ভালোবাসার পরিনতি পর্ব-১২

0
909

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১২

আজ আমার দ্বিতীয় বিয়ে হলো। বাসর ঘরে দুটো বাচ্চা নিয়ে বসে আছি। কোনোদিন এভাবে থাকতে হবে ভাবি নি। নতুন করে আবার বিশ্বাস করতে শুরু করবো, নতুন সংসারে লোকজনকে মানিয়ে নিয়ে কাজ করা। সবাই আমার চেনা মানুষ হলেও আমি তাদেরর বাড়ির বৌ। আমার অনেক দায়িত্ব আছে, সব কিছু সামলে জব করা কঠিন হবে তাও আমাকে পারতে হবে। পরনির্ভরশীল হয়ে জীবনে একবার ঠকেছি তাই এবার পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাই না। আমার সন্তানদের বুঝাতে হবে জীবনে সব কঠিন সময় তাদের মা হেরে যায় নি সাফল্য হয়ে দেখিয়েছে।
-এই যে ম্যাডাম
-ওহ্ হ্যাঁ, তুমি এসেছে আমি খেয়াল করি নি
-ভাবনার জগতে বাড়ি বানিয়ে রাখলে আমার বাড়িতে কে আছে না আছে তা দেখবে কি ভাবে????
-তেড়া বেঁকা কথা সব সময় থাকবেই।
-হুম তা একটু আছে
আমি তিহানকে সালাম করলাম। তিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-আমি কখনো তোমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করবো না। তোমাকে সুখী রাখার জন্য যা করতে হবে সব করবো কিন্তু কোনোদিন আমাকে ছেড়ে চলে যেও না।

তিহানের স্পর্শ অস্তিত্ব লাগলো কেনো জানি তাকে মন থেকে মেনে নিতে পারলাম না তাই ওকে ছাড়িয়ে বললাম,
-শুধু আমার সন্তানদের বাবা ভালোবাসা দিলে খুশি হবো।
-আমার ভালোবাসার অভিযোগ করার সুযোগ করতে পারবে না কথা দিচ্ছি কিন্তু আমার একটা রিকুয়েষ্ট আছে রাখবে?
-চেষ্টা করবো রাখতে
-ফুলি, পুচকে আমার পরিচয় বড় হবে। কোনো খারাপ মানুষ ওদের বাবা ছিলো সে পরিচয়ে ওরা থাকবে না।

তিহানের কথা শুনে কেঁদে দিলাম। সে না চাইলে রোহানের সন্তান রোহানের পরিচয় থাকতো সারাজীবন ওরা খারাপ মানুষের পরিচয় নিয়ে থাকতো। তিহান সত্যি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

-শুভদিনে কাঁদতে নেই। আমি যদি কিছু ভুল বলে থাকি তাহলে মাফ করো। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে কিছু বলি নি।
-না তুমি যে ওদের বাবার পরিচয় দিবে তাতে আমি খুব খুশি হয়েছে
-তুমি আমার স্ত্রী তাই ওরাও তো আমার সন্তান।
-হুম
-পুচকেটা ঠিক করে শুইয়ে দিবে তো, দেখো কেমন কাঁধ হয়ে ঘুমিয়ে আছে। বলে তিহান ইশানকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো। রাফিসা অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
-ম্যাডাম আবার কোথায় হারিয়ে গেলেন?
-কোথাও না
-এখন ঘুমিয়ে পরো। খাট বড় আছে আমি কি এখানে ঘুমাতে পারি?
-অবশ্যই পারো।
-আমি জানি তুমি আমাকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মানতে পারো নি তাই তুমি যতোদিন না চাইবে আমি জোড় করে স্বামীর অধিকার খাটাবো না।
-হুম ঘুমাও

তিহান আর আমার মাঝখানে রাফিসা, ইশান ঘুমিয়ে আছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।

এদিকে তিহানের চোখে ঘুম নেই। ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েও সে অনেক দূরে। কারো মনে ভালোবাসা তৈরি করতে অনেক সময় লাগে কিন্তু যতো সময় লাগার লাগুক আমি হাল ছেড়ে দিবো না। ইভাকে জীবন সঙ্গী করতে পেরেছি এটাই আমার জন্য অনেক কিছু।
রাফিসা ঘুম থেকে উঠে ইভাকে বললো,
-আম্মু আমি ওয়াস রুমে যাবো, আমাকে নিয়ে যাও।
আমি বললাম,
-আম্মুকে ডাকতে হবে না আমি আছি তো চলো তোমাকে নিয়ে যাই।
-আচ্ছা
রাফিসাকে ওয়াস রুমে নিয়ে গেলাম এর মধ্যে ইশান ঘুম থেকে জেগে উঠছে, ওকে কোলে নিয়ে হাঁটতে আবার ঘুমিয়ে গেলো। ইশান, রাফিসাকে মনে হয় ওরা আমার সন্তান। ওদের সাথে রক্তের সম্পর্ক আছে। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারি নি।

সকালে ইভা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে ফুপির রুমে গেলো কিন্তু সে রুমে নেই তাই রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো তরকারি কাটতে আছে।
-এখন থেকে তুমি কোনো কাজ করবে না সব দায়িত্ব আমার, রান্না ঘর থেকে যাও।
-আরে আমি তোকে একটু সাহায্য করে দেই, এখন একা এতো কাজ করা ঠিক না।
-ফুপি তুমি শুধু আমাকে বলে দেও কোথায় কি কি আছে তাহলে হবে।
-তুই আমাকে ফুপি ডাকবি না, আম্মা ডাকবি।
-আসতে আসতে অবভ্যাস করবো
-এখনই বল
-আম্মা জান
-হুম এখন হয়েছে।
ফুপি আর আমি দুজনে মিলে সকালের নাস্তা রেডি করলাম। তিহান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করার জন্য আসে তখন কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দেখে পাশের বাসার কয়েকজন আন্টিরা এসেছে,
-আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন?
একজন উত্তর দিলো,
-ওয়ালাইকুম সালাম, আমরা ভালো আছে।
অন্য জন বললো
-আমরা নতুন বৌকে দেখতে এসেছি
-হ্যাঁ ভিতরে আসুন (তিহান)
-কই গো তিহানের মা, নতুন বৌকে নিয়ে আসো(আন্টি)
ফুপি আমাকে নিয়ে তাদের সামনে গিয়ে বললো,
-এই যে আমার ছেলের বৌ
-বৌ তো সুন্দরী আছে তাও স্বামীকে ধরে রাখতে পারলো না (আন্টি)
-তোমার এমন সুন্দর ছেলের সাথে শেষ পর্যন্ত ডিভোর্সি মেয়েকে বৌ করে আনলে, আমাকে বললে এর থেকে বেশি সুন্দরী মেয়ে খুঁজে দিতাম(অন্য একজন আন্টি)
-হ্যাঁ তাই তো আবার শুনেছি বাচ্চাও আছে (আন্টি)
-দেখো তোমার আমার প্রতিবেশি তাই বলে আমার ছেলের বৌ কে হবে এইসব নিয়ে তোমাদের সাথে আলোচনা করতে চাই না। (ফুপি)

তাদের কথা শুনে চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে। উনারা তো সত্যি বলেছে,আমি সুন্দরী হয়েও আমার স্বামীকে ধরে রাখতে পারি নি। তিহান তো আমাকে ডিজার্ভ করে না আমার থেকে ভালো মেয়ে ওর যোগ্য। তিহান আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
-আপনারা বৌ দেখতে এসেছেন নাকি সার্টিফিকেট দিতে এসেছেন? ও কি আপনাদের কাছে কোনো পরীক্ষা দিয়েছে নাকি যে ওর সার্টিফিকেট আপনারা দিবেন? শুনেন আন্টিরা, আপনি একজন মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের কষ্ট বুঝেন না তাহলে আপনি কেমন মা? আপনার মেয়ের এরকম অবস্থা হলে কি তাকেও আপনি এসব বলবেন? আর ও কি আপনাদের বাসায় থাকবে নাকি আপনাদের টাকায় খাবে যে এতো মাথা ব্যাথা ওকে নিয়ে ? আপনাদের বাসায় কি হয় না হয় তা নিয়ে আমাদের বাসার কেউ কি কিছু বলতে যায় তাহলে আপনারা কেনো বলতে আসেন? বৌ দেখতে আসছেন ভালো কথা, মিষ্টি মুখ করে চলে যাবেন আপনাদের জ্ঞানের কোনো দরকার নেই। আর নিজেদের সংসার সামলান বলা তো যায় না কার জীবনে কখন কি হয়?সব থেকে বড় কথা হচ্ছে মানুষটা যেমনই হোক না কেনো তার সাথে সুখী হওয়া।
-আমাদের এভাবে অপমান না করলেও পারতে, চলো সবাই। (আন্ট)
-দাঁড়ান আমার বৌকে এতো সুন্দর সার্টিফিকেট দিয়েছেন তার বিনিময়ে আপনাদের কিছু দিবো না তা কি হয়? মা মিষ্টি নিয়ে এসো। আর হ্যাঁ অপমান কাকে বলে সেটা নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে নিবেন। (তিহান)
ফুপি মিষ্টি নিয়ে এসে বললো,
-নেও সবাই মিষ্টি খাও
-এতে অপমানের পর আবার আসছো মিষ্টি নিয়ে। (আন্টি)
-চলো সবাই
উনারা সবাই চলে গেলো তারপর তিহান আমাকে বললো,
-আর কতো অপমান সহ্য করবে, একটু প্রতিবাদি হও
-মা রে তোকে কোনো কষ্ট পেতে দেখতে চাই না এবার থেকে তোকে কেউ কিছু বললে তার প্রতিবাদ করবি । আমরা তোর সাথে আছি (ফুপি)
ফুপিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-হুম করবো।
-একটুও কাঁদবি না, চল নাস্তা খেয়ে নেই (ফুপি)

আমি, ফুপি, তিহান একসাথে বসে নাস্তা খেয়ে নিলাম। একটু পরে আমার বাড়ির লোকজন আসলো।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে