ভালোবাসার পরিনতি পর্ব-১+২

0
1895

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পর্ব_১
১+২

“রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছেলেদের সাথে নষ্টামি করতে লজ্জা লাগে না,তোর এতোটা অধপতন হয়েছে। আজকে তুই বাড়ি চল তারপর দেখবি তোর হাল কি করি ”
“স্যার আপনি ম্যাডামকে ভুল বুঝছেন, উনি তো ফুল কিনতে এসেছে ”
“কতো টাকায় তোর ম্যাডামকে কিনেছিস যে দরদ উথলায় পড়ে ”
“না স্যার এমন কিছু না, সত্যি উনি ফুল কিনতে এসেছে ”

আমার হাত টেনে নিয়ে রিকশা উঠালো। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
-তুমি আমাকে যা বলার বাসায় এসে বলতে বা কি হয়েছে যেটা জেনে নিয়ে,,,,,,,
-একদম চুপ তোর মতো মেয়েকে আমি খুব ভালো করে চিনি।
আমি সাহস করে আর কিছু বলতে পারলাম না। বাসায় এসে রোহন ওর প্যান্টের বেল্ট খুলে আমাকে খুব মারলো। রুমের একটা কোনায় শুয়ে রয়েছি, ব্যাথার যন্ত্রণায় নড়তে পারিনি।
আমার চার বছরের পিচ্চি মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,” আম্মু আমি দুষ্টুমি করি বলে আব্বু তোমাকে মেরেছে তাই না? আমি আর দুষ্টুমি করবো না। ”
মেয়েটাকে শক্ত করে বুক জড়িয়ে বললাম,
“না মা তুমি তো আমার লক্ষী সোনা, চলো এখন খেয়ে নিবে”
“না আম্মু আামার ক্ষুধা নেই, আমি ঘুমাই”
“না একটু খেতে হবে”

মেয়েটাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। রোহানকে খেতে ডাকার জন্য ওর কাছে গিয়ে বললাম,
-খেতে এসো।
-তুই যা আমি আসছি
-আচ্ছা

রোহানকে খেতে দিয়ে আমি টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছি।
-তুই কি এবোয়শন করবি না?
-না
-তোকে ভালো মতো বলেছি এবোয়শন কর নয়তো বাঁচতে পারবি না।
-মরে যাবো তাও আমার সন্তানকে মেরে ফেলতে দিবো না।
-অন্যের সন্তান আমার নামে চালিয়ে দিবি সেটা আমি মেনে নিবো না
-নিজের সন্তানকে অন্যের সন্তান বলতে লজ্জা লাগে না? কেমন বাবা তুমি?
-মুখে মুখে এতো কথা বলে খাওয়া ছেড়ে রোহান আমার গালে ঠাসসসস্ ঠাসসস্ কয়েকটা থাপ্পড় মেরে চলে গেলো।
রাতে আমার খাওয়া হলো না। ব্যাথার যন্ত্রণায় জ্বর খুব জ্বর হলো।
সকালে এক গ্লাস পানি আমার মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো।
-নবাবজাদী তুই এখনও ঘুমাস? রাতে কি অন্য কারো কাছে গিয়েছিলি
আমার মেয়ে “রাফিসা” বললো,
-আব্বু দেখো আম্মু গায়ে অনেক জ্বর, ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
-ওসব জ্বর টর কিছু না, যত্তসব ঢং।
আমার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বললো,
-যা গিয়ে আমার জন্য নাস্তা রেডি কর।

আমি কিছু বলতে পারলাম না শুধু চোখ থেকে পানি পরতে থাকলো। কোনো মতো রুটি আর ডিম ভেজে দিলাম। রোহান খেয়ে অফিসে যাওয়ার আগে বললো,
-সন্ধ্যা রেডি থাকিস তোকে হসপিটালে নিয়ে যাবো।
-এবোয়শন করবো না
দরজায় লাথি মেরে রোহান চলে গেলো।

মনে পরে গেলো পাঁচ বছর আগে আমি প্রথম মা হওয়ার খরব রোহানকে দেই তখন ও খুশিতে সারা বাড়ি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরছে। আমার মা-বাবা, শশুড়-শাশুড়ি তাদেরকে আমার কাছে এনে রেখেছে। ওর একটাই কথা ছিলো যে “পুরো একবছর আমাদের সাথে থাকতে হবে “। আমার বাবা মা রোহানকে খুব ভালোবাসতো তাই ওর কথা ফেলতে পারে নি৷ আর ওর বাবা মা গ্রামে থাকতে পছন্দ করে তাও ছেলের খুশির জন্য থেকেছে।
রোহান অফিসে গেলে একটু পর পর কল করে বলতো, আমার অসুস্থ লাগছে কি না?খাবার খেয়েছি কি না? বাবু নড়াচড়া করছে কি না?আরও কতো কিছু। আবার ভিডিও কল দিতো। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় খাবার নিয়ে আসতো৷
প্রতিদিন আমার পছন্দের খাবার রান্না করতো আমার মা আর শাশুড়ী। আমাকে রান্না ঘরে যেতে দিতো না। আমি ওয়াস রুমে গেলে রোহান বাইরে দাড়িয়ে থাকতো। এমন কি সকালে আমাকে ঘুৃম থেকে তুলে ব্রাশ করিয়ে দিতো। আমি কিছু চাওয়ার আগে আমার সামনে হাজির করতো। সবাই আমাকে বলতো আমি অনেক ভাগ্য করে রোহানের মতো স্বামী পেয়েছি ।
এখন রোহান কেনো এমন করছে? কেনো আমাদের সন্তানকে পৃথিবীতে আসতে দিতে চায় না? যে রোহান আগে কখনও আমারকে ঝাড়ি মেরে কথা বলে নি আর সে এখন আমার গায়ে হাত তুলে।
পুরোনো কথা মনে পরায় বেশ কিছুক্ষণ কেঁদে মন হাল্কা করলাম।
রাফিসা আমাকে এসে বলে,
-আম্মু তুমি কেঁদো না। আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো তখন তোমার জ্বর হলে আমি ওষুধ দিবো
-হ্যাঁ মা তুই বড় হলে আমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
-আচ্ছা আম্মু জ্বর হলে কি ওষুধ জেনে খায়?
-কেনো? তুই জেনে কি করবি?
-আহ্ এতো কথা বলো না তো, যা জিজ্ঞেস করছি তা বলো।
-নাপা ওষুধ
রাফিসা দৌড়ে গিয়ে ফাস্টবক্স এনে বললো,
-N A P A. নাপা ওষুধ তাই না
-হুম
আবার দৌড়ে গিয়ে বিস্কুট আর কলা এনে বললো,
-আম্মু এগুলো খেয়ে নেও তারপর ওষুধ খেতে হবে
মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-তুই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস
-হুম। আমার জ্বর হলে তুমি তো আমাকে কিছু খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়াও।
-হুম।

রাফিসাকে রুটি কলা খাইয়ে দিলাম তারপর নিজে একটু খেয়ে ওষুধ খেয়ে দুপুরের জন্য রান্না করলাম। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে তাই গোসল করেছি।
রাফিসা আগের মতো আর দুষ্টুমি করে না। অনেক শান্ত হয়ে গেছে। সারাক্ষণ বই নিয়ে থাকতে পছন্দ করে।

সন্ধ্যায় রোহান বাসায় এসে আমাকে বললো,
-এই কাগজ টা দেখ।

#ভালোবাসার_পরিনতি
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_২

“তুই আমাকে ডিভোর্স দিবি নয়তো এবোয়শন করবি, এখন তুই ডিসিশন নে কি করবি”
“তুমি কেনো এমন করো? কি সমস্যা আমাকে খুলে বলো?
” আমার সমস্যা তুই। তোকে আমার ভালো লাগে না ”
“সত্যি কি আমাকে ভালো লাগে না আমাকে ভালোবাসো না? ”
“তোকে আর কতো বার বলবো, যে তোকে আমি ভালোবাসি না ”
“আচ্ছা, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো তাও এবোয়শন করবো না ”
“রাফিসার দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না যাওয়ার সময় ওকে ও নিয়ে যাবি। তোর দুটা বাচ্চার দায়িত্ব কে নিবে?”
“আমার বাচ্চাদের দায়িত্ব আমি নিতে পারবো ”
“ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে এখনই আমার বাসা থেকে বের হ্ ”
“দুটো দিন তোমার কাছে সময় চাই তারপর আমি চলে যাবো ”
“দুটো দিন পরে আবার কোনো যাবে না করবি না “?
” কথা দিচ্ছি কোনো ঝামেলা করবো না, তুমি শুধু মেয়েটার সামনে কোনো খারাপ আচরণ করো না। ”
“তোর মেয়েকে তুই সামলে রাখবি আমার কাছে জেনো না আসে ”
“ও তো ছোটো বাচ্চা, তোমার সন্তান তাহলে ওর সাথে কেনো খারাপ ব্যবহার করো? ”
“তোর এতো কথা শুনতে আমার ভালো লাগে না। যা গিয়ে আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আয়”
“হুম”

আমি চা বানিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিলাম তখন কলিং বেল বাজে। আমি দরজা খোলার আগে রোহান দরজা খুললো। ডেলিভারি ম্যান একটা পার্সেল নিয়ে এসে বললো,
-ইভা ইসলামের নামে একটা পার্সেল এসেছে, উনাকে ডেকে দিবেন।
-জ্বি আমি ওর হ্যাসবেন্ড আমাকে পার্সেলটা দিতে পারেন
-আচ্ছা

পার্সেলটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আমাকে বললো,
“আজকাল তোর অনেক লোক হয়েছে বাসায় পার্সেল পর্যন্ত পাঠিয়েছে ”
“ওটা আমি অনলাইন ওর্ডার করেছি”
“আমাকে একদম মিথ্যা বলবি না তোর যে আরও প্রেমিক পুরুষ আছে তা জানি ”
“আমার প্রেমিক পুরুষ থাকলে তোমার কি? তুমি তো ডিভোর্স পেপার সিগনেচার করে দিয়েছো শুধু আমার সিগনেচার করা বাকি তারপর তো আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই ”
“তুই আমার বাড়িতে থেকে আমার সাথে মুখে মুখে তর্ক করবি এটা হতে পারে না খুব বার বেড়েছিস ”
“দুটো দিন আমাকে সহ্য করে নেও তারপর তো আমি চলে যাবো ”

রাফিসা দরজার কোনায় দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনে বললো,
“আম্মু আমার দু দিন পর কোথায় যাবো ”
“সুখের দেশে যাবো ”
“তুই আর তোর মেয়ে আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা ”

রাফিসা নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলাম। চার মাস ধরে আমরা আলাদা ঘুমাই। মাঝে মাঝে রোহান আমার রুমে এসে ওর শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে চলে যেতো। এখন পর্যন্ত জানতে পারি নি কেনো রোহান পাল্টে গেলো? আমাকে সন্দেহ করে মারধর করা শুরু করলো তখন থেকে প্রতিবাদ করা শুরু করি কিন্তু প্রতিবাদ করতে গেলে বেশি মারধর করে তাই নিরবে সহ্য করি। বেশি মারধর করা শুরু করে দ্বিতীয় সন্তানের কথা শুনে। আগে ও বলতো আল্লাহ চাইলে আমি চার সন্তানের বাবা হতে চাই আর এখন কোনো সন্তানই চায় না।
মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে শুয়ে আছে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
-তুমি কি তোমার বাবার সাথে থাকতে চাও নাকি আমার সাথে থাকতে চাও?
-দুজনের সাথে থাকতে চাই
-সেটা তো হবে না মা যে কেনো একজনের সাথে থাকতে হবে।
-তাহলে আমি তোমার সাথে থাকবো। আব্বু আমাকে একটুও ভালোবাসে না শুধু বকে
-বাবা মা সব সময় সন্তানদের ভালোবাসে। বাবা সারাদিন অফিস থেকে কষ্ট করে তো তাই একটু রাগ দেখায়
-পাশের বাসার ইরার বাবাও তো অফিসে যায় তাও ওকে কতো ভালোবাসে চকলেট কিনে দেয়
-তোমার বাবাও দিবে।

বাইরে চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনে গিয়ে দেখি রোহান একটা গ্লাস ভেঙ্গেছে। আর হাতে একটা কাগজ নিয়ে আরেক হাত দিয়ে আমার চুলের মুঠো ধরে বললো,
“আমাকে ডিভোর্স দিতে না দিতে অন্য কারো জন্য লেখালিখি শুরু করেছিস এতো প্রেম ”
“আমার চুলে ব্যাথা লাগছে ছাড়ো ”
“না বল তোর প্রেমিক কে?”
“সত্যি বলছি কেউ নেই ”
“তাহলে এসব কি?”
“আমি তোমার জন্য তোমাকে নিয়ে লিখেছি ”

রাফিসা দৌড়ে এসে রোহানের হাতে কামড় দিলো তাতে রোহানের রাগ আরও বেড়ে গেলো। রাফিসাকে দুটো থাপ্পড় দিলো।
“তুই যেমন ডাইনি রাক্ষসী তোর মেয়েও তেমন। এখন তো মনে হয় এটা অন্যের পাপ আমার ঘাড়ে চাপিয়েছিস ”
“ছিঃ নিজের সন্তানকে নিয়ে এই নোংরা কথাটা বলতে মুখে বাজলো না ”
“না না না তোরা যতোদিন আমার বাসা থেকে না যাবি ততোদিনে আমার শান্তি হবে না আর তোরাও শান্তি পাবি না ”
“দয়া করে দুটো দিন আমাকে ভিক্ষা দেও দুটো দিন আমাকে শান্তি দেও ”

ওর সামনে যতো থাকবো ততো আমাকে কষ্ট দিবে তাই রুমে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালাম কিন্তু আমাকে আটকে দিয়ে বললো,
-টেবিলে খাবার দে
-হুম দিচ্ছি

রোহানের খাওয়া শেষে কোনো মতে রাফিসাকে খাইয়ে দিলাম। আমার খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তাই শুয়ে পরলাম । অনেক ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতে ঘুম এলো না তাই রোহানের রুমের কাছে গিয়ে দাড়াতে শুনে পেলাম কার সাথে যেনো হেসে হেসে কথা বলছে।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে