ভালোবাসার পরিনতি পর্ব-১৩

0
871

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৩

“ইভা আমার ব্লু কালার পাঞ্জাবিটা খাটের উপর রেখেছিলাম এখন পাচ্ছি না কেনো?”
“ধুয়ে দিয়েছি, ছাদে আছে ”
“কেনো? ওটা তো ভালো ছিলো, ধুয়ে দেওয়ার দরকার ছিলো না?”
“দরকার ছিলো, কেমন জানি গন্ধ আসে তাই ”
“এর মধ্যে এতো খেয়াল রাখো”
“হুম একটু তো রাখতেই হবে”
“হুম, শুনো? ”
তিহান আমার হাতটা ধরে বললো,
“আমার কাকা কাকিরা আজকে আসবে ওরা কোনো অপমানজনক কথা বললে কষ্ট পেয়েও না। প্রতিবাদ করবে বুঝলে।”
“উনার দু দিনের জন্য আসবে আবার তো চলে যাবে তাতে কি দরকার প্রতিবাদ করার আর সবাই তো সত্যি কথাই বলে”
“সবাই কি সত্যি কথা বলে বুঝাও আমাকে? তোমার সাথে রোহানের সংসার টেকে নি এটা তোমার দোষ? ”
“আহ্ রাগ করো না, বাসায় লোকজন আছে। ”
“রাগ করবো না তো কি আদর করবো তাহলে কাছে আসো”
“কি সব যে বলো, মাথা পুরা খারাপ হয়ে গেছে ”
“হ্যাঁ তোমার জন্য আগেই পাগল ছিলাম এখন তো কোনো কথাই নেই পুরা পাগল ”
“আমার কপালে এতো সুখ সইবে না ”
“আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে, এখন আমি কোন পাঞ্জাবি পড়বো তা বেড় করে দেও”
“হুম দিচ্ছি ”
“তুমি বেগুনি রঙের শাড়িটা পরবে ”
“আচ্ছা পড়বো তাহলে তুমিও বেগুনি রঙের পাঞ্জাবিটা পড়ো”
“হুম”

তিহানকে পাঞ্জাবি বেড় করে দিয়ে আমি ফুপির কাছে গেলাম । আজকে বৌভাতের অনুষ্ঠান বাসায় হবে। তিহানের কয়েকজন ফ্রেন্ড আসবে আর ওর কাকা কাকি, কাজিনরা আসবে।
ফুপি বললো,
– তিহানের বাবা মারা যাওয়ার পর ওর চাচা আমাদের সাথে তেমন সম্পর্ক রাখে নি। বহু বছর পরে আজকে আমাদের বাসায় আসছে। শত হলেও ওরা আপনজন তাই বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম তখন বলে দিয়েছে আসবে না তারপর কালকে রাতে ফোন করে বললো আজকে আসবে।
-হ্যাঁ আপনজনেরা আসবে এটাই তো স্বাভাবিক
-আমার চিন্তা হচ্ছে তোকে নিয়ে, উনারা কখন কি বলবে।
-ওসব নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না, আমি ঠিক সামলে নিবো৷
-জানি তুই কষ্ট সহ্য করতে পারিস কিন্তু আর কতো কষ্ট সহ্য করবি?
-তোমার আছো তো তাতে আমার সব কষ্ট ভুলে যাই।
-হুম আল্লাহ তোদের সুখী করুক এটাই চাই।
ছোট ভাবী এসে বললো,
-শ্বাশুড়ি, বৌ শুধু গল্প করলে কি হবে? আপনাদের রেডি হতে হবে সে খেয়াল কি আছে?
-আমার মিষ্টি বউরা আমাকে রেডি করিয়ে দিবে তাতে আমার আবার কিসের চিন্তা?
-হ্যাঁ তাহলে চলে শ্বাশুড়ি বউ মিলে রেডি হয়ে আসি (আমি).

ভাবীরা আমাকে সাজিয়ে দিলো। তিহান রেডি হয়ে বাচ্চাদের ও রেডি করিয়ে দিছে। তিহানের কয়েকজন ফ্রেন্ডরা এসেছে। তিহানের কাকা, কাকি, কাজিনরা এসেছে। ওর কাকা বলে ফেললো,
-একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বউ করে এনেছো আবার আমাদের ঘটা করে দাওয়াত দেওয়ার কি দরকার ছিলো? এতো কষ্ট করে এই মেয়ের মুখ দেখতে এসেছি?
-আপনি তিহানের চাচা তাই এমন কিছু বলবেন যেনো আমার বউয়ের অপমান হয়। (ফুপি)
-তোমার ছেলের বউ এমন কোনো গুণ নেই যে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবো (কাকি)
-গুন না থাকলে না থাকবে কিন্তু কোনো অপমান করবেন না (ফুপি)

আমি চুপ করে তাদের কথাগুলো শুনছি আর ভাবছি এতো অপমানিত হওয়ার থেকে তিহানকে বিয়ে না করা ভালো ছিলো। আমার জন্য ফুপির সারাদিন অপমানিত হতে হতো না।

দুপুরে সবার খাওয়া দাওয়া শেষ তখন তিহানের কাকা বললো,
-বাচ্চা দুটো ইভার বাপের বাড়ি রেখে আসো, এতে সংসারের ঝামেলা কম হবে
-আমার বাবা মারা যাওয়ার পর কি আমাকে রেখে আমার মা চলে গিয়েছিলো নাকি? আপনারা আমাদের দুঃখের সময় কোথায় ছিলেন যে এখন এতো কথা বলছেন? (তিহান)
-ছেলেটাকে বেয়াদব বানিয়েছো তাই তো ডিভোর্সিকে বিয়ে করেছে (কাকা)
-আপনার মেয়েও তো পালিয়ে গিয়েছিলো তার ভালোবাসার মানুষের সাথে তারপরও তো সংসার টেকে নি আবার তো আপনারা ওর বিয়ে দিয়েছেন। আপনারা ভেবেছেন এসবের কিছুই আমরা জানি না তাই না? (ফুপি)
-শুনেন কাকা, আপনারা আমাদের দুঃখের সময় ছিলেন না তাই এখন সুখের সময় আপনাদের কোনো দরকার নেই তাই এরকম অপমান আমার বউ এবং আমার সন্তানদের করবেন না (তিহান)
-আমার মনে ছিলো না বাবা যে আমার মেয়ের এমন কোনো কাজ করছিলো তাই বলে ফেলেছি (কাকা)
-জানি, আপনারা বুঝতে পারেন নি যে আমরা আপনার মেয়ের কথা জানতে পারি তাই সুযোগ বুঝে অপমান করতে চেয়েছিলেন (তিহান)
-বয়স হয়েছে তো তাই সব কথা মনে থাকে না (কাকি)

উনাদের সাথে আর কোনো তর্কে জড়ালো না কারন যারা অন্যের দোষ নিয়ে পরে থাকে তাদের দোষ ধরিয়ে দিলে তারা তাদের দোষ এড়িয়ে যায়।

রাতে ঘুমানের সময় তিহান আমাকে বললো,
-আজকে যে তোমাদের বাসায় যাই নি তাতে কি রাগ করেছো?.
-নাহ্ রাগ করবো কেনো? কালকে তো আমাদের বাসায় যাওয়া হবে
-আমি ভেবেছি রাগ করছো,কাকা কাকি আজকে আমাদের বাসায় থেকেছে তাই যাওয়া হলো না।
-কোনো সমস্যা নেই। তুমি ঘুমাও।
-হুম তুমি ও

আজকে রাফিসা ফুপির কাছে ঘুমিয়েছে। তাই আমি মাঝখানে শুয়েছি। তিহান ঘুমিয়ে গেছে তারপর ওর ফোনে একটা কল আসে আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নাম্বার সেইভ করা না তাই তিহানকে ডাক দিয়ে বললাম,
-তোমার ফোনে কে জানো কল দিয়েছে রিসিভ করো।
তিহান ঘুম চোখে ফোনটা আমার হাত থেকে নিতে গিয়ে আমার হাত ধরে টান দিলো, ওর বুকের উপর আমি পড়লাম। ফোন বেজে কেটে গিয়েছে।
-আমাকে ছাড়ো।
-না তুমি আমার বুকের উপর ঘুমাবে,
-উফফ ছাড়ো তো
-না চুপ করে থেকে ঘুমাও।
তিহানের আমার উপর অধিকার আছে তাই আর কিছু বললাম না ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।

সকালে তিহানের আগে ঘুম ভেঙ্গেছে। ও দেখলো ইভার ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে তাই ঘুম থেকে উঠলো না। ইভাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলো। কিছুক্ষণ পর ইভার ঘুম ভেঙ্গে দেখে তিহানের বুকে মাতা রেখে তাই তাড়াতাড়ি করে উঠে গেলো। কিছুটা লজ্জাও পেয়েছে ।

সকালে নাস্তা খেয়ে তিহানের কাকা কাকি চলে গিয়েছে। বিকেলে ইভাদের বাসায় সবাই গেলো।
এক সপ্তাহ খুব ভালো করে কেটেছে। একটা কল আসে তিহানের ফোনে। কল রিসিভ করায় তিহানের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে