ভালবাসি শুধু তোমায় আমি পর্ব-০৬

0
1217

#ভালবাসি_শুধু_তোমায়_আমি
#পর্ব:৬
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

আরনিয়ার চোখের সামনে আবছা আবছা কিছু দৃশ্য বেসে উঠছে। আরনিয়া দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে তীব্র যন্ত্রনায় তার মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। হঠাৎ সেন্সলেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। কিছু পড়ার শব্দ শুনে স্পর্শক পিছন ফিরে তাকায়। পিছন তাকিয়ে দেখে আরনিয়া ফ্লোরে পড়ে আছে। এটা দেখে স্পর্শকের দুনিয়া থমকে যায়। স্পর্শক হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। আরনিয়ার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়। গালে হালকা চাপ্পড় দিতে দিতে বল,

আরু,, এই আরু চোখ খুলো। আরু,, আরু

স্পর্শক আরনিয়াকে কোলে তুলে বেডে এনে শুইয়ে দেয়। গ্লাস থেকে পানি নিয়ে চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়। তবু আরনিয়ার সেন্স আসে না। স্পর্শক ডক্টরকে ফোন দেয়। কিছুক্ষণের মাঝে ডক্টর চলে আসে।

ডক্টর আমার আরু ঠিক হয়ে যাবে তো।

মি. আহম্মেদ আমাকে দেখতে তো দিবেন।

ডক্টর আরনিয়াকে দেখে স্পর্শককে উদ্দেশ্য করে বলে,,

মি. আহম্মেদ চিন্তার কোনো কারণ নেই মিসেস আহম্মেদের সবকিছু নরমাল আছে। অতিরিক্ত স্টেচ না নিতে পেরে উনি সেন্সলেস হয়ে গেছেন। আমি একটা ইনজেকশন দিয়ে গেলাম কয়েক ঘন্টার মাঝে উনার ঙ্গান ফিরে আসবে। আজকে তাহলে আসি মি. আহম্মেদ।

থ্যাংক ইউ ডক্টর।

ডক্টর চলে যায়। স্পর্শক আরনিয়ার হাত ধরে ফ্লোরে বসে পড়ে। ভালো করে খেয়াল করে দেখে আরনিয়ার কপালের কাছে অনেকটা ফুলে গেছে। তখন ফ্লোরে পড়ে যাওয়ায় আরনিয়া কপালে ব্যথা পেয়েছিল। স্পর্শক আরনিয়ার কপালে মলম লাগিয়ে দেয়।

আমার জন্যই সবকিছু হলো। আমার জন্য তুমি ব্যথা পেলে। আমি গান না গাইলে এমন কিছু হতো না। আমিই বা কি করতাম। তুমি জেদ করলে তাই গান গাইতে হলো। না গাইলে তুমি সত্যি সত্যি ঐ এহসান খানের কাছে চলে যেতে। আমি চেয়েও তোমাকে আটকাতে পারতাম না। ঐ বাড়িতে গেলে তোমার লাইফ রিস্ক হয়ে যেতো । কারণ এহসান খান তোমাকে ব্যবহার করে আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করতো।

স্পর্শক আরনিয়ার শরীরে কম্বল টেনে দিয়ে চলে যায়। স্পর্শক রুম থেকে বের হয়ে কাউকে একটা ফোন দেয়।

এহসান খানের সমস্ত কালো ব্যবসার ইনফরমেশন আমার চাই আজকের মাঝেই। গট ইট।

ইয়েস স্যার।

__________________

স্পর্শক ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। তখন উপর থেকে জিনিস ভাঙার শব্দ শুনে দৌড়ে উপরে যায়। শব্দটা আরনিয়ার রুম থেকেই আসছে। স্পর্শক দৌড়ে আরনিয়ার রুমে যায়। আরনিয়া পাগলের মতো বিহেভ করছে, ভাঙচুর করছে। স্পর্শক তাকিয়ে দেখে রুমের অবস্থা করুন। আরনিয়া একবার নিজের মাথার চুল ধরে টানছে তো আরেকবার রুমের জিনিসপত্র ভাঙছে। আরনিয়া নিজের শরীরে নিজেই খামছি দিচ্ছে।

হোয়াট হ্যাপেন আরু?

নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। তীব্র যন্ত্রনায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। স্পর্শক আমি কী করবো? আমার এমন কেনো হচ্ছে? মনে হচ্ছে আমি মরে গেলে এই তীব্র যন্ত্রনা মুক্তি পেয়ে যাব।

স্পর্শক আরনিয়াকে জড়িয়ে ধরে।

চুপপ করো। এসব কথা একদম বলবে না।

স্পর্শক আমি এই যন্ত্রনা সহ্য করতে পারছি না। আমি এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি চাই।

আরনিয়া স্পর্শকের হাতে খামছে ধরে। আরনিয়ার হাতের নক বড় বড় হওয়ায়। স্পর্শকের হাতে নক ঢুকে যায়। হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে হাতে তীব্র জ্বালা হচ্ছে। কিন্তু স্পর্শক আরনিয়াকে আটকাচ্ছে না। যদি স্পর্শককে আঘাত করে আরনিয়া একটু শান্তি পায়। আরনিয়া স্পর্শককে ছেড়ে দিয়ে আবার পাগলের মতো বিহেভ করতে শুরু করে। স্পর্শক আর আরনিয়ার কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। স্পর্শক আরনিয়ার শরীরে একটা ইনজেকশন পুশ করে দেয়। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই আরনিয়া স্পর্শকের বুকে ঢলে পড়ে। স্পর্শক আরনিয়াকে বেডে শুইয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

স্পর্শক ছাদে দাঁড়িয়ে অন্য মনস্ক হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বিকেল বেলা হওয়ায় সূর্যের আলোর প্রকোপ নেই তাই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে অসুবিধা হচ্ছে না। সূর্যের আলো থাকলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে এতক্ষণে চোখ জ্বালা শুরু হয়ে যেতো। স্পর্শক অন্য মনস্ক হয়ে না থাকলে হয়তো খেয়াল করতো কেউ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাসার নিচে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে স্পর্শককে দেখে চলেছে তিথি।

( তিথি স্পর্শকের ভার্সিটি ফ্রেন্ড। স্পর্শক ফাস্ট ইয়ারে যখন প্রথম ভর্তি হয় তখন এক্সিডেন্টলি তিথির সাথে দেখা হয়। প্রথম দেখায় স্পর্শককে ভালো লেগে যায় তিথির। ভালো লাগাটা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় পরিণত হয়। একদিন তিথি স্পর্শককে প্রপোজ করে। কিন্তু স্পর্শক তিথির প্রপোজেল একসেপ্ট করে না। কারণ স্পর্শক যে শুধুই তার আরনিয়ার। )

প্রায় এক ঘন্টা ধরে তিথি স্পর্শকের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু স্পর্শক একবারের জন্যও তাকায়নি। স্পর্শক তো তিথিকে খেয়ালই করেনি। তিথি খেয়াল করে একটা গুলুমুলু টাইপের বাচ্চা মেয়ে স্পর্শককে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তিথি বুঝতে পারে এটাই হয়তো স্পর্শকের ভালোবাসা। তিথি ভাবছে এতক্ষণ ধরে সে কত বড় ভুল করছিলি। স্পর্শকের দিকে তাকিয়ে থাকার অধিকার যে তার নেই। স্পর্শক তো অন্য কারো।

মানুষ যা চায় তা সবসময় পায় না। সব ভালোবাসা তো পূর্ণতা পায় না। আর তার ভালোবাসাটা ছিল এক তরফা। স্পর্শক তো তাকে বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনি। সে তো স্পর্শক আর আরনিয়ার মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ঢুকতে চেয়েছিল। এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তিথি। আবার নিজের গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হয়।

__________________

স্পর্শক

হুম।

আমার সাথে এমন কেনো হয়?

এখানে আসার আগেও এমন বিহেভ করতে?

মাঝে মাঝে এমন করতাম পাপা একটা ইনজেকশন দেওয়ার পরে সব ঠিক হয়ে যেতো। আমি এমন বিহেভ কেনো করি?

তুমি বলেছিলে না কয়েক বছর আগে তোমার একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল। ঐ এক্সিডেন্টের প্রভাবে এমন হয়। চিন্তা করো না আস্তে আস্তে সহ ঠিক হয়ে যাবে।

হুম।

ড্রাগসের কথাটা স্পর্শক আরনিয়ার কাছ থেকে লুকিয়ে যায়। স্পর্শক জানে আরনিয়াকে যদি বলে তার পাপা তাকে নিয়মিত ড্রাগস দিতো। তাহলে সে স্পর্শকের কথা বিশ্বাস করবে না। কারণ আরনিয়া নিজের থেকেও বেশি তার পাপাকে বিশ্বাস করে।

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে