ভালবাসি শুধু তোমায় আমি পর্ব-০৫

0
1200

#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই স্পর্শক আদো আদো করে চোখ খুলে তাকায়। নিজের বুকের ওপর ভারি কিছু অনুভব করায় সম্পূর্ণ চোখ খুলে বুকের দিকে তাকিয়ে দেখে আরনিয়া ঘুটিশুটি মেরে তার বুকের ওপর শুয়ে আছে।
স্পর্শক মুচকি হেসে আরনিয়াকে জড়িয়ে ধরে বেডে আধ শোয়া হয়ে বসে। এক হাত দিয়ে আরনিয়ার কপালে পড়ে থাকা ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে একটা গভীর চুমু খায়। ঘুমের মাঝেই আরনিয়া কেঁপে উঠে। স্পর্শক আরনিয়া ঠোঁটে হাত বুলাতে থাকে। স্পর্শকের ফোন বেঁজে ওঠে। স্পর্শক তাড়াতাড়ি ফোনটা সাইলেন্ট করে। আরনিয়া ফোনের শব্দে একটু নড়েচড়ে আবার স্পর্শকের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পড়ে।

স্পর্শক ফোনের স্কিনে তাকায় যেখানে একটা আননোন নাম্বার ঝলঝল করছে। আননোন নাম্বার হলেও স্পর্শক এই নাম্বারটা খুব ভালো করে চিনে। স্পর্শক আরনিয়ার মাথাটা আলতো হাতে বুক থেকে নামিয়ে বালিশের ওপর রেখে ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বাঁজখাই গলায় এহসান খান বলে,,

আমার মেয়ে কোথায়?

আস্তে চিল্লান আমার কানের অবস্থা তো খারাপ করে দিচ্ছেন। আর আরু আপনার মেয়ে না আমার বউ।

আরনিয়ার সাথে তুমি কী করছো? আরনিয়া আমার ফোন তুলছে না কেনো?

শ্বশুর মশাই এটা কেমন প্রশ্ন? শ্বশুর হয়ে কেউ জামাইকে জিঙ্গেস করে তার মেয়ের সাথে কী করছে? আরনিয়া সারা রাত জেগে ছিল তো তাই এখন গভীর ঘুমে মগ্ন। এখন আবার এটা জিঙ্গেস কইরেন নাহ যে কেনো আরনিয়া সারা রাত জেগে ছিল। আমাদের মাঝে জামাই শ্বশুরের সম্পর্ক না থাকুক আপনি আমার গুরুজন তো।

বেয়াদপ ছেলে।

রাগে কটমট করতে করতে এহসান খান ফোন কেটে দেয় স্পর্শক বাঁকা হেসে বেলকনি থেকে ঘুমন্ত আরনিয়ার দিকে তাকায়।

তুমি যদি ঐ লোকটাকে বাবা বলে না ডাকতে তাহলে এতদিনে এহসান খানের কোনো চিহ্ন এই পৃথিবীতে থাকতো না।

এইদিকে

এহসান খান রাগে রাগে কটমট করতে থাকে। যে ছেলেকে স্পর্শক আর আরনিয়ার ওপর নজর রাখতে বলেছিল সেই ছেলেকে ফোন দেয়। কিন্তু ফোন রিং হচ্ছে কেউ ধরছে। এহসান খান রেগে ফোন দেয়ালে ছুড়ে মারে।

আমি তোদের ছাড়বো না।

__________________

স্পর্শক শাওয়ার নিতে চলে যায়। প্রায় ৩০ মিনিটের মতো শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে স্পর্শক। এখনো আরনিয়া বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। স্পর্শক এক পলক আরনিয়ার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিচেনে গিয়ে দুইটা ডিম পুচ করে। তারপর ট্রে করে এক প্লেইট ফ্রুটস, দুইটা ডিম পুচ, দুই গ্লাস জুস আর স্যান্ডউইস নিয়ে রুমে আসে। বেড সাইড টেবিলে খাবার ট্রে টা রেখে আরনিয়ার মাথার পাশে বসে। আরনিয়ার মাথায় আলতো হাতে হাত বুলিয়ে নিচু স্বরে ডাকে,

আরু,, আরু,,, আরু

আরনিয়া একটু নড়েচড়ে স্পর্শকের কোলে মাথা রেখে দুই হাতে কোমড় জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে দেয়। আরনিয়া কাছ থেকে আকস্মিক এমন ছোঁয়া পেয়ে স্পর্শক ফ্রিজড হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে আরনিয়াকে আবার ডাকে,,

আরু, , আরু, ,

হুহ।

দেখো ১১ টা বেঁজে গেছে এখন ঘুম থেকে উঠো।

উহু।

স্পর্শক আরনিয়াকে কোলে করে নিয়ে বাথটবে ছেড়ে দেয়। ঠান্ডা পানির স্পর্শ পেয়ে আরনিয়া লাফিয়ে ওঠে।

এটা কী করলে? (রেগে)

ঘুম থেকে তুললাম।

এভাবে কেউ ঘুম থেকে তুলে। একটু ভালোবেসে আদর করেও তো ঘুম থেকে তুলতে পারতে। ( কাঁদো কাঁদো গলায় )

আদর করে অনেকক্ষণ ডেকেছি কিন্তু তুমি শুনো নাই তাই এই টেকনিক।

আরনিয়া একটা ভেংচি কাটে।

একবারে শাওয়ার নিয়ে বের হবা।

হুহ।

স্পর্শক রুম থেকে আরনিয়ার ড্রেস দিয়ে যায়। আরনিয়া শাওয়ার নিয়ে বের হলে দুইজন একসাথে ব্রেকফাস্ট করে। ব্রেকফাস্ট শেষ করে আরনিয়া বেলকনিতে চলে যায়। আরনিয়ার পিছন পিছন স্পর্শকও বেলকনিতে আসে। বেলকনির সবকিছু আরনিয়া ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। বেলকনিতে চার রঙের চারটা গোলাপ ফুল গাছ লাগানো।একটা বেলি ফুল গাছ লাগানো। বেলকনির এক পাশে একটা দোলনা আছে। দোলনাটা প্লাস্টিকের লতা, পাতা, ফুল দিয়ে সুন্দর করে ডেকোরেশন করা। অপর পাশে সোফা রাখা।

আরনিয়া দৌড়ে গিয়ে দোলনায় বসে পড়ে। স্পর্শকও আরনিয়ার পাশে বসে পড়ে। স্পর্শক বসতেই আরনিয়া দাঁড়িয়ে পড়ে।

কি হলো?

আরনিয়া কিছু না বলে দৌড়ে রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে হাতে গিটার নিয়ে এসে স্পর্শকের কোলে বসে পড়ে। আরনিয়ার হাতে গিটার দেখে স্পর্শক অবাক হয়ে যায়।

তুমি গিটার কোথায় পেলে?

স্টোর রুমে।

স্টোর রুমে কেনো গিয়েছিলে। ( ধমক দিয়ে )

স্পর্শক ধমক দেওয়ায় আরনিয়া কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,,

তুমি আমাকে বকা দিলে থাকবো না আমি তোমার কাছে। আজকেই পাপার কাছে চলে যাব।

এই বাড়ির বাইরে এক পা দিয়ে দেখো পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো।

আরনিয়া স্পর্শকের কোল থেকে উঠতে গেলেই স্পর্শক দুই হাতে আরনিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আরনিয়া কোল থেকে নামার জন্য ছটফট করতে থাকতে।

আরেকবার নড়াচড়া করলে থাপড়ায়া দাঁত ফালাইয়া দিবো।

এ্যা এ্যা এ্যা

কি হয়ছে? কাঁদছো কেনো ?

তুমি আমাকে থাপ্পড় মারবে। বুঝছি এখন আর আমাকে ভালো লাগে না। আমি তো পুরোনো হয়ে গেছি। নতুন কাউকে পেয়ে গেছো এই জন্য এখন আর আমাকে ভালো লাগে না।

শুরু হয়ে গেছে বাংলা সিরিয়ালের ড্রামা। ( মনে মনে)

আচ্ছা সরি বাবু। আর বলবো না। এখন আর কান্না করো না।

এমনি এমনি সরি একসেপ্ট হবে না।

কি করতে হবে?

গান গাইতে হবে।

ইমপসিবল।

তোমাকে গান গাইতেই হবে। তুমি যদি গান না গাও তাহলে আমি পাপার কাছে চলে যাব। তুমি তো ভালো করেই জানো আমি কতোটা জেদি। একবার যেটা ঠিক করি সেটা করেই ছাড়ি।

বোঝার চেষ্টা করো আমি গান পারি না।

সাফাত ভাইয়া বলছে তুমি অনেক সুন্দর গান পারো। আমি ১ থেকে ৩ পর্যন্ত গুনবো তুমি যদি গান না গাও আমি এখান থেকে ঝাপ দিব।

এক

দুই

তি….

তোমায় দেখলে মনে হয়
হাজার বছর তোমার সাথে
ছিল পরিচয় বুঝি ছিল পরিচয়

তোমায় দেখলে মনে হয়
হাজার বছর তোমার সাথে
ছিল পরিচয় বুঝি ছিল পরিচয়

আরনিয়ার চোখের সামনে আবছা আবছা কিছু দৃশ্য বেসে উঠছে। আরনিয়া দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে তীব্র যন্ত্রনায় তার মাথা ফেটে যাচ্ছে । হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে