বেলাশেষে part_20

0
745

বেলাশেষে part_20
#adrin_anisha
.
সকালে উঠেই নীলের দেয়া নীল জামা টা পড়ে নিল মেঘা। সুভা দেখেই বুঝতে পারল আজ নীলা তার মনে কথা বলবে নীলকে।
– বাব্বাহ, আজকে কি কাউকে প্রোপজ করার ইচ্ছে আছে নাকি?
– নাহ, প্রোপজ এর উত্তর দেয়ার ইচ্ছা আছে।
– মানে? কে আবার তোকে প্রোপজ করলো?
– সুভা, আসলে তোকে একটা কথা বলা হয়নি,
– কি কথা?

মেঘা সুভাকে নীলের বলা সব কথাগুলা খুলে বলল, সুভা মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
– এতো কিছু হয়ে গেল অথচ তুই আমাকে জানতেও দিলি না? বাহ, এই আমি তোর বান্ধবী?
– সরি দোস্ত, প্রথম দিন তো আমিই শকড ছিলাম। কিছুই বুঝতে পারিনি। আর এর পরের দিন ভুলেই গেছি। এরপর আর চেয়েও বলতে পারিনি। তুই শুভ্রর মাঝেই ছিলি।
– থাক থাক,বুঝতে পারছি। আর বলার দরকার নেই৷ তো কি করবি আজ?
– আমিও ফাহিন কে ভালোবেসে ফেলেছি, আজ ওকে সেটাই বলব।
– আরে বাহ। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস? তোর আর আমার জীবনে প্রেম একসাথেই এলো। আমরা সত্যিতেই বেস্ট ফ্রেন্ড বুঝছিস?
– তো তুই কি এতোদিন মিথ্যা ভেবেছিলি নাকি।
– আরে না, তা না। শোন আমি একটা প্লেন করেছি। আমরা না বিয়েও একসাথে করব। একই দিনে, একই মঞ্চে। এক সাথেই কবুল বলব
– আল্লাহ, তুই তো অনেক দূরে চলে যাচ্ছিস। বাস্তবে ফিরে আয় দোস্ত। আমি আগে বলি আজকে ফাহিনকে আমার মনের কথা তারপর তো বাকিসব।
– আরে তোর উপর আমার পুরো ভরসা আছে। তুই আজ পর্যন্ত যা ভেবেছিস তাই তো করেছিস। আজও পারবি এটাই আমার বিশ্বাস।
– হুম, ইনশাল্লাহ।
.
.
কলেজে গিয়ে চারদিকে নীলকে খুজতে শুরু করল মেঘা। আজ নীলের দেয়া জামায় ওকে অনেক সুন্দর লাগছে। কানে নীল পাথরের কানের দুল, গলায় ও ম্যাচিং লকেট। চুল গুলো বেণি করা। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। পুরো ফ্রোজেনের মতো করে সেজেছে মেঘা। দেখতেও ওর মতই লাগছে। মেঘার দিকে কলেজের সবার নজর আটকে গেছে। ছেলেরা তো মেঘাকে দেখে প্রায় জ্ঞ্যান হারাবে অবস্থা। একটা ছেলে তো হাটু গেড়ে ফুল নিয়ে বসেই পড়ল মেঘার সামনে।
– মেঘা অনেকদিন থেকেই তোমায় মনে মনে পছন্দ করি, কিন্তু বলার সাহস হয় নি। আজ তোমায় দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।
মেঘা ছেলেটার হাত থেকে ফুল নিয়ে বলল,
– দেখো ভাইয়া, তোমার ফিলিংস কে আমি সম্মান করি, কিন্তু তা এক্সেপ্ট করতে পারবো না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। তবে তোমার ফুল টা এক্সেপ্ট করে নিলাম। ধন্যবাদ।
.
– কি রে তুই ওর সাথে এতো ভালো ব্যাবহার করলি, আবার ওর ফুল টাও নিলি, ব্যাপার কি? আগে তো কখনো এমন করিসনি।
– আরে পাগল, ভালো ব্যাবহার না করলে কি ফুল টা পেতাম। আমি তো নীলের জন্য ফুল কিনতে ভুলেই গেছিলাম৷ তাই এটা নিয়ে নিলাম।
.

কোথাও নীলকে খুঁজে পাচ্ছে না মেঘা । তাই ক্লাসে চলদ গেল। ক্লাসে যেতেই সবাই মেঘাকে ঘিরে ধরল,
– কি রে মেঘা, আজ তোর জন্মদিন নাকি? নাকি কারো সাথে ডেট এ যাচ্ছিস? ( রিয়া)

– ডেট এ যাচ্ছি তোর কোনো সমস্যা? ( মেঘা)
– নাহ আমার কি সমস্যা হবে? তবে বল না কে সেই লাকি?
মেঘার রাগ হচ্ছে প্রচুর। করুন দৃষ্টিতে সুভার দিকে তাকালো। সুভা সবাইকে ইশারা দিয়ে চলে যেতে বলল।
তখনই ঘন্টা পড়ে গেল। এখন ইংরেজি ক্লাস হবে৷ মেঘা নার্ভাস হয়ে গেল। কিন্তু আজ নীল আসে নি। মেঘা অবাক হলো। আজ আবার অন্য স্যার এসেছে।
মেঘা আর টেনশান নিতে পারছে না। সুভাকে বলল সে যেন স্যারকে জিজ্ঞেস করে নীলের কথা। সুভা তাই দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
– স্যার, আজ নীল স্যার আসেনি কেন?
সুভার প্রশ্নে স্যারের মুখের গোমড়া ভাবটা প্রকাশ পেল। তবুও নিজেকে সংযত করে বললেন,
– দেখ বাচ্চারা, তোমাদেরকে বাচ্চা বললেও তোমরা বাচ্চা না। তোমরা যথেষ্ট বড় হয়েছ। আর ৩ বছর পরই তোমরা পড়ালেখার পর্ব শেষ করে ফেলবে। নীল স্যার যে কয়মাস তোমাদের সাথে ছিল, হয়তো তোমাদের মনে অনেক জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু তোমাদের জানাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে যে আমরা তাকে যেমন ভাবতাম তিনি মোটেই তেমন নয়। আমাদের এখানে তার মেরিটিয়াল স্ট্যাটাস ছিল আনমেরিড। কিন্তু বাস্তব্র তিনি ম্যারিড।
– কিহ? ( সব স্টুডেন্ট রা একসাথে)
স্যার একটু থেমে একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে আবার বলতে শুরু করল,
– হুম, জানি তোমরা অনেক শকড হয়েছ। এখন যেটা বলব সেটা শুনলে আরো বেশি শকড হবে। উনি ১ টা নয় বরং ২ টা এবং ঠিক কতগুলো বিয়ে করেছে তার কোনো ঠিক নেই। তবে তার কোনো এক স্ত্রী তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দেওয়ায় সে পালিয়ে গেছে।
এখন আর এসব নিয়ে কথা বলার দরকার নেই। সবাই পড়ায় মনোযোগ দাও। স্যার পড়াতে শুরু করলেন আর সবাই নীলকে নিয়ে নানান রকম মন্তব্য করতে শুরু করল।
কিন্তু মেঘা এখনো শকড। সে যেন ঠিক কিছুই বুঝতে পারছে না। সত্যিই কি এগুলো হচ্ছে নাকি সে সপ্নে দেখছে সেটাও বুঝতে পারছে না মেঘা। যেন পুরো পাথর হয়ে গেছে। সুভা মেঘাকে বারবার ডাকছে কিন্তু মেঘা পাথরের মতই হয়ে আছে।
– মেঘা, এই মেঘা কিছু বল,
– আই নিড টাইম সুভা, লিভ মি এলোন।
সুভা আর কিছু বলল না।
বাসায় এসে সরাসরি বাথরুমে গেল মেঘা। শাওয়ার অন করে শাওয়ারের নিচে বসে পড়ল মেঘা৷ আজ ঘটে যাওয়া সব কল্পনা করল মেঘা। সব কিছু বুঝতে পেরে কান্নায় ভেংগে পড়ে মেঘা।
– তাহলে আমি এতদিন একটা মিথ্যুকের সাথে টাইম স্পেন্ড করেছি? নীল কি আমাকেও ওই মেয়েদের মতো ইউজ করতে চেয়েছিল?
আর ভাবতে পারছে না মেঘা৷ মাথা কাজ করছে না। চিৎকার করে কাঁদতে লাগল লাগল মেঘা। বাইরে সুভা সব শুনছে, মেয়েটাকে এভাবে শেষ সেদিন কাদতে দেখেছিল যেদিন তার বাবাকে হারিয়েছিল। আর আজ একটা ফালতু ছেলের জন্য তাকে কাঁদতে হচ্ছে এটা ভেবেই নিজের উপর রাগ হলো সুভার। নিজেকে মেঘার বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতে লজ্জা হচ্ছে সুভার। কেন সে মেঘাকে আটকালো না। ভেবেই কান্না করে যাচ্ছে সুভা।
মেঘাও কাঁদছে আর ভাবছে সবাই ঠিকই বলে, জীবনের প্রথম প্রেমটা ভুল মানুষের সাথেই হয়।
.
.
.
.
.
চলবে……..
.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে