বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৪

0
1861

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#writer_nondini_nila
#Part_4

আদনান ভাইয়ের ধমকি শুনে আমি ওইখানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ওদিকে মামণির ডাক ভালো শোনা যাচ্ছে। আজকে আমি বড়োসড়ো কেস খাবো মামনি আমাকে পুলিশের মত জেরা করে বলবে আমি এখানে কেন? কি বলবো? কি বলবো? যদি আদনান ভাইয়া বলে দেয় আমি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম ছিঃ ছিঃ ছিঃ মান সম্মান সব ডুবিয়ে দিলাম।
কাঁদো কাঁদো মুখ করে আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,,
তিনি কি শান্তিতে সাজুগুজু করছে ছেলেরা মেয়েদের মত এত সাজুগুজু করতে পারে আল্লাহ। চুল ঠিক করছে হাতে ঘড়ি পড়ছে নিজেকে আয়না একশ ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে।
আর এদিকে আমার যে কি হচ্ছে সেটা শুধু আমি জানি।
“ভাইয়া আমি নিচে যাই মামনি আমাকে ডাকছে।”
কাচুমাচু করে বললাম।
ভাইয়া আমার দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে বলল,,
” বিছানায় বস।”
“কিন্তু মামুনি তো ডাকছে।”
“তোকে বসতে বলেছি।”
ভাইয়ার শক্ত কথা শুনে আর কিছু বলতে পারলাম না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানায় গিয়ে বসলাম। ওমনি মামুনি নুডুলস এর বাটি হাতে করে আদনান ভাইয়ের রুমে এলো আমার নামে হাক ছাড়তে ছাড়তে।
আমাকে এখানে দেখে অবাক হয়ে বলল,,
” একি রে দোলা তুই এখানে কি করছিস? আমি তোকে সেই কখন থেকে ডাকছি।”
মামনি বলতে বলতে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো। আমি আমতা আমতা করছি আর ভয়ে ভয়ে আড়চোখে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছি।
এখানে আছি সেটা আমার ভয় না ওতোটা কারণ এই রুমে আমি আসি‌ই কিন্তু ভয় হচ্ছে অন্য জায়গায়।
আদনান ভাই যদি বলে দেয় আমি লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইয়াকে দেখছিলাম। ছিঃ ছিঃ ছিঃ মামনি জানলে কি ভাববে আমাকে নিয়ে ভেবেই আমার লজ্জার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

হতদম্ব হয়ে বসে আছি। আমার পাশে বসে আছে আদনান ভাই। মামনি নিচে নেমে গেছে একটু আগে নুডুলস এখানে রেখে। আদনান ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে কিছু বলে নি। উল্টা মামনি কে বলেছে যে তিনি আমাকে ডেকেছিল এখানে আসতে বলেছে। তাই মামনি আর কিছু না বলে চলে গেছে।
পায়ের জন্য ভাইয়া বলেছে‌ এতো নড়াচড়া না করা ভালো এখানেই খেয়ে নিক।তাই রেখে গেছে। আমি ভাইয়ার মিথ্যা কথা শুনে হতভম্ব হয়ে আছি।ভাইয়া তখন আমার পাশে বসলো আর আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
“তোর আসল ব্যাপারটা বলি নাই ভাবিস না তোকে বাচিয়ে দিয়েছি। সেটা আমি এখন ও বলে দিতে পারি।”
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
আমি বুঝলাম না কিছু তাই বললাম,,” মানে।”
ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর হয়ে বলল,,,” তোর ফেসবুক পাসওয়ার্ড দে।”
আমি ৪৪০ ভোল্টের শক খেলাম মনে হয়। ভাইয়ের কথা শুনে আমার শ্বাস আটকে যাবার উপক্রম। তাহলে এই ছিল মনে মনে শয়তানটার।
“ফেইসবুক পাসওয়ার্ড দিবি নাকি বলে দেব যে তুই আমার দরজায় উকি দিয়ে আমার খালি গা দেখছিলি নির্লজ্জের মতো।”
ভাইয়ার কথা শুনে লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম। নিজের গালে নিজেরই কষে একটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে। ছিঃ কেন যে এখানে এসে নিজের পায়ে নিজেই কোরাল মারলাম। ভাই আমাকে কি বেহায়া মেয়েই না ভাবছে।

“কি হল মাথা নিচু করলি কেন? পাসওয়ার্ড দিতে বলেছি।”
ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে বললাম,,,” আমি ফেসবুক চালাই না ভাইয়া সত্তি।”
আদনান ভাই কঠিন মুখ করে বলল,,,” আবার মিথ্যা বলছিস মিথ্যা বলে লাভ নাই। আমি কিন্তু জানি সব তাই তাড়াতাড়ি পাসওয়ার্ড দে তুই না দিলেও পাসওয়ার্ড নিতে আমার দুই মিনিট সময় লাগবে না। কিন্তু আমি একা নিতে চাইছিনা তোর কাছ থেকে নিতে চাইছি। ভালোই ভালোই দে।”
আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,,” আমি সত্যিই…
এবার ভাইয়া মৃদু চিৎকার করে বলল,,,”আরেকবার মিথ্যা বললে কিন্তু মার একটাও মাটিতে পড়বে না।”

ভাইয়ার সাথে আর মিথ্যা কথা বলতে পারলাম না। সব বলে দিলাম। ভাইয়া আমার সামনে বসে আমার শখের আইডিটা রিমোভ করে দিল আর আমি তা কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে দেখলাম।
আমার মতো হতভাগা আর কেউ কি আছে।
ভাইয়া আমার চরম সর্বনাশ করে ক্ষান্ত হলো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে নুডুলসের বাটি নিজের হাতে নিল। আমি দাঁত কিড়মিড় করে আদনান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
“এভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নাই। আমাকে না জানিয়ে আইডি খুলে খুব বড় অন্যায় করেছিস তুই?”
চামচ দিয়ে নুডুলস নিজের মুখে পুরে কথাটা বলল।
আমি আগুন চোখ করে তাকিয়ে আছি। এখন যদি আমার হাতে কোন অদৃশ্য ক্ষমতা থাকত। আমি এই খাটাশ, শয়তান আদনানকে আগুনের গুলি ছোড়ে ভষ্স করে দিতাম।
এত রাগের মাঝে আমার রাগটা আরো বেড়ে গেল।আমার ফেভারিট খাবার কি না আমার সামনে বসেই আদনান ভাই গিলছে সেটা আমি একদমই সহ্য করতে পারলাম না।আইডি আমার শখের থাকলেও ওইটা জন্য নিজেকে সামলে রাখতে পারব কিন্তু নিজের পছন্দের জিনিস অন্য কে খেতে দেখতে পারবোনা। আর যদি দেখতে হয় সেটা হবে আমার কাছে সবচেয়ে কষ্টদায়ক।
“তুমি নুডুলস খাচ্ছো কেন? ওইটা আমার জন্য রান্না করেছে মামনি।”
আদনান ভাই যেন আমার কথা শুনলে না।আমার কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। আমার এবার রাগ উঠল আমি একটু জোরে গলার সাউন্ড বাড়িয়ে বললাম,,,
“কি হলো কথা কানে যাচ্ছেনা নুডুলস দাও।আমার খাবার তুমি খাচ্ছ কেন? আর তুমি জানো না এটা আমার কতো পছন্দের। আমাকে না দিয়ে নিজে একা খাচ্ছ কেন?”
এবার আদনান ভাই চামচ বাটিতে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল খুব ধীরে,,”আজকে তুই নুডুলস পাবি না এটা আমি তোর সামনে বসে একা খাব।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,,,” আমি পাবোনা মানে কি?”
ভাইয়া আবার এক চামচ মুখে দিয়ে বলল,,,” পাবি না মানে পাবি না চুপচাপ বসে থেকে আমার খাওয়া দেখ।”
“দেখবো মানে কি আমি দেখব না আমি খাব দাও আমাকে বাটি। শেষ করে ফেললে তা আর একটু খাবে না দাও আমাকে।”
বলে হাত বাড়িয়ে বাটি নেওয়ার চেষ্টা করতেই ভাইয়া বাটি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আমি গোল গোল চোখ করে ভাইয়া দিকে তাকিয়ে আছি।
“ডোন্ট টাচ মি। আজকে তুই নুডুলস পাবিনা এইটা তোর শাস্তি।তোর ফেভারিট জিনিস তার চোখের সামনে বসে আমি খাব আর তুই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবি আর জ্বলবি কিন্তু খেতে পারবি না। আমার চোখের আড়ালে লুকিয়ে ফেসবুক খুলার এটাই শাস্তি।”
ভাইয়া কথাটা বলে আবার খেতে লাগলো আর আমি বিছানায় বসে বড় বড় চোখ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। কাঁদো কাঁদো মুখ করে।

সত্যি আদনান ভাই আমাকে দিলনা লুডুলস। আমার সামনে বসে চেটেপুটে লুডুলস খেল জীবনে আমি তাকে এভাবে নুডুলস খেতে দেখিনি। আর আমি অসহায় মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে বসে ছিলাম। কান্না পাচ্ছিলো আমার কিন্তু গরিলাটার একটু মায়া হলো না আমার প্রতি। কি যে খারাপ লাগছিল বলে বুঝাতে পারব না খাওয়ার জন্য।
ভাইয়া খাওয়া শেষ আমার হাত ধরে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।বাইরে এসে মামুনি কে কি সুন্দর মিথ্যায় না বলল আমি নাকি সবটুকু নুডুলস খেয়েছি।
ভাইয়ার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। ভাইয়ার দিকে তাকালাম ভাইয়া আমাকে চোখ টিপে মামনি কে বলল,,
“আম্মু আমি দোলাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
মামা নি বলল,, ” এখন‌ই আমি না হয় পরে দিয়ে আসতাম।”
“ওর এখন মেডিসিন নিতে হবে।”
আমার মেডিসিন নিতে হবে এটা আদনান ভাইয়ের মুখে শুনে চমকালাম ভাইয়া জানালো কিভাবে?

তারপর ভাইয়া আমার হাত ধরেই বাসা থেকে বেরিয়ে এলো ওষুধ খেতে হবে শুনে মামনি আর না করেনি।
দরজার বাইরে আসতেই ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম,,
“তুমি মামনি কে মিথ্যা বললে কেন?”
আদনান ভাই ঘাড় বাঁকিয়ে বললো,,” কি মিথ্যা বললাম।”
“আমি নুডুলস খাই নাই। আমাকে সামনে বসিয়ে রাক্ষসের মতো তুমি একা খেয়েছো।আর মামনি কে কিনা বললে আমি খেয়েছি।”
ক্ষোভ নিয়ে বললাম।
“বাসায় গিয়ে খাস। আমি দেখতে আসবো না ওইটা তোর জন্য শাস্তি ছিলো। আর আম্মু তো তোর জন্য করেছিল তাই এই টুকু মিথ্যা না বললে আবার আমাকে ঝাড়ি খেতে হতো।”
“আমি এখন গিয়ে বলে দেব তোমাকে আমি ঝাড়ি খাওয়াবো।”
বলে হাত চালাতে লাগলাম।
“হাত ছার রাক্ষস। আমি আজকে তোকে ঝাড়ি খাওয়াবোই আমার ফেবারিট খাবার নিজে রাক্ষসের মতো গিললি।”
আদনান ভাই হাত তো ছারলোই না উল্টা আমাকে শক্ত করে ধরে কোলে তুলে নিলো আমি ছটফট করছি নামার জন্য।
ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে কর্কশ গলায় বললো,,
“নড়াচড়া করলে এখানে তোকে আছাড় মারবো স্টুপিট। আর তোকে আমি বলছি না আমাকে তুই তোকানি করবি না। আপনি করে বলতে বললে তো শুনিস‌ই না এখন তুমি করে বলিস আবার তুই।”

ভাইয়ার কথা শুনে আমি ও বলল,,, ” নিজে তুই তোকানি করলে দোষ নাই আমি করলেই দোষ তাই না।”
ভাইয়া চোখ মুখ শক্ত করে বলল,,” আমি তোর বড় তাই তুই বলতেই পারি কিন্তু তুই বলতে পারিস না।”
“আমি এখন থেকে তুই করেই বললো তোকে। তুই একটা শয়তান, খাটাস, হনুমান , বাঁদর, বিলাই, গরিলা তোর জন্য আমার সাধের আইডিটা গেল। আহা কতো শক করেই না খুলেছিলাম আইডিটা‌। আবার আমার নুডুলস একা নিজের পেটে দিলি কতো বড় খাটাস তুই একটু ও মায়া হলো না আমার জন্য।”
আর একটা বাজে কথা বললে কিন্তু এখানেই ফেলে দেবো বলে দিলাম।
আদনান ভাই কথাটা বলেই হাত আগলা করে দিলো।আমি হকচকিয়ে গেলাম আদনান ভাইয়ের কান্ড দেখে তারাতাড়ি হাত বাড়িয়ে ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরলাম।
চোখ বন্ধ নিলাম ভয়ে। আমি ভাইয়ার গলা জরিয়ে মাথাটা বুকে মিশিয়ে নিয়েছি এটা দেখে ভাইয়া হাত শক্ত করে নিলো।
“এখন ভয় পাচ্ছি কেন? আমাকে ওইসব বলার সময় তো ভয় পাচ্ছিলিনা।”
আমি ভয়ের মধ্যে থেকে ও বললাম,, ” ভয় পেলে কি বলতে পারতাম।”
আদনান ভাই রেগে বলল,,,”তুই আমাকে বকে খুশি।”
যদি আমি এক সত্যি ফেলে দেয় না না ,,‌ আমি মাথা নেড়ে না বললাম।
আমাদের বাসায় রেখে চলে গেল আদনান ভাই।
বাসায় এসে আম্মুকে নুডুলস রান্না করতে বললাম রান্না করে দিল কিন্তু আমার আর খেতে ভালো লাগল না‌ একটু ফ্রি রেখে দিলাম এত পছন্দের জিনিস তাও খেতে ইচ্ছে করলোনা একটা জেদ চেপে বসেছে ভাই আমাকে ওই ভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য। ভাবলাম আর জীবনে নুডুলস খাব‌ই না হূহ।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে