বাস্য চোখ করে তাকিয়ে বললো,

— ছাড়ব মানে? এই বিয়ে হবে না। কিছুতেই না। আমার বোন কোন ফালানো জিনিস না যে যার না তার কাছেই বিয়ে দিয়ে দিব। প্রয়োজনে সারা জীবন ঘরে রেখে দিব।

মি.রহমান এইবার চুপ থাকলেন না। আদরের মেয়েটা তার। বিগত ১ বছরে কি না সহ্য করেছে কলিজার টুকরা মেয়েটা। বাবা হিসেবে নিজেকে ব্যার্থ মনে হচ্ছে তার। কেন এত সব কষ্ট মেয়েটাকে ঘিরে? আরিয়ান এগিয়ে এলো সাথে পরিবারের সবাই। তাদের বুঝাতে চাইলেই রাদের রাগের কারণে কিছু বলতেও পারছেন না। আদ্রিয়ানের মার মনটা কেঁদে উঠলো। ছেলেটা এতবছরে রাজি হলো বিয়েতে তবে কি বিয়েটা ভেঙে যাবে? সুখ বুঝি তার জীবনে আড়ালেই থেকে যাবে?

এতক্ষণে মুখ খুললো আদ্রিয়ান। নিজের পরিবারের দিকে একবার তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে রাদকে বললো,

— দেখ রাদ আমি জানতাম না যে তোমরা আমার ছেলে আছে এই কথা জানো না। আমার পরিবার যে এই কথা তোমাদের জানায় নি তা আমার জানা ছিলো না।

মি.রহমান রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন,

— না জানানোর কারণটা কি? দেখ আমার মেয়ে আমি কিছুতেই তোমার কাছে দিব না। এখনই এমন না জানি আরো কি লুকিয়ে রেখেছো?

আদ্রিয়ান মিনতির সুরে বললো,

— প্লিজ বাবা। আমার কথাটা শুনুন।

বলে অনুরোধ করতেই মি.রহমান, ওনার বড় ভাই আদ্রিয়ানকে নিয়ে অন্য দিকে যেতে চান। আদ্রিয়ান রোদের হাত ছাড়াতে নিলেই রোদ শক্ত করে ধরে ছলছল চোখ করে তাকায়। সেই তাকানোতে শুধু কষ্ট আর বিয়ে না ভাঙার আকুতি দেখতে পেল আদ্রিয়ান। আসস্ত করলো রোদকে নিজের চাহনি দ্বারা অতঃপর সাবার কোলে মিশিকে দিয়ে অপর দিকে গেল। রোদ ধপ করে বসে পরলো। পাশে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো ওর মা, চাচিরা আর সব কাজিনরা। প্রায় আধ ঘন্টা পর রোদের বাবা,চাচা আর রাদ এলো। একটু পরই আদ্রিয়ান আর আরিয়ান এলো। কাজিকে বিয়ে পড়াতে বললেন এমনিতেই রাত অনেক হয়ে গিয়েছে সেন্টার খালি করতে হবে। আদ্রিয়ান এসে বসলো রোদের পাশে। চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে আছে। রোদ একটু তাকিয়ে নজর নামিয়ে নিলো।
কাজি সাহেব কাবিন নামা নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সকল বলে রোদকে বললেন,

— মা আপনি কি ১০ লক্ষ টাকা ধার্য করিয়া, বাবা আমির জোহান, মাতা রিহানা পারভীন এর ছোট ছেলে আদ্রিয়ান জোহানকে বিবাহ করিতে রাজি? রাজি হলে বলুন কবুল।

এতক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও কথাগুলো যেন এবার রোদের বুকে গিয়ে অন্য রকম ব্যাথা দিলো। কেমন যেন আচেনা আশঙ্কা হতে লাগলো। হঠাৎ রোদের মনে হচ্ছে রোদ বোধ হয় আর রোদ থাকবে না বিয়ে করলে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো। ওর মা আঁচলে মুখ গুজে কাঁদছে। রাদ বহু কষ্টে বোনের মাথায় হাত রাখলো। ছোট ভাই রুদ্র এসে জড়িয়ে ধরলো। দুই ভাই যেন বোনকে ছাড়বেই না। অবশেষে মি.রহমান আর ওনার বড় ভাই এসে সামলাতে লাগলেন দুই ছেলেকে। রোদের হাত মুঠোয় পুরে নিলো আদ্রিয়ান। একটু চাপ দিলেই রোদ তাকালো। আদ্রিয়ান ইশারা করলো কবুল বলতে। রোদ আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো,

— আলহামদুল্লিলাহ কবুল।

অতঃপর আরো দুই বার উচ্চারণ করলো এই পবিত্র তিনটা অক্ষর। সবাই বলে উঠলো,

— আলহামদুলিল্লাহ।

কাজি সাহেব এবার আদ্রিয়ানকেও একই কথা বললেন। আদ্রিয়ান ঝটপট করে বলে উঠলো,

— কবুল।

সবাই আবারও বলে উঠলো,

— আলহামদুলিল্লাহ।

হয়ে গেল আদ্রিয়ানের রোদ। ৩০ বছর বয়সী সুদর্শন, সুঠাম দেহের আধীকারী আদ্রিয়ান এখন রোদের আর এই গোলগাল মুখ ওয়ালা, মায়াবী কিশোরী এখন আদ্রিয়ানের বউ, মিশি আর মিশানের মা। আসলেই কি মিশানের মা?
সবাই ওদের দোয়া করে দিলো মোনাজাতে।আদ্রিয়ান এতো তাড়াতাড়ি কবুল বলায় সব কাজিনরা এক রোল হাসাহাসি করলো। এরপর খাবারের ডাক পরলো। কাবিন বলে স্পেশাল ছিলো সকল খাবার। পুরাণ ঢাকা বলে কথা নরমাল ছিলো না কিছুই। আদ্রিয়ানকে ধরে শালা শালীরা বসালো শাকরখানায়। এটাতে এক বড় থালীতে সাত পদের খাবার থাকে। এছাড়াও টেবিল জুরে রয়েছে শাহী আয়োজন। ক্লান্ত রোদ কিছুই খেতে পারছে না। আদ্রিয়ানের হাতে শুধু এক লোকমা পোলাও খেল। আর খেতে পারলো না।
অবশেষে এলো বিদায় এর পালা। সবাই কেঁদে যাচ্ছে। বড় চাচা রোদের মাথায় হাত রেখে অপরাধী সুরে বললো,

— আমাকে মাফ করে দিস মা।

রোদ শুকনা মুখে হাসলো। কিভাবে মাফ করবে রোদ? এতই সোজা? রুদ্র তো বোনকে ধরে গলা ফাটিয়ে কেঁদে উঠলো। রাদ ওকে না থামিয়ে নিজেও কেঁদে কেঁদে অস্থির। অনেক কষ্টে দুই ভাইকে ছাড়ালো সবাই। রোদ অশ্রু চোখে গাড়িতে উঠে বসলো। পাশেই আদ্রিয়ান। বাকিরা অন্য গাড়ীতে। ক্লান্ত রোদ চোখ বুজে নিলো। আদ্রিয়ান ওকে ধরে নিজের বাহুতে আটকে ঘোমটা আলগা করে দিয়ে ড্রাইভারকে বললো যাতে এসির টেম্পারেচার কমিয়ে দেয়। আর এদিকে রোদের অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। আদ্রিয়ান নিজেও একটু ভয় পেয়ে গেল।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে