বেলাশেষে part_3

0
781

বেলাশেষে part_3
#adrin_anisha
.
“আহারে বেচারা, শোন তোর ওই বেচারা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিল। নির্লজ্জ কোথাকার। তাইতো মেরেছি”

মুখ ভেংচিয়ে বলল মেঘা। সুভা অবাক হওয়ার ভংগিতে বলল,
” ইসস, এসেছেন রে আমার নায়িকা আলিয়া ভাট, তার দিকে নাকি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েছিল। কি তোমার রুপের বাহার, যে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। ”
” ওই ওই শোন। তোর চেয়েও আমি বেশি সুন্দর বুঝলি। আর এতই যখন আমি পেত্নি তখন তোর ওই রানভির সিং কেই জিজ্ঞেস কর উনি কেন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ” মুখ ফুলিয়ে বলল মেঘা।
” আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে এবার চুপ করুন মহারানী, নাহলে এবার আমাদের ও বের করে দেবে।”
.
.
ছুটির পর ক্লাস থেকে বেরিয়েই সুভা দেখতে পেল শুভ্র কিছু ছোটবাচ্চাদের সাথে একা বসে আছে। তাই মেঘা কে ডেকে বলল,
” এই মেঘ দেখ না, ওই ছেলেটা,”
মেঘা সুভার হাতের দিক লক্ষ্য করে সেদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কোন ছেলেটা?”
” আর ওই যে, শুভ্র”
নামটা শুনে মেঘার মুখ ভেংচিয়ে বলল,
” ওহ। তো আমি কি করব? নাচব?”
” ধুর এখানে নাচলে সবাই খারাপ বলবে, তারচেয়ে চল ছেলেটার সাথে গিয়ে কথা বলি, জিজ্ঞেস করি কেন দেরী করে এসেছিল”
“তোর দরকার হয় তুই যা। আমি যাব না।”
এই বলে সুভার হাতটা ছাড়িয়ে পিছনের দিকে ঘুরে চলে গেল মেঘা। সুভা পেছন থেকে ডাকলেও শুনল না। সুভা ভাবছে ছেলেটার পিছনে যাবে নাকি মেঘার পিছনে। পরে আবার ভাবল মেঘাকে বাসায় গিয়েই মানানো যাবে। এখন না হয় এই ছেলেটারই রহস্য উদঘাটন করা যাক, এই ভেবে সুভা ছেলেটার কাছে গেল। গিয়ে তো সুভা অবাক, ছেলেটা অন্য কিছু বাচ্চাদের সাথে বসে রাস্তার পাশে বিরিয়ানি খাচ্ছে৷ বাচ্চাগুলোকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওদের ঘর-বাড়ি সবই এই রাস্তা। সোজা কথায় ওরা ফুটপাতের বাসিন্দা৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো এই শুভ্রটা এখানে এদের সাথে কি করছে? সুভা আর দেরী না করে জিজ্ঞেস করেই ফেলল,
“আপনি এখানে কি করছেন?”
হঠাৎ করে পেছন থেকে সুভার গলা শুনে গলায় খাবার আটকে যায় শুভ্রর। কাশতে কাশতে নাজেহাল। সুভাও এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল কোথাও পানি নেই। তাই নিজের ব্যাগ থেকেই পানির বোতল টা এগিয়ে দিল শুভ্রর দিকে। শুভ্র পানি খেয়ে কিছুটা সস্তি বোধ করল, “ধন্যবাদ ” বলে বোতলটা সুভার দিকে এগিয়ে দিতেই খেয়াল হলো সে কি কার কার থেকে পানি নিয়েছিল। এতক্ষন লক্ষ্যই করেনি যে কেও তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রকে এভাবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে সুভা মনে মনে হাসলো, তারপর আবার জিজ্ঞেস করল,
” কি করছেন আপনি এখানে?”
শুভ্র আবারো আমতা আমতা করতে লাগল,
” আমি, না মানে, আমি তো ওই, মানে আমি আসলে ওই যে, আ আ আমি আসলে”
সুভা এবার কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলল,
” আচ্ছা আপনার কি বাংলা বলতে সমস্যা হয়, নাকি আপনি তোতলা, কোনটা বলুন তো।”
শুভ্র এবার একটু থতমত খেয়ে গেল। পাশে থাকা ছেলেমেয়ে গুলো হাসতে লাগল,তাদের হাসতে দেখে সুভা আবার বলল,
” এইযে মশাই, আপনাকে বলছি। এই দুনিয়াতে আছেন নাকি হারিয়ে গেছেন অন্য দুনিয়ায়”
এখনো শুভ্র চুপ করে আছে। এবার সুভার সাথে সাথে বাচ্চারাও বিরক্ত হয়ে গেল। তারপর একটা বাচ্চা বিরিয়ানির প্যাকেট হাতে নিয়েই উঠে এল এবং খেতে খেতেই বলল,
” আপু আমাদের অনেক খিদে পেয়েছিল, তাই ভাইয়া আমাদের খেতে দিয়েছেন। সকালেও দিয়েছিলেন, তাই তো ওনার ক্লাসে যেতে দেরী হয়ে গেল। আমরা বলেছিলাম ওনাকে চলে যেতে তবুও গেলেন না, যদি আমাদের থেকে কেও কেড়ে নিয়ে যায় তাই নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের খাইয়ে দিয়ে গিয়েছেন। এখন আবার এসে খাওয়াচ্ছেন৷ ”
একজনের কথা শেষ হতেই অন্য আরেকটা বাচ্চা এসে বলতে শুরু করল,
“জানো আপু ভাইয়াটা অনেক ভালো, নাহলে আজ পর্যন্ত আর কেও আমাদের এভাবে খাওয়ায় নি। আমরা চাইলেও আমাদেরকে মেরে তাড়িয়ে দিত। আর এই ভাইয়াটা তো না বলতেই নিজে থেকে এসে আমাদের খাইয়ে দিয়েছেন। উনি অনেক ভালো আপু, অনেক ভালো”
ছেলেটার কথা শুনে সুভার চোখ ছলছল করছে। আর করুনা দৃষ্টি নিয়ে সুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষ কতটা মহান হলে এরকম একটা কাজ করতে পারে, আর তার চেয়ে বড় কথা এই শো-আপ এর যুগে কেও মসজিদের জন্য ২ টাকা দিলেও তার রসিদ রেখে দেয়, কাওকে কিছু খাওয়ালে বা কোনোভাবে সাহায্য করলেও তার সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। আর সেখানে কাওকে নিস্বার্থভাবে উপকার করতে দেখাটা সত্যিই আমাবস্যার চাঁদ দেখার মতই।
সুভা প্রচন্ড রকম লজ্জা পেয়ে চোখ নিচু করে চলে যেতে লাগল, পেছন থেকে শুভ্র ও এলো।
” এই যে শুনুন, এই শুনুন, দাড়ান বলছি”
শুভ্রর ডাক শুনেও সুভা দাড়ালো না। শুভ্র দৌড়ে গিয়ে সুভার পথ আটকে দাড়ালো।
.
.
.
চলবে…..

https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=909653166132070

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে