ভালোবাসার পরিনতি পর্ব-০৮

0
927

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_৮

“তোকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি, তুই কি আমার ভালোবাসা বুঝিস না”
“তোর মুখে ভাইয়া ডাকটা একদম সহ্য হয় না”
“তোকে খুব বেশি ভালোবাসি ”
“তুই হাসলে মনে হয় আমি খুব সুখী ”
“আজকে অনেক সাহস নিয়ে তোকে প্রোপজ করতে গিয়েছিল কিন্তু শুনলাম তুই বিয়ে করতে রাজি হয়েছি ”
“চলে যাচ্ছি প্রিয় মানুষকে ছেড়ে ”
“এতো বছর পরে তোকে দেখতে পেয়ে যতোটা ভালো লেগেছে ঠিক ততো বেশি কষ্ট পেয়েছি তোকে কষ্ট পেতে দেখে ”
“খুব ইচ্ছে করছে তোকে বৌ করে পৃথিবীর সুখ এনে দেই কিন্তু আমি যে নিরুপায় ”

তিহানের ডায়েরিতে হাজার টা কথা লেখা আছে শুধু মাত্র ইভাকে নিয়ে । তিহান সব সময় ডায়েরিটা সাথে নিয়ে ঘুরে আর ঘুম থেকে উঠে ডায়েরির ভেতর ইভার একটা পিক আছে সেটা দেখে। আজকে ঘুম থেকে উঠে ডায়েরিটা দেখতে না পেয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলো। ইভার রুমের দরজায় নক করলো,
-এই ইভা দরজা খুল, তাড়াতাড়ি দরজা খুল তো।
ইভা দরজা খুলে বললো,
-কি হয়েছে কি?
-সামনে থেকে সর
-কেনো?
-আমার দরকারী জিনিস খুঁজছি
-সেটা কি এটা? (ডায়েরি টা দেখিয়ে বলছে)
খপ করে ডায়েরিটা তিহান হাতে নিয়ে বললো,
-তুই আমার ডায়েরিতে কেনো হাত দিয়েছিস? অন্যের পারসোনাল কোনো কিছু দেখতে নেই তা জানিস না?
-ভাইয়া তুমি কেনো এমন করছো? তুমি কেনো বুঝো না তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
-আমার জীবন নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না, আগে কোনো দিন ভাবিস নি এখন ভেবে করবি কি? যত্তসব
তিহান রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। ইভা খাটের উপর ধপাস করে বসে পরে।
এসব কি হচ্ছে? এতো বছর পর কেনো তিহানের ভালোবাসার কথা জানলাম? শুধু মাত্র আমার জন্য তিহান ভাইয়া সবাই ছেড়ে দূরে থাকে? আবার এখনও আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে, আমি তার চোখের সামনে থাকলে বেশি কষ্ট পাবে। না আমি দ্বিতীয় বারের মতো কারো ভালোবাসায় জড়াবো না। আমি চলে গেলো সবাই ভালো থাকবে?
তিহানের মা ইভার মাথায় হাত রাখতে ইভা ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে বলে,
“কিছু কি বলবে? ”
“তোকে কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শোন, যে স্বামী তোকে প্রেগনেন্ট অবস্থায় ডিভোর্স দিয়েছে তাকে কেনো আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবি? প্রেগনেন্ট অবস্থায় ডিভোর্স দেওয়া যাবে না, সন্তান পৃথিবীতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ডিভোর্স দিতে পারবে কিন্তু সে তোকে এতোটুকুও সময় দেয় নি, সন্তানকে অশিকার করেছে। তোর এখনও অনেক দূর পথ চলা বাকি। সিঙ্গেল মাদার হয়ে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন। সমাজ তোকে ভালো ভাবে থাকতে দিবে না প্রতিদিন তোকে লড়াই করতে তাতে তোর সন্তানদের উপর খারাপ প্রভাব পরবে তাই আমি তোকে আমার ছেলের বৌ করতে চাই ”
“না ফুপি এটা হয় না ”
“কেনো হয় না?তোর কি মনে হয় তিহানক তোকে ভালোবাসবে না”?
” তিহান ভাইয়া আমাকে এখন ভালোবাসলে সেটা হবে আমাকে দয়া করে ভালোবাসা আর আমার সন্তানদের কখনও বাবার ভালোবাসা দিতে পারবে না। সমাজও অনেক কথা বলবে। ”
“না রে মা, তিহান তোকে সত্যি খুব ভালোবাসে, তোর সন্তানদের ও কখনও বাবার অভাব বুঝতে দিবে না। তুই রাজি হয়ে যা মা ”
“না না না এটা হয় না”
ইভার মা এসে বললো,
“আমার তো তোর ভালো চাই, তুই সুখী হবি”
“না মা এসব হয় না, আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি”
“তোর মাকে এভাবে বলিস না কষ্ট পাবে। তাদের কোনো দোষ নেই, আমি নিজে চেয়েছি তোকে বৌ করতে ” (ফুপি)
“তোমাদের কারো আমার কথা ভাবতে হবে না। এখন আমাকে একা থাকতে দেও”
ফুপি আর মা চলে গেলো। রাফিসার খেলার সাথী পেয়ে আমাকে জ্বালায় না, আগের মতো আবদার করে না আম্মু এটা এনে দেও, এটা করো। এখন সে বুঝে গেছে তার মা কিছু করতে পারবে না কিন্তু আমার সামনের দিনগুলো সন্তানদের নিয়ে থাকতে হলে কিছু করতে হবে।এমন অবস্থায় কিছু করা যাবে না বলে আমাকে তিহান ভাইয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে আপদ বিদেয় করতে চাইছে। তারা কেনো বুঝে না আমি কারো মায়ায় জড়িয়ে থাকতে চাই না।ভাবতে ভাবতে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে তাই শুয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর বড় ভাইয়া এসে বললো,
-বিকেলে রেডি হয়ে থাকিস তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।
-আচ্ছা।
সকালের ও-ই ঘটনার পর থেকে তিহান ভাইয়ার সাথে দেখা হয় নি।
বিকেলে রেডি হয়ে ডক্টরের কাছে যাবো তখন তিহান ভাইয়ার সাথে দেখা। আমার সাথে কোনো কথা না বলে চলে যেতে লাগলো তখন বড় ভাইয়া বললো,
-তিহান তুই কোথাও কি যাচ্ছিস?
-হ্যাঁ ভাইয়া, সামনে রাস্তার কাছে একটু ঘুরতে
-তাহলে তুই ইভাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যা
-আচ্ছা
অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিহান ভাইয়ার সাথে গেলাম। যাওয়ার পথে কোনো কথা বলি নি
ডক্টর দেখিয়ে আসার পথে ফুসকা দেখে খেতে ইচ্ছে করলো কিন্তু সাহস করে কিছু বললাম না। তিহান রিকশা থামাতে বলে, গিয়ে অনেক ফুসকা কিনে আনলো। বাসায় এসে সবাই একসাথে ফুসকা খেতে লাগলাম তখন আবার সেই এক প্রশঙ্গ শুরু হলো তিহানের সাথে বিয়ে নিয়ে।
রুমে এসে নিজের আর রাফিসার টুকিটাকি জিনিস গুছিয়ে রাখলাম।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমাতে গেলো। আমার চোখে ঘুম নেই সবাই ঘুমাবে সেই অপেক্ষা করতে আছি। এই বাড়িতে থাকলে কেউ আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না তাই আজকে রাফিসাকে নিয়ে চলে যাবো ।

[ গল্পে ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবে এবং গঠন মূলক কমেন্ট করবেন]

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে