ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব – ১

0
2009

#ভালোবাসার প্রজাপতি
#তাসনিম তামান্না
#পর্ব – ১

নিজের ভালবাসার মানুষটিকে ২ বছরের একটা ছোট ফুটফুটে মিষ্টি বাচ্চা মেয়ে আধোআধো বুলিতে বলল

– ‘মাম্মা তুমি আংকেলটাকে বকচ কেনো? দেখো আমাল কিচু হয়নি তো!!’

ইশরাকের বুকে কোথাও একটা অদৃশ্য ধাক্কা খেলো।ইশরাক স্থির হয়ে আফরা আর ছোট মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো। আফরা ছোট মেয়েটার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে মুখে অজস্র চুমু দিচ্ছে।ইশরাকের বুকটা ক্ষত বিক্ষত হতে আছে মন বারবার বলছে তবে কি তার আসতে দেরি হয়ে গেলো হারিয়ে ফেলল তার ছোট তোতাপাখিটাকে। আফরার কথায় ঘোর কাটলো ইশরাকের…

-‘এবার থেকে চোখটা খুলে গাড়ি ড্রাইভ করবেন না হলে দূর্ঘটনা ঘটতে সময় লাগবে না’ (আফরা)

কঠিন গলায় কথাটা বলে আফরা আরাকে কোলে নিয়ে চলে আসলো ওখান থেকে…আর একটি বারও পিছু ফিরে তাকায় নি। আর কিছুক্ষণ ওখানে থাকলে হয়ত বাধ ভাঙা জোয়ারের ন্যায় অবাধ্য পানি গড়িয়ে পড়তো চোখ দিয়ে চিবুক বেয়ে। কিন্তু না ও কাঁদবে না ও আর কখনো কোনো ছেলেকে বিশ্বাস করবে না ও কারোর কাছে ঠকতে চাই না! চাই না কারোর মিথ্যা ভালোবাসার মায়াজালে আটকা পড়তে।

মাগরিবের আজান দেওয়ায় এদিকটাই তেমন কেউ নাই বলতে গেলে রাস্তা ফাঁকা তাই এ ঘটনা কারোর চোখে পড়লো না।

.

ইশরাক আফরার যাওয়ার পানে তৃষ্ণনাতক চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে রইলো।

– ‘আমি তো এমনটা চাই নি। আমি কেনো এতো দেরিতে নিজের ভালোবাসাটা উপলব্ধি করলাম কেনো আগে বুঝতে পারি নি আফরাকে ভালোবাসি। না না না আমি আফরাকে হারাতে দিবো না আফরা আমার শুধু আমার আমারই থাকবে।ওর তো এখন বিয়ে হওয়ার কথা নয় তাহলে কি এটা ওর মনের ভুল কিন্তু বাচ্চাটা কেনো আফরাকে মাম্মা বলে ডাকবে?’

নিজ মনে কথাগুলি বলে গাড়িতে উঠে কোনো নিজের বাড়িতে রওনা দিলো কিছু প্রশ্নের উত্তর মেলাতে।

_________________________________________

#ফ্ল্যাসব্যাক

আফরা আরাকে নিয়ে বাসার কাছে পার্কে আসছিলো আরার সাথে সময় কাটাতে আর বাচ্চাদের সাথে খেলা করতে। আরা খেলতে খেলতে রাস্তায় চলে আসে আর তখনি ইশরাক ফুলস্প্রিডে ড্রাইভিং করে সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিল সময় মতো ব্রেক করায় আরার কিছু হয়নি কিন্তু আফরা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। আর দৌড়ে এসে আরাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। ইশরাক গাড়ি থেকে বেরিয়ে আফরাকে দেখে অবাক+খুশি হয়। কিন্তু আরাকে দেখে ভ্রু কুচকে আসে। আফরা আরাকে ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে ৪ বছর পর ইশরাককে দেখে থমকে যায় কিন্তু সেটা ইশরাকে বুঝতে না দিয়ে রেগে বলল

-‘আপনার কোনো সেন্স নাই এতো স্প্রিরিডে গাড়ি চালাছেন তাও আবার এই রাস্তায় যদি এখন কিছু হয়ে যেতো তাহলে তার দায়ভার’কে নিতো? আপনি?’

ইশরাকের মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো

-‘আ..ফ..রা’

তখনি আরা বলল

-‘মাম্মা তুমি আংকেলটাকে বকচ কেনো? দেখো আমাল কিচু হয়নি তো!!’

#বর্তমান

আরা আফরার কোলে বসে কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে আফরার গলা জড়িয়ে ধরে চুপটি করে বসে আছে। আরা আফরা দুজনই চুপ কেউ কোনো কথা বলছে না। নিরবতা ভেঙে আরা আফরার ছোট ছোট হাত দিয়ে আফরার মুখে হাত বুলিয়ে বলল

-‘মাম্মা, ও মাম্মামনি, মাম্মামনি গো, তুমি কি আমাল ওপল লাগ কলে আছো সত্যি আল এমন কলবো না সবছময় তোমাল হাত ধলে ধলে থাকবো সত্যি বলছি পিলিচ লাগ কলে থেকো না আমি কিন্তু কান্না কলে দিবো কতা বলো না কেনো?’

আফরা আরার দিকে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে বলল

-‘আমি রাগ করবো কেনো? কে হই আমি তোমার যে তোমার ওপর রাগ করে থাকবো?’

-‘তুমি আমাল সব তুমি আমাল মাম্মামনি বলো লাগ কলে নেই’

আফরা হেসে দিয়ে আরার কপালে চুমু খেয়ে বলল

-‘ইশ আমি কি আমার মিষ্টি সোনা মা’টার ওপর রাগ করে থাকতে পারি? আমি একটুও রেগে নেই মা। কিন্তু তুমি আর এমন দুষ্টমি করবে না মা দেখলে আজ কি হয়ে যেতো’

-‘হ্যাঁ কিন্তু তুমি আংকেলটাকে শুধু শুধু বকা দিলে আমাল তো কোথাও লাগে নি আংকেলটা তোমাল বকা শুনে কান্না করছে তাই না?’

আফরার হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো হালকা হেসে বলল

-‘না মা ওনি বড় হয়ে গেছেন তাই আমার কথায় ওনার মন খারাপ হয় না’

-‘ওওওও’

-‘হুমমম’

ওরা কথা বলতে বলতে বাসার দরজার সামনে এসে গেলো। বাসার ভিতর থেকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ ভেসে আসলো আফরার কানে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে নিজে শক্ত করে কলিং বেল বাজালো কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আফরার বড়চাচি এসে দরজা খুলে দিয়ে বলল

-‘আফরা মা তুই আসছিস দেখ তোর দাদি আবার কি শুরু করছে বাসায় আর ভালো লাগতেছে না এই অশান্তি কিছু বল আমাদের কথাতো শোনেই না’

কথাটা বলে থামলেন আফরার বড়চাচি শিউলি বেগম। শিউলি বেগম আরার দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিতেই আরা শিউলি বেগমের কলে চলে গেলো।আফরা আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে হাটা দিলো বড় বোনের রুমের উদ্দেশ্য।
.
.
আফরা ওর বড়বোন আয়রার রুমে গিয়ে দেখলো আয়রা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে আর আফরার দাদি রাহেলা বেগম আয়রাকে যাচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে কিন্তু আয়রা বরাবরের মতো নিরব হয়ে রাহেলা বেগমের কথা শুনে যাচ্ছে।

-‘তোর মতো নষ্টা অপয়া মেয়েকে যে আমার ছেলে বসে বসে খাওয়াছে তার জন্য তো বাসার কাজও করে সব টাকার উঠিয়ে দিতে পারিস সারাদিন ঘরে বসে বাপের অন্নধ্বংস করিস লজ্জা লাগে না তোর?’

পিছন থেকে আফরা বলে উঠলো…

-‘সেটা আমার আব্বু দিচ্ছে তুমি তো দিচ্ছো না তাই না তোমার টাকায়ও খাচ্ছে না যার টাকায় খাচ্ছে সে কিছু বলছে না আর তুমি দিনরাত সুযোগ পেলেই খোঁটা দিতে আছো আপু না তোমার প্রিয় পুতনি ছিলো আর এখন তুমি আপুকে দু-চোখে সহ্য করতে পারো না বাহ বাহ’

-‘কোনো নষ্টা মেয়ে আমার প্রিয় হতে পারে না’

-‘তোমার এসব ফাউল কথা বাদ দিয়ে নিজের কাজে যাও অবশ্য তোমার কাজই তো অন্যর পিছনে লেগে তার কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া তো এইখানে তো দেয়া শেষ তাই না এখন তুমি আসতে পারো যাও’

রাহেলা বেগম থমথমে মুখে চলে গেলেন জানেন এখন কিছু বলেও লাভ হবে না উল্টা উনি কথা শুনবেন।

আফরা একপলক আয়রার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করলো। কতদিন হয়ে গেলো তার বোনটার সাথে কথা বলে না। আগের মতো একসাথে হাসি মজা করা হয় না একসাথে বেড়াতে যাওয়া হয় না।ইশ কতই না মধুর ছিল দিন গুলা। কত মিস করে আগের দিন গুলা ভাবলেই চোখ ভিজে আসে আফরার।

.

গোধূলি লগনো আফরা জানালায় মাথা দিয়ে বাইরের মাঠের বাচ্চাদের খেলা দেখছে।আরা সেই দুপুরে ঘুমিয়েছে এখনো উঠি নাই আফরাও আর জাগায় নাই জাগালে উঠে কান্না করবে তাই। আফরাকে বিষন্ন মনটা ইশরাকের কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে কাল থেকে একটুও শান্তি পাচ্ছে না। আফরার মা বাবা আফরার মামাবাড়ি গিয়েছে নানুভাই ইদানীং অসুস্থ থাকে বয়স হয়েছে তার। আফরা বিষন্ন মন নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ ড্রাইংরুম থেকে ‘আফরার’ বলে অয়ন (বড় চাচার ছেলে) ডাক দেওয়ায় চমকে গেলো আফরা…..!!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে