ভালোবাসায় তুমি আমি পর্ব-০৭

0
995

#ভালোবাসায়_তুমি_আমি
#পর্ব_০৭
#নির্মল_আহমেদ
তিশার মনে পড়লো কাল রাতে কি হয়েছিল। কিন্তু মনে পড়ল না সোহাব তার সাথে কি কি করেছিল। কারণ তখন সে মাদকাসক্ত ছিল। কিন্তু তার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এটাই যে তনয় আর ও একসঙ্গে এখানে শুয়ে আছে। সে হাত দিয়ে তার ঠোঁট ছুঁইয়ে দেখলো। লিপস্টিক সব মুছে গেছে। তনয়ের পরনেও কোন জামা নেই। তিশার আর বুঝতে বাকি রইল না কাল রাতে তনয় তার সাথে কি করেছিল। কিন্তু এটা তাকে অবাক করলো যে সে তো অন্যের কাছে কি ভাবে এখানে আসলো। চারিদিকে একবার তাকিয়ে দেখল ঘরটাও কেমন পুরনো পুরনো টাইপের। তিশা বিছানা ছেড়ে উঠে এলো তখন তনয়ের জেগে উঠলো। সে আলতোভাবে চোখ মেলে তিশা কে দেখতে পেল। মনে পড়ল কালকে তিশার সাথে সে কি করেছে। সে বিছানায় বসে পড়ে একটু লজ্জিত ভঙ্গিমায় বলল,
‘আই এম সরি। কালকের ঘটনাটার জন্য।’
তিশার নিজেই কৌতুহলী কালকের ঘটনাটা। সে বুঝতে পারছে কি ঘটেছিল তবুও না বুঝার ভান করে বলল,
‘কালকে রাতের ঘটনাটা মানে? কি হয়েছিল?’
‘ও আল্লাহ! এটাও বোঝোনা দুটো ছেলে মেয়ে একসাথে এক ঘরে থাকলে কি হয়!’
‘কি করে বুঝবো এর আগেও তো আপনি আর আমি এক ঘরে রাত কাটিয়েছিলাম। তখন তো কিছু হয়নি।’
‘তখনকার ব্যাপারটা আলাদা ছিল। তখন আমরা অপরিচিত ছিলাম কিন্তু এখন!’
‘কিন্তু এখন কি!”
‘কিন্তু এখন তো আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ। আর হাজব্যান্ড ওয়াইফ একসাথে থাকলে কি হতে পারে তা নিশ্চয়ই তোমার ধারণার বাইরে নয়।’
‘কিন্তু আপনি বা আমি এই হাসবেন্ড ওয়াইফ সম্পর্কটা মানি না। তাহলে?’
‘ও তাই বুঝি! কিন্তু কালকে রাতে যখন আমি একটি মেয়ের সাথে নাচ করছিলাম। তখন কেন তুমি আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলেছিলে যে আমি কারো সাথে নাচ্লে তোমার খারাপ লাগবে। আর তুমিই বলেছিলে যে আমি যেন তোমার সাথে ডান্স করি।’
‘তখন আমি মদ খেয়েছিলাম। তাই তখন কন্ট্রোলে ছিলাম না কি বলেছি না বলেছি, কিছু জানিনা।’
‘শুনেছি মদ খেলে লোকে নাকি সত্যি সত্যি কথা বলে! আমি যদি সেই দিকটা ধরি তাহলে কি বলবে? আচ্ছা সব বাদ দাও। তোমার বাবা আর আমার বাবা দুজনে ঠিক করেছেন তোমার আপুর সাথে আমার বিয়ে হবে 12 তারিখ। এটা শুনে তুমি কি খুশি?’
তিশা জবাব দিল না। নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বসে ছিল। তনয় কালকে রাতে তিশার সাথে সহবাস করার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তিশা এতদিন সামাজিক ও ধার্মিক মতে স্ত্রী ছিল। কিন্তু এখন শারীরিক হিসেবে ই স্ত্রী। তাই তিশা ছাড়া আর তার মনে কাউকে ঠাঁই দাও সম্ভব নয়।
তিশা এবার একটু ভীতি নিয়ে বলল,
‘তারমানে কালকে রাতে আমাদের মধ্যে ওসব হয়ে গেছে।’
‘ঘুম হয়ে গেছে। কালকে রাতে তুমি মদ খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে গিয়েছিলে। তোমার শরীর পুরো ঠান্ডা হয়ে গেছিল তাই গরম করবার জন্য….’
বাকিটা আর বলতে পারলোনা তনয়। কারণ তখনই তিশা তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তখন তিশা ও তনয় দুজনে লজ্জায় মাথার বিমুখ করে নিয়েছিল।
ভোর ধীরে ধীরে সকালে রূপান্তরিত হচ্ছে। তাদের তাড়াতাড়ি এখান থেকে প্রস্থান করা উচিত। নয়তো লোকজন চলে আসলে অন্য ব্যাপার হতে পারে। যদিও তারা স্বামী-স্ত্রী।
তনয় এবার সিরিয়াস মুডে ফিরে এসে তিশাকে বোঝানোর ভংগিতে বলল,
‘দেখো তিশা! জন্ম মৃত্যু বিয়ে সবই আল্লাহ ঠিক করেন। তাই আল্লাহ হয়তো ঠিক করেছেন যে আমরা দুজন স্বামী স্ত্রী হয়েই থাকি। বিয়েটা যেভাবেই হয়ে থাকুক। বিয়ে মানুষের জীবনে একবারই হয়। এখন আমরা যদি আল্লাহ দেখানো পথে আমরা না হাটি তাহলে হয়তো আরো বিপদ আসতে। দেখো তার কি লীলা, কালকে রাতে আমাদের দুজনকে কিভাবে মিলন করে দিল। এখন যদি আমি তোমার আপুকে বিয়ে করি, তাহলে তুমিও সুখী হবে না আর আমিও সুখী হবো না। তাই আমি ঠিক করেছি তোমার আপুকে না তোমাকে আমি বিয়ে করবো। আমার বাবা আমার কথা ফেলতে পারবেন। আমি যদি বলি যে তোমার আপু তুলিকে নয় তিশা কে বিয়ে করতে চাই তাহলে আমার বাবা অস্বীকার করবেন না। আমি জানি যে তুমি এখন বিয়ে করতে চাও না। তুমি এখন অনেক পড়াশোনা করতে চাও। আমিও চাই তুমি অনেক দূর পড়াশোনা করো। তাই আমাকে বিয়ে করলে তোমার পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হবে না। এটা আমি কথা দিচ্ছি। এখন বাকিটা তোমার ইচ্ছা। কি করবে বলো?’

তিশা এতক্ষণ অদ্ভুত চোখের দিকে তাকিয়ে তার কথাগুলো শুনছিলি। এটা কথা সত্যি যে যখন সে শুনেছিল জনের সাথে তার আপুর বিয়ে হতে চলেছে। তখন সে মনে মনে অনেকটাই ব্যথীত হয়েছিল।এখন যখন তনয় তাকে স্বেচ্ছায় তার জীবনে আসার প্রস্তাব দিচ্ছে।তখন সে কি করবে বুঝতে পারছে না। তিশা বিছানা থেকে নামতে নামতে জানালো,
‘দেখুন আপু আপনাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছে। এখন যদি আমরা বলি যে আমরা দুজনে অলরেডি স্বামী-স্ত্রী, তাহলে আপু অনেকটাই ভেঙে পড়বে। আপুর জীবনে এটা প্রথম ভালোবাসা আর সেটা এভাবে ভেঙ্গে যাবে। বোন হিসেবে আমি কিভাবে দেখব বলুন?’
তিশার বিছানা থেকে নেমে যাওয়ায় বিছানা থেকে নেমে তিশার হাতদুটি তার হাতের সাথে মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে আশ্বস্ত কন্ঠে বলল,’সেটা তুমি চিন্তা করো না। আমার কাছে এমন এক ছেলের সন্ধান আছে যে আমার চাইতেও তোমার আপুকে অনেক সুখে স্বাচ্ছন্দে রাখবে। এবার খুশি তো!’
তনময় তিশার হাতগুলি অমনভাবে ধরেছে দেখে তিশা অনেকটা লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে সরে গিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,’জানিনা। জান এখান থেকে!’
তনয় দুষ্টুমি মাখা মুখ নিয়ে তিশাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মুচকি হেসে বলল,’ও আমার লজ্জাবতিরে খুব বেশি লজ্জা পেয়েছ বুঝি।’তারপর তিশাকে তার দিকে ঘুরিয়ে বলল,’আমিও ঠিক এতটুকু লজ্জা পেয়েছিলাম যখন আমার ঠোঁট তোমার…’তিশা আবার লজ্জা পেয়ে পিছনে ঘুরে বললো,’এত বাজে কেন আপনি? এসব বলতে মুখে আটকাচ্ছে না।’
‘না আটকাচ্ছে না। নিজের বউয়ের সামনেই তো এসব বলছি অন্য কারো সামনে তো বলছে না।’
‘তবুও।’এসব বলতে বলতে হঠাৎ দিশার মনে পড়ল কালকে রাত থেকে সে এখানে তোমার সাথে আছে। বাসায় ফেরেনি‌। ‌ তাহলে ওদিকে বাসায় কি হচ্ছে? ভেবেই আঁতকে উঠল সে! তিশার এরূপ আঁতকে ওঠা মুখ দেখে তনয় কৌতুহলী নিয়ে,
‘কি হলো হঠাৎ মুখটা অমন বাংলার ৫ করলে কেন?’
তিশা উদ্বিগ্ন মাখা গলায় বলল,’কাল রাত থেকে আমি বাসার বাইরে আছি। ওদিকে বাবা-মা আপু নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে। হয়তো পুলিশের খবর দিয়েছেন। এবার বাসায় গিয়ে আমি সরকারকে বলবো!’
তিশার এরূপ কথা শুনে তনয় না একটা মুচকি হাসি দিলো। তনয়ের মুচকি হাসি দেখে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কি হলো আপনি হাসছেন কেন? ওহ আসবেনি তো বকা তো আমি খাব। আপনি খাবেন না।’
‘আমিষের জন্য হাসছি না ম্যাডাম। আমি হাসছি এই দেখে যে আপনি বেশি চিন্তা করে গেলে মুখটা ঠিক ঢ্যাঁড়সের মতো দেখায়।’
তিশা রাগী লোকের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এই সিরিয়াস টাইমে আপনি মজা করছেন আমার সাথে?’
‘আরে তিশা কোন চিন্তা করো না। ডু ফুর্তি! তুমি তো নিজের হাজবেন্ডের সাথে রাত কাটিয়েছো অন্যকারো সাথে তো নয়।’
‘সেটা তো আপনি আর আমি জানি কিন্তু বাবাকে কিভাবে বলব যে আপনি আমার হাজব্যান্ড।’
‘কেন? বলতে পারবেন না?’
তনয় একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে বললো,’আচ্ছা ঠিক আছে চলো আমিও যাব তোমার সাথে তোমার বাসায়।’
‘কেন? আপনি আমাদের বাসায় গিয়ে কি বলবেন।’
‘কি বলবো মানে? যা সত্যি তাই!’

এদিকে,,,
তিশার বাড়িতে খুবই উদ্বিগ্ন চলছে তিশার জন্য। কাল রাত থেকে তিশা বাসায় নেই। এটা কি কম চিন্তার বিষয়। কানাঘুষোয় কেউ শুনতে পেলে কি সর্বনাশ হবে তিশার। বাস আমার সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। আজকালকার যুগের লোকেরা মনে করে মেয়েরা বাসার বাইরে থাকলে নিশ্চয়ই পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছে। এটাও মনে করে না যে মেয়েটার কোন বিপদ হতে। যাইহোক তিশার বাবা-মা খুবই চিন্তায়, অনেক পার্টিশন নাম্বারে ফোন করা হয়েছে। কিন্তু সুইচ অফ। এদিকে পুষ্পা অনেকটা লজ্জিত ও চিন্তিত। কারণ সে তিশা কে ইনভাইট করে নিয়ে এসেছিল। আর তার দায়িত্ব ছিল তিশাকে নিরাপদে তার বাসায় ফেরানো। যাই হোক তারা এখন অপেক্ষা করছে কখন তিশা আসবে। কিন্তু আতিফ রহমান তিশার উপর খুব রেগে আছেন। বাসায় একবার ফিরুক তারপর সে তিশার একটা বন্দোবস্ত করবেন।

রিক্সায় পাশাপাশি বসে তিশার বাসায় ফিরছিল তিশা ও তনয়। তিশা যেহেতু অনেকটাই চিন্তিত। তাই সে চুপচাপ করে বসে আছে। কিন্তু তিশার এরকম চুপচাপ হয়ে বসে থাকা মেনে নিতে পারছে না তোমায়। তোমায় একটু রোমান্টিক ভঙ্গিতে বলল,
‘দেখো তিশা সময়ের কি খেলা! কালকে যখন আমরা একে অপরকে এসব নিয়ে ভাবতাম না। এখন আমরা কতটা ক্লোজ ভাবে বসে আছি। সত্যিই তিশা তোমার নিশ্চয়ই কোন যাদু আছে, যার জন্য দেখো তোমার সংস্পর্শে আসতে। আমি অনেকটা বদলে গেছি। আগে যখন আমি বিয়ে শাদী নিয়ে অতোটা মাথাও ঘামায় নি। এখন সেটাই যেন আমার জীবনের চরম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন শুধু একটা চিন্তায় আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কখনো কাল কাছে পাবো। যদিও কাল…’
তিশা রাগী লুকে তনয় ওর দিকে তাকাল। চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝানোর চেষ্টা করল,’কি হচ্ছে কি এটা পাবলিক প্লেস। চুপ করুন!’
তনয় তিশার চোখের ভাষা বুঝেছে। সে এখন নিজেও একটু লজ্জিত। একটা রিকশাচালকের সামনে এসব বলায়। তনয় গলাখাকারি দিয়ে প্রসঙ্গ টা পাল্টে রিকশা চালককে বলল,
‘আচ্ছা মামা আর কতদূর?’বলতে বলতেই তনয় তার পকেটে হাত দিয়ে ফোনটা বার করলো। তার বাবার নাম্বারে ডায়াল করলে সরাসরি। কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করলেন তনয়ের এর বাবা আসাদুল চৌধুরী। তিনিও তনয়কে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, হঠাৎই তনয়ের নাম্বারটা ভেসে আসায় তিনি আনন্দিত অনুভব করলেন। চটজলদি ফোন রিসিভ করে কথা তনয়কে কিছু বলতে না দিয়ে জানতে চাইলেন,
‘এই তোর বাড়ি কোথায় রে তুই? কালকে রাতে সেই যে বললি তোর কোন এক বন্ধুর বোনের বার্থডে উপলক্ষে যাচ্ছিস। আর ফেরার কোন নাম গন্ধ নেই। এদিকে আমি ফোন করে করে বেহাল দশা। কোথায় ছিলিস যে নেটওয়ার্ক কাভারেজ এরিয়া বাইরে বলছিল বারবার।’
‘ও সব পরে বলব বাবা। এখন তোমায় তাড়াতাড়ি তুলি দের বাসায় আসতে হবে।’
‘তুলি দের বাসা মানে আমার বন্ধু আতিফের কথা বলছিস।’
‘হুম হুম। তোমার বন্ধুর বাসা। আর সঙ্গে মাকেও নিয়ে এসো।’
‘কিন্তু কেন তনয়? কি হয়েছে?’
‘সে সব পরে বলব, বাবা তোমায়। এখন তারাতারি এখানে আসো আমিও যাচ্ছি ওখানে।’বলেই আসাদুল চৌধুরীকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তনয় ফোনটা কেটে দিলো। আসাদুল চৌধুরী ব্যাপারটার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে না পেরে কৌতুহলী হয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইল। তনয় যখন বলেছিস তাহলে নিশ্চয়ই কোন কাজ আছে। ভেবেই তিনি বেড়োনোর প্রস্তুতি নিতে থাকলেন।
এদিকে তৃষা কৌতুহলী হয়ে তনয়ের কাছে জানতে চাইলো,
‘কি হলো আপনি আপনার বাবাকে কেন ফোন করে আসতে বললেন?’
‘কেন বললাম? সব বুঝতে পারবেন ম্যাডাম। আর কিছুক্ষণ ধরুন।’ বলেই একটা মুচকি হাসি দিলো তনয়।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে