বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব-০৩

0
1938

#বৃষ্টি_হয়ে_নামবো
#writer_Nondini_Nila
#Part_3

আদনান রুমে এসে গায়ে শার্ট খুলে সোফায় ছুড়ে মারলো। রাগে ওর শরীর কাঁপছে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হয়েছে হাত দিয়ে তা মুছে রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমে চলে এলো।ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বাম হাত বাড়িয়ে ঝর্না ছারলো ঠান্ডা পানি আদনান এর গা বেয়ে পরছে সাথে ওর রাগ কমছে।
আদনানের রাগের কারণ হচ্ছে।
কিছু ক্ষন আগে একটা ছেলের সাথে মারামারি করে এসেছে আদনান। ছেলেটার নাম সেলিম। এলাকার বখাটে ছেলে। ছেলেটা কয়েকদিন ধরেই দোলাকে ফলো করছে‌। ছেলেটার খারাপ মতলব আছে সেটা আদনান ভালো করেই বুঝেছে। ছেলেটা খবর পেয়েছে রাজিব এর কাছে। রাজিব খেয়াল করেছে দোলাকে ছেলেটা বাজে নজরে দেখে ও ফলো করে।
রাজিব হচ্ছে আদনান দের ডাইভার এর ছেলে।
ওর থেকে কালকেই খবরটা জানতে পেরেছে তারপর‌ই ওই ছেলের খোঁজ নিয়েছে সারাদিন আজকে ওই ছেলেকে ইচ্ছামতো দোলাই দিয়েছে।
ওই ছেলের এত বড় স্পর্ধা আমার জিনিসে দিকে নজর দেয়। শুধু ওর হাত-পা ভেঙেছি কিন্তু আমার তো ওকে খুন করে ফেলতে চেয়েছিলাম। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে আদনান।
চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। আস্তে আস্তে নিজেকে শান্ত করে। গোসল শেষ করে তোয়াল পেচিয়ে একহাতে চুল ঝাকাতে ঝাকাতে বেরিয়ে আসে আদনান।
দুইদিন এসবের ঝামেলায় দোলার কাছে যায় নি‌। খোঁজ নেয়নি এমন না কিন্তু সামনে যায় নি।

এদিকে,,,
আমি আদনান ভাইদের বাসায় এসেছি। দেখলাম মামনি কি জানো সিলি করছে সোফায় বসে খুব মনোযোগ সহকারে।দরজা খোলা ছিল বিধায় কলিং বেল চাপতে হয় নাই আমি কথা না বলে চুপে চাপে মামনি পাশে গিয়ে বসলাম। তারপর আস্তে করে মামুনিকে এক হাতে জড়িয়ে ধরলাম মামনি চমকে উঠলো আর সাথে সাথে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে দেখেই মামনি শক খেল।
“কি হয়েছে মামণি এত শক খাচ্ছ কেন? আমি, আমাকে চেনো না তুমি।”
মামনি বলল, “তুই তোর না পা ভাঙ্গা তুই এই ভাঙ্গা পা নিয়ে এখানে কি করে এলি?”
আমি মামনি কে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে সিরিয়াস হয়ে বললাম,, “আসলাম! খুব কষ্টের করে। এখন তো আমি খুব একটা হাটতে পারি না। কিন্তু তুমি তো আজকে আমাকে দেখতে গেলে না। এজন্যই, তো আমাকে আসতে হল।”
মামনি তখন বলল,, অবাক হয়ে,, “কি বললি আমি তোকে দেখতে যায় নি আজকে সকালেও না গেলাম। আবার ভেবেছি একটু পরে যাব।”
নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলাম,,”তুমি গেছিলে!”
“তো গেলাম না সকালে ও না বসে থাকলাম কতক্ষন।”
মামনি বলল। মামনি কথা শুনে,
আমি নিজের জিভে কামড় দিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,
“একদমই মনে ছিল না! মামনি তুমি কিছু মনে করো না কেমন? আমি না তোমাকে মিস করছিলাম সত্যি আমার বাসায় বসে থাকতে এতোটা বোরিং লাগছিল বলে বুঝাতে পারবো না। এজন্যই তো লুকিয়ে চলে এলাম।”
“ধুর এত ভয় পাচ্ছিস কেন এসেছিস বেশ করেছিস। কিন্তু এভাবে একা চলে আসা ঠিক হয় নি যদি কোথাও পড়ে টড়ে ব্যথা পেতি তখন কি হতো বল তো।”

আমি মাথা নীচু করে ফেললাম । মামনি আমার মাথায় হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কিনা তারপর, আমাকে টেনে ধরে বললো, “থাক থাক আর মন খারাপ করতে হবে না।”
তার পর মামনি আবার সেলাই করতে লাগল আমি মামনি পাশে বোরিং হয়ে বসে আছি। মামনিকে কি বলে যে এখানে থেকে উঠে আদনান ভাই রুমে যাব সেটাই ভাবছি,,
আর এক হাত মুখে দিয়ে কামড়াকামড়ি করছি।
“কিরে এমন হাত কাঁমরাচ্ছিস কেন?”
মামুনের কথায় চমকে হাত মুখে থেকে সরিয়ে ফেললাম।
“ওই না মানে আসলে।”
“কিছু খাবি কিছু রান্না করে দেবো নাকি বিস্কুট চানাচুর খাবি।”
খাবার কথা বলতেই মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।মামুনিকে আমার জন্য রান্না করতে বলি। সেই সুযোগে আমি এক ঝলক আদনান ভাইয়ের রুমে উঁকি দিয়ে আসবো।
“কিরে কিছু বলছিস না কেনো ? খাবি কিছু।”
“হ্যাঁ খাবো।”
“আচ্ছা কি খাবি বল?”
আমার ফেভারিট নুডুলস তাই মামণিকে নুডুলস রান্না করতে বললাম।
মামনি হাতের কাজ ফেলে রান্নাঘরে ছুটল। আমি মামনি যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম, তারপর সহজে আদনান ভাইয়ের রুমের সামনে চলে এলাম।
দরজা চাপানো একটু ফাঁক করে দেখি আদনান ভাই শুধু প্যান্ট পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কোন এক শার্ট নেই ।আমার একটু লজ্জা লাগল তাই তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়ালাম,,কিন্তু বেশিক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলাম না আবার ঘুরে তাকালাম ভাইয়ার দিকে নির্লজ্জের মত ভাইয়াকে এইভাবে দেখার প্রবল ইচ্ছা জাগল।
এত নির্লজ্জ কবে হয়ে গেলাম।ভাইয়া দেখতে কি জোস আহ কি হ্যান্ডসাম,আমার প্রথম ক্রাশ আহা যখন প্রথম বান্ধবীদের কাছে ওদের বয়ফ্রেন্ডের কথা শুনতাম তখন ফাস্ট মনে মনে জল্পনা কল্পনা করেছিলাম আদনান ভাইকে নিয়ে।তখন দিন রাত ভাবতাম যদি আদনান ভাই আমার বয়ফ্রেন্ড হতো ইস সবাই কি বলতো ইস দোলার বয়ফ্রেন্ড টা কি সুন্দর হ্যান্ডসাম হট। কিন্তু সেটাতো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভাইয়া আমাকে দুই চোখে দেখতে পারেনা।শুধুমাত্র ছোট বোন হিসেবে যতটুক ভালোবাসার বাসে সে আমাকে কড়া শাসনে রাখে আমি জানি যদি বাই ইনি চান্স জানতে পারে আমি ভাইয়াকে বয়ফ্রেন্ড বানানোর ধান্দা করেছিলাম আমার হাড়গোড় আর থাকবে না।

এখন আমি কলেজের ওই ফাহাদকে লাইক করি।ওকে আমি আমার বয়ফ্রেন্ড বানাবো সবার বয়-ফ্রেন্ড আছে আমার কেন থাকবে না কিন্তু বেচারা হাঁদারাম আমাকে প্রপোজ করল না।ভাইয়াকে দেখে আমার হিংসে হয় ইস কোথায় ভাইয়া আর কোথায় ফাহাদ হ্যাঁ ভাইয়ের মতো ফর্সা কিন্তু এ তো হ্যান্ডসাম না। ভাইয়ের মতো একটু হ্যান্ডসাম হতো ভাইয়ের কি বডি মাস আল্লাহ সব দিক দিয়ে পারফেক্ট গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি আমার ফার্স্ট ক্রাশ যেটা ফাহাদের নাই।
আহাম্মক‌ ফাহাদ ওর নাকি খোঁচা দাড়ি ভালো লাগে না এজন্য ফ্রেশ থাকে।এটা অবশ্য আমাকে বলে নাই আমি ওর চাচতো বোনের থেকে জেনেছি ওর চাচতো বোন তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মেঘলা। মেঘলা থেকেই জেনেছি ফাহাদ আমাকে লাইক করে।
তখন থেকে ভাবছি ফাহাদ আমাকে প্রপোজ করলেই হ্যাঁ বলে দেবো আমার অবশ্য খুব একটা ভালো লাগে না ফাহাদকে। কিন্তু আমার তো বয়ফ্রেন্ড দরকার সবার বয়-ফ্রেন্ড আছে। কত গল্প করে আমার কাছে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে। আমারও তো বয়ফ্রেন্ড নিয়ে গল্প করার ইচ্ছে।
আমি আকাশ পাতাল ভাবছিলাম আদনান ভাইয়ার দরজার উঁকি মেরে।আমার তো মনেই ছিলনা সিংহে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমি এইসব ভেবে নিজের চরম বিপদ ডেকে আনছি।
আচমকা আদনান ভাইয়ার কর্কশ আওয়াজে আমার সমস্ত ধ্যান-ধারণা সমাপ্তি ঘটল। দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে কাপতে লাগলাম।আসলে দরজার মাঝে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম একটুর জন্য পড়ে যায় নাই।তারপর পায়ে ব্যথা তাই ভেতরে ঢুকেই জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।
হাই সর্বনাশ কি করলাম? আমি তো ধরা পড়ে গেলাম। এখন আমার কি হবে?
কাচুমাচু করে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি চোখ ছোট্ট ছোট করে আদনান ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালাম। ভাইয়া একদম আমার সামনে দাড়িয়ে আছে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে । আমি তার গম্ভীর মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা শুকনো ঢোক গিললাম,,
“তুই এখানে কি করছিস দোলা? আমার রুমের দরজার সামনে লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছিলি কেন?”
কথাটা বলে আরও একটু এগিয়ে একদম আমার গা ঘেষে দাড়ালো।

আমি ভাইয়াকে এমন ভাবে নিজের কাছে আসতে দেখে আরো কাঁপতে লাগলাম। কাঁপতে কাঁপতে আমি ব্যাথা পা দিয়ে পেছাতে গিয়ে আহ করে উঠলাম।
ভাইয়া আমাকে আহ করতে দেখে বিচলিত হয়ে এক হাতে জড়িয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে এলো।
একেতে পায়ে ব্যথা তার ওপর দরজার একটু বাড়িয়ে খেয়েছি।
“গাধা একটা! নরলি কেন? আর তুই এই পা নিয়ে এমন ঢং ঢং করে ঘুরছে কেন?, হ্যাঁ! ইডিয়েট!!”
আমি ব্যথা ভুলে স্তব্ধ হয়ে আছি আদনান ভাই আমাকে খালি শরীরে জড়িয়ে ধরেছে। আমি তার উদাম বুকের সাথে লেপ্টে আছি ভাবতে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে।
বুক ধরফর করছে আমি হতভম্ব হয়ে আদনান ভাইয়ের বুকের সাথে লেপ্টে আছি।

আমি মাথা উঁচু করে হা করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার কথায় চমকে উঠলাম,,
ভাইয়া রেগে বলল,, ” এমন হা করে তাকিয়ে না থেকে উওর দে তুই এখানে কি করছিস?”
বলে আমাকে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে র‌ইল পুলিশের মতো। যেন আমি চোর চুরি করে ধরা পরেছি তাই পুলিশ আমাকে জেরা করছে।
ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,
” আমি তো এমনি ঘুরছিলাম।”
ভাইয়া আমার কথা শুনে বলল,,” কি ঘুরছিলি?”
আমি বললাম,,”হ্যা।”
ভাইয়া রেগে শক্ত হয়ে বলল,,,” এই পা নিয়ে তোকে ঘুরতে বলেছে কে?”
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।
“কি হলো করি বলছিস না কেন? তুই এই পা নিয়ে লাফালাফি করে বেরাচ্ছিস কেন?”
চিৎকার করে।
ভাইয়ার চিৎকার শুনে আমি কেঁপে উঠলাম। আমি নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছি ভাইয়ার দিকে সরাসরি তাকাতে লজ্জা করছে ভাইয়া এখন ও খালি গায়ে।
ভাইয়া বলল,,
” তুই নিচের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না নিজের হাত মুচরাচ্ছি।
“কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
আমতা আমতা করে বললাম,, “তুমি শার্ট পরো আমার লজ্জা করছে।”
আমার কথা শুনে ভাইয়া গম্ভীর হয়ে বলল,, “লজ্জা করছে তাইনা।”
আমি মাথা নাড়লাম।
ভাইয়া আবার বলল,,,” তাহলে এতোক্ষণ লুকিয়ে দেখছিলি কেন?”
ভাইয়ার কথা শুনে আমার হেঁচকি উঠে গেল। ভাইয়া জানলো কিভাবছ আমি লুকিয়ে দেখেছি। বড় বড় চোখ করে তাকালাম ভাইয়ার দিকে ভাইয়া কঠিন মুখ করে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো আমার দিকে তাকিয়ে ছিস যে তোর না লজ্জা করছে।”
আমি নিজের জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলাম। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে।
ভাইয়া ফট করে বসে পরলো আমার পায়ের কাছে।আমি চমকে উঠলাম,,
“কি করছো?”
“চুপ।” ভাইয়া কঠিন হয়ে বলল।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে চুপ করে গেলাম। ভাইয়া আমার পা ধরে দেখতে লাগল তারপর বলল,,,
“কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস?”
আমি বললাম,,”ব্যাথা পাই নাই।”
ইচ্ছে করে মিথ্যা বললাম।
“একটা চড় মারবো। আবার মিথ্যা বলছিস।”
রেগে বলল।

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর ড্রয়ার খুলে ব্যথার মলম এনে আমার পায়ে লাগিয়ে দিল খুব যত্ন সহকারে। আমি মুগ্ধ হয়ে ভাইয়ার যত্ন করা দেখলাম। তখনই মামনির কন্ঠ এলো মামনি আমাকে ডাকতেছে। ভাই হয়তো মামনির ডাক শুনেছে।
ভাইয়া শার্ট পরতে লাগল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। এখন আমার মাথায় আকাশ সমান চিন্তা। এখন মামনি যদি জিজ্ঞেস করে বলে আমি এখানে কেন এসেছি?
কি বলবো তখন?
ভাইয়া শার্ট পরে চুল ঠিক করে একদম নায়ক হয়ে আমার দিকে ঘুরে বলল,,
” তুই দাড়িয়ে আছিস কেন?”
আমি কিছু না বলে বেরিয়ে আসতে যাব, ভাইয়া আবার চিৎকার করে উঠল,
” আর এক পা নরলে তোর পা আমি একেবারে ভেঙে দেব।”
#চলবে

( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে