ভদ্র স্যার♥রাগী বর-পর্ব ৫

0
4995

#ভদ্র স্যার রাগী বর-পর্ব ৫
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

আচ্ছা আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
তা না হলে এটা কিভাবে সম্ভব আমি তো দেখছি যে আমার সামনে শুভ্র স্যার।

স্যার তার দু হাত দিয়ে আলতো করে আমার মুখ ধরে পলকহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আমিও তার চোখে চোখ রাখলাম।স্যারের চোখ যেনো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে।তার চোখ দুটো যেনো হাজার বছরের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছে।

আমার মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেরোলো,স্যারর…

তখনি স্যার ক্রোধে ফেটে পরে আমার কাধঁ তার দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো,
কেনো করেছো আমার সাথে এমন?কেনো?
কোথায় কোথায় না খুঁজিছি আমি তোমায়।
জানো!এই দুই বছর সাত মাস পনের দিন  সতের
ঘন্টা আমি কিভাবে কাটিয়েছি?ধোঁকা দিয়েছো
তুমি আমাকে।

তার শেষের কথাটি শুনে আমারো বেশ রাগ উঠে গেল।সেই দিনের সেই মেয়ের কথা মনে পড়ে গেল।

আমি তাকে এক ধাক্কা দিয়ে বললাম,ধোঁকা আমি না,আপনি দিয়েছেন আমাকে।
স্যার অবাক দৃষ্টি নিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল, আমি দিয়েছি মানে?
আমি তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম,থাক আর ন্যাকা সাজতে হবে না।আমি আর আপনাকে এগুলো বলার কে!
আর আপনি এখানে কেনো এসেছেন?আজ আমার বাসর রাত।আমার বর কোথায়?

শুভ্র স্যার একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আমার আরো
কাছে এসে বলল,শেরোয়ানী পরে সামনে বসে
আছে তবুও নিজের বরকে চিনতে পারছো না?
এত সুন্দর মেহেদী লাগিয়েছো হাতে, একবার
তাকিয়ে দেখোতো।
সত্যিই আমি আমার হাতের মেহেদী এখনো দেখিনি তাই তার কথা মতো হাত মেলে দেখলাম খুব সুন্দর ডিজাইনের মাঝখানে গাড় লাল রঙে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা “শুভ্র”।
মানে কি?এটা কি ভাবে সম্ভব,তার মানে স্যারের
সাথে আমার বিয়ে হয়েছে!

কিন্তু আমি তো জানতাম স্যার মধ্যবিত্ত পরিবারের।কলেজের গেস্ট টিচার। আর এখানে এত বড়লোক, বিজনেসম্যান!
স্যার সম্ভবত আমার ভাবনা বুঝতে পারল তাই আমার চোখের সামনে হাত নেড়ে বলল,কি এটাই ভাবছো তো, কলেজের নরমাল একজন গেস্ট টিচার, এত বড় বাড়ির ছেলে কি করে হল!

বড়লোক বাবার ছেলে যেন টাকা,প্রাচুর্যে বিগড়ে না যায় তাই আমার বাবা আমাকে সাধারণ জীবন যাপন করাও শিখিয়েছে।সাথে আমাদের পরিবারের নিয়ম হল প্রথমে নিজের যোগ্যতায় কিছু করে তারপর এই বিশাল বিজনেসে জয়েন করা।আমার বাবাও একই জিনিস করেছে।আর আমিও তাই করেছিলাম।

তার কথা শুনে আমি চরম পর্যায়ের অবাক হলাম।এত বড়লোকের ছেলে কিভাবে এত সাধারণ জীবন যাপন করতে পারে!
নিজের চোখে না দেখলে তো আমি বিশ্বাসই করতে পারতাম না।

সে হঠাৎ আবার আমার দিকে ক্রোধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,এই জন্যই সেই সাধারণ কলেজ টিচারকে ছেড়ে দিয়ে এই রিচ বিজনেসম্যানকে বিয়ে করলে তাই না?
তার কথা শুনে আমার মনে হল আমার বুকে যেনো কেউ তীর গেঁথে দিল।যা আমি কখনো কল্পনাতেও ভাবি নি সেই কথাটা সে আমাকে বলতে পারলো!

আমি আহত চোখে তার দিকে তাকালাম।আমার চোখে চোখ পরতেই সে তার দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল।
আর বলতে থাকল,এই কয় বছর আমি কিভাবে কাটিয়েছি তা শুধু আমিই জানি।কি ভেবেছিলে?
আমার ফিলিংস নিয়ে ছিনিমিনি খেলে গা ঢাকা দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিবে?সেই তো আমি তোমাকে খুঁজে বের করে বিয়ে করেই ফেললাম।
অনেক জ্বালিয়েছো আমাকে,আর না।এবার তোমার পালা।এই বলে সে বেড়িয়ে গেল।

আর আমি অশ্রু ঝরিয়ে ভাবতে লাগলাম,সে এসব কি বলছে।এসব কথার মানে কি?সে তো অন্য মেয়েকে ভালোবাসে, তাহলে আমাকে বিয়ে কেনো করল?

হয়ত ইগো!ইগোতে লেগেছে তার।এত বড়লোকের ছেলে আমার মত একটা সাধারণ মেয়ের ইগনোর নিতে পারে নি।তাই এসব করল।

কিন্তু শুভ্র স্যার তো এমন না!কি জানি আমিই বা তাকে কতটুকু বুঝতে পেরেছিলাম।যা বুঝেছিলাম তা তো ভুলই হয়েছিল।
আর এই বা কোন শুভ্র স্যার?আমি যেই শুভ্র স্যারকে চিনতাম সে তো খুব শান্ত,ভদ্র,লাজুক ছিল।আর এ তো সম্পূর্ণ বিপরীত।এত রাগী সে।
এত রাগ,সেই শুভ্র স্যারের!ভাবা যায়!

অস্বীকার করব না,যখন স্যারকে এখানে দেখলাম
এক পলকের জন্য আমি অনেক খুশি
হয়েছিলাম।

বের হওয়ার তিন মিনিটের মাথায় স্যার আবার রুমে ফিরে আসল হাতে করে তার দেওয়া সেই মাছের অ্যাকুরিয়াম দুটো নিয়ে।
মনে পড়ল,আমি ভাবিকে বলেছিলাম মাছের অ্যাকুরিয়াম দুটো আমার সাথে যেনো এ বাড়ি
পাঠিয়ে দেয়।তাই বিদায়ের সময় ভাবি আমার ননদ মানে শুভ্র স্যারের ছোট বোনের হাতে দিয়েছিল।আজ পর্যন্ত কখনো কাছ ছাড়া করিনি এগুলো।

স্যার আমার সোজাসুজি রাখা ছোট টি টেবিলটিতে অ্যাকুরিয়াম দুটি রেখে এর একটি ঠাস করে মেঝেতে ফেলে দিল।স্বচ্ছ কাচের অ্যাকুরিয়ামটি মেঝেতে চূর্ণ বিচূর্ন হয়ে পড়ল,মাছটি দাপাদাপি করছে।

আমি তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বললাম,
এ কি করলেন?

স্যার মেঝে থেকে মাছটি দু হাত দিয়ে তুলে অন্য অ্যাকুরিয়ামটিতে রেখে গম্ভীর গলায় বলল,এখন থেকে এরা একসাথেই থাকবে।

আমি দ্বিতীয় বার আর প্রশ্ন করতে পারলাম না।তার রাগ দেখে পুরো চুপসে গেছি।শত হলেও স্যার তো!একটা ভয় ভয় ফিলিংস কাজ করে।

আমি ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
সে আমার দিকে ঘুরে রাগী গলায় বলল,এভাবে স্ট্যাচুর মতো দাড়িয়ে আছো কেনো?
যাও গিয়ে চেঞ্জ করে আসো।

আমার গলা দিয়ে বের হয়ে গেল,কেনো?

সে ধীরে ধীরে আমার কাছে আসতে আসতে একটি বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,কেনো!তুমিই তো তখন বললে,আজ আমাদের বাসর রাত।

তার কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেল।আমি ঢোক গিলে তার থেকে সরে এসে একটি গোলাপী রঙের সুতি শাড়ী নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।

বের হয়ে দেখলাম স্যারও চেঞ্জ করে নিয়েছে।একটি হোয়াইট কালারের টি শার্ট আর ব্লাক,ব্লু কালারের কম্বিনেশনের টাউজার পরে বেডে আধশোয়া হয়ে ফোন টিপছে।
আমি আস্তে আস্তে গিয়ে তার পাশ থেকে একটি বালিশ নিয়ে সোফার দিকে যাচ্ছিলাম।
সে পেছন থেকে ডেকে বলল,এই মেয়ে কোথায় যাও?

আমি মুখ ফুলিয়ে জবাব দিলাম,আমি সোফায় ঘুমাব।
সে জিগ্যাসা করল,কেনো?
আমি বললাম,কারণ আপনি আমার স্যার।
সে ভুরু কুঁচকে বলল,মানে?
আমি হরবরিয়ে বললাম,মানে আবার কি!
স্যার তো স্যারই।

তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে আমার দিকে এমন ভাবে রেগে তাকিয়ে আছে যেনো এক্ষনি আমায় গিলে খাবে।

আমাকে জোরে একটি ধমক দিয়ে বলল,বেশি সিরিয়াল দেখা হয়েছে,তাই না?
বিয়ের পরেও স্বামী স্ত্রী একজন সোফায় ঘুমাবে একজন বেডে ঘুমাবে,আবার মাঝখানে কোলবালিশ দাও!যত্তসব।
এক্ষনি এখানে এসে ঘুমাবে নাহলে কিন্তু এখন এখানে সত্যি সত্যিই বাসর রাত হবে।
তার কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি বেডে গিয়ে চুপচাপ তার পাশে শুয়ে পরলাম।
সে তারপর আমাকে বলল,আমার উপর হাত দাও।
আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এগুলো কি বলে!
স্যার আবার আমাকে ধমক দিয়ে বলল,কি তাড়াতাড়ি দিবা নাকি…..

তার কথা শেষ না হতেই আমি তার উপর হাত রাখলাম।সাথে সাথে স্যার আমাকে তার দু হাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।আমার খুব লজ্জা লাগল।

তখন মনে পড়ল সেই বিকেলের কথা।যেদিন আমি আর স্যার রাস্তা দিয়ে পাশাপাশিই হাটঁছিলাম।হাটঁতে হাঁটতে হঠাৎ স্যারের হাতের সাথে আমার হাতের হালকা স্পর্শ লাগে।সাথে সাথে মনে হল আমি যেনো হাই ভোল্টেজের শক খেয়েছি।আমি লজ্জা পেয়ে হাত সরিয়ে দ্রুত হাটঁতে লাগলাম।হঠাৎ মনে হল স্যার আমার সাথে নেই।আমি পিছনে ফিরে দেখলাম সে সেখানেই দাড়িয়ে বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
মুখে হালকা লাজুক হাসি।বুঝতে পারলাম স্যার আমার থেকেও বেশি লজ্জা পেয়েছে।
সাথে শকও।

আর এখন, কিভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আর সে কিনা সেই লাজুক শুভ্র স্যারই।এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যেনো ছাড়লেই আমি হারিয়ে যাবো।

এত কাছাকাছি এই প্রথমবার।আমি তো লজ্জায় মরে যাচ্ছি।আর সে কি সুন্দর ঘুমিয়ে পরেছে।মুখে প্রশান্তির ছাপ।
তার হৃদস্পন্দন আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।কি ভালো লাগছে শুনতে।কিন্তু সেখানে তো আর আমার নাম নেই।সে তো আর আমাকে ভালোবাসে না!!

মাঝরাতে টের পেলাম শুভ্র স্যার আমার কাধঁ ঝাকিয়ে আমায় ডাকছে।আমি চোখ মেলে তাকাতেই………..

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে