ভবঘুরে পর্বঃ১০

0
636

ভবঘুরে পর্বঃ১০
লেখাঃ আরিফুর রহমান মিনহাজ

ঘন্টা আধেক কখনো এলোমেলো আলাপচারিতা, কখনো ভয়, লজ্জা, সংশয় আর কখনো অন্তহীন ভাবনার নাগরদোলায় চড়ে কাটানোর পর নিরু খেয়েদেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে বিশাল একখান ট্রে হাতে ঘরে এলো। উরবি তাড়াতাড়ি করে ছোট টেবিলটা টেনে দিল ট্রে রাখার জন্য। নিরু যথাস্থানে ট্রে রেখে হাসিমুখে উরবির পাশে বসতেই যেন সে বড় অপরাধ করে ফেলল। উরবি একপ্রকার হায় হায় করে বলে উঠল,
– কী রে এখানে বসতেছিস কেন? তুই খাবি না?
নিরু বুদ্ধিভ্রষ্টের ন্যায় একটু হাঁ করে তাকিয়ে থেকে কৈফিয়ত চাওয়ার গলায় বলল,
– কেন এই বিছানায় বসতে সমস্যা কী?
– সমস্যা থাকবে কেন? আমরা খাব আর তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি? যা তুইও খেয়ে আয়।
নিরু কণ্ঠনালীতে অস্ফুট শ্লেষ-ধ্বনি উচ্চারণ করে মুখ বাঁকিয়ে সুর করে বলল,
– আসছে আমার বইনরে… আমি খেয়েই আসছি। মামি যখন খাবার বাড়তেছিল তখনই আমার খাওয়া শেষ। আমার খাবার আর কি। বসা আর ওঠা!
উরবি ট্রে থেকে ভাত আর তরিতরকারির বাটিগুলো টেবিলে নামাতে নামাতে শ্লেষোক্তি করল,
– হ্যাঁ তোর মেশিল হেব্বি চালু। খেয়ে খেয়ে তো মোটা হচ্ছিস দিনদিন। চিরকুমারী হবা? বিয়াসাদী দিতে হবে না?
নিরু বোনের গঞ্জনা ধরে বলল,
– হ্যাঁ,আমি মোটা না মোটেও। উল্টো তুমি চিকনা। দেখলাম তো আজকের বাতাসে কেমন করে ভাঙা চালের মতো দুলতেছিলা। উফ্ ভাগ্য ভালো আবিদ ভাইয়া ছিল। না-হয় আমার বোনটাকে আজ বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে পাওয়া যেতো।
উরবি নিরুর এসব বাঁকা কথা শুনতে শুনতেই ভাত বেড়ে নিচ্ছিল তারা দু’জনের জন্য। অন্য সময় হলে বাগবিদগ্ধ উরবি নির্ঘাত রেগেমেগে যথোচিত কথা শুনিয়ে দিত। কিন্তু আজ তার স্বভাববিরুদ্ধ-ভাবে বলল,
– মজা নেওয়া শেষ? এবার চুপ যা।
নিরু আর কিছু বলল না। চুপটি করে বসে দেখতে লাগল সব।
এতক্ষণ আবিদ নিঃশব্দে দু-চোখ অর্ধ-নিমীলিত করে দুই সইয়ে রসালাপ শুনছিল। বোধহয় কখন একটু চোখও লেগে এসেছিল। এবার সে সোজা হয়ে বসে নিজের সদ্য ঘুমের রেশ-লাগা রক্তবর্ণ চোখ দুটো নিরুর দিকে মেলে ধরে বলল,
– একটু পানি হবে? হাত ধুবো।
নিরু কিছু করার অথবা বলার আগেই উরবি অতিউৎসাহী হয়ে রব করে উঠল,
– কেন কেন? হাত ধুুতে হবে কেন?
আবিদ সহজভাবে বলল,
– খাব বলে! নাকি এখন খাবারও নিজের বাড়ির মতো দম্ভ দেখিয়ে খেতে নিষেধ করবেন? সমস্যা নেই সব শোধ করে দিব।
উরবি এতটুকুও অবাক হল না আবিদের সমাকুল চিন্তাভাবনা দেখে। সে একটু মিষ্টি হেসে আরোপিত দোষগুলো কাঁধ থেকে অক্লেশে নামিয়ে বলল,
– নাহ্ এতসব কিছু না। আপনার হাতে খেতে হবে না। ডাক্তার হাতটা নাড়তে নিষেধ করছে। ব্লিডিং হতে পারে। তাই আমিই খাইয়ে দিব। নিজের জন্য যেহেতু এতোকিছু হল, একটু সেবাযত্ন করে প্রায়শ্চিত্ত করি!
আবিদ বলল,
– বাঁ হাত আর চামচ থাকতে আপনার হাতে খাব কেন?
– আমিই বা খেতে দিব কেন? আমার হাতেই আপনাকে খেতে হবে। নইলে উপোসে মরতে হবে।
– তাই, কয়দিন না খেলে মানুষ মরে না। না-ই খেলাম!
নীরস হেসে কথাটা বলে আবার হেলান দিয়ে শুলো আবিদ।
ঠিক তখনি নিরু ফোঁড়ন কাটল,
– আবিদ ভাইয়া, আমি খাইয়ে দিলে খাবেন?
আবিদ ভাবল,দু’জনেই তার চোখে সমান। এমনও না যে কেউ একজন উঁচু স্থান নিয়ে বসে আছে তার কাছে। কাজেই নিরুর হাতে খেতে সম্মত হলে যে উরবি ভেতরে ভেতরে দগ্ধ হবে এবং একটা স্পষ্ট অপমান উপহার দিয়ে তাকে এতোদিনের যাবতীয় কুকর্মের নিশ্চুপ জবাব দেওয়া যাবে;সেই মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয় কোনোভাবেই! ভেবে সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়তে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় উরবি দাবড়ে বলল,
– চুপ,তুই নাক গলাস কেন ছেমড়ি। খেলে আমার হাতেই খাবে নাহয় সেও খাবে না, আমিও খাব না। ব্যাস্!
– জেলাস জেলাস। শব্দ দু’টো উচ্চারণ করে নিরু খিলখিল করে হেসে উঠল।
রণমত্ত-প্রায় উরবি কোপদৃষ্টিতে তাকিয়ে জাঁদরেল গলায় নিরুর নাম আওড়াল।
– ‘নিরু…’ ভাবটা এমন যেন এসব অহেতুক বকা বন্ধ কর নয়তো গলা টিপে বোবা করে দিব!
নিরুর হাসির ছটা যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় টিকরে টিকরে পড়তে লাগল। সে কোনোমতে দুইহাতে মুখ চেপে আত্মসংবরণ করে বলল,
– আচ্ছা আচ্ছা।
সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এতো জল-ঘোলা করায় আবিদ অসহ্য হয়ে ওঠল। ইচ্ছে করেই সে বিরক্তিটা চোখেমুখে ভাসিয়ে তুলল যাতে কোনো গতিক হয়। এদিকে পেটটা যে খিদেয় চোঁ চোঁ করছে!
উরবি কিন্তু নাছোড়বান্দা। প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য কোমর বেঁধে নেমেছে সে। সংসারের সমস্ত কাজে উরবির আনাড়িপনা পরিলক্ষিত হলেও শয্যাশায়ী রোগীর শুশ্রূষা করার বেলায় সে যথেষ্ট পটু। নিজের বাবার অসুখের সময়ে সে-ই সবসময় পাশে থেকে সেবা-কর্ম করে যেতো স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
নিরুকে দাবড়ানোর পর উরবি ভাতের প্লেটে তরকারি বেড়ে নিল। একটু সময় নিয়ে একটা ভাতের গ্রাস তুলে ধরল আবিদের ঠোঁটের ওপর। আবিদ দ্বিধান্বিত মনে অনন্যোপায় হয়ে সেই খাবার মুখে পুরে নিল। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে মুখরোচক খাবারগুলো যেন কাঁটা হয়ে বিঁধে যাচ্ছে তার গলদেশে। নামতে চাইছে না নিচের দিকে। নীরবে বিক্ষিপ্ত হয় চোখ,মন,সর্বাঙ্গ! কি যেন মনে পড়ে যায়! হৃদয়ের তলদেশে চাপাপড়া স্মৃতিগুলো কিসের যেন দুর্নিবার ঊর্মিতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে আলোড়িত হয়ে ওঠে পুনরায়! ভারী বরিষণে নদীর বুক হতে উচ্ছ্বসিত জলধির মতোন ছড়িয়ে পড়ে হিয়ার আনাচে কানাচে। সেই অথই বানে মরা গরুর মতোন ভেসে ওঠে প্রায়-বিস্মৃত স্মৃতিরা। তবুও আত্মনিয়ন্ত্রণ করে বাধ্যের মতো পাঁচ কি ছ গ্রাস জড়ের মতো গিলে নিয়ে একসময় মুখ ফিরিয়ে নেয় সে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
– আমার খাওয়া হয়ে গেছে। এবার তুমি খেয়ে নাও।
বলে একটু যেন চমকালো আবিদ। পরক্ষণেই ভুল শুধরে নেওয়া গলায় বলল,
– না মানে, খেয়ে নিন। আমার খাওয়া শেষ!
বলে আর অপেক্ষামাত্র না করে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল সে।
নিরু মুখ টিপে হাসল। উরবি তাকে বাঁ হাতে একটা চাপড় দিয়ে বলল,
– আবার হাসি!… বলে সে নিজেও আড়চোখে তাকিয়ে নিরুর সৃষ্ট হাসিতে যোগ দিল। আবিদ সব বুঝেও না বোঝার ভান করে মরার মতো পড়ে রইল। এরপর উরবি খেয় নিল পেটপুরে। তার পাশে একটা লোক যে অর্ধভুক্ত সেই খবর সে কুলক্ষণেও জানল না।

………………

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

খুব নাটকীয়ভাবে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে আবিদ এবং উরবির ফোনে রিং বেজে উঠল। আবিদ আঙুলের ইশারায় উরবিকে বাইরে যেতে বলতেই উরবির ফোনে রিং বাজল। জিসানের ফোন! সচরাচর জিসানের ফোন উরবি রিসিভ করে না। করলেও দু-তিন মিনিটের মাথায় ফোন রেখে দেয়। আজ কি মনে করে রিসিভ করে ফোন কানে বেরিয়ে গেল। পিছুপিছু নিরুও বেরিয়ে গেল। আবিদ অনেক্ষণ পর একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ফোন কানে দিল। ওপাশ থেকে কর্কশ গলায় ভেসে এলো,
– কী আবিদ সাব? হুনলাম আপনে অসুস্থ! তা,আপনের মিশন কদ্দূর?
আবিদ চমকালো না। ঘাবড়ালও না! সে জানতো এসব কাজে দুয়েকটা শত্রু না চাইতেও জোগাড় হয়ে যায়। সে স্বভাবিক কণ্ঠে বলল,
– মিশন তো শুরুই হয়নি। বায় দা ওয়ে,আপনার পরিচয়,নাম?…
– নাম দিয়া কাম কী? এহন কথা হুনেন…
ফোনের ওপাশের লোকটার কথা শেষ হবার আগেই আবি বলল,
– জানি দিবেন না। আপনার মতো লোকেরা কাপুরষই হয়। রাগ করবেন না। নিজের বংশপরিচয় দিতে যে ভয় পায় তাকে কাপুরষ সংজ্ঞায়িত করাই যায়! না?
লোকটা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইল। ফোনের সাউন্ড বক্সে বড় বড় নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই কানে এল না। বোধকরি চোখ বন্ধ করে, ঠোঁট কেটে রাগ সংবরণ করছে লোকটা। একটু পরই গর্জন করে উঠল লোকটা,
– এত কথা বুজি না। আপনে সরকারি কোনো কর্মকর্তা না। হুদাই এলাকায় আইসা এসব প্যাঁচাল করলে জাব নিয়া ফিরতে পারবা না কয়ে দিলাম।
– দেখুন আংকেল, সরকারি কোনো কর্মকর্তা বলতে আপনি যা বুঝালেন তা হওয়া আমার জন্য কিছু না। আমি ইচ্ছে করেই বাইরে থেকেছি। ওতো নিয়মকানুন আমার সয় না। তাই বলে এটা ভাববেন না যে আমার গায়ে ফুলের টোকা পড়লে আপনাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। আর হ্যাঁ, গ্রাম্য ভাষায় কথা বলার বৃথা চেষ্টা করছেন আপনি। আপনি যে বড় চেয়ারে বসা কেউ সেটা আমি আপনার কথার ধরণ শুনেই বুঝতে পেরেছি। সুদিনের জন্য অপেক্ষা করুন।
আবিদের গলায় অস্বাভাবিক রকমের শান্ত! সেই শমপ্রাপ্ত কণ্ঠস্বর প্রতিপক্ষের গায়ে আগুন ধরানোর জন্য যথেষ্ট। মনেহয় ঠিকি ধরল! কর্কশকণ্ঠী লোকটা সেকেন্ড কয়েক চুপ থেকে ফোন কেটে দিল। আবিদ একটু বাঁকা হেসে ফোনটা কোলের ওপর রাখল৷

জিসানে সাথে ভগ্নোৎসাহে টুকটাক সাধারণ বাক্যবিনিময় করে ফোন রাখল উরবি। ফোন করতে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল উরবি;সঙ্গে নিরু৷ সন্ধ্যায় চঞ্চলতা কাটিয়ে নিঝুম রাত নেমেছে প্রকৃতিতে। গ্রীষ্মের উষ্ম গুমোটতার বদলে আজ চারিপাশে শীতল বিশুদ্ধ বাতাস টহল দিচ্ছে। অতিথি মেঘগুলোর আড়ালে আজ নাকাল পূর্ণিমার চাঁদ। মেঘেদের রাজত্বের বিশালতার মাঝে ডুবে ডুবে ভাসছে যেন! এখন আবির্ভূত হয় তো একটু পর বিশালকায় মেঘ খণ্ডের আড়ালে গা লুকায়! ফোন রাখার পর দু’জনে অলক্ষ্যে ফটকের রাস্তা ধরে হাঁটছিল। অলক্ষ্যে ঠিক নয়! হঠাৎ আচার খাওয়ার বাই উঠেছে উরবির, এজন্যই এদিকে আগানো। অনেক্ষণ কারো মুখে রা নেই। হঠাৎ নিরু একটু সন্দিগ্ধ গলায় বলে উঠল,
– উরবি,তুই কি ডাবল প্লে করতে চাচ্ছস? আবিদ ভাইয়ের সাথে এতো কী…
কথাটা কানে আসার সঙ্গে সঙ্গে এতক্ষণ বাক্যহীন উরবি অশ্রাব্য একটা গালি দিল, তা মুখে নেওয়া যায় না লিখেও প্রকাশ করা অন্যায়। নিরু মুখ ছোট করে বলল,
– গালি দিস কেন্। আমার মনে হল তাই বললাম।
উরবি মুখ কড়কে বলল,
– তোর তো মাথা খালি এসব ঘুরে। লোকটা অসুস্থ হইছে আমার জন্য, তো আমার কি উচিত না সবকিছু করা? আর তুই জানিস জিসানের ব্যাপার নিয়ে আমি চিন্তায় আছি। কই না একটা বুদ্ধি দিবি তা না করে খোঁচাচ্ছিস!
নিরু হার মানা গলায় বলল,
– আচ্ছা ওকে ওকে। তুই এভাবে কথা বলিস কেন। তোর সঙ্গে ঝগড়া তো করতেছি না!
– আর বলিস না। সারাদিন কারো সঙ্গেই ঝগড়া করা হায় নাই আজকে। গালটা কেমন নিশপিশ করতেছে। তুই উল্টাপাল্টা কথা বলিস না আমাকে, ঝগড়া লাগিয়ে দিতে পারি।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও নিরু উরবির কথায় খকখক করে হেসে ফেলল। কিন্তু পরক্ষণেই দুই হাতে মুখ চেপে ধরল। তমোময় রাস্তায় তা দেখতে না পারলেও বুঝতে পারল উরবি। সে রোষে দাঁতে দাঁত ঘসে কিড়মিড় শব্দ করে বলল,
– নিরু… খবরদার হাসবি না। মেরে ফেলব একদম্।

নিরু আর টুঁ শব্দ করল না। ওরা আরো কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে মূল ফটকের বাইরে গেল। উদ্দেশ্য গেটের সামনের দোকানে গিয়ে আচার কেনা। ওমনিই দুইজন লোক অন্ধকারে পড়িমরি করে এলোপাতাড়ি দৌড়ে পালিয়ে গেল। দুজনেই কিছুক্ষণ হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। নিরু লোকগুলোর পালিয়ে যাওয়া পানে হাঁ করে তাকিয়ে থেকে বলল,
– কারা ওরা?
উরবি একটু স্বভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,
– বাদ দে। চোর-টোর হবে বোধহয়! চল।
কথাটা বলল ঠিক কিন্তু ভেতরে একটা খচখচানি ভাব রয়েই গেল।

গভীর রাতে বিষম জ্বর এলো আবিদের। শরীর ফাঁকফোকর গলে যেন অগ্নিশিখা বেরোচ্ছে অনর্গল! সাধারণত শরীরের কোনো জায়গা আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেই জায়গার শোকে সমস্ত শরীর জ্বরে শোকাবহ হয়ে ওঠে দৈবাৎ। অবশ্য তা ক্ষণস্থায়ী হয়ে এবং ঘন্টা খানেক রোষ মিটিয়ে নিয়ে বিলীন হয়। আবিদের মনে হল এমন জ্বর তার অনেক বছর আসেনি। তার অবচেতন মন উরবিকেই বারংবার দোষারোপ করতে লাগল এই দুর্দশার জন্য। বলা উচিত, উরবি এবং নিরু এই ফ্লাটের একটা ঘরে আবিদের সুবিধার্থে অবস্থান নিলেও উরবির চোখে ঘুম নেই। যে উরবি এই লোকটাকে দুচোখে দেখতে পারত না সে-ই উরবি নিজেই মনস্তাপে খাক হয়ে ঘুম থেকে বারবার জেগে ওঠছে, সেবা-শুশ্রূষা করছে। সে নিজেই ভেবে পাচ্ছে না এতো দরদ কোত্থেকে ভুঁইফোড় হল তার মনে। সে তো চিরকাল একরোখা, কোন্দলিয়া, জেদি,রগচটা, আর বদমেজাজি উপাধি পেয়ে এসেছে। তবে আজ নিরু কেন ঘুমের ঘুমের পাশ ফিরতে ফিরতে তাকে “আহারে দরদির ঢং” বলে ভর্ৎসনা করল? সে কি আসলেই দরদি হয়ে উঠছে? উত্তর নেই!

রাত যখন আড়াইটা কি তিনটা তখন উরবি এসে দেখল মানুষটা জ্বরের বিকারে বিড়বিড় করে কিসব আওড়াচ্ছে,তা ঠিক বোধগম্য নয়। উরবি কাছে এসে কপালে হাত দিতেই চমকে উঠল পলকেই। আবিদ ঘোরে নিরুর শাঁসের মতো সরু হাতটি নিজের উষ্ণ বক্ষতটে নিয়ে রাখল সন্তর্পণে। উরবি বিমূঢ় হল কয়েক-মুহূর্তের জন্য। এরপর একটু ঝুঁকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
– আপনি ঠিক আছেন?
কণ্ঠ শুনে আবিদ চমকে ওঠে উরবির হাত জোরে ছুঁড়ে মারল নিজের বুক থেকে। অদ্ভুত উদ্ভ্রান্তের মতো দুচোখ মেলে ধরে উঠে বসার বৃথা চেষ্টা করে বলল,
– আপনি?…কেন এসেছেন?

চলবে…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share